somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুর্তি লইয়া আমার প্রামান্য কথন ৩: অপরাজেয় বাংলা

১৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ বিকাল ৩:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

তিন.

সেদিন ভোরে আমার সাথে অপরাজেয় বাংলায় গেল ভাগনা শান্ত। পেশায় কম্পিউটার ইন্জিনিয়র শান্ত এই জেনারেশনের ছেলে। আশির দশকে যার জন্ম। দেশে ফেরার পরপরই এক দিন আমার দেশ প্রেমিক সব প্রজেক্টের প্যাচাল শুনে ও আমাকে বলেছিল, কিছু মনে করেন না আন্কেল মুক্তি যুদ্ধের পর যারা দেশটা এগিয়ে নেবার কথা ছিল তারাই দেশটাকে বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। যে স্বপ্ন দেখে ছিলেন আমাদের পূর্ব পুরুষেরা এক শ্রেণীর মানুষ সে স্বপ্নটাকে চুরি করেছে ব্যাবহার করেছে। আমরা আজকের জেনারেশনের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়েছে ভুল ইতিহাস, অশুদ্ধ মানসিকতা, কনফিউজ্ড এক আগামী! কথা গুলো ঠিক এই শব্ধে বলেনি ও কিন্তু ওর কথার অর্থ গুলো পরিস্কার ভাবে তাই দাড়ায়। আমি ওর কথার কোন উত্তর দিই নাই। শুধু বললাম, তার পরেও এটা আমাদের দেশ। এই দেশকে আমি কি দিতে পারি সেটাই আমারকাছে আসল। কথা কটা বলে ফেললাম গৎবাধা, কিন্তু জানি না কেনো মনে তেমন বল পেলাম না।

অটোয়া থেকে মন্ট্রিয়লের পথে অরেকবার আরেক তরুন কম্পিউটার ইন্জিনিয়ারের তোপের মুখে পড়ে ছিলাম। সেবার শুনতে হয়ে ছিল, আপনেরাত পলাতক। দেশ ছাইড়া পালাইয়া বিদেশে দুই নম্বরি জীবন যাপন করতে আইছেন। আপনে যখন দেশ ছাড়ছেন আপনি কি কইতে পারতেন আপনের জীবনের লক্ষ্য কি? অথচ আমি ঠিকই জানি আমি কি হইতে চাই। চাবুকের মত কথা গুলো আমাকে রক্তাক্ত করলেও বলতে পারলাম না কিছুই। কুড়ি বছর আগে একটা ভালো ক্যামেরা কিনার স্বপ্ন নিয়া খুব কম বয়সে আকাশে উড়াল দিয়ে ছিলাম। এ ফ্যান্টাসি আজকের দিনের পোলাপাইনের কছে খুবই চীপ শোনাবে বিধায় আমার ঘর ছাড়া হবার কাহিনীটা আর তদের বলতে গেলাম না। এই সময়ের পোলাপাইনরে দেশ থেকে বাপ/মায়ে লক্ষ কোটি টাকা পাঠিয়ে বিদেশে পড়াশোনা করায়। তাদের কাছে আমি এক জন ক্রীতদাসের আলতুফালতু স্বপ্ন আদৌ কি কোন গুরুত্ব পাবার বিষয়!

রাতে বাড়ী ফিরে ফেইস বুকে পেলাম নিউইয়র্কের রিজু মাহমুদকে। ওর কাছে জাহেদের ফোন নাম্বার চাইলাম। জাহেদ শরীফ চট্টগ্রাম চারুকলার ছাত্র থাকে নিউইয়র্কে বিয়ে করেছে খালিদ ভাইয়ের মেয়েকে। শামিম ভাইকে না পেয়ে ভাবলাম জায়েদের কাছ থেকে আবদুল্লাহ খালিদের নাম্বারটা নিয়েনি। রিজুর কাছে জানা গেল জাহেদের বাবা মারা গেছে তাই ও এখন দেশেই আছে। পর দিনই শিল্পী আবদুল্লাহ্ খালিদের ফোন নাম্বার পেয়ে গেলাম। শান্ত বলল চলেন আন্কেল চিটাগাং যাই। আমি দীর্ঘ্য তিন বছর পর আবার ফোন করলাম খালিদ ভাই কে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে এর আগে জীবনে কোন দিন যাই নি। সকাল নটায় খালিদ ভাইকে তার সুগন্ধা্যা আবাসিক এলাকার বাসাথেকে নিয়ে রওয়ানা দিলাম তার বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। শিল্পী তার প্রিয় বুটের ডাল আর পরোটা দিয়ে নাস্তা করালেন শিক্ষকদের একটা ক্যাফেটেরিয়ায়। এর পর গেলেন তার ক্লাসে সেখান থেকে ক্যাম্পাসের এ জায়গায় যান তো ও যায়গায় যান কিন্তু কোথাও স্থির কয়ে বসছেন না। এক পুকুরে ভালো পদ্দ ফোটে ঐটা দেখাতে নিয়ে গেলেন কত দূর। আবার ভিসি'র বাড়ী থেকে নাকি ভালো ভিউ পাওয়া যায় সে জন্য ওঠালেন এক টিলায়। ঐ খানে উঠে গাছের জন্য নিচে দেখা গেল না কিছুই। আমি বলি চলেন খালিদ ভাই কোথাও বসে আপনার সাথে একটু কথা বলি সূর্য্যত মাথার ওপর উঠে গেছে। উনি নিয়ে গেলেন আবার আরেক যায়গায় যেখানে নাকি একটা বিরল্ডংয়ের একটা মজার এঙ্গেল পাওয়া যাবে। গেলাম তার পিছু পিছু।

