আজকেই জানলাম আমাকে সামু'র প্রথম পাতায় মত প্রকাশের অধিকার দেয়া হয়েছে। ধন্যবাদ!!
নিজে তথ্যপ্রযুক্তি বেচে খাই, তাই এই প্রজাতীর মানুষদের প্রতি একটা বিশেষ টান অনুভব করি। আর সেই টানেই আজকে যখন দেখলাম দেশের ৫টি পিএসটিএন কোম্পানীর লাইসেন্স বাতিল করেছে, কষ্টটা একটু বেশিই লাগল। আমাদের মতো যে কয়টা মানুষ এখনও মিথ্যা মোহে কিংবা বাধ্য হয়ে এখনও দেশের মাটি কামড়ে পড়ে আছি, তাদের বুকে আরেকটা পেরেক বিধল। দেশের ছেলেরা এভাবেই পরাজিত হয়ে দেশ ছাড়ছে প্রতিদিন। আসুন একটু গভীর ভাবে চিন্তা করি এই সিদ্বান্তে আসলে শাস্তি কে পেল?
আমাদের স্মৃতি খুব দূর্বল না হলে আমাদের নিশ্চই মনে আছে একই অপরাধে কিছুদিন আগে মোবাইল অপারেটরদের কি শাস্তি দেয়া হয়েছিল। বিপুল অঙ্কের জরিমানা, যে টাকার বেশী হয়ত তারা ভিওআইপি ব্যবসা করেই কামিয়েছে। সেই একই অপরাধে পিএসটিএন কোম্পানীগুলার শাস্তি কি হল? লাইসেন্স বাতিল। তো এই সিদ্বান্তে কার কয়টা লোম পড়ল?
বিটিআরসি কিন্তু শুধু লাইসেন্স বাতিল করেছে, কারও বিরূদ্বে মামলা করেছে বলে এখন পর্যন্ত শুনি নাই (কেউ জানলে আমাকেও জানাবেন)। আজব দেশে থাকিরে ভাই!!! কোম্পানি কি অপরাধ করে? কোম্পানির কি হাত আছে না মাথা আছে? যেসব চোরেরা দেশের হাজার হাজার মানুষের অসহায়ত্বকে পুজি করে তাদের দিয়ে এসব করিয়েছে, তাদের কারো বিরুদ্বে কোন ব্যক্তিগত মামলা হয় নাই। এই সিদ্বান্ত কি কোম্পানীর হোমরা চোমরা মানুষগুলার লোমের আগা স্পর্শ করতে পারবে? তাদের জীবন যাত্রায় কি কোন প্রভাব ফেলবে এই সিদ্বান্ত? তাদের বিদেশ পড়ুয়া ছেলেমেয়েরা কি লেখাপড়া বন্দ্ব করে দেশে চলে আসবে? আমরা সবাই জানি এইসব বালছাল সিদ্বান্তে এইসব চোরদের কিছুই আসে যায় না, তারা যা কামানোর কামিয়ে নিয়েছে।
তাহলে ক্ষতি হল কার?
কখনও কি ভেবে দেখেছেন সদ্য বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বেরুনো ওই যুবকটার কথা? কি এক মায়াবী স্বপ্ন নিয়ে যোগ দিয়েছিল বন্দ্ব হয়ে যাওয়া কোন একটা কোম্পানীতে। হয়তবা নতুন বিয়ে করেছে, ঢাকায় বাড়ি ভাড়া করেছে। নতুন সংসার এর ভবিষ্যৎ কল্পনা করতে করতে দিন কেটে যাচ্ছে। যাদের মাসিক পারিশ্রমিকটা একটু বেশী তারা হয়তবা বাড়ি কিংবা গাড়ি কেনার জন্য ব্যাঙ্ক লোন নিয়েছে। সব মিলিয়ে মাস শেষে ৩০/৪০ হাজার টাকার যোগান রাখতে হয়। কয়েকদিনের ব্যবধানে এসব যুবকের স্বপ্ন এখন কোথায় গিয়ে দাড়িয়েছে বলতে পারেন? আমি ভাবতে পারি না।
তাহলে শেষমেশ কি হল, গরীবের বাচ্চা এসব ছোটলোকগুলা বড় বড় স্বপ্ন দেখার অপরাধে এখন ঋন এর বোঝা মাথায় নিয়ে এই কঠিন চাকরীর বাজারে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরবে। আর ঐ যে বড়লোকের বাচ্চা চোর, যে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে এইসব ছোটলোকগুলাকে ব্যবহার করে, সে আরেকটা নতুন ফন্দি খুজবে চুরি করার।
এখন দেখি কারা লাভবান হবেন?
১ - প্রথমেই আমাদের অতি প্রিয় বিদেশী মোবাইল কোম্পানী!! আরও লাখ খানেক নতুন গ্রাহক।
২ - দ্বিতীয়, বন্দ্ব হওয়া কোম্পানীগুলো'র হোমরা চোমরা মানুষগুলো, সরকার যাদের টিকিটা স্পর্শ করবে না। যারা ভিওআইপির উপরি কামাইবিহীন এই অলাভজনক ব্যাবসা থেকে সম্মানজনকভাবে বিদায় নিল।
সবশেষে সাংবাদিকরা যখন বিটিআরসি'র চেয়ারমান এর কাছে জানতে চাইল, এতগুলা কর্মচারীর কি হবে? ঐ মাথামোটা বিজ্ঞের মত বলল যে, উনারা নাকি চিন্তা করতেসে। জনাব মাথামোটা মিলিটারি, চিন্তা করতে যে মাথা লাগে, আপনার সেটা আছে? আপনার পেশায় তো বিশেষ মাথা খাটাতে হয় না বলেই জানি।
কিছুদিন আগে চীনে যখন মেলামিন এর প্রভাবে অনেক শিশু অসুস্থ্য হয়ে মারা যায়, তখন চীনা সরকার কি সব দুধের কোম্পানী বন্দ্ব করে দিয়েছিল? অবশ্যই না। এখানে দেখুন ওরা কি করেছিল। খুবই সহজ, দুইটা কোম্পানীর দুই হোমরা চোমরাকে ধরে ফাসি দিয়েছিল। কেউ জীবনে ভুলেও এই কাজ করবেনা। এখান থেকে কিছু কি শিখতে পারেন মিলিটারি সাহেব? নাকি শেখার ক্ষমতাটাও গেছে?
সর্বশেষ এডিট : ১৩ ই মে, ২০১০ ভোর ৪:৫৮

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




