somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অচেনা পথ

২৮ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:২৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকটা অনিশ্চয়তার মাঝেই শেষ বিকেলের ট্রেন ধরেছিলাম বেলাপুরে পরব বলে। ট্রেনে উঠতেই হোচঁট খেলাম পাদানিতে। আমি আবার কুসংস্কারের ধার ধারে না। তাই অগত্যা কিছু না ভেবেই কামড়ায় বসলাম। বেলাপুরে পৌছতে সময় খুব বেশি নেয়ার কথা নয়। কিন্তু মাঝ পথে জানলাম রেল অপারেটর বেচারা যাত্রা শুরুতে তেল নাকি একটু বেশিই কালোবাজারী করে ফেলেছিল আজ। তাই স্টপেজ আসার পূর্বেই ট্রেন স্টপ হয়ে আছে। বেশখানিকটা সময় পার করে অবশেষে বিকল্প উপায়ে ট্রেন আবার চলতে শুরু করল। সন্ধা নাগাদ বেলাপুরে পৌছানোর কথা ছিল। কিন্তু মধ্যরাতে আজ কেমন যেন অচেনা লাগছে স্টপেজটাকে। বেলাপুরে পরেই জানতে পারলাম প্রেয়সী আমার সন্ধা নাগাদ অপেক্ষা করতে করতে শেষে নাকি অচিনপুরের পথ ধরেছে অভিমান নিয়ে যার ঠিকানা অজানা।

বেলাপুরে পৌছে ট্রেনের ওয়েটিং রুমে বসে কিছুক্ষন সময় পার করলাম। ভাল লাগছিল না। তাই বাইরের বেঞ্চিতে বসলাম। চারদিকে ভর করেছে মাঝরাতের ঘুমোট নিরবতা। ঝিঁ ঝিঁ পোকাদের গানে তাল মিলিয়ে নাচতে মনযোগী জোনাকিরা। হঠাৎ লন্ঠন হাতে অন্ধকারের মাঝে হালকা আলোয় এক ভৌতিক পরিবেশে চাদর মুরি দিয়ে একটা অবয়ব আমার সামনে এসে দাড়াল মনে হয়। ক্ষীন গলায় বলল, “বাবু আপনারই আশার কথা ছিল। এই নেন।”

একটা চিঠি!

কোন প্রশ্ন করতে করতে উধাও হয়ে গেল ছায়া মুর্তিটি। চিঠিটি খুলে পড়তে লাগলাম মনযোগী হয়ে।

”অনেকটা প্রহর ধরেই বসে ছিলাম এই ষ্টেশানে। পথিমধ্যে মস্ত বড় একটা ঝড় মাড়িয়ে আসতে হয়েছে বলে ক্ষানিকাটা ক্লান্ত বটে আমি। সারাটি বিকেল তোমার আশায় উত্তরে চেয়ে ছিলাম এই বুঝি আসবে। উত্তরের অনেকগুলো ট্রেনেও তোমার উত্তর পাইনি আমি। হয়তো এটাই তোমার উত্তর। বেলাপুরে আর ফিরব না বলে তাই রওনা দিলাম অচিনপুরে। যদি কোন দিন শেষ বিকেলে পৌছতে পার তবে আমার উত্তরগুলো যা তোমার মনে উদয় হওয়া প্রশ্নের জন্য দরকার তা রেখে গেলাম এই বেলাপুরে। ভাল থেকো।”

উত্তর আমিও পেলাম সব প্রশ্নের, “হয়তো হাতের রেখায় তুমি ছিলেনা।”
চিঠিটি হাতে নিয়ে বেশখানিকটা সময় বসে রইলাম বেঞ্চিতে। সন্ধা পরে গেছে কবে তা মনে করতে পারছিলাম না। মনকে আসনে বসালাম, "না আজকে অচিনপুর যাবই আমি। আধাঁরের ঘুমোট ভেঙ্গে পারি জমাবো অজানা শহরে।" শহরের সন্ধানে ষ্টেশান থেকে যাত্রা শুরু।

অল্প পথে একটা আলোক ঝলকানি কোথায় গিয়ে পরল যেন। একা একা হাঠছি আমি। প্রকৃতির গান শুনে শুনে পথকে আপন করবার চেষ্টায় নিযুক্ত। চারিপাশে কিছুই নেই একটা থমকে থাকা নিরব মেঠো পথ ছাড়া। কিছু পথ অতিক্রম করতেই দেখি সেই ছায়া মূর্তিটি আবার আবির্ভুত হল। হাতে অল্প আলোয় জ্বলে থাকা সেই লন্ঠনখানা।

