ভুল নিয়ে হুলস্থূল
মো: কামাল উদ্দিন
ভুলের মাশুল লিখতে বসে জীবনের অজানা কথা মনে পড়লো। পৃথিবীর এমন কোন মানুষ নেই, যিনি কোননা কোন ভুল করেন নি। মানুষ মাত্রই ভুল। একমাত্র শয়তান ব্যতীত সবাই ভুলের মাঝে ভুলে গিয়ে ভুল করে। আমি সবচেয়ে বেশি ভুল করেছি। জীবনে কত ভুলের মাশুল গুনেছি তা জন্মের পর হতে জীবনের হাল খাতা খুলে দেখলে হিসেব পাওয়া যাবে। ভুলের কারণে অনেক কিছুই আমি হারিয়ে ফেলেছি। জীবনের প্রথম ভুল সম্ভবত বিনা টিকেটে ট্রেন ভ্রমণ করতে গিয়ে আক্কেল সালামি দেয়া। ভুলবশত টিকেট না করে ট্রেনে চড়া তো ছিলো ভুল। এখনও প্রতি মুহূর্তে ভুল করি। ভুলের কথা লিখতে বসেও ভুল করছি।
এক বুদ্ধিজীবী বলেছিলেন অভিজ্ঞতা সেই জিনিস। একই ভুল দু’বার করলে যখন আমরা ধরতে পারি যে এ ভুলটা আগেও একবার করেছিলাম। ভুল না করলে ভুলের অভিজ্ঞতা হয় না। আমি প্রচুর পরিমাণ ভুল করছি বিধায় আমার ভুলের অভিজ্ঞতা রয়েছে। প্রথমে বলছিনা “প্রিয় গোলাপ ফুল হারাইলাম তিন কুল লিখতে বসে করি ভুল”। আমার সবচেয়ে বেশি ভয় হয় লিখতে। সত্য লিখতে গিয়ে ভুল করে মিথ্যা লিখে বলে ফেলি। ভুল লিখার জন্য পাঠকদের কাছে আমি ঠাট্টা কথার পাত্র হয়েছি। বুদ্ধিজীবী আরো বলেছিলেন যে, এই পৃথিবীতে মানব জন্মে ভুল না করে উপায় নেই। যে মানুষ ভুল করে না সে কিছু করে না এবং সেটাই একটা বড় ভুল। কথাগুলো একটু যেন জটিল হয়ে গেল। লঘু নিবন্ধের গোড়াতেই জটিলতা এনে আমি নিজেই বেশ ভালো একটা ভুল করে ফেললাম। ভুলের বিষয়ে এযাবৎ আমি অনেক কিছুই উল্টোপাল্টা লিখেছি। এতসব হাবিজাবি অখাদ্য লেখার পর এখন আর কিছুতেই মনে থাকেনা, খেয়াল করতে পারিনা কোন গল্প আগে লিখেছি কোনটা মোটেই লিখিনি। আমি ভুল করে আমার গ্রনে'র সোজা কথার প্রবন্ধগুলোতে বাঁকা কথা বলেছি। পরের গ্রনে'র কথাগুলোকে টক্ টক্ কথা বলেছি, পুরুষদের কর্তৃক নারী নির্যাতনের কথা সমূহকে নারী কথা বলেছি। ভুল করা আমার অভ্যাস। ভুল না করলে পেটের ভাত হজম হয় না। আমার নিজের জীবনে বহুরকম ভুল আছে তার বিস্তারিত বিবরণ দিয়ে ভুলের কথা লিখে শেষ করা যাবে না। আদতে আমার ভুলের কথা লিখছিনা। মাছ বাজারের এক ব্যবসায়ীর গদিতে এক কর্মচারী নতুন নিযুক্ত হয়েছে। দুঃখের কথা এই কর্মচারী কাজে যোগ দেয়ার দু’একদিনের মধ্যে একটা দুর্ঘটনা ঘটল। ঐ ব্যবসায়ী গদির ভিতরে তাঁর মানি ব্যাগটি হারিয়ে ফেললেন। ব্যবসায়ীর অভ্যাস ছিল গদিতে বসে পকেট থেকে বার করে সামনের ক্যাশ বাক্সের এক পাশে মানিব্যাগটি রাখতেন। কিন' সেই দিন হলো কি বিকেলের দিকে ব্যবসায়ীটি দেখলেন মানিব্যাগটি যথাস'ানে নেই। স্বভাবতই সন্দেহ গিয়ে পড়ল নতুন কর্মচারীটির ওপরে। এতদিন কখনো মানিব্যাগ চুরি হয়ে যায়নি। আজ যখন চুরি হলো সম্ভবত কর্মচারীটি নিয়েছে। তাকেই ধরা হলো।
