somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমণ : দিল্লী থেকে অমৃতসর ... স্বর্ণমন্দির ছুঁয়ে একটি ঝটিকা সফর - ২য় পর্ব

২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৪:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


১ম পর্ব



যাত্রা পথে
নতুন একটা জায়গা দেখা হবে এ আশায় অধীর হয়ে দুজন নিউ দিল্লী রেল ষ্টেশনে ট্রেনের অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছি। ছাড়ার কথা রাত ৯:৩০-এ । আসবে সেই মুম্বাই থেকে। প্রায় ৪০ মিনিট দেরী করে ট্রেনটা এলো। আমাদের টিকেট দুটো ছিল টু-টিয়ার এয়ারকন্ডিশনড ক্যাটেগরির। এর অর্থ ৪ বার্থ বিশিষ্ট ছোট একটা কুপের দুটো বার্থ আমাদের। সহজেই খুঁজে পেলাম ওটা। পরিচয় হল অন্য দুজন সহযাত্রী বয়ষ্ক এক দম্পতির সাথে। ওনারা সাহারানপুর বলে এক জায়গায় নামবেন। দিল্লী থেকে ট্রেনে প্রায় ৪ঘন্টার পথ। ভদ্রলোক একজন অবসরপ্রাপ্ত সরকারী কর্মকর্তা, আচরণে গম্ভীর ও সতর্ক ভাব। তাই আলাপ বেশী জমলো না ... হাঁ, ইয়েসের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকলো কথাবার্তা। যদিও পরে ওনার সৌজন্যবোধ আমাদের মুগ্ধ করেছে। অন্যদিকে ভাষার ব্যবধান সত্ত্বেও মুনের সাথে ভদ্রমহিলার আলাপ জমে উঠলো। ছবি তোলা হল কয়েকটা। দাওয়াত পেলাম সাহারানপুর বেড়ানোর। বার বার বললেন ওনাদের সাথে নেমে যেতে, বড় বাসা, থাকার জায়গার অভাব নেই। পরে অমৃতসর পৌঁছে দেয়া হবে আমাদের। আল্লাহকে ধন্যবাদ, সদ্যপরিচিত মানুষের ভালবাসায় আরেকবার সিক্ত হলাম।

রাত ১০:৩০ এ ট্রেন ছাড়ার সাথে সাথে ডিনারের অর্ডার নিতে এলো এটেনডেন্ট। ভারতীয় খাবারের বৈচিত্র্য আমাদের টানে। তাই যাত্রা পথে সুযোগ পেলেই চেষ্টা করি অপরিচিত খাবারের স্বাদ নিতে। দুই রকম খাবার - ভেজ (নিরামিষ) ও নন-ভেজ (আমিষ)। দুটোরই টেস্ট নেয়ার জন্য একটা করে অর্ডার দিলাম। সহযাত্রী দম্পতি দেখি বাক্স খুলে খাবার বের করছেন। রুটি, ডাল, সব্জি এবং অবধারিতভাবে আচার। ওদের ভেজ নন-ভেজ সবখাবারের সাথে আচার থাকবেই। আমাদের ডিনার আসা পর্যন্ত ওনারা অপেক্ষা করলেন। তারপর শুরু হল সাধাসাধি। ভদ্রমহিলার প্রবল মাতৃভাব আমাদের বাধ্য করল ওনাদের খাবারে ভাগ বসাতে। ডিনার শেষে ছোট একটা ঘুমের আয়োজন করলেন ওনারা। ঠিক ২:১৫ টার দিকে সাহারানপুর পৌছুল ট্রেন। নামার সময় মুনকে আদর করলেন ভদ্রমহিলা। বিদায় হ্যান্ডশেকের সময় প্রথম হাসি দেখলাম ভদ্রলোকের মুখে। পুরো কুপেটা এখন আমাদের। সাহারানপুর থেকে আর কেউ উঠেনি।

