somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মূর্তি লইয়া আমার প্রামান্য কথন ৪: অপরাজেয় বাংলা

১৯ শে ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


চার.

দুপুর রোদে গাছের ছায়ায় সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ খুলে বসলেন তার স্মৃতির খাতা। "এখন যেখানে অপরাজেয় বাংলা সেখানে আগে লতিফ সাহেবের করা আরেকটি ভাষ্কর্য্য ছিল। ওটা যে কোন কারনে ভাঙার ফলে বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ সেখানে আরেকটি ভাস্কর্য বসানোর সিদ্ধান্ত নিয়ে ছিল। বিশ্ববিদ্যালয় কতৃপক্ষ যখন ঠিক করলো যে এখানে আর একটা ভাস্কর্য বসানো হবে ডাকসুর সাংস্কৃতিক সম্পাদক ম. হামিদ আমার সঙ্গে যোগাযোগ করেন। ম. হামিদ চারুকলা ঘুরে ঘুরে দেখেছে কে ভালো ভাস্কর্য তৈরি করছে। এটা ডুল কো ইনসিডেন্স হয়ে গেছে। ওনারা একটা কাজ খুঁজছে। এ দিকে আমিও কাজটা শুরু করেছি..."

তেমন কায়দা করে কথা বলতে পারেন না খালিদ ভাই। কথা বলেন শিশু সুলভ সরলতায়। কিছু একটা জিজ্ঞেস করলেই হরহর করে বলতে শুরু করেন। থেমে থেমে বলতে বললে খেই হারিয়ে ফেলেন। উনিতো বলে খালাস, ব্যাকায়দায় পড়ি আমি। একটা কিছু দ্বিতিয়বার গুছিয়ে বলতে বললেই বলেন, এই কথাটাতো এক বার বলছি আমি!;) আমি ত আর তখন উনারে আমার টেকনিক্যাল সীমাবদ্ধতাটার কথা বোঝাতে পারি না। তার পর ও উনি ধৈর্য্য নিয়ে বলতে থাকেন উনার জীবনের মহাকাব্য। আমিও টেপের পর টেপ ভরে চলেছি। গাছের ডালে হাত দিয়ে ইতিহাসের সাক্ষি হতে থাকে শান্ত। এই প্রজন্মের এক প্রতিনিধি।

বিকেলে ফিরবার পথে ফুটপাথে মোটা মোটা সবুজ কচুর লতি দেখে গাড়ী থেকে নেমে হাটা দেন খালিদ ভাই। গত বার মতিঝিলের আরব বাংলাদেশ ব্যাংক এর দেয়ালে উনার মুক্তি যুদ্ধ ও আবহমান বাংলা এই রকম থীমের ওপর করা ওনার বিশাল টেরাকোটার কাজের ছবি তুলে ফিরবার পথে উনার এই একই ঘটনা দেখে ছিলাম। পরে চারুকলার পোলাপানের মুখে গল্প শুনেছি খালিদ ভাই'র নিজ হাতে বাজার সদাই করার সখের কথা। এক গাদা তরি তরকারী কিনে গাড়িতে উঠলেন সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ। অপরাজেয় বাংলার স্রষ্টা।

