হুশ শব্দ করে থেমে যায ট্রেনটি । ট্রেনটির নাম রূপসা । ঘুম ভাঙ্গে নীরবের । ঠিক ঘুম নয় ,বলা যায় ঝিমুনি।বাইরে তাকায নীরব । রাত নযটা। শীতের রাত , নাটোর স্টেশন প্রায় জনমানবহীন। প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে নীরবের । হঠাং নিজের সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় সে । পাশে রাখা ব্যাগের চেন খুলে বের করে ,একটা পাউরুটির স্লাইস আর কমলা । ব্যাগের চেন খুলতে গিয়ে চোখে পড়ে অনেক বার পড়া প্রিয় কাব্যগ্রন্হ "বনলতা সেন "। পাউরুটির স্লাইস আর কমলা মুখে পুড়ে নীরব কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে জানালা দিয়ে। চোখে পড়ে ভুল বানানে ,দেওয়ালে লেখা "এখানে পেশার করিবেন না " । ঠিক তার কিছুটা দুরে একজন কুলি গভীর মনযোগে বিড়ি টানছে , তার মাথার ঠিক উপরে রেল মার্কা প্লার্কাডে সাবধনবাণী " ধুমপান নিষেধ"।
হঠাং নীরবের প্রসাবের প্রচন্ড বেগ পায় । পাশে বসা লোকটিকে ব্যাগটি দেখতে বলে ,রওনা দেয় টয়লেটের দিকে । লোকটি মাথা ঝাকিয়ে হু শব্দকরে । বোঝা মুশকিল সম্মতি না অসম্মতি জানায় সে ।
টয়লেটে ঢুকে নীরবের চোখে পড়ে আয়নার দিকে । আয়নাটা দেওয়ালের ঠিক মাঝখানে , দরজার উল্টো দিকে ।
নীরব দরজা আটকিয়ে , বিহবল চোখে তাকিয়ে থাকে আয়নার দিকে। তার ঠোঁট ফেটে বের হচ্ছে রক্ত । নীরব হাঁ করে চেয়ে থাকে আয়নার দিকে । নিজের ঠোঁটে হাত রাখে নীরব , কিন্ত ঠোঁট শুক্না ।
ভয় পেয়ে নীরব মুখ চেপে ধরে দ্রুত বের হয়ে আসে টয়লেট থেকে । ট্রেন থেকে নেমে, নিরব হন্হনি্য়ে এগিয়ে যায় হারিকেনের আলো জ্বালানো মেডিকেল স্টোরের দিকে। হারিকেনের ক্ষীণ আলোয় একজন ধুতি পড়া ছোট খাট গড়নের হিন্দু ভদ্রলোক খুব মনযোগের সাথে খঁটিয়ে পড়ছে একটি কাব্যগ্রন্হ ।
নীরব জিগ্যেস করে " আপনার এখানে ব্যান্ডজ করা যাবে?"
মাথা না উঠিয়ে ভদ্রলোকের উত্তর "কি কারণে ?"
- "আমার ঠোঁটে....." বলে থেমে যায় নীরব ।
হঠাং করে মাথা উঠিয়ে ভদ্রলোক বলে " কোথায় রক্ত ? আর এইটা বইয়ের দোকান ,মেডিকেল স্টোর না। তুমি বয়সে অনেক ছোট , তাই তোমাকে তুমি করে বলি। আজ সারা সন্দ্ধ্যায় বিক্রি নাই । তুমি একটা বই কিনলে , আমার উপকার হয় । আমার রাতের খাবারের টাকার একটা ব্যবস্হা হয় । "
নীরব বলে "কি বই আছে , আপনার কাছে? "
ভদ্রলোক হেসে বলে ' কি বই নাই বলো ? আচ্ছা তুমি কই যাও ?"
