somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

লক্ষণ ভান্ডারী
লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী –নামেই কবির পরিচয়। কবির বাড়ি পশ্চিমবঙ্গে বর্ধমান জেলার পাথরচুড় গ্রামে। প্রকৃতির সাথে পরিচয় ছোটবেলা থেকেই। বর্তমানে কবি বাংলা কবিতার আসর, বাংলার কবিতা ও কবিতা ক্লাবের সাথে যুক্ত। অবসর সময়ে কবি কবিতা লেখেন ও স্বরচিত কবিতা আবৃত্তি করেন

ঐতিহাসিক মে দিবস-২০২০ মহান বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক!

০১ লা মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
ঐতিহাসিক মে দিবস-২০২০ মহান বিপ্লব দীর্ঘজীবি হোক!
ক্ষুধার্ত মানুষের সংগ্রাম চলছে, চলবে।
ইনকিলাব- জিন্দাবাদ

তথ্যসংগ্রহ ও কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী



শ্রমজীবী মানুষের ঐতিহাসিক সংগ্রামের লাল রক্তে চিহ্নিত মে দিবস আজ (১ মে, শুক্রবার)। ২০২০ সালের এই মে দিবসে করোনা আক্রান্ত পৃথিবীতে খেটে খাওয়া মানুষেরাই সবচেয়ে বেশি বিপন্ন ও বিপদগ্রস্ত পরিস্থিতি পাড়ি দিচ্ছেন।
শ্রমিক ও মেহনতী মানুষ করোনার ফলে ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, চাকরিচ্যুতি, রোজগারহীনতা, মন্দা, হতাশা ও অনিশ্চয়তার বেড়াজালে আবদ্ধ হয়ে পড়েছেন

এক অভাবনীয় বিরূপতার মধ্যে সারা পৃথিবীর দমবন্ধ স্তব্ধতায় মে দিবসকে স্বাগত জানানো হচ্ছে। ফলে বিশ্বব্যাপী করোনার আগ্রাসনের বিরুদ্ধে বেঁচে থাকার সার্বক্ষণিক যুদ্ধে লিপ্ত শ্রমজীবী মানুষের জীবনসংগ্রামে স্পন্দিত মে দিবস এসেছে অবিরাম লড়াই চালিয়ে যাওয়ার চেতনাদীপ্ত প্রত্যয়ে।

চলমান লড়াইটি প্রধানত শ্রমিক শ্রেণির হলেও তা কেবল তাদের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নেই। বরং ঘোরতর বিপদের ঘণ্টাধ্বনি বাজিয়ে ছড়িয়ে গেছে বিশ্বময় সব জাতি, ধর্ম, ভাষা, বর্ণ, অঞ্চল, লিঙ্গ ভেদে সর্বস্তরের মানুষের মধ্যে। ফলে ‘শ্রমিক-মালিক ঐক্য গড়ি, সোনার বাংলা গড়ে তুলি’ প্রতিপাদ্যে করোনা কবলিত এ বছরের (২০২০) মে দিবস পালিত হচ্ছে ।

তবে, চলমান করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন, সঙ্গরোধ ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে এ বছর মে দিবসের সব আনুষ্ঠানিকতা বাংলাদেশে এবং সম্ভবত বিশ্বের অধিকাংশ স্থানেই বাতিল করা হয়েছে। ফলে এ বছর দেখা যাবে না মে দিবসের বর্ণিল শ্রমিক সমাবেশ আর শোনা যাবে না বজ্রকণ্ঠে ঘোষিত ‘দুনিয়ার মজদুর, এক হও’ ধ্বনি।