খালিদ ভাই জোর করে বাড়ী নিয়ে এলেন আমাদের। খাওয়াদাওয়া শেষে আমি খাতা কলম নিয়ে বসি। খালিদ ভাই কৃষক মডেল যিনি দিয়েছেন এবং আপনার সাথে সবচে ঘনিষ্ট হয়ে যিনি কাজ করেছেন সেই বদরুল আলম বেনু সহ ছাত্র মডেল সৈয়দ হামিদ মকসুদ ফজলে এনাদের কন্টাক্ট আমারে দেন। খালিদ ভাই বললেন বেনু'র ছেলের সাথে যোগাযোগ হইছিল দুই বছর আগে ওর কন্টাক্ট নাম্বারটা আছে ঢাকার ফ্লাটে। ফজলে সাহেবকে ফোন করলেন উনি পেওলন না। আর ফোন করলেন সালেহ চৌধুরী কে। বলে রাখি, অপরাজেয় বাংলা এই নামটি দিয়ে ছিলেন দৈনিক বাংলার সাংবাদিক(সম্ভবত তখন সাব এডিটর) মুক্তি যোদ্ধা সালেহ চৌধুরী। ১৯৭৩ তে যখন স্বাধীনতা ভাষ্কর্যের প্রাথমিক কাজটি শেষ হয় তখন সে কাজটির ওপর ২২ জুলাই ১৯৭৩ এ একটি উপ সম্পাদকীয় লিখেন তিনি দৈনিক বাংলায়। শিরোনাম, অপরাজয় বাংলা । মজার ব্যাপর হলো সেই থেকে লোক মুখে মুখে শ্রুত হতে হতে স্বাধীনতার এই ভাষ্কর্যটির নাম অপরাজেয় বাংলা হয়ে যায়। সালেহ চৌধুরীকে পাওয়া গেল ফোনে। আমি কথা বলি তার সাথে। কথা হয় যার ব্যাক্তিগত বদান্যতায় সম্পূর্ণ বিনা খরচে ও অভিনব পদ্ধতিতে ভাষ্কর্যের ঢালাইটি যিনি করিয়ে দেন সেই শহিদুল্লাহ্ এ্যাসোসিয়েট্স এর প্রকৌশলী এস এম শহিদুল্লাহ সাহেবের সাথে। ঠিক হয় ঢাকায় এসে নিদৃষ্ট দিনে তাদের কাছে যাবো।

চা খেতে খেতে ভাবী বের করে দেখান তার হেফাজতে থাকা সেই সময়ের কিছু ছবি। বলাবাহুল্য এর মাঝে অপরাজেয় বাংলার তিনফুট উচ্চতার সেই মডেল ভাষ্কর্যটির ছবি ও ছিল। ভাবীর কছে শুনলাম এই ছবি গুলি তুলিয়ে ছিলেন চলচ্চিত্র ব্যাক্তিত্ব খান আতাউর রহমান। তার বিখ্যাত ছবি "আবার তোরা মানুষ হ" এর টাইটেলে এই স্থির চিত্রটি ব্যাবহার করা হতে দেখা যায়। জিজ্ঞেস করলাম ছবি গুলো কার তোলা? ভাবী বললেন খান আতা'র ভাই। ভাবী বললেন আরো এক মজার কথা। ১৯৭৯ সালে অপরাজেয় বাংলার কাজ যখন দ্বিতীয় দফা শুরু হয় তখন এক দিন উনি খবর পেলেন ইউনিভার্সিটিতে গোলাগুলি চলছে। খবর পেয়ে উনি পড়িমরি করে ছুটে আসেন ক্যাম্পাসে। এসে দেখেন ক্যাম্পাসের ভুতুড়ে নির্জনতায় থমথম করছে আর সৈয়দ আবদুল্লাহক খালিদ মাচার উপর ধুলায় ধুসর হয়ে কেটে চলেছেন পাথর্ অথচ নিচ দিয়ে কিছুক্ষন আগেয়ে কারবালা হয়ে গেছে তার কোন খবরও তার ছিল না!

