somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

...ক্ষুদে গল্প...........বনলতা সেন ........

১৪ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ২:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

হুশ শব্দ করে থেমে যায ট্রেনটি । ট্রেনটির নাম রূপসা । ঘুম ভাঙ্গে নীরবের । ঠিক ঘুম নয় ,বলা যায় ঝিমুনি।বাইরে তাকায নীরব । রাত নযটা। শীতের রাত , নাটোর স্টেশন প্রায় জনমানবহীন। প্রচন্ড ক্ষুধা পেয়েছে নীরবের । হঠাং নিজের সিট ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় সে । পাশে রাখা ব্যাগের চেন খুলে বের করে ,একটা পাউরুটির স্লাইস আর কমলা । ব্যাগের চেন খুলতে গিয়ে চোখে পড়ে অনেক বার পড়া প্রিয় কাব্যগ্রন্হ "বনলতা সেন "। পাউরুটির স্লাইস আর কমলা মুখে পুড়ে নীরব কিছুক্ষণ চেয়ে থাকে জানালা দিয়ে। চোখে পড়ে ভুল বানানে ,দেওয়ালে লেখা "এখানে পেশার করিবেন না " । ঠিক তার কিছুটা দুরে একজন কুলি গভীর মনযোগে বিড়ি টানছে , তার মাথার ঠিক উপরে রেল মার্কা প্লার্কাডে সাবধনবাণী " ধুমপান নিষেধ"।
হঠাং নীরবের প্রসাবের প্রচন্ড বেগ পায় । পাশে বসা লোকটিকে ব্যাগটি দেখতে বলে ,রওনা দেয় টয়লেটের দিকে । লোকটি মাথা ঝাকিয়ে হু শব্দকরে । বোঝা মুশকিল সম্মতি না অসম্মতি জানায় সে ।
টয়লেটে ঢুকে নীরবের চোখে পড়ে আয়নার দিকে । আয়নাটা দেওয়ালের ঠিক মাঝখানে , দরজার উল্টো দিকে ।
নীরব দরজা আটকিয়ে , বিহবল চোখে তাকিয়ে থাকে আয়নার দিকে। তার ঠোঁট ফেটে বের হচ্ছে রক্ত । নীরব হাঁ করে চেয়ে থাকে আয়নার দিকে । নিজের ঠোঁটে হাত রাখে নীরব , কিন্ত ঠোঁট শুক্‌না ।
ভয় পেয়ে নীরব মুখ চেপে ধরে দ্রুত বের হয়ে আসে টয়লেট থেকে । ট্রেন থেকে নেমে, নিরব হন্‌হনি্‌য়ে এগিয়ে যায় হারিকেনের আলো জ্বালানো মেডিকেল স্টোরের দিকে। হারিকেনের ক্ষীণ আলোয় একজন ধুতি পড়া ছোট খাট গড়নের হিন্দু ভদ্রলোক খুব মনযোগের সাথে খঁটিয়ে পড়ছে একটি কাব্যগ্রন্হ ।
নীরব জিগ্যেস করে " আপনার এখানে ব্যান্ডজ করা যাবে?"
মাথা না উঠিয়ে ভদ্রলোকের উত্তর "কি কারণে ?"
- "আমার ঠোঁটে....." বলে থেমে যায় নীরব ।
হঠাং করে মাথা উঠিয়ে ভদ্রলোক বলে " কোথায় রক্ত ? আর এইটা বইয়ের দোকান ,মেডিকেল স্টোর না। তুমি বয়সে অনেক ছোট , তাই তোমাকে তুমি করে বলি। আজ সারা সন্দ্ধ্যায় বিক্রি নাই । তুমি একটা বই কিনলে , আমার উপকার হয় । আমার রাতের খাবারের টাকার একটা ব্যবস্হা হয় । "
নীরব বলে "কি বই আছে , আপনার কাছে? "
ভদ্রলোক হেসে বলে ' কি বই নাই বলো ? আচ্ছা তুমি কই যাও ?"
নীরব বলে " খুলনা । "
ভদ্রলোক হেসে বলে " তাহলে , তোমার প্রিয় বইটা দিয়ে দেই -বনলতা সেন "। তারপর এগিয়ে দেয় বইটি ।
নীরব হেসে বলে " আরে আপনি কিভাবে জানলেন, এটা আমার প্রিয় বই ? "
ভদ্রলোক হোঁ হোঁ করে হেসে বলে " হাজার বছর ধরে জানি ।"
নীরবের উত্তর " হাজার বছর ধরে জানেন , বাট এটা জানেন না -বইটা আমার ব্যাগে আছে ।'
ভদ্রলোক স্মিত হেসে বলে " এই বইটা , অসম্ভব । ভাল করে দেখো । "