”অচিনপুরে আমার ঠিকানা। কিন্তু সেই কবে যে তা হারিয়ে ফেলেছি মনে নেই। চলেননা একসাথেই সত্য সন্ধানে বের হওয়া যাক।”

ভীত মনে আশার প্রদিপ দ্বপ করে জ্বলে উঠল মনে হয়। অগত্যা হাঠা শুরু করলাম। কতটা পথ হেঠেছি মনে নেই। একত্রে একসময় দুজনকে বন্ধু মনে হল হয়তো। নাম দিলাম তার অন্ধকার বন্ধু।

আমি আর আমার অন্ধকার বন্ধু হাঠছি এখন সপ্ন সেই অচিনপুরের দিকে।

অনেকটা পথ ধরে হাঠছি কেবল অচিনপুরের সন্ধানে। কোন এক অদৃশ্য শক্তিরটানে হেটে কতদুর পৌছেছি তার ইয়ত্তা নেই। তবে ক্লান্তি, ক্ষুদা এই সব অনুভুতি খুব সম্ভবত মরে গিয়েছে আমার মাঝে এই অনুভব করছি। ভরা পূর্ণিমায় রাস্তাটিকে রুপার তৈরী মনে হতে লাগল। চাঁদের আর জোনাকির আলো মিলে নতুন এক আলোর ঝলকানির সেই উৎসের সন্ধান লাভ করলাম এইমাত্র। অপরুপ সৌন্দর্যময় আধার রাত্রির মাঝে ইষৎ ঝলকানি। একটা সময় আশা মারা গেল আজ হয়তো এই রাতে আর অচিনপুরের সন্ধান পাব না। এই চিন্তার পথিমধ্যেই হঠাৎ এক রৌপ্যখন্ড মাটিতে পরে থাকতে দেখলাম।

আরে এতো আমার দেওয়া তাকে উপহার দেওয়া সেই নুপুরখানা! চাঁদের আলো গায়ে মেখে সে রৌপ্যবর্ণ ধারণ করেছে। মরা আশা কোমা ফেরৎ হল মনে হয়। এই দিকে অন্ধকার বন্ধু আমাকে নিয়ে অচেনাভাবেই অচিনপুরের পথে। হাঠছি আর হাঠছি।
কয়েক ক্রোশ হাঠার পর সামনে একটা মরা নদীর দেখা মিলল। এই দ্বিতীয়বারের মত অন্ধকার বন্ধু কথা বলে উঠল, “বাবু ঐ পাড়েই অচিনপুর।”

এই সময় এই অন্ধকার রাতকে দিনের মতই ঝলমলে অনুভুত হতে লাগল। পেয়েছি আমি হয়তো পেয়ে গেছি সেই অচেনা ঠিকানা! রাজ্য জয়ী হাসি আমার চোখে মুখে।
নদীর উপারে নতুন সূর্যের হাতছানিতে সময় যেন থমকে গিয়েছিল। কিন্তু এ মরা নদীকে কি করে পার করব সে উপায় নজরে আসলা না। একদিকে অচেনা শহরের ঠিকানা আরেকদিকে প্রতিবন্ধকতা সব মিলিয়ে দারুন বিচলতা ছিল সেই সময়টুকুতে। ঘনকুয়াশার মোড়কে ছিল অচিনপুরের অবস্থান। কল্পনা আর তার দেওয়া বর্ণনার সাথে মনের যোগসূত্র ঘটিয়ে নিজে নিজে একটা মানচিত্র আকঁলাম মনে মনে যায়গাটির।

ভোরের আলো তখন ফুটতে শুরু করেছে সবে। কুয়াশা ভেদ করে পানির মধ্যে আস্তে আস্তে ঝপাত ঝপাত বৈঠার শব্দ পেলাম মনে হয়। নাকি অনুমান! শব্দের পর দৃশ্যের অবতারণ। কে যেন ওপার থেকে নৌকা করে আমার ঘাটে আসছে মনে হল।
তরী এ পারে ভিড়ল।

