somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডাবলিনের গল্প ১ (ছবি ব্লগ ) :

২১ শে মার্চ, ২০১৯ ভোর ৪:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

Dublin: আয়ারল্যান্ডের রাজধানী "ডাবলিন", সমুদ্রের গা ঘেঁষা নিরিবিলি ছিমছাম সুন্দর একটি শহর। হাজার বছরের নজরকাড়া অতীত ঐতিহ্য, ইতিহাস, কৃষ্টি-কালচারের ছাপ সর্বত্র বিদ্যমান। ৭০ হাজার বর্গকিলোমিটার আয়তনের (বাংলাদেশের অর্ধেক) এই দেশে জনসংখ্যা মাত্র ৪৮ লাখ। দুবাইতে বৃষ্টির দেখাই পেতাম না আর এখানে বেশিরভাগ সময় মেঘের কান্না লেগেই থাকে। শীতকালে পাতা ঝরে যাওয়া গাছগুলো বসন্তে কতো আবেগময়ী হয় তা না দেখলে কখনো বুঝা যাবেনা। বসন্তে রাস্তার দুই ধারে চোখ ধাঁধানো শুভ্রতার মেলা সাজিয়ে গাছগুলোতে ফুলে ফুলে ভরে উঠবে।






আয়ারল্যান্ডে কোনো সাপ নাই। প্রচলিত মিথ অনুযায়ী সেইন্ট প্যাট্রিক নামে একজন ধর্মযাজক আধ্যাত্বিক ক্ষমতা বলে সব সাপ সমুদ্রে পাঠিয়ে দিয়ে আয়ারল্যান্ডকে সাপ মুক্ত করেছিলেন। সেই থেকে আয়ারল্যান্ডে সাপ আসতে পারেনি। শুনতে অদ্ভুত লাগতে পারে, পাশের দেশ ইংল্যান্ডে অনেক সাপ দেখা যায় কিন্তু আয়ারল্যান্ডে কেউ কখনো সাপ দেখেনি অথচ দুদেশের আবহাওয়া পরিবেশ প্রায় একইরকম । সাপ নিয়ে আইরিশদের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা নিয়ে একদিন বিস্তারিত লিখবো।





মাথাপিছু আয়ের ($80,641) দিক থেকে আয়ারল্যান্ড বিশ্বের চতুর্থ ধনী, মিনিমাম স্যালারি ৯.২৫ ইউরো প্রতি ঘন্টা (৮৮০ টাকা) , এখানে কাজের অভাব নাই তারপরও গৃহহীন মানুষদের রাস্তায় ঘুমোতে দেখা যায়। এদের সংখ্যা নেহায়েত কম না। প্রতিমাসে সরকার থেকে প্রায় ৮০০ ইউরো করে গৃহহীনরা পায়। তারা ইচ্ছা করলেই এই টাকায় ভালোভাবে থাকতে পারে। আমার কাছে খুব আশ্চর্য লাগে, কেন তারা কনকনে ঠান্ডা, বৃষ্টি-বাদলের মধ্যে রাস্তায় ঘুমায়।





ডাবলিনে এসে পরিচয় হয় গ্রেগ-এন্ড্রিয়া আইরিশ দম্পতির সাথে(ছবিতে লাল-কাল টিশার্ট) । সামান্য পরিচয়েই তারা আমাকে আপন করে নিয়েছেন। অপরিচিত শহরে এসেই এমন অসাধারণ মানুষের দেখা পাব কল্পনাও করি নি। আমার কোম্পানি এক মাসের একোমোডেশন দিয়েছিলো সেই সূত্রে ওদের সাথে পরিচয়। আমাকে প্রতিদিন অফিসে দিয়ে আসা-নিয়ে আসা, বিকেলে ওদের বাসায় নাস্তা, আড্ডা, রাতে আমাকে নিয়ে শহরে ঘুরতে বেরোনো এত আগ্রহ নিয়ে করতেন যে মাঝে মাঝে আমি নিজেই অবাক হয়ে যেতাম। এইসব তিনি নিজ থেকে করতেন, তিনি আমার অফিসের কেউ না ,যে হোটেলে থাকতাম সেখানকার কেউ না, জাস্ট শুধু পরিচয়। মনে হতো আমি ওদের পরিবারের একজন।





এখানে সবচেয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতি হচ্ছে টয়লেট গুলোতে পানির ব্যবস্থা নাই। টয়লেটের কাজ শেষ করার পর পরিষ্কার যা করার টিস্যু পেপার দিয়ে করতে হয়। টয়লেটে পানির নল না থাকায় আমাদের বাঙ্গালিদের কত রকম বিকল্প ব্যবস্থা যে করতে হয় । বন্ধুদের কাছে পানির বোতল, হোটেলে পানির গ্লাস, চা-পাত্র ব্যবহারের গল্প শুনে কত হাসাহাসি করেছি, সেই গল্পগুলো নিজের জীবনে ঘটবে কে জানতো!