কারণ, বৈশ্বিক মহামারি আকারে করোনাভাইরাসের ব্যাপক বিস্তারের পটভূমিতে সামাজিক দূরত্ব ও সঙ্গরোধের কঠোর বিচ্ছিন্নতায় সাধারণ মানুষের মতোই শ্রমজীবী, কৃষক, শ্রমিক, মেহনতী মানুষের জীবন থমকে গেছে। রোগের ঝুঁকির পাশাপাশি বাড়ছে শ্রমজীবী মানুষের জীবন নির্বাহের বহুমুখী সংকটও। তাদের ঘিরে ধরেছে করোনা পরিস্থিতি-সৃষ্ট নানাবিধ আর্থ-সামাজিক চ্যালেঞ্জ।

দিনান্তের সামান্য রোজগারে যাদের জীবন চলে, পরিস্থিতিগত কারণে তাদেরও সঙ্গরোধে ঘরে থাকার প্রয়োজন হয়ে দাঁড়িয়েছে। কিন্তু কর্মস্থলের বাইরে থাকার ফলে তাদের প্রাত্যহিক জীবনে নেমে এসেছে সীমাহীন সংকট। ফলে জীবনধারণের তাগিদে ঝুঁকি নিয়ে কাজে যেতে হচ্ছে তাদের। বের হতে হচ্ছে রিকশা বা ভ্যান নিয়ে। ফসল কাটতে মাঠে কিংবা মাছ ধরতে যেতে হচ্ছে নদীতে। উৎপন্ন পণ্যের মূল্য পাওয়ার জন্য হাজির হতে হচ্ছে হাট-বাজারের জনারণ্যের স্বাস্থ্যগত বিপদ সঙ্কুল ভিড়ে। আদিঅন্তহীন নগ্ন পদধ্বনিতে শত সহস্র শ্রমিককে প্রলম্বিত পদযাত্রা করতে হচ্ছে লকডাউন ভেঙে কারখানা অভিমুখে।

জীবনের কঠিন বাস্তবতা আর করোনার প্রাণঘাতী পরিস্থিতির দোলাচলের মধ্যেই কাটছে শ্রমজীবী মানুষের সংগ্রামমুখর জীবন। যেখানে নিত্য বিরাজমান জীবনের লেলিহান ক্ষুধার দাবি আর করোনা সংক্রমণের ভয়াবহ ঝুঁকি। এমনই এক বিরূপতার মধ্যে শ্রমিক শ্রেণির লড়াকু জীবনে আশার স্ফুলিঙ্গের মতো এসেছে করোনা কবলিত মে দিবস। মে দিবস শতবর্ষের সংগ্রামশীল অভিজ্ঞতার মধ্যে দিয়ে বিদ্যমান সংকট ও সঙ্কুলতা উত্তরণের জন্য শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে জাগাচ্ছে নবতর লড়াইয়ের সাহস, স্পৃহা ও প্রতীতি।

১৮৮৬ সালে শ্রমজীবী মানুষ ঐক্যবদ্ধ হয়ে মালিক ও শোষকদের বিরুদ্ধে সরাসরি লড়ে জীবন ও রক্ত দিয়েছিলেন। শতবর্ষ পরে তাদের জীবন দিতে হচ্ছে অদৃশ্য ভাইরাসের কবলে, নীতিগত ভ্রান্তিতে ও ভুল পরিকল্পনার কারণে। আমেরিকার শিকাগো শহরের হে মার্কেটের আত্মাহুতির পেছনে ছিল নির্দিষ্ট কর্মঘণ্টার দাবি। সে দাবি পরিপূর্ণ হলেও কর্মপরিবেশ, ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা, স্বাস্থ্য সুরক্ষা, সামাজিক স্থিতিশীলতা, আর্থিক স্থিরতার মতে বহুবিধ বিপদ একবিংশ শতকের অগ্রসর পৃথিবীতেও আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে রেখেছে শ্রমজীবীদের কর্মক্লান্ত জীবন।