" কি যে বলেন ? " নীরব ঠোঁট থেকে হাত নামিয়ে বইটা হাতে নিয়ে পাতা উল্টাতে থাকে । চোখ আটকে যায় একটি পৃষ্ঠায় । তারপর পৃষ্ঠা উল্টে সামনের পৃষ্ঠায় চোখ রাখে । চোখে পড়ে ক্রমিক নং ১২২ , শাহাদাত ।
নীরব চিংকার করে বলে " এই বই আপনি কোথায় পেলেন ? এটা আমার বই । "
ভদ্রলোক হোঁ হোঁ করে হেসে বলে " তোমার বই ? পাগল নাকি ?"
হঠাং নীরবের চোখ যায় বইয়ের আলমারীর কাঁচে । তার ঠোঁট ফেটে বের হচ্ছে রক্ত । মুখ চেপে ধরে নীরব বলে " দাঁড়ান , আপনি যে আমার বইটা চুরি করেছেন , আমার ব্যাগ থেকে সেটা প্রমাণ করব "
নীরব আর অপেক্ষা না করে হন্‌হন্‌ করে হাঁটতে থাকে ট্রেনের বগির দিকে । হঠাং অন্ধকারে একজন হাত টেনে ধরে নীরবের । স্টেশনের হালকা আলোয় চোখে পড়ে একজন মহিলার মুখ , ভিক্ষুক আর পাঘল শ্রেণীর ।
নীরব কিছুক্ষন তাকিয়ে " রাস্তা ছাড়েন । কি চান ?"
মহিলা পাগলের হাসি হেসে " এতদিন কোথায় ছিলেন ? "
নীরব মহিলাকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে , দৌড়ে গিয়ে ট্রেনে উঠে পড়ে ।
নিজের সীটের দিকে দৌড়ে যায় । চোখ পড়ে ব্যাগের উপর । চেন টেনে ,ব্যাগ খুলে বের করে কাব্যগ্রন্হ "বনলতা সেন " । সামনের পৃষ্ঠায় লেখা ক্রমিক নং ১২২ , শাহাদাত । দমবন্ধ লাগে নীরবের । ব্যাগ রেখে উঠতে গিয়ে ধাক্কা খায় এটেনডেন্টের শরীরে ।
নীরব বলে " সরি "
এটেনডেন্ট তার বপু নিয়ে হেসে বলে " নো মেটার । আপনার এখানেই ভাল । খুলনা যাওয়ার কোন মানুষ নাই । সো , এখানে আমার ঘুমটা ভাল হবে "
নীরব বলে "এখানে কেউ নেই মানে ? একজন তো ছিলেন । প্লিজ , আমাকে যেতে দিন ? আমার নীচে দোকানটায় যাওয়া দরকার। "
এটেনডেন্ট বলে " নীচে যাবেন কিভাবে , ট্রেন তো ষ্ঠেশন লিভ করছে । হুইসেলের শব্দ শুনতে পাচ্ছেন না ?আর এখানে কেউ নেই মানে এখানে কেউ নেই, যারা ছিলেন তারা গন "
হঠাং করে নীরবের মোবাইল বেজে উঠে ।
নীরব মোবাইল কানে ধরে ।মোবাইলের ওপ্রান্ত থেকে তমার কন্ঠস্বর " দেখেছো, ঠিক নয় টায় ফোন দিলাম । বুঝেছো , আমি কেমন ? এ ওমেন অফ ..........
নীরবের কানে আর কিছু ঢোকে না । দৃষ্ঠিতে আসে দেওয়ালে লেখা "এখানে পেশার করিবেন না "





সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই মার্চ, ২০০৯ রাত ৯:৪৩
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০১


জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।

আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন

"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৭



২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৪ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৫৩



৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন

এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪০


ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

লিখেছেন কিরকুট, ১৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:৫৭



চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

×