বিকেলে খালিদ ভাই, ভাবী সবাই মিলে গেলাম আলম খোরশেদের বিশদ বাঙলায়। মন্ট্রিয়ল ছাড়বার পর আলম খোরশেদের সাথে দীর্ঘ্য বছর পর দেখা। খালিদ ভাই থাকেন একই শহরে নাম শুনেছেন কখনো যান নাই আলম খোরশেদের বিশদ বাংলায়। সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদকে প্রথমবারের মত কাছে পেয়ে আলম খোরশেদ ঘুরে ঘুরে দেখালেন বিষদ বাঙলার কার্য্যক্রম আমাদের। আড্ডা হলো অনেক দিন পর। মন্ট্রিয়লে আলম ভাই আমাকে আপনি করে বলতেন এখন দেখি তুমি করে বলতে শুরু করেলন! আমাকে জিজ্ঞেস করলেন হেলাল কি প্লান, কি করতেছ এখন? আমি বলি ডকুমেন্ট্রি বানাচ্ছি, নাম অপরাজেয় বাংলা



(চলিবেক)

মূর্তি লইয়া আমার প্রামান্য কথন ১: অপরাজেয় বাংলা

মূর্তি লইয়া আমার প্রামান্য কথন ২: অপরাজেয় বাংলা

মূর্তি লইয়া আমার প্রামান্য কথন ৩: অপরাজেয় বাংলা

ওয়েব ঠিকানা, অপরাজেয় বাংলা

সৈয়দ আবদুল্লাহ খালিদ এর এই ছবিটি গত ১৬ ডিসেম্বর শিল্পীকে নিয়ে লেখা একটি প্রতিবেদনের সাথে ইংরেজী দৈনিক ডেইলি স্টারের ছাপা হয়েছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০০৯ বিকাল ৪:৩৫
৬টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বিজয়ের আগে রাজাকারের গুলিতে নিহত আফজাল

লিখেছেন প্রামানিক, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:১৩


ঘটনা স্থল গাইবান্ধা জেলার ফুলছড়ি থানার উড়িয়া ইউনিয়নের গুণভরি ওয়াপদা বাঁধ।

১৯৭১সালের ১৬ই ডিসেম্বরের কয়েক দিন আগের ঘটনা। আফজাল নামের ভদ্রলোক এসেছিলেন শ্বশুর বাড়ি বেড়াতে। আমাদের পাশের গ্রামেই তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

৫৫ বছর আগে কি ঘটেছে, উহা কি ইডিয়টদের মনে থাকে?

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৫:৫৮




ব্লগের অনেক প্রশ্নফাঁস ( Gen-F ) ১ দিন আগে পড়া নিউটনের ২য় সুত্রের প্রমাণ মনে করতে পারে না বলেই ফাঁসকরা প্রশ্নপত্র কিনে, বইয়ের পাতা কেটে পরীক্ষার হলে নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিজামী, মুজাহিদ, বেগম জিয়াও বিজয় দিবস পালন করেছিলো!!

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৭:২০



মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বেগম জিয়ার মুরগী মগজে এই যুদ্ধ সম্পর্কে কোন ধারণা ছিলো না; বেগম জিয়া বিশ্বাস করতো না যে, বাংগালীরা পাকীদের মতো শক্তিশালী সেনাবাহিনীকে পরাজিত করতে পারে;... ...বাকিটুকু পড়ুন

১৯৭১ সালে পাক ভারত যুদ্ধে ভারত বিজয়ী!

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯


দীর্ঘ ২৫ বছরের নানা লাঞ্ছনা গঞ্জনা বঞ্চনা সহ্য করে যখন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বীর বাঙালী অস্ত্র হাতে তুলে নিয়ে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে দেশ প্রায় স্বাধীন করে ফেলবে এমন সময় বাংলাদেশী ভারতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইন্দিরা গান্ধীর চোখে মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক: ওরিয়ানা ফলাচির সাক্ষাৎকার থেকে

লিখেছেন শ্রাবণধারা, ১৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:৫৫


১৯৭২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইতালীয় সাংবাদিক ওরিয়ানা ফলাচি ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাক্ষাৎকার নেন। এই সাক্ষাৎকারে মুক্তিযুদ্ধ, শরনার্থী সমস্যা, ভারত-পাকিস্তান সম্পর্ক, আমেরিকার সাম্রাজ্যবাদী পররাষ্ট্রনীতি এবং পাকিস্তানে তাদের সামরিক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×