হতভাগা কর্মচারীকে প্রচুর জেরা করা হলো। কিন' মানিব্যাগটির কোনো হদিস মিললো না। অবশেষে যখন মালিক ঠিক করলো যে ঐ নতুন কর্মচারীকে পুলিশের হাতে তুলে দেবেন। ঠিক সেই সময়ে তাঁর বাড়ি থেকে ফোন এল এবং তাঁর স্ত্রী জানালেন যে তিনি আজ ভুল করে তাঁর মানিব্যাগটি শোবার ঘরের ড্রেসিং টেবিলের আয়নার সামনে ফেলে এসেছেন। ভদ্রমহিলা আরো বললেন যে, অনেকক্ষণ ধরেই তিনি এ কথাটা জানানোর জন্য চেষ্টা করেছিলেন। কিন' কিছুতেই ফোনে লাইন পাননি। ব্যবসায়ী ভদ্রলোক কঠোর হলেও অমানবিক নন। এই ফোন পাওয়ার পর কেমন বিচলিত বোধ করলেন। তিনি তাঁর ভুলের কথা গদিঘরের সবাইকে বললেন। তদুপরি নবনিযুক্ত কর্মচারীটির কাছে হাতজোড় করে বললেন, কিছু মনে করোনা ভাই। আমার ভুল হয়ে গেছে। এরপরে সেই কর্মচারী ভদ্রলোক যা বলেছিলেন সেটা স্মরণীয়। তিনি বলেছিলেন আমি কিছুই মনে করিনি। আপনি ভুল করেছিলেন, আমিও ভুল করেছিলাম। এই কথা শুনে ব্যবসায়ীটি বললেন, আমি তো ভুল করেছিলাম। কিন' তুমি কি ভুল করেছিলে। কর্মচারীটি বললেন, আপনার ভুল হয়েছিল আমাকে চোর ভাবা। আর, ব্যবসায়ীটি বাধা দিলেন, আর? আর আমার ভুল হয়েছিল আমি আপনাকে ভদ্রলোক ভেবেছিলাম। এই বলে কর্মচারী ভদ্রলোক বহুকষ্টে পাওয়া সামান্য চাকরিটি ছেড়ে চলে গেলেন। কিন' সব সময়ে এত সহজে ছেড়ে যাওয়া যায় না। একটি বাচ্চা ছেলে বারংবার চেষ্টা করেছিল হাত ছেড়ে পালাতে। কিন' সে পারেনি। তার কোন দোষ নেই। সেটা ছিল এক দোলের দিন রাস্তায় বাচ্চা ছেলেরা হৈ-হুল্লোড় করে রঙ দিয়ে খেলা করেছিল। ভূষিকালো থেকে ক্যাটক্যাটে লাল বা বেগুনি অজস্র রঙে মাখামাখি হতে হতে বেলা বারোটা নাগাদ বাচ্চাগুলো ভূতের মতো দেখতে হয়ে গেল। বাড়ির জানালা দিয়ে অনেক ডাকাডাকি করেও বাড়িতে ফিরিয়ে আনতে না পেরে একটি বাচ্চার মা রাস্তা থেকে তাঁর ছেলেকে জোর করে ধরে আনলেন। ছেলেটি প্রাণপণ চেষ্টা করতে লাগল মহিলার হাত ছাড়তে। কিন' খুব শক্ত হাতে মহিলাটি ধরেছিলেন তাতে সে কিছুতেই পিছলে যেতে পারল না। মহিলাটি তাকে পাকড়াও করে সোজা বাথরুমে নিয়ে গেলেন। সেখানে নিয়ে গিয়ে প্রচুর পানি ও সাবান দিয়ে পরিচর্যা করার পর যখন ছেলেটির