ছোটবেলায় কিছু ব্যাপার খুবই অদ্ভূত লাগতো। সবচে গোলমাল লাগতো এইটা ভাইবা, মানুষ বাচ্চা-কাচ্চা পাইতো কইথাইকা
- আম্মু, বাবু কিনতে কি অনেক টাকা লাগে?
- অ – নে – ক টাকা
- তাইলে আম্মু হাসপাতালে বাবু পায় কই থেকে?
- ডাক্তারদের কাছে থাকে
- ডাক্তাররা পায় কই থেকে?
- আল্লাহ অদের কাছে পাঠায় দেয়।
- আল্লাহ কিভাবে পাঠায়?
- ওফ, যা ভাগ! খালি বিরক্ত করে ...
আম্মুর কথা বিশ্বাসও করতে পারতেছিনা আবার ফেলতেও
পারতেছিনা।
যাই হোক, দুদিন পরে দেখি নতুন কাহিনী। বাসায় নানু বেড়াতে আসছে। আমাকে নানুর কাছে রেখে আম্মু-আব্বু জানি কই চলে গেল। পরদিন দেখি, আম্মু একটা বাবু নিয়ে উপস্থিত। আমাকে দেখে আম্মু বলল, মামণি দেখো, তোমার জন্য বোন কিনে নিয়ে আসছি। আমি বললাম,
- কই থেকে কিনছ?
- অইতো ক্লিনিক থেকে
- হু... বুঝছি, আমাকে তোমরা ভাল পাওনা, তাই আমারে কিনছ ময়লা হাসপাতাল থেকে আর বোন কে কিনছ সুন্দর ক্লিনিক থেকে।
যাই হোক সেদিনের মতো আব্বু আমাকে কেম্নে ঠান্ডা করছিল, আপাতত সেটা আর মনে নাই।
ছোটবেলায় খুব বাংলা সিনেমা দেখতাম। সিনেমা গুলাতে কমন কাহিনী ছিল, নায়িকে মাথা ঘুরে পড়ে গেছে, তারপর ডাক্তার এসে দেখে নায়ক’কে বলতো, কংগ্রাচুলেশনস!আপনি বাবা হতে চলেছেন। আমি ভেবে পাইতাম না, এইভাবে ডাক্তারের বলার কি দরকার আর নায়িকারই বা মাথা ঘুরে পড়ে যাওয়ার কি দরকার! তারপর মনে হল, হতে পারে নায়ক-নায়িকা বাবু কিনতে চায়, কিন্তু তাদের মা-বাবাকে লজ্জায় বলতে পারছেনা, আর তাই নায়িকা মাথা ঘুরে পড়ে যাবার ভান করে তাদের মা-বাবাকে বুঝিয়ে দেয় যে তারাও এখন এডাল্ট, তাদেরও টাকা পয়সা হইছে, সো বাবু তারা কিন্তেই পারে ।
গিট্টু লাগ্লো আরেক সিনেমা দেইখা। যথারীতি,নায়িকা মাথা ঘুরে পড়ছে, ডাক্তার এসে দেখে নায়ক’কে যেই না বলছে, কংগ্রাচুলেশনস!আপনি বাবা হতে চলেছেন, অমনি নায়কের মাথায় বাজ , মানে সিনেমায় তখন বাজ পড়ার দৃশ্য । (নায়ক ডাক্তারকে) ‘ এ কী বলছেন ডক্টর, আমি তো আমার স্ত্রীর সাথে একদিনও ঘর করলাম না’ ... আমি মনে মনে বললাম, গাধার গাধা! টাকা দিবি বাবু কিনবি, ঘর করা - করির কি দরকার। এখানেও কাহিনী কিছুই বুঝলাম না।
ছোটবেলায় আমি ছিলাম আবার কারটুন-নেটওয়ারকের বিশাল ভক্ত। প্রতিদিন দুপুর দুটায় Looney-tunes দেখাইতো। অইখানে আবার দেখলাম, সারস পাখি তার ঠোটে করে বিভিন্ন সাইজের ঝোলা(যার ভিতরে বাবু থাকে) নিয়ে আসে, আর এক একটা বাসার সামনে রাইখা যায়। আমি ভাবলাম, তাইলেই হইসে, কাহিনী এইটাই, প্রতিটা হাস্পাতালের একটা করে সারস পাখি থাকে, এরাই বাবু সাপ্লাই দেয়।
কিন্তু এই পাখি বাবু পায় কইত্থনে, হেই উত্তর আর কেউ দিতেপারে নাই।
গিট্টুর পরে গিট্টু খালি বাড়তে থাকে। মোবাইলের এয়ার-ফোনের গিট্টু যেমন ছুটে না, এই গিট্টুও তেমনি ছুটেনা। আরে বাবা টাকা দিয়েই যদি বাবু কিনতে হয় তাইলে, আমাদের বুয়া পাচটা বাবু কেনার টাকা পাইলো কই? কিছুই বুঝলাম না। তারপর নিজে নিজেই হাইপোথিসিস বানায় নিলাম,আসলে বুয়া বেশি বেশি বাবু কিনসে তো, সব টাকা – পয়সা শেষ হয়ে গেছে,এর জন্যি তারে বাসায় বাসায় কাজ করতে হয়।
এখন মাঝে মাঝে চিন্তা করি, ছোটবেলায় আমরা বোধহয় একটু বেশিই গবেট ছিলাম। বাট আজকাল্কের পোলাপান? ও এম জি !! একটা একটা পুরা পাইকা টসটস করতেছে। এইতো গতকাল আমার কাজিনের সাত বছরের ছোট মেয়েটা আমাকে বলল, আন্টিমণি, তুমি জানো বেবীরা কিভাবে আসে? আমি ঢোক গিলে বললাম, এইতো মামণি হস্পিটাল থেকে কিনে আনতে হয়। পাশ থেকে আরেকটা পিচ্চি বলল, ধুর আন্টিমণি তুমি কিছুই জানেনা। বেবীরা আসে ফারটিলাইজেশনের মাধ্যমে। আমি শুধু মাথা নাড়ায় বললাম, আসলেইরে বাপধন, আমরা অনেক কিছুই জানিনা।
সর্বশেষ এডিট : ১২ ই অক্টোবর, ২০১২ রাত ১১:০১

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




