আমার খুবি অস্থির স্বভাব, মুহূর্তে মুহূর্তে ডিসিশন চেঞ্জ করি। এই যেমন, মেডিকেলে ভর্তি হবার পর ফার্স্ট ইয়ারে ভাবতাম MBBS এর পর ফিজিওলজিতে ক্যারিয়ার করব, সেকেন্ড ইয়ারে মনে হল, ধুর ইটা কোন সাবজেক্ট! এঁর চেয়ে বায়োকেমিস্ট্রি কী দারুন! আবার যখন থার্ড ইয়ারে আসলাম, মনে হল ফরেনসিক সবচেয়ে আনকমন, এটা নিয়ে MBBS এঁর পর পড়া যায়।
আমার স্বভাব আমার বাসায় সবাই জানে, অন্য সময় সবাই হাসাহাসি করে, বলে যা ইচ্ছা কর। বাট ফরেনসিক শোনার পর জিনিসটা সিরিয়াস হয়ে গেল, বাসা থেকেই বলা হল, মাথা নষ্ট নাকি, আগে মাথা ঠিক কর... ব্লা ব্লা ...
একজন র্যাোপড ভিকটিম যখন আসে মেডিকেলের ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টে পরীক্ষার জন্য, তখন তাকে যেতে হয় অনেক চুলচেরা বিশ্লেষণীয় পরীক্ষার মধ্য দিয়ে। পরীক্ষাকারী ডাক্তারের ইন্টেনশন এখানে কখনই খারাপ থাকেনা, কিন্তু এদেশীয় কালচারে বড় হওয়া যেকোন মেয়ের জন্য এই সব পরীক্ষা আরেকবারের জন্য র্যােপ হওয়ার নামান্তর মাত্র। অথচ এইসব পরীক্ষা ছাড়া মামলায় যথাযথ প্রমাণ দাখিল করাও সম্ভব না। এই সব পরীক্ষার ভয়ে তাই অনেক ভিক্টিম অনিচ্ছা সত্ত্বেও ক্রিমিনাল্টির বিরুদ্ধে মামলা তুলে নিতে হয় বাধ্য হ্য়।অথচ এখানে একজন ফিমেল ডক্টর থাকলে ভিকটিম অনেকটাই স্বাচ্ছন্দ বোধ করতেন। আপনি যতই বলুন ডাক্তার তো ডাক্তার_ই, তাদের আবার মেল-ফিমেল কি? কিন্তু যে মেয়ে একবার এক পুরুষের চরম-তম হিংস্রতার ভয়ানক নোংরা রুপ দেখে ফেলেছে , সে কিভাবে বিশ্বাস করবে আর কোন পুরুষকে।
আজকে পত্রিকায় (প্রথম আলো ১৬-০৪-১৩) কোন এক সরকারি মেডিকেলের ফরেনসিক বিভাগ নিয়ে একটা লেখা এসেছে। এখানে প্রশাসনের দোষ কতটুকু আমি জানিনা, শুধু এটা বলব, এখানে ক্যারিয়ার করা খুবই চ্যালেঞ্জিং, বিশেষত মেয়েদের জন্য তো অবশ্যই। দুদিন পর পর কোর্টে সাক্ষী দেয়া, তিন চারটা সমন মাথায় নিয়ে দিনে দু তিনটা পোস্টমর্টেম করা, জীবন আর সম্ভ্রমের রিস্ক নিয়েও প্রভাবশালি ক্রিমিনাল পার্টির বিরুদ্ধে যাওয়া ..... কেউ সহজে তাই মেনে নেবেনা তাঁর মেয়েটি, বা তাঁর বোনটি, বা তাঁর স্ত্রী টি ফরেনসিকে ক্যারিয়ার করুক। যথাযথ কর্তৃপক্ষ যদি একটু সদয় হোন, শুধুমাত্র ফরেনসিক ডিপার্টমেন্টে মেয়েদের জন্য কিছুটা কোটা সিস্টেমের ব্যবস্থা করা যায়, কিংবা আরো নানা উপায়ে মেয়েদের উৎসাহিত করা যায় ফরেনসিকে আসতে ( আর কিছু না হোক অন্তত র্যাআপ ভিক্টিম এক্সামিনিশনের ক্ষেত্রে), তাহলে, আমার ভিক্টিম বোনটি সাহস করে অন্তত মামলা করতে পারবে , সর্বোচ্চ বিচার চাইতে পারবে ক্রিমিনালের বিরুদ্ধে।
পত্রিকা অয়ালা রা দু দিন পর পর ডাক্তারদের নিয়ে লিখবে, তাঁর এগেনস্টে ডাক্তার রা আবার বলবে, ভাই এটা তো কোন জেদাজেদির বিষয় না, এখানে কেউ কারো প্রতিপক্ষও না। তাহলে কেন এই চুলোচুলি মুলোমুলি? এঁর চে চলুন একসাথে বসে চিন্তা ভাবনা করে কিছু একটা করা যেন ভিক্টিমদের দুর্ভোগ কিছুটা হলেও কমে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই এপ্রিল, ২০১৩ রাত ১২:৪২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




