বাবা চেয়েছিলেন আমি যেন কিছু একটা হই। কি হবো আমি? আমি ভেবে পেতাম না কি হবো আমি?
একবার ভেবে নিয়েছিলাম রেলের ড্রাইভার হবো। রেলের ড্রাইভারদের অনেক সুখ। ট্রেনে উঠে ইঞ্জিন চালু করে দিলেই ট্রেন চলতে শুরু করবে। আর তাকিয়ে দুপাশের সবুজ দেখতে থাকব। মাঝে মাঝে শখ হলে হুইশেল বাজাবো...
সিদ্ধান্ত চেঞ্জ করে ফেললাম লাইব্রেরিয়ান হবো। লাইব্রেরিতে কত কত বই। সারাদিন রাত পড়তে থাকবো। কিন্তু আমাদের শহরের লাইব্রেরিরা রাজনীতির বিরস বই বাদে সব বই পড়ে শেষ করে ফেললাম তখন লাইব্রেরিয়ান হবার ইচ্ছে উবে গেল এবং এসএসসি আসন্ন ভেবে পড়াশোনা শুরু করলাম।
ইন্টারে উঠে প্রেম নিয়ে ব্যস্ত হয়ে গেলাম। কোনো কিছু হবার ইচ্ছে নেই। শুধু একটা কাজ করে বৌকে খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে পারলেই হলো। তবে প্রেমের ফাঁকেই সমকাল পত্রিকার সুহৃদ সমাবেশের উপজেলা আহবায়কের দায়িত্ব কিভাবে যেন পালন করে গেলাম। এতো বড় একটা দায়িত্ব এতো এতো কাজ আর জাতীয় পত্রিকার ওই পাতায় রিপোর্টিং- কিভাবে করেছি ভেবে বিস্মিত হচ্ছি। নিজেই নিজেকে স্যালুট দিতে ইচ্ছে করছে। ইন্টারের পরে প্রেমিকা ছেড়ে যাওয়ার পর সব পরিকল্পনা বাতিল হয়ে গেল।
ওসব বাদ দিয়ে বাবা ওষুধ কম্পানির নিশ্চিত একটা চাকরির জন্য অনার্সে ভর্তি করে দিলেন। আমি জেনে গেলাম আমি মেডিকেল রিপ্রেজেন্টেটিভ হচ্ছি। থার্ড ইয়ারে বাবা মারা যাওয়ার পর আমি ভুলে গেলাম আমি কি হতে যাচ্ছি কিংবা অদৌ কিছু হতে যাচ্ছি কি না।
বাবার এলোমেলো জীবন আমাকে ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করে। বাবা মারা যাওয়ার পর বেশ আহত হলাম। বাবার মৃত্যু আমাকে গভীরভাবে নাড়া দিয়ে যায়। আমি আর কিছুই বুঝে উঠতে পারি নাই যে আমি আসলে কি হবো কিংবা কি করবো।
বোটানি থেকে পাশ করা আমি এখন কাগজে কাজ করি। বাবার হাত ধরে ইত্তেফাকের টারজান পড়তে শেখা আমি কি না কাগজেই কাজ করি। তিনি বেঁচে থাকলে কি বলতেন? জানি না। আম্মা হয়তো মনে করতেন আমি ভাল কিছু করবো। আমি, কিছুই হতে পারি নাই। কিচ্ছু না। একদম। জীবনের অযোগ্য আমি এখন মালিবাগের ধূলো খেয়ে বেড়াই, মগবাজারে ম্যানহোলের স্ল্যাবে উষ্ঠা খেয়ে নখ রক্তাক্ত করে ফেলি। আব্বা জিনিসগুলো জানতে পারবেন না.. কী দরকার!
লেখা: মাহতাব হোসেন ২০১৬