নীরব বলে " খুলনা । "
ভদ্রলোক হেসে বলে " তাহলে , তোমার প্রিয় বইটা দিয়ে দেই -বনলতা সেন "। তারপর এগিয়ে দেয় বইটি ।
নীরব হেসে বলে " আরে আপনি কিভাবে জানলেন, এটা আমার প্রিয় বই ? "
ভদ্রলোক হোঁ হোঁ করে হেসে বলে " হাজার বছর ধরে জানি ।"
নীরবের উত্তর " হাজার বছর ধরে জানেন , বাট এটা জানেন না -বইটা আমার ব্যাগে আছে ।'
ভদ্রলোক স্মিত হেসে বলে " এই বইটা , অসম্ভব । ভাল করে দেখো । "
" কি যে বলেন ? " নীরব ঠোঁট থেকে হাত নামিয়ে বইটা হাতে নিয়ে পাতা উল্টাতে থাকে । চোখ আটকে যায় একটি পৃষ্ঠায় । তারপর পৃষ্ঠা উল্টে সামনের পৃষ্ঠায় চোখ রাখে । চোখে পড়ে ক্রমিক নং ১২২ , শাহাদাত ।
নীরব চিংকার করে বলে " এই বই আপনি কোথায় পেলেন ? এটা আমার বই । "
ভদ্রলোক হোঁ হোঁ করে হেসে বলে " তোমার বই ? পাগল নাকি ?"
হঠাং নীরবের চোখ যায় বইয়ের আলমারীর কাঁচে । তার ঠোঁট ফেটে বের হচ্ছে রক্ত । মুখ চেপে ধরে নীরব বলে " দাঁড়ান , আপনি যে আমার বইটা চুরি করেছেন , আমার ব্যাগ থেকে সেটা প্রমাণ করব "
নীরব আর অপেক্ষা না করে হন্হন্ করে হাঁটতে থাকে ট্রেনের বগির দিকে । হঠাং অন্ধকারে একজন হাত টেনে ধরে নীরবের । স্টেশনের হালকা আলোয় চোখে পড়ে একজন মহিলার মুখ , ভিক্ষুক আর পাঘল শ্রেণীর ।
নীরব কিছুক্ষন তাকিয়ে " রাস্তা ছাড়েন । কি চান ?"
মহিলা পাগলের হাসি হেসে " এতদিন কোথায় ছিলেন ? "
নীরব মহিলাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে , দৌড়ে গিয়ে ট্রেনে উঠে পড়ে ।
নিজের সীটের দিকে দৌড়ে যায় । চোখ পড়ে ব্যাগের উপর । চেন টেনে ,ব্যাগ খুলে বের করে কাব্যগ্রন্হ "বনলতা সেন " । সামনের পৃষ্ঠায় লেখা ক্রমিক নং ১২২ , শাহাদাত । দমবন্ধ লাগে নীরবের । ব্যাগ রেখে উঠতে গিয়ে ধাক্কা খায় এটেনডেন্টের শরীরে ।
নীরব বলে " সরি "
এটেনডেন্ট তার বপু নিয়ে হেসে বলে " নো মেটার । আপনার এখানেই ভাল । খুলনা যাওয়ার কোন মানুষ নাই । সো , এখানে আমার ঘুমটা ভাল হবে "
নীরব বলে "এখানে কেউ নেই মানে ? একজন তো ছিলেন । প্লিজ , আমাকে যেতে দিন ? আমার নীচে দোকানটায় যাওয়া দরকার। "
এটেনডেন্ট বলে " নীচে যাবেন কিভাবে , ট্রেন তো ষ্ঠেশন লিভ করছে । হুইসেলের শব্দ শুনতে পাচ্ছেন না ?আর এখানে কেউ নেই মানে এখানে কেউ নেই, যারা ছিলেন তারা গন "
হঠাং করে নীরবের মোবাইল বেজে উঠে ।
নীরব মোবাইল কানে ধরে ।মোবাইলের ওপ্রান্ত থেকে তমার কন্ঠস্বর " দেখেছো, ঠিক নয় টায় ফোন দিলাম । বুঝেছো , আমি কেমন ? এ ওমেন অফ ..........
নীরবের কানে আর কিছু ঢোকে না । দৃষ্ঠিতে আসে দেওয়ালে লেখা "এখানে পেশার করিবেন না "
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ৯:৪৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





