somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার স্বপ্নবেলা - ৪

০৯ ই নভেম্বর, ২০১০ ভোর ৪:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এই সিরিজটা আমার মাথায় পেইন হয়ে আছে। প্রতিদিনই ভাবি কি লিখবো, ছক কাটি... লেখা আর হয় না। আজ যেই ভদ্রমহিলা আমার জীবন টাকে জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করতেছেন তাঁর সাথে স্কুল জীবনের কিছু গল্প করছিলাম। তাই ভাবলাম ওগুলোই লিখে ফেলি। ভদ্রমহিলা অবশ্য কাহিনি শুনে টুনে আমার দিকে কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলেছেন, তুমি আগে এতো বড় বদমাইস ছিলে! :((

আম্মু ছোট বেলায় আমার হাতে কাপড়ের একটা ক্যাপ পরিয়ে রাখতেন, যাতে পিচ্চিরা, যারা আমার সাথে পড়তো, ভয় না পায়। আমি তো সহ্য করতে পারতাম না। আম্মু স্কুলে রেখে কলেজে চলে গেলেই শুরু হতো আমার বাঁদরামি। হাতের ক্যাপ খুলে শুরু করতাম পুলাপাইনরে ভয় দেখানো। ভয়ে তারা ধারে কাছে আসতো না। আর মেয়েগুলোর তো ছিলাম দুই চোক্ষের বিষ! ক্লাসে যা করতাম, আম্মু আসলেই ছুড়িগুলো খালি নালিশ দিতো। আমিও কম যাই না। আমি আর জানের দুস্ত শাওন ওদের বিভিন্ন নাম দিতাম। য্যামন একজন চিকন ছিলো, তার নাম দিয়েছেলাম চ্যাং, একজন ছিলো মোটা, তার নাম দেয়া হৈলো ব্যাং। চ্যাং আর ব্যাং আমাদের জনম শত্রু হয়ে গেলো। সময় সুযোগ পেলেই তাদের নামে গোয়েবলসীয় কায়দায় অপপ্রচার চালাইতাম। "এই জানিস, চ্যাং না অমুকের সাথে প্রেম করে।" ওরাও কম যেতো না। চ্যাং মনিটর ছিলো। সুযোগ পেলেই আমার গ্যাংয়ের পিঠে স্কেলের বাড়ি লাগাতো। আমাদের ফার্স্ট বয় এর নাম ছিলো শুভ। তো একদিন চ্যাং কি কারনে যেনো বোর্ডে লিখে রেখেছে শুভেচ্ছা। হে হেহ হে, আমার মাথায় বুদ্ধি গজাইলো। এ কার আর চ্ছা মুছে দিয়ে করে ফেললাম শুভ। ক্লাসে তখন কেউ ছিলো না। এর পর সবাইরে ডেকে এনে এনে দেখাতে লাগলাম, দেখ, চ্যাং না শুভ কে ভালোবাসে, তাই ওর নাম লিখে রেখেছে বোর্ডে। B-)

ক্লাস ফাইভে আমাদের দেয়া হলো নতুন ক্লাসে, তখনো নিচে মাটি, পাকা করা হয়নি। ক্লাসের এক কোনায় নিরীহদর্শন একটা ব্যাং (আসল ব্যাং) বসে থাকতো। কেউ তেমন ঘাটাঘাটি করতো না। কি কারনে যেনো মহিলাকুলের উপর রাগ হয়েছে, আমরা আস্তে করে ব্যাং টাকে তাড়িয়ে তুড়িয়ে মেয়েদের বেন্চের নিচে পাঠিয়ে দিয়েছি। দিয়ে চুপ করে বসে আছি। পুরাই ভদ্র আর শান্ত ছেলে। একটু পরে চিল চিৎকারে কান ঝালাপালা। ক্লাসে সুনামি আর সিডর একসাথে বয়ে গেলো। নারীজাতির লম্ফ ঝম্প আর নর্তন কুর্দন দেখে আমরা বড়ই আমোদিত হয়েছিলাম।