বৈশ্বিক মহামারি করোনার প্রতিক্রিয়ায় শ্রমজীবীদের অবস্থান আরো নাজুক হয়েছে। অনেক নতুন নতুন স্বাস্থ্য ও পেশাগত বিপদ তৈরি হচ্ছে শ্রমিক ও মেহনতী মানুষের সংগ্রামী জীবনের পদে পদে। তদুপরি, প্রযুক্তি, পরিবেশ ও পরিবর্তনের জোয়ারের ফলে নব নব সমস্যা উত্থিত হয়ে কালাপাহাড়ের মতো সামনে এসে দাঁড়াচ্ছে। শ্রমিক শ্রেণির স্বার্থে যেসব সমস্যা নিয়ে গভীরভাবে ভাবনা-চিন্তা করার এবং প্রতিবিধান খুঁজে বের করার দরকার আছে মে দিবসকে সামনে রেখে।

ঐতিহাসিক মে দিবস অতীতের সংগ্রাম ও ত্যাগের অভিজ্ঞতায় শ্রমিক শ্রেণির জন্য বিশ্বব্যাপী বর্তমান বিরূপতার অবসান ঘটিয়ে ভবিষ্যতের মসৃণ পথ খুলে দেবে।

নতুন বছরের পূণ্য মে দিবসের অরুণ প্রভাতে ভরে উঠুক শ্রমিক, কৃষক আর মেহনতী মানুষের জীবন ভরে উঠুক পাখিদের আনন্দ কলতানে । আসুক এবার নতুন সকাল, কিছু কথা কিছু গান। কিছু সুন্দর স্বপ্ন, একমুঠো সাদা মেঘ, কিছু মিষ্টি অনুভূতি। আসুক স্বপ্নময় সৃষ্টি। এবার নতুন বছরে মে দিবসের আলোকে রঙিন হোক খেটে খাওয়া মানুষদের আগামী দিনগুলো, সফল হোক তাদের খেয়ে পরে বেঁচে থাকার স্বপ্ন। মে দিবস জিন্দাবাদ।

আসুন, আজ আমরা লাঞ্ছিত, বঞ্চিত, সেই সব শ্রমিক, কৃষক আর মেহনতী মানুষ যাদের চোখের জলের দাম কেউ দিতে পারে না, তাদের পাশে দাঁড়িয়ে সবাই একসাথে সম্মিলিতভাবে সংগ্রাম করি। তাদের দিই মানবিক মর্যাদা। অথবা দুবেলা দুমুঠো খেতে না পাওয়া অনাহারী মানুষগুলোর পাশে এসে সহানুভূতির পরশ দিয়ে তাদের বাঁচার ঠিকানা বলে দিই। সকলে সুস্থ থাকুন, রোগমুক্ত জীবনযাপন করুন এই প্রত্যাশা। জয়গুরু! জয়গুরু! জয়গুরু!

ঐতিহাসিক মে দিবসের কবিতা
কলমে- লক্ষ্মণ ভাণ্ডারী

জাগো রে শ্রমিক, জাগো রে কৃষক
জাগো ওগো সর্বহারা,
আধপেটা খেয়ে কল-কারখানায়
হাতুড়ি চালায় যারা।

যাদের রক্তে কান্না আর ঘামে
কারখানায় চাকা চলে,
উষর মাটিতে লাঙল চালায়
রোদে পুড়ে ভিজে জলে।

ওরাই মানুষ, ওরাই দেবতা
গাও ওদের জয়গান,
মে দিবসের অরুণ প্রভাতে
দাও ওদের সম্মান।

বন্দী গৃহকোণে সকলেই আজ
মালিক, শ্রমিক চাষী,
সবাই সমান বড় কেউ নয়
দেখো চেয়ে বিশ্ববাসী।

সাম্যবাদের জয়গানে আজ
মেতেছে বিপুল ধরা,
বাঁচার লড়াই দিকে দিকে আজ
মৃত্যু কোলাহলে ভরা।

জীবন মৃত্যুর সংগ্রামে আজ
বন্ধু এগিয়ে দাও হাত,
অনাহারী যারা পথে বসে কাঁদে
দাও এক মুঠো ভাত।

একটি রুটি পেতে চায় মানুষ
করিছে মানুষ সংগ্রাম,
ক্ষুধাতুর শিশু ক্ষুধায় কাঁদিছে
কে দেবে কান্নার দাম?