খুব ভোরে আবছা অন্ধকারের মধ্যে বিরাট ট্রেনটা প্রবেশ করল অমৃতসর ষ্টেশনে। শীতের ভোরে জবুথবু হয়ে থাকা ষ্টেশনটা মূহুর্তে গমগম করে উঠলো যাত্রীদের কোলাহলে। ট্রেন থেকে নেমে চিন্তা করছি কোনদিক দিয়ে বের হব। সবচেয়ে বেশি মানুষ যেদিক দিয়ে বের হচ্ছে আমরা সেদিক রওনা হলাম। ষ্টেশন থেকে বের হয়ে অবাক! এতো মানুষ নামলো ট্রেন থেকে অথচ বাইরে ২/৩টা সিএনজি স্কুটার, ৩/৪টি রিক্সা আর সেগুলোর ড্রাইভার ছাড়া কেউ নাই। সবাই ঝটপট নিজ নিজ গন্তব্যে রওনা দিয়েছে। বাইরে বিবর্ণ ধোঁয়াশার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি দেখে দুজন সিএনজি ড্রাইভার এগিয়ে এলো। হিন্দী নয় সম্ভবত পাঞ্জাবী ভাষায় কি বলল বুঝলাম না, খালি একটা শব্দ বুঝলাম মাইজি ... আর ভাবে বুঝলাম কোথায় যাব জানতে চাচ্ছে। মোটা-সোটা ড্রাইভারের ঢুলু ঢুলু লাল চোখ, খোঁচা খোঁচা দাড়ি, নোংরা পোষাক দেখেই ওকে নেয়ার চিন্তা বাতিল করে দিলাম। কিন্তু পিছু ছাড়েনা, অন্য ড্রাইভারদের ডাকলেও আসে না, বুঝলাম একটা সমঝোতা আছে এদের মধ্যে। মুন ইশারায় সম্মতি দিতেই মনে মনে বিসমিল্লাহ বলে উঠে বসলাম স্কুটারে। বাংলা-হিন্দী-ইংরেজী মিশিয়ে বললাম একটা ভাল হোটেলে নিয়ে যেতে। দেখি এই সন্ত্রাসী চেহারার ড্রাইভার কোথায় নিয়ে যায় আমাদের! পরবর্তীতে আমার ধারণা ভুল প্রমাণিত হয়। যশওয়ান্ত সিং নামের এই পাগড়ী-দাড়ি ছাড়া হতদরিদ্র শিখ ড্রাইভার তার নির্লোভ আন্তরিকতা দিয়ে আমাদের মন জয় করে নেয় এবং অমৃতসরে আমাদের প্রায় ১৬ ঘন্টার আনন্দময় অবস্থানের এক উল্ল্যেখযোগ্য স্মৃতিতে পরিণত হয়।

চলবে ...
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে ডিসেম্বর, ২০১০ বিকাল ৫:৩৯
১৪টি মন্তব্য ১৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাফসানের মা হিজাব করেন নি। এই বেপর্দা নারীকে গাড়ি গিফট করার চেয়ে হিজাব গিফট করা উত্তম।

লিখেছেন লেখার খাতা, ১১ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩


ছবি - সংগৃহীত।


ইফতেখার রাফসান। যিনি রাফসান দ্যা ছোট ভাই নামে পরিচিত। বয়স ২৬ বছর মাত্র। এই ২৬ বছর বয়সী যুবক মা-বাবাকে বিলাসবহুল গাড়ি কিনে দিয়েছে। আমরা যারা... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ এঁটেল মাটি

লিখেছেন রানার ব্লগ, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৫৬




শাহাবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছিলাম, মাত্র একটা টিউশানি শেষ করে যেন হাপ ছেড়ে বাঁচলাম । ছাত্র পড়ানো বিশাল এক খাটুনির কাজ । এখন বুঝতে পারি প্রোফেসরদের এতো তাড়াতাড়ি বয়স... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসুন সমবায়ের মাধ্যমে দারিদ্র বিমোচন করি : প্রধানমন্ত্রী

লিখেছেন স্বপ্নের শঙ্খচিল, ১২ ই মে, ২০২৪ ভোর ৪:১০



বিগত শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী নিজ সংসদীয় এলাকায় সর্বসাধারনের মাঝে বক্তব্য প্রদান কালে উক্ত আহব্বান করেন ।
আমি নিজেও বিশ্বাস করি এই ব্যাপারে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী খুবই আন্তরিক ।
তিনি প্রত্যন্ত অন্চলের দাড়িয়ারকুল গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পাইলট ফিস না কী পয়জনাস শ্রিম্প?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১২ ই মে, ২০২৪ সকাল ৭:৪০

ছবি সূত্র: গুগল

বড় এবং শক্তিশালী প্রতিবেশী রাষ্ট্রের পাশে ছোট ও দূর্বল প্রতিবেশী রাষ্ট্র কী আচরণ করবে ? এ নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক অধিক্ষেত্রে দুইটা তত্ত্ব আছে৷৷ ছোট প্রতিবেশি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×