আসর চেহারা বেরোলো তখন মহিলা অবাক। এতো তাঁর ছেলে নয়। দোলের রঙ মেখে এমন হয়ে গেছে সব বাচ্চা। তিনি ধরতেই পারেননি যে অন্য একটা বাচ্চাকে নিজের ছেলে ভেবে ধরে নিয়ে এসেছেন। ভদ্রমহিলা যখন তাঁর ভুল ধরতে পারলেন তখন ছেলেটি তার স্বরে চেঁচাচ্ছে আর বলছে আমাকে ছেড়ে দিন। আর কোনো দিন আপনার ছেলের সঙ্গে রং খেলব না। অতঃপর আরো দু-টি মারাত্মক গল্প বলি। দু’টি গল্পই তস্কর ও নারী ঘটিত। রসিক ব্যক্তি মাত্রেই অন্য আকারে গল্প দুটো কোথাও না কোথাও শুনেছেন। প্রথম গল্পটি ক্লাবে আড্ডায় শোনা। অনেক রাতে আড্ডা করতে করতে এক ভদ্রলোক বললেন, কাল রাতে যখন তাস খেলছিলাম, তখন আমাদের বাসায় চোর ঢুকেছিল।
সেই শুনে তার কাছে আমি জিজ্ঞেস করলাম চোর কিছু পেয়েছে? ঐ বন্ধু একটি অতি দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে বললেন তা পেয়েছে। বলে চুপ করে গেলেন। স্বভাবত পুনরায় প্রশ্ন হলো কি হলো? ভদ্রলোক মৃদু হেসে বললেন, প্রচুর। আমার স্ত্রী ভুল করে ভেবেছিলেন আমি বুঝি বাড়ি ফিরলাম। প্রথমে তিনি একপাটি হাইহিল জুতো ছুঁড়ে মারলেন। চোরটা তো আমার মতো অভিজ্ঞ না। মাথা সরিয়ে নেয়ার আগে নাকে গিয়ে হিলটা গেল। সেই অবস'ায় অব্যর্থ লক্ষ্যে তার মাথায় পড়ল লেডিস ছাতার স্টিলের বাঁট। একটু দম নিয়ে ভদ্রলোক বললেন, বলো আর কি চাই? দ্বিতীয় গল্প ঐ একই শুধু একটু রকমফের। আদালতে আসামির কাঠগড়ায় তস্কর সাক্ষীর কাঠগড়ায় মহিলা অর্থাৎ ঐ তাস খেলোয়াড়ের সহধর্মিণী। হাকিম সাহেব সাক্ষীর কাঠগড়ার দিকে তাকিয়ে বললেন, মাননীয় ভদ্রমহিলা, আমি আপনার সাহেবের প্রশংসা না করে পাচ্ছি না। যেভাবে একাকী আপনি ঐ চোরকে ধরেছেন। তারপরে পুলিশের হেফাজতে তুলে দিয়েছেন সবই অতুলনীয়। কিন' আপনি আমাকে বলুন, এমন নৃশংসভাবে কে এই আসামীকে প্রহার করেন? এর নিচের পাটির সামনের তিনটি দাঁত ভাঙ্গা একটা চোখ কালো হয়ে ভেতরে ঢুকে গিয়েছে। কপালে কাটা দাগ, সেখানে রক্ত জমাট হয়ে কালো হয়ে রয়েছে। এতো নির্যাতন এর ওপরে কে করল? ভদ্রমহিলা শান্ত কণ্ঠে বললেন, আমি মেরেছি একে। আদালত স্তম্ভিত হয়ে বললেন, একটা চোরকে এমন নৃশংসভাবে মারতে পারলেন আপনি? অন্ধকারে আমি বুঝতে পারিনি। আমি ভেবেছিলাম আমি আমার স্বামীকে পেটাচ্ছি। ভুল করে যে চোরটাকে মারছি তা মোটেই বুঝতেই পারিনি।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৯ দুপুর ১:৫৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।