ব্লগার ভাবারু তখন আমার বেশ প্রিয় বন্ধু। আদি রসাত্মক কৌতুহল মূলক আলোচনা গম্ভীর মুখে করতাম। তো একদিন ক্লাসে টিফিন টাইমে উদাস নয়নে দুই জন বসে আছি। হঠাৎ আমার নজরে পড়লো উপর থেকে ঝোলানো বাল্ব এর হোল্ডার। আমি তখন এর নাম জানতাম না। তাই উনাকে জিজ্ঞাসা করতেই উনি বিজ্ঞের মতো বললেন, ইহার নাম হোল্ডার। নামের মাঝে কিন্চিৎ রস আস্বাদনের উপায় পেয়ে আমি উৎসাহিত হয়ে বলে ফেললাম, ছেলেদের হোল্ডার থাকে, মেয়েদের নাই। পাশ থেকে কোন এক জ্ঞান বিদ্বেষী নালায়েক তা শুনতে পেয়ে ম্যাডাম আসা মাত্র বলে দিলো, ম্যাডাম, ওরা না খারাপ কথা বলে! ব্যাস! পিঠের উপর... তারপর দুইজনে গলা ধরাধরি করে হাটতে হাটতে বাড়ি ফেরার সময় দ্বিপাক্ষিকভাবে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হৈলাম, হোল্ডার জিনিসটা বড়ই খারাপ।

শেষ হয়ে গেলো কেজি স্কুলের পাঠ। প্রদীপন বিদ্যাপীঠ, আমার জীবনের ভিত্তি গড়ে দিলো। চলে এলাম হাই স্কুলে, চুয়াডাঙ্গা ভিজে সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়। নিজেকে বেশ বড় বড় মনে হতে লাগলো। আমি হাই স্কুলে পড়ি! কিন্তু স্কুলে পাত্তা পাই না কেউ। সবাই বড়, আমরা সবার ছোট! তখন তিন গোয়েন্দার চরম পরম ভক্ত! দলে দেলে সবাই পাঁচ গোয়েন্দা, আট গোয়েন্দা বানাচ্ছে। কোন কিছু হৈলেই গোয়েন্দাদের ঠেলায় আসল কাহিনি হারায়া যায়। এর মাঝে আমার বাড়ী হৈলো চুরি। চোর ৩টা বাক্স, আমার সাধের কালো ছাগলটা আর প্রেসার কুকার ভর্তি মাংশ নিয়ে গেছে। সকালে উঠে দেখে মেজাজ খারাপ। টের পাওয়া গেলো চোর সাইকেল চড়ে এসেছিলো। আমি সেই সাইকেলের দাগ ধরে ধরে বাড়ীর পেছনের বাগান থেকে অনেকদূর অনুসরন করলাম। বড় রাস্তায় গিয়ে দাগ প্রায় মুছে যায় আর কি! বহু কষ্টে দাগ অনুসরন করে এক বাগানের ভেতর গিয়ে ট্রাংক তিনটা পেলাম খোলা আর কাপড় চোপড় ছড়ানো অবস্থায়। আমার উল্লাস দেখে কে! হাক ডাক করে লোক নিয়ে এসে ট্রাংক উদ্ধার করে বাড়ি ফিরলাম বিজয়ীর মতো বুক ফুলিয়ে। মাগার, আমার কৃতিত্বের কেউ দামই দিলো না। স্কুলে গিয়ে গল্প করলাম, পুলাপান আমারে খালি চাপাবাজ কয়!/:) ছাগলটার জন্য খুব কষ্ট পেয়েছিলাম।

