একেক বারে একটা করে পেরেক অথবা সবগুলো একসাথে
পেরেক গল্প বলে, গল্পগুলো মিথ্যে
মানুষ গায়ের রং নয়
না তাদের শরীরের লিঙ্গ অথবা হাতের কড়া-পড়া ছাল
মানুষ পুষ্প, মাটিতে শিকড়
সূর্যালোক মেখে একশ কোটি তারার মশাল
যখন ছোট তখন থেকেই
মানুষ শরীরে পেরেক দিয়ে আটকানো
এমন কিছু জিনিস ছিল যা একজন পুরুষ করতে পারে
কিন্তু একজন নারী পারে না কখনো
কিছু জায়গায় শুধু ধনীরাই যেতে পারে
যেখানে গরীবের নেই প্রবেশাধিকার
এবং সর্বদা, শত্রু তো আছেই
মহাসাগর জুড়ে, পথের ভুল পাশটা জুড়ে
বিদেশী দেহ, শুধু সীমান্তের ওপার
সংখ্যালঘু বাংলায়
মনের অজান্তে ও রাষ্ট্রষড়যন্ত্রে
লোকেরা বিভক্ত করছে সম্প্রদায়
পৃথিবীর ইতিহাসে শক্তিশালী সাম্রাজ্যবাদী কাহিনী
আমার দেশ, আমার সেনাবাহিনী
কিন্তু বিপক্ষের দল মুক্তিযোদ্ধা, এবার আমরাই হানাদার
অসত্য, অবিচার
এবং সোনার বাংলার পথ
সারাজীবন এই মিথ্যা জয়বাংলায় করেছি শপথ
এখন সবকিছু বদলে গিয়ে
যেমন পৃথিবীর দিকে তাকালাম
আদিবাসী চোখ দিয়ে
গৃহযুদ্ধ ডাকা হোক, স্লোগান সর্বক্ষণ
অভিশাপ হিসেবে নয়, উপহার হিসেবে
যেন আমন্ত্রণ
আর যুদ্ধ এখন বাংলাদেশের অগণতান্ত্রিক নাম
সাথে যোগ দাও
এই যেমন আমরাও দিলাম
বিপ্লব
অন্যমাত্রায় পা রাখার মতো সব
ভিতরে বাইরে প্রতিলোম ওলটানো
দুই, তিন, অনেক পার্বত্য চট্টগ্রাম
রোহিঙ্গা, বিহারী, রাখাইন, আসাম
বীর ও স্বাধীনতার দেশ
খারাপই এখন ভালোর সর্বনাম
এবং যাকিছু ভালো ভেবেছিলাম
তা ছিল রাক্ষস
জামাতী পুঁজিবাদের হায়েনা কাহিনী
এমনকি এই শব্দবন্ধটাও আগে শুনিনি
মানসিক তলোয়ার ও নিজস্ব লেখার বাইরে
কিন্তু খুঁজে পাওয়া যায় সর্বত্র সমাহিত
যদি একবার শুরু হয় গণকবর খনন
যুদ্ধ এবার বাড়িতে আসুক, স্লোগান সর্বজন
আর এখন
আমি দেখতে পাই
যুদ্ধ এদেশে ছিল সর্বদাই
কোণাকাঞ্চিতে মুক্তিযোদ্ধাদের দেখা যায়
শত্রুকেও দেখি প্রতিটা কোণায়
মানুষই পিঠে করে বয়ে নেয় শত্রুকে
শত্রু শরীরেই দেয়া আছে পেরেক দিয়ে আটকে
মানুষের আত্মা তবে কিইবা আর শরীর উন্মুক্ত করা ছাড়া
দেহের মুক্তি
দেহের সমস্ত রহস্য এবং গোপনীয়তায়
তার সব সম্ভাবনায়
এর সমস্ত আন্তঃসম্পর্কে অন্তঃস্থিত
আমি বাঘ যতটা ততটা শক্তিশালী নই
পারি না সাঁতার কাটতে মাছের মত
কিংবা পাখির মতো বাতাসে উড়তে
'আমাকে' যা অনন্য করে তোলে
তা 'তুমি'
