somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভ্রমণ : দিল্লী থেকে অমৃতসর ... স্বর্ণমন্দির ছুঁয়ে একটি ঝটিকা সফর - শেষ পর্ব

১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৪র্থ পর্ব

হালকা শপিং
প্রবল অনিচ্ছাসত্ত্বেও তিনটার দিকে স্বর্ণমন্দির থেকে বের হলাম। সাড়ে তিনটার মধ্যে ওয়াগা বর্ডারের উদ্দেশ্যে রওনা হতে হবে, যশওয়ান্ত সতর্ক করে দিয়েছিল। তা না'হলে ভারতীয় ও পাকিস্তানী সীমান্তপ্রহরীদের যৌথভাবে পতাকা নামানো ও গার্ড বদলের জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠান মিস হয়ে যাবে। স্বর্ণমন্দিরের চারপাশে ছোট ছোট অসংখ্য দোকান। অনেকটা ঢাকার চকবাজারের মতো।এই মার্কেটটার নাম গুরু বাজার। আমাদের যেটুকু সময় আছে তাতে আলাদা করে শপিং করা সম্ভব না। তাই আগেই ঠিক করা ছিল 'নো শপিং'। কিন্তু চোখের সামনে গুরু বাজার দেখে 'এই একটু দেখে আসি' টাইপের ভঙ্গি করে গুট গুট পায়ে মার্কেটে ঢুকে পড়লো মুন। অমৃতসর এমব্রয়ডারী, কাঠের উপর সুক্ষ কাজ, উলেন পোশাক ও গহনার জন্য বিখ্যাত। যতই আমি তাড়া দেই ও ততোই 'এই একটু' করতে করতে বেশ কয়েকটা উলেন সোয়েটার ও শাল কিনে ফেললো। এখানে একই পোশাকের দাম দেখলাম ঢাকার তুলনায় কয়েকগুণ সস্তা। অনেক কষ্টে মুনকে শপিংএর বৃত্ত থেকে বের করে এনে দেখি ৪টার বেশি বেজে গেছে। তার মানে ওয়াগা বর্ডার দর্শন ভন্ডুল। আমাদের ড্রাইভারও খানিকটা উষ্মার স্বরে তাই বললো। বল্লাম, কি আর করা ... তাহলে চলো দেখে আসি তালিকার শেষ দর্শনীয় স্থান জালিওয়ানওয়ালাবাগ।

জালিওয়ানওয়ালাবাগ
অমৃতসরের অন্যতম ট্যুরিষ্ট আকর্ষণ জালিওয়ানওয়ালাবাগ। যাঁরা গান্ধী ছবিটি দেখেছেন, তাঁরা নিশ্চয়ই জালিওয়ানওয়ালাবাগ হত্যাকান্ডের দৃশটির কথা মনে করতে পারবেন যেখানে নিরস্ত্র মানুষের উপর ব্রিটিশ সেনারা গুলিবর্ষণ করছে। ১৯১৯ সালের ১৩ এপ্রিল ছিল শিখদের কাছে পবিত্র বৈশাখী উৎসব দিবস। এ উপলক্ষ্যে প্রচুর সাধারণ মানুষ পরিবার সহ একটি সমাবেশে জড় হয়েছিলেন জালিওয়ানওয়ালাবাগে। তাঁদের অনেকেই জানতেন না যে একইসাথে সেটি ছিল সেসময়ের ব্রিটিশ শাসনের বিরুদ্ধে একটি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ সভা। সভাচলাকালীন চারিদিক প্রাচীর ঘেরা পার্কে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডায়ারের নেতৃত্বে ৯০ জন সেনা প্রবেশ করে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করে। ১০-১৫ মিনিটের এই ম্যাসাকারে ১৫০০ -এর বেশি নিরস্ত্র মানুষ গুলিতে ও পদদলিত হয়ে নিহত হন। আহত হন শত শত। রবীন্দ্রনাথ এই গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে তাঁর নাইটহুড খেতাব ত্যাগ করেন।






গুলিবর্ষণ থেকে বাঁচার তাগিদে অনেক মানুষ পার্কের একটি কূপে ঝাঁপ দিয়ে পড়ে। পরবর্তীতে সেখান থেকে ১২০টি মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। কূপটি সংরক্ষিত কিন্তু বর্তমানে বন্ধ।



শহীদদের স্মরণে ওখানে সুন্দর একটি মিউজিয়াম প্রতিষ্ঠিত করা হয়েছে।



সন্ধ্যার মুখে বের হলাম জালিওয়ানওয়ালাবাগ থেকে। খুব বেশি সময় হাতে নেই আর। ঠিক করলাম হোটেলে ফিরে যাবো, তারপর ৮টার দিকে ডিনার করে বাসের উদ্দেশ্যে রওনা দিব। রাত সাড়ে ১০টায় বাস।