ক্ষুধার অন্ন কেড়ে খায় যারা
দেশেতে আনে আকাল,
শ্রমিক মালিক গৃহে বসি কাঁদে
স্বদেশের এই হাল।

বন্ধ হয়েছে বিপণি সকলি
বন্ধ হলো বেচা-কেনা,
লক-ডাউন দিকে দিকে আজ
দিনে দিনে বাড়ে দেনা।

রক্ত নিশান হাতে লয়ে যারা
লড়েছিলো একদিন,
আজিকে তারা মৃত্যু কবলিত
শোধ করো মৃত্যুঋণ।

লালে লাল হয়ে উঠেছে তপন
কৃষক শ্রমিকের খুনে,
করোনার বিষে স্বদেশ ছেয়েছে
মৃত্যুরই জাল বুনে।

মে দিবসের সবুজ সুপ্রভাতে
তুলে ধরো রক্ত নিশান,
গৃহে বন্দী আজ ধনী মহাজন
জাগো রে শ্রমিক কিষাণ।
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা মে, ২০২০ সন্ধ্যা ৬:১১
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

চুরি করাটা প্রফেসরদেরই ভালো মানায়

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৪:৫৩


অত্র অঞ্চলে প্রতিটা সিভিতে আপনারা একটা কথা লেখা দেখবেন, যে আবেদনকারী ব্যক্তির বিশেষ গুণ হলো “সততা ও কঠোর পরিশ্রম”। এর মানে তারা বুঝাতে চায় যে তারা টাকা পয়সা চুরি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিব নারায়ণ দাস নামটাতেই কি আমাদের অ্যালার্জি?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ বিকাল ৫:৫৭


অভিমান কতোটা প্রকট হয় দেখেছিলাম শিবনারায়ণ দাসের কাছে গিয়ে।
.
গত বছরের জুন মাসের শুরুর দিকের কথা। এক সকালে হঠাৎ মনে হলো যদি জাতীয় পতাকার নকশাকার শিবনারায়ণ দাসের সঙ্গে দেখা করা সম্ভব... ...বাকিটুকু পড়ুন

ঘুষের ধর্ম নাই

লিখেছেন প্রামানিক, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৫৫


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

মুসলমানে শুকর খায় না
হিন্দু খায় না গাই
সবাই মিলেই সুদ, ঘুষ খায়
সেথায় বিভেদ নাই।

হিন্দু বলে জয় শ্র্রীরাম
মুসলিম আল্লাহ রসুল
হারাম খেয়েই ধর্ম করে
অন্যের ধরে ভুল।

পানি বললে জাত থাকে না
ঘুষ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতি মাসে সামু-ব্লগে ভিজিটর কত? মার্চ ২০২৪ Update

লিখেছেন জে.এস. সাব্বির, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:০৮

মার্চ ২০২৪ সালে আমাদের প্রিয় সামু ব্লগে ভিজিটর সংখ্যা কত ছিল? জানতে হলে চোখ রাখুন-

গত ৬ মাসের মধ্যে সবচেয়ে বেশি ভিউ ছিল জানুয়ারি মাসে। ওই মাসে সর্বমোট ভিজিট ছিল ১৬... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরান-ইজরায়েল দ্বৈরথঃ পানি কতোদূর গড়াবে??

লিখেছেন ভুয়া মফিজ, ১৯ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:২৬



সারা বিশ্বের খবরাখবর যারা রাখে, তাদের সবাই মোটামুটি জানে যে গত পহেলা এপ্রিল ইজরায়েল ইরানকে ''এপ্রিল ফুল'' দিবসের উপহার দেয়ার নিমিত্তে সিরিয়ায় অবস্থিত ইরানের কনস্যুলেট ভবনে বিমান হামলা চালায়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×