ক্লাস সিক্সে উঠে হলাম মনিটর। আহা! কি যে সুখের দিন! টিফিন খেয়ে কুল পেতাম না। দেবুদা এসে মাথা গুনে যেতো। আমরা গিয়ে টিফিনের গামলা নিয়ে আসতাম। আমাদের সেকশনের চেয়ে যাদের ছাত্র বেশি, বেছে বেছে সেই গামলাটা নিয়ে আসতাম আর তিন মনিটরে মিলে সাবাড় করতাম। দেবুদা খালি মাথা চুলকাতো, টিফিন কম পড়ে ক্যান! প্রায় ২০০ ছাত্রের সবাই সাইকেলে আসতো স্কুলে। সাইকেলের বেল চুরি হবার হিড়িক পড়লো। সাইকেল রেখে ক্লাসে গেছে, এসে দেখে বেল নেই। কি যন্ত্রণা! অন্যদের বেল চুরি করা দেখলেও, আমার চুরি করতে বড়ই খারাপ লাগতো। আমি বেলটা খুলে বাটিটা উল্টো করে স্ক্রু দিতাম টাইট করে। ডিস এন্টেনার মতো বেলের বাটি আকাশের দিকে চেয়ে থাকতো। শেষে পুলাপান যন্ত্রণায় টিকতে না পেরে বেল খুলে পকেটে করে ক্লাসে নিয়ে যেতো।

বোম বাস্টিং খেলা বেশ জনপ্রিয় ছিলো আমাদের মাঝে। মানে যার হাতে বল থাকবে সে সবচেয়ে কাছের জনের গায়ে গায়ের জোরে বল ছুড়ে মারবে। সে আবার বল কুড়িয়ে কাছের জনকে ধুম! তো এতে দু একজন আহত হবার পর স্কুলে বল নিষিদ্ধ করা হলো। হে হে, কিয়ের নিষিদ্ধ! আমরা তাও আনতাম। সার্চ শুরু হলো বলের খোঁজে। কি বিপদ! টিফিন টাইমে খেলে বল লুকিয়ে রেখে আসতাম পরিত্যাক্ত এক বিল্ডিং এর মাঝে পাতার নিচে। তো আইয়ুব স্যার ( কি কারনে সবাই জানি আইয়ুব পাঁঠা বলে ডাকতো!) একদিন দেখে ফেলেন আমার হাতে বল। ক্লাসে এসে সার্চের এক পর্যায়ে আমাকে জেরা করা শুরু করলেন,
- তোর বল কৈ? আমি ভীষন অবাক!
- আমার বল! স্যার ঐটা না টিফিন টাইমে আমার পাড়ার একটা ছেলের সাথে দেখা হয়েছিলো, ওর হাতে দিয়ে দিয়েছি, ও নিয়ে গিয়েছে।
- মিথ্যা বলছিস নাতো। চোখমুখ উল্টিয়ে আমি বলি
- না স্যার!
স্যার চলে যাবার পরের পিরিয়ডে স্যার আসেন নি। ঐ বিল্ডিং থেকে বল এনে পাশের ক্লাস রুমের বেন্চের নিচের অংশ ভেঙ্গে ব্যাট বানিয়ে দোতলায় আমরা ক্রিকেট খেলা শুরু করেছি। সিড়ির কাছে থেকে দৌড়ে বল করছি, ব্যাটসম্যান মেরেছে সিঁড়ির দিকে। বলের পেছন পেছন দৌঁড়ে গিয়ে বল ধরার আগেই দেখি সিঁড়ি দিয়ে কে জানি উঠে এসেছে, তার পায়ে আস্তে করে বল লেগে দাঁড়িয়ে গিয়েছে। বল তুলে উপরে চেয়ে দেখি আইয়ুব স্যার!:((:(( বল হাতে করেই এক দৌড়! দৌড়ে বাসায়। পরের পনেরো দিন আর স্কুলে যাই নি।






চলিবে... তবে খুব কষ্ট করে।

আমার স্বপ্নবেলা - ১
আমার স্বপ্নবেলা - ২ (১৮+)
আমার স্বপ্নবেলা - ৩
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে আগস্ট, ২০১৫ রাত ১:৫৮
৫১টি মন্তব্য ৫০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×