ডিনারে
ডিনারের জন্য অনেক রাস্তা ঘুরে সরু একটা গলির শেষ মাথার ধাবায় গেলাম। ছোট, পরিচ্ছন্ন কিন্তু খুব ব্যস্ত ধাবা। পরে দেখেছি খাবারটাও খুব স্বাদু। আমাদের অটোড্রাইভার ও গাইড যশওয়ান্ত সিংকে অনেক বল্লাম সাথে ডিনার করতে, কিন্তু বিচিত্র কারণে রাজি হলো না। অথচ ভারতের অন্যান্য শহরে আমাদের অভিজ্ঞতা অন্যরকম। ডিনারের মেনু মাখন দেওয়া রুটি ও ঝাল তড়কা। ধাবায় মাটন ও চিকেন কারীও পাওয়া যায় কিন্তু আমরা স্থানীয় খাবার টেস্ট করতে ঐটার অর্ডার দিলাম। জম্পেশ ডিনার হল। বের হওয়ার দরজার কাছে টেবিলে খুবই মজার পানমশলা রাখা। মুন খুব আগ্রহের সাথে দেখছে দেখে কি মনে করে ধাবার বয়স্ক শিখ ম্যানেজার মাইজি'র (মুন) জন্য প্রায় আধাকেজি পরিমাণ স্পেশাল পানমশলা দিয়ে দিল।

বিদায়বেলায়
সাড়ে ৯টার দিকে বাসস্ট্যান্ডে চলে এলাম। আর মাত্র এক ঘন্টা আছি অমৃতসরে। যশোওয়ান্ত সারাদিন হাসিমুখে সার্ভিস দিল। আর এখন দেখি মুখ গম্ভীর। আমাদেরও মন ভার ভার। ৬ কন্যার জনক ও। জিজ্ঞাসা করে জানলাম নুন আনতে পান্তা ফুরোয় অবস্থা। কিন্তু সরল হাসি লেপটে আছে মুখে সারাক্ষণ। ওর পাওনা মিটিয়ে অতিরিক্ত কিছু টাকা দিতে চাইলাম। নিবে না কিছুতেই, শেষে মুনের ধমকে নিল। তারপর এক কান্ড করলো। দৌড়ে রাস্তার ওপার থেকে এক বোতল ব্যাগপাইপার নিয়ে আসলো। এটা খেলে নাকি রাতে ট্রাভেলের কষ্ট টের পাবোই না ... মাইজিকে বলার দরকার নাই ... ব্যাগে ঢুকিয়ে নাও। আমি হাসি চেপে ফিরিয়ে দিলাম ওকে। সে তার মতো করে প্রতিদান দিতে চেয়েছে। তারপরও মন ছুঁয়ে গেল। বাস ছেড়ে দিল নির্ধারিত সময়ের কিছু পরে। নতুন করে তৈরী করা পাঞ্জাব-দিল্লী হাইওয়ে ধরে দিল্লী পৌঁছলাম সুনসান হিম ভোরে। সাঙ্গ হলো আমাদের ঝটিকা সফর।

-শেষ-
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ফেব্রুয়ারি, ২০১১ সন্ধ্যা ৭:২৫
৪০টি মন্তব্য ৩৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বারবাজারে মাটির নিচ থেকে উঠে আসা মসজিদ

লিখেছেন কামরুল ইসলাম মান্না, ২৭ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:৪০

ঝিনাইদহ জেলার কালীগঞ্জ উপজেলার বারবাজার ইউনিয়নে মাটির নিচ থেকে মসজিদ পাওয়া গেছে। এরকম গল্প অনেকের কাছেই শুনেছিলাম। তারপর মনে হলো একদিন যেয়ে দেখি কি ঘটনা। চলে গেলাম বারবাজার। জানলাম আসল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

পরিবর্তন অপরিহার্য গত দেড়যুগের যন্ত্রণা জাতির ঘাড়ে,ব্যবসায়ীরা কোথায় কোথায় অসহায় জানেন কি?

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:৫৭


রমজানে বেশিরভাগ ব্যবসায়ীকে বেপরোয়া হতে দেখা যায়। সবাই গালমন্দ ব্যবসায়ীকেই করেন। আপনি জানেন কি তাতে কোন ব্যবসায়ীই আপনার মুখের দিকেও তাকায় না? বরং মনে মনে একটা চরম গালিই দেয়! আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯

মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা বলতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×