এখাবে ঘোরাঘুরি চলল কিছুক্ষন, খালিদ ভাই বললেন গতবার না আপনেরে বললাম সব কিছু। আমি উনাকে বলি, এবারে অডিওটা একটু ঠিক করে নিব আর এতোদিনে আমিও অপরাজেয় বাংলা সম্পর্কে আরো বিশদ তথ্য উপাত্য ইত্যাদি ইত্যাদি জোগাড় ও করেছি। উনি বড় শিল্পী কিন্তু কথা তেমন পরিপাটি করে বলতে পারেন না। তাই বার বারই কথা বলায় জড়তাকে এ্যাভয়েড করতে চাইছিলেন কিনা কে জানে! আমি নাছোড় বান্দা। গতবারের ক্যামেরাটা ছিল এনটিএসসি এবারে তুলব পাল ফরম্যাটে, অবশেষে ইউনিভার্সিটির ভেতরেই বোটানিক্যাল গার্ডেনটাইপ এক যায়গায় তিনি আমাদের নিয়ে গিয়ে থামলেন।

ততক্ষনে টের পেলাম উনি মানুষ জনের সামনে কথা বলতে বোধহয় সঙ্কোচ বোধ করেন। যাই হউক দুপুর রোদে একটা বড় গাছের নিচে শিল্পীকে বসিয়ে আমার ক্যামেরা ওপেন করলাম।

(চলিবেক)


মুর্তি লইয়া আমার প্রামান্য কথন: অপরাজেয় বাংলা এক.

মুর্তি লইয়া আমার প্রামান্য কথন: অপরাজেয় বাংলা দুই.

ছবি: ১৯৭৩ তে নির্মীত অপরাজেয় বাংলার মডেল ভাস্কর্যের ছবি এটি। এর উচ্চতা ছিল তিন ফুট। পরবর্তীতে এই ভাস্কর্যটি অবলম্বনে চার গুন বড় একটি ভাস্কর্য তৈরী করেন শিল্পী ও তার দল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কলা ভবন চত্তরে।
অপরাজেয় বাংলা'র প্রথম মডেল ভাস্কর্য টির ছবি তুলিয়ে ছিলেন চলচ্চিত্র ব্যাক্তিত্ব খান আতাউর রহমান। তার বিখ্যাত ছবি "আবার তোরা মানুষ হ" এর টাইটেলে এই স্থির চিত্রটি ব্যাবহার করা হতে দেখা যায়। শিল্পী আবদুল্লাহ খালিদের পরিবার সূত্রে জানা যায় ছবিটি তুলে ছিলেন খান আতার ভাই সম্ভবত খান আরিফুর রহমান।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই মে, ২০০৯ বিকাল ৪:৩৮
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সৎ মানুষ দেশে নেই,ব্লগে আছে তো?

লিখেছেন শূন্য সারমর্ম, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১:৪৮








আশেপাশে সৎ মানুষ কেমন দেখা যায়? উনারা তো নাকি একা থাকে, সময় সুযোগে সৃষ্টিকর্তা নিজের কাছে তুলে নেয় যা আমাদের ডেফিনিশনে তাড়াতাড়ি চলে যাওয়া বলে। আপনি জীবনে যতগুলো বসন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

গরমান্ত দুপুরের আলাপ

লিখেছেন কালো যাদুকর, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৫৯




মাঝে মাঝে মনে হয় ব্লগে কেন আসি? সোজা উত্তর- আড্ডা দেয়ার জন্য। এই যে ২০/২৫ জন ব্লগারদের নাম দেখা যাচ্ছে, অথচ একজন আরেক জনের সাথে সরাসরি কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাজীব নূর কোথায়?

লিখেছেন অধীতি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৩:২৪

আমি ব্লগে আসার পর প্রথম যাদের মন্তব্য পাই এবং যাদেরকে ব্লগে নিয়মিত দেখি তাদের মধ্যে রাজীব নূর অন্যতম। ব্যস্ততার মধ্যে ব্লগে কম আসা হয় তাই খোঁজ-খবর জানিনা। হঠাৎ দু'একদিন ধরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বৃষ্টির জন্য নামাজ পড়তে চায়।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৩৮



ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী গত বুধবার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে বৃষ্টি নামানোর জন্য ইসতিসকার নামাজ পড়বে তার অনুমতি নিতে গিয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এটির অনুমতি দেয়নি, যার জন্য তারা সোশ্যাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=তুমি সুলতান সুলেমান-আমি হুররাম=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৮ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:৩৬



©কাজী ফাতেমা ছবি

মন প্রাসাদের রাজা তুমি, রাণী তোমার আমি
সোনার প্রাসাদ নাই বা গড়লে, প্রেমের প্রাসাদ দামী।

হও সুলেমান তুমি আমার , হুররাম আমি হবো
মন হেরেমে সংগোপনে, তুমি আমি রবো।

ছোট্ট প্রাসাদ দেবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×