পাট এর জিনোম বের করার খবরটা শোনার পর থেকেই মনটা ভাল হয়ে গিয়েছিল। টিভিতে খবর দেখা প্রায় ছেড়েই দিয়েছি; গত ২/৩ সপ্তাহজুড়ে টিভি খুললেই শুধু মানুষের লাশ এর খবর। ফেসবুক এর বদৌলতে জিনোম বের করার খবরটা জানলাম। দরকার ছিল খবরটার, বিশেষ করে এই সময়টায়। দেশের মানুষ একটু হলেও হাসবার জায়গা পেল। হয়ত দেশের ৯০ ভাগ মানুষই জানবেনা আসলে কি হল, কিন্তু কিছু একটা ভাল হয়েছে এই ভেবে কিছুটা শান্তি পাবে আশা করি।
ধন্যবাদ মাকসুদুল আলম, আপনি আমাদের পথ দেখিয়েছেন। দেশ থেকে যে লক্ষ লক্ষ মেধাবী তরুন বিদেশের মাটিতে হারিয়ে যায়, তাদের কাছে এটা যেন একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকে। যে দেশ তাদের সব দিয়েছে সেই দেশটার জন্য দূর থেকে বসে মায়াকান্না না করে সময় এসেছে কিছু করার। মাকসুদুল আলম আমাদের দেখিয়ে দিলেন, আমরাও পারি।
পাট এর জিনোম দিয়ে কি কি করা যাবে সেটা হয়ত অনেকেই জানেন বা জানবেন এই কয়দিনে, কিন্তু সেটার চাইতেও অনেক বড় আমাদের যে পাওয়া, সেটা হচ্ছে আমাদের ফিরে পাওয়া আত্মবিশ্বাস। আমরা ভুলতেই বসেছিলাম যে এই দেশের মানুষ আর যা কিছুতেই গরীব হোক, মেধায় না। দুঃখের বিষয় হচ্ছে আজ এত বছর পার করে দিলাম, দেশে কত পানি গড়াল, কিন্তু দেশের মেধাবী তরুনদের ব্যবহার করার মত কোন পরিবেশ আজ পর্যন্ত কেউ তৈরী করতে পারি নাই। দেশের মানুষ নর্দমার রাজনীতি নিয়ে যে পরিমান চিন্তা করে তার ৫ ভাগও যদি দেশের মেধাবী তরুনদের মেধার বিকাশ ও সেই মেধার ব্যবহার কিভাবে করা যায়, সেই চিন্তা করত, তবে এমন অনেক জিনোমই আমরা এত দিনে বের করে ফেলতাম।
ব্রিটিশ উপনিবেশের কুফলই হোক আর আমাদের দারিদ্রই হোক, আমরা মানসিকভাবে একটা চাকর জাতিতে পরিনত হয়েছি। এই দেশের মেধাবী জনগোষ্ঠি সারাজীবন পড়াশোনা করে একটা ভাল চাকরি পাওয়ার আশায় - এই হতাশা কোথায় রাখি? মেধাবী মানুষদের এই চাকুরে মানসিকতার সুযোগে দেখা যায় যে ব্যবসায়ী হচ্ছে এমন এক মেধাহীন গোষ্ঠি যারা চাকরির বাজারে সুবিধা করতে না পেরে জীবন বাচাতে ব্যবসা শুরু করছেন এবং পরিশ্রম দিয়ে সফলও হচ্ছেন। ফলে দেশ পাচ্ছে কিছু মেধাহীন (কিছু ক্ষেত্রে বিবেকহীন) ব্যবসায়ী, শিল্পপতি। মেধাবী তরুনেরা এইসব শিল্পপতিদের দাবরানি সহ্য করে পেট চালাতে কাজ করে যাচ্ছেন; কিছু কিছু ভাগ্যবান(?) বিদেশে পাড়ি জমাচ্ছেন এবং যথারীতি আবারও সেই একই পেশায় একটু ভিন্ন আঙ্গিকে জীবন শুরু করছেন। দেশে শ্রমিকের মানবিক অধিকার বলতে কিছু নাই, ওখানে আছে; দেশে রাত ১০টা পর্যন্ত কাজ করলেও ওভারটাইম পাওয়া যায় না, ওখানে যায়; এইত? আমরা যারা দেশে কিছু করা যায় না, এখানে মেধার কোন দাম নাই, এসব বলে বিদেশে পাড়ি জমাই, তারা কি কখনও ভেবে দেখেছি, আমরা আসলে ওখানেও আমাদের মেধার অপচয়ই করছি (মাকসুদুল আলম এর মত কিছু ব্যতিক্রম বাদে )^।
আশা করি পাটের জিনোম বের করার এই সংবাদটা আমাদের তরুনদের নতুন করে ভাবতে শেখাবে। বিদেশে যারা আছেন, তাদের সুযোগ বেশী, তাই তাদের কাছে আমাদের প্রত্যাশাও বেশী। আপনাদের মাঝ থেকে আমরা এক একটা বিল গেইটস, ল্যারি পেজ দেখতে চাই, অন্তত একজন মাকসুদুল আলম। বাবা মা দের বলব, আপনারা আপনাদের সন্তানদের আর চাকর করে বড় করবেন না। ওদের স্বপ্ন দেখতে দিন, ওরাই দেশের ভবিষ্যৎ গড়বে, তখন আর আমাদের ২ বেলা খাওয়া পড়ার জন্য অন্যের দেশে আশ্রিত হতে হবে না।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