আমি তোমার কথায় বাঁচি
আমি তোমার গান গাই
আমি তোমার গানে নাচি
স্বাধীনতা
পাহাড়ের দুর্গে থাকে এমন রাজা নয়
যার কারো দিকেই নজর নেই এমন সমস্ত জরিপকর্তা,
স্বাধীনতা তুমি, তোমার শরীর
তার সব দুর্বলতা এবং ক্ষমতা
ক্ষুধা ও তৃষ্ণা, আশা এবং ভয়
স্বাধীনতা হলো তোমার আর আমার
একে অপরকে দেয়া খানা
পেটের জন্য খাবার
হৃদয়ের অনুরোধে সাহস
কল্পনা করার ধারণা
পুঁজিবাদ শরীরকে ভয় পায়
পুঁজিবাদ শরীরের বিরুদ্ধে যুদ্ধ চালায়
পুঁজিবাদ শরীরকে করে ঘৃণা
কারণ শরীরকে বিশ্বাস করা যায় না
শরীর নিয়ম ভঙ্গ করে
বর্ণ, জাতি, লিঙ্গ, শ্রেণী
এই জিনিসগুলি নেই মানুষের দেহের ভিতরে
মানুষই তাদের, তারা মানুষের দখলে নয়
যেভাবে মানুষ চলমান সমাজের অংশ হয়ে ওঠে
সেভাবেই মানুষকে রাষ্ট্রযন্ত্রে পেরেক দিয়ে আটকানো হয়
আর এসবের মধ্যে, লিঙ্গই আদিম
এটাই মানুষের ধারণাকে আক্রমণ করে
জীববিজ্ঞানের গভীরতম স্তরে
যৌনাঙ্গ হলো শরীর, মানুষ জন্তু
লিঙ্গ মানে পুঁজিবাদ, বাঘের ঘাড়ে চড়ার উৎপাত
লিঙ্গ অর্থ উদ্দীপনা আর চাবুকের কশাঘাত
এবং কেউ এটা থেকে দূরে যেতে পারে না
এখনো কোনো অলিঙ্গের ধারণা
ততটুকুই যতটা হয় না উপভাষা আঞ্চলিক উচ্চারণ ছাড়া
এটি এক লিঙ্গবিশিষ্ট বিশ্ব — তাদের নিয়ম
এবং হয় ভাঙতে হবে নতুবা রাখা যায় অক্ষত
তবে এগুলো সবই একেকটা বারকোড
যা-ই বেছে নেয়া হোক প্রতিনিয়ত
লিঙ্গ বিলুপ্তি — যদি পারা যেত
লিঙ্গ হলো একটি পেরেক যা প্রত্যেকের মধ্যে প্রোথিত
দিন যায়, দিন আসে, দোলনা থেকে কবরে
লিঙ্গ পরিচয় হলো ক্ষত
যা বেড়ে ওঠে পেরেকের চারপাশ বরাবরে
শরীর যেমন নিজেকেই আরোগ্য করার চেষ্টা করে
কিন্তু সুস্থ করতে পারে না
কারণ পেরেকটা এখনো আছে
আর এটাকে দূরও করা যাচ্ছে না
সমস্যার শুধু পেরেকই নয় কারণ
আসল সমস্যা হলো হাতুড়ি
যে বাড়িতে মারতেই থাকে নিষ্পেষণ
পেরেক ভালবাসতে শেখা
কাজে দেয় না
কারণ যদি না থাকে প্রতিরোধের মানসিক ঢাল
এটা আরো গভীরে যায় ঢুকে
চিরকাল
তাই উল্টো আঘাত চালিয়ে যেতে হবে
অন্যথায় হাতুড়ি বাঁশডলা দেবে
হাতুড়িটা ছিনিয়ে নিয়ে এটা হতে পরিত্রাণ
কিন্তু করা যাবে না অন্যকোন চোরার কাছে চালান
হাতুড়ি থেকে রেহাইপ্রাপ্ত
করে শরীর স্বাধীন
করে আত্মাকে মুক্ত
আর পৃথিবীটাকে পেরেকবিহীন
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই মে, ২০২২ সকাল ৭:০২