”সকালের মাঝি আমি। যাবেন নাকি ওপারে?” লোকটি বলল।
কথা না বাড়িয়ে উঠে পরলাম। ঝপাত ঝপাত শব্দের পূনরাবৃত্তি। সূর্য়ের আলো পানির সাথে ঝগড়া করে মনে হচ্ছিল পানিতে নিজের আগুন ঢেলে দিয়েছে সূর্য নিজেই। ঘন কুয়াশার বনে ঢুকছি আস্তে আস্তে মনে হচ্ছে। চারিপাশের কুয়াশাকে বৈঠা বেয়ে কেটে চলেছি ওপারের অচেনা মানচিত্রের দিকে।
বেশক্ষানিকটা সময় বাদে বৈঠার গান গাওয়া শেষ হল। বুঝতে পারলাম অচিনপুরের গন্তব্যের শেষ বিন্দুতে আমি।
এইতো অপরিচিত মাটির পরিচিত ঘ্রান আমার নাকে আসতে শুরু করেছে!

অচিনপুরকে যে এই অল্প সময়েই কাছের মনে হবে তা ভাবিনি। খুব সুন্দর একটা গ্রাম। চারদিকে ছোট বড় সবুজ পাহাড়। যে ঘরটাতে তার থাকার কথা ছিল সে ঘরটা থেকেই প্রকৃত এলাকাটির মানচিত্র ভালভাবে দেখা যায়। এক জানালা দিয়ে একপাশে পাহাড়ের কিনারা দিয়ে নেমে আসা ঝর্ণা একদিকে অন্যদিকের জানালা দিয়ে কুয়াশার চাদরে ঢাকা দুর দিগন্ত যা সীমানাহীন। সবকিছু মিলিয়ে থাকার জন্য খুব সুন্দর একটা গ্রাম যার কাছে একবার আসলে আর ফিরে যেতে কারও ইচ্ছে করবে না। তবে তার ঠিকানা এত চট জলদি পেয়ে যাব তা বুঝতে পারিনি।

যে ছোট্ট কুটিরটিতে সে আশ্রয় নিয়েছিল সেখানের একটি ছোট্ট পাহাড়ি শিশুই আমাকে সব এতক্ষন পরিচয় একেঁ দিচ্ছিল। এলাকা পরিচয় পর্ব শেষে সেও একটা চিঠি হাতে ধরিয়ে দিল। সে চিঠি পাওয়ার পরই খেয়ালে আসল আমি বড় ক্লান্ত হয়ে পরেছি সত্যিই। এতটা পথ সত্যিই পারি দিয়ে আমি ক্লান্ত।

”যখন তুমি এই চিঠিটি পড়ছ ততক্ষনে আমি তোমার কাছ থেকে বেশখানিকটা দুরে অবস্থান করছি। তোমার কি মনে আছে সম্পর্কের মাঝ পথে আমি তোমাকে একবার অচিনপুরের কথা বলেছিলাম? সেদিন তুমি এখানে আসতে ব্যকুল হয়ে উঠেছিলে। মনে আছে প্রিয়? উত্তরে আমি বলেছিলাম, “তোমায় যেদিন আমি অচিনপুরে নিয়ে যাব সেদিন তোমায় বরন করে নেবে সেখানকার প্রকৃতি নিজ মমতায়।” হেঁসে উড়িয়ে দিয়েছিলে কথাগুলো। আজ দেখ সত্যিই তোমাকে এখানে আমি নিয়ে এসেছি প্রকৃতির আদিমমতার পরশ গায়ে মাখিয়ে। ট্রেনে ষ্টেশান থেকে এখানে আসা অবধি সব ঘটনাই আমার পরিচালনায় হয়েছে। আমি জানতাম তুমি আসবেই। শুধু আমারই দেখা হল না তোমায়। আমি কখনোই তোমাকে তাই সে কঠিন অসুখের কথা বলিনি পাছে তুমি যদি না আস এখানে। এই অচিনপুরকে জড়িয়ে রাখলে তুমি সত্যিই আমাকেই পাবে। আমিও তারহীন এই দুরত্ব্যকে অনুভব করব তোমার মাঝে। ভাল থেকো প্রিয়।”

কিছু জিজ্ঞেস না করে বাচ্চা মেয়েটিকে বললাম, ”কবে?” সে হাতের ইশারায় সব বুঝিয়ে দিল। আরেকটি অচেনা পথের শুরু হয়ে গেল এখানেই।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×