ডাবলিনে বাসা পাওয়া খুবই দুরহ। বাংলাদেশি এক ভাই বলেছিলেন ডাবলিনে জব পাওয়ার চেয়েও বাসা পাওয়া কঠিন। তার কথা খুব ভালো ভাবে বুঝেছিলাম এই শহরে এসে। দেড় কোটি মানুষের বসবাস আমাদের ঢাকা শহর , তারপরও প্রতি অলিগলিতে বাসা ভাড়ার সাইনবোর্ড দেখা যায়, আর ৫ লাখ মানুষের এই ডাবলিন শহরে রাস্তায় সাইনবোর্ড দূরে থাক, বাসা পাওয়ার জন্য রীতিমতো ইন্টারভিউ দিতে হয়। অনলাইন থেকে বাসার মালিকদের ইমেইল এড্রেস নিয়ে নিজের সম্পর্কে ভালো ভালো কথা লিখে বাসার জন্য আবেদন করতে হয়। আমি ৪০ টার মতো ইমেইল করে মাত্র ৩ টার উত্তর পেয়েছিলাম। অবশেষে বাসা খুঁজে পেয়েছি, বাংলাদেশী ভাই বোনদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞ যারা বাসা খুঁজে পেতে সাহায্য করেছেন।



চলবে ...........

ছবি: নিজ

এক টুকরো সমুদ্র-দ্বীপ ভ্রমণ :


সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০১৯ রাত ৯:৫৩
৭টি মন্তব্য ৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বাংলাদেশের লোকসংস্কৃতিঃ ব্যাঙের বিয়েতে নামবে বৃষ্টি ...

লিখেছেন অপু তানভীর, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:০০



অনেক দিন আগে একটা গল্প পড়েছিলাম। গল্পটা ছিল অনেক এই রকম যে চারিদিকে প্রচন্ড গরম। বৃষ্টির নাম নিশানা নেই। ফসলের মাঠ পানি নেই খাল বিল শুকিয়ে যাচ্ছে। এমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশি ভাবনা ও একটা সত্য ঘটনা

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:১৭


আমার জীবনের একাংশ জুড়ে আছে; আমি চলচ্চিত্রাভিনেতা। বাংলাদেশেই প্রায় ৩০০-র মত ছবিতে অভিনয় করেছি। আমি খুব বেছে বেছে ভাল গল্পের ভাল ছবিতে কাজ করার চেষ্টা করতাম। বাংলাদেশের প্রায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাকি চাহিয়া লজ্জা দিবেন না ********************

লিখেছেন মোহাম্মদ সাজ্জাদ হোসেন, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১০:৩৫

যখন প্রথম পড়তে শিখেছি তখন যেখানেই কোন লেখা পেতাম পড়ার চেষ্টা করতাম। সেই সময় দোকানে কোন কিছু কিনতে গেলে সেই দোকানের লেখাগুলো মনোযোগ দিয়ে পড়তাম। সচরাচর দোকানে যে তিনটি বাক্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

=এই গরমে সবুজে রাখুন চোখ=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:২১

০১।



চোখ তোমার জ্বলে যায় রোদের আগুনে?
তুমি চোখ রাখো সবুজে এবেলা
আমায় নিয়ে ঘুরে আসো সবুজ অরণ্যে, সবুজ মাঠে;
না বলো না আজ, ফিরিয়ো না মুখ উল্টো।
====================================
এই গরমে একটু সবুজ ছবি দেয়ার চেষ্টা... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুড়ি শব্দের গল্প

লিখেছেন করুণাধারা, ২৪ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৯:১৭



জলে ভাসা পদ্ম আমি
কোরা বাংলায় ঘোষণা দিলাম, "বিদায় সামু" !
কিন্তু সামু সিগারেটের নেশার মতো, ছাড়া যায় না! আমি কি সত্যি যাবো? নো... নেভার!

সানমুন
চিলেকোঠার জানালায় পূর্ণিমার চাঁদ। ঘুমন্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×