আমি আর রিয়া একটা কাজে একটু বের হচ্ছিলাম বাড়ি থেকে, এমন সময়
বাবা বললো 'তোর কাছে কি 200 টাকা হবে?'
হঠাৎ কেমন যেন একটা অদ্ভুত অনুভূতি হল,
মনে পড়ে গেল ছোটবেলার টুকরো কিছু কথা।
বাবাকে বলেছিলাম 'বাবা 5 টাকা দেবে?'
বাবা 'কেন? কি করবি 5 টাকা দিয়ে?'
আমিঃ ক্রিকেট বল কিনবো। (ঠিক হয়েছিল খেলার বন্ধুরা সবাই 5 টাকা করে চাঁদা তুলে একটা নতুন বল কেনা হবে)।
বাবা 5 টাকার পরিবর্তে 50 টাকা দিয়ে বলেছিল। 'যা তুই নিজেই একটা বল কিনে নিস।'
সেদিন নতুন বল নিয়ে যখন মাঠে যাচ্ছিলাম, গর্বে আমার বুক ভরে আসছিল। নিজের জন্য নয় , এই গর্ব আমার মধ্যবিত্ত বাবার জন্য। যে বাবা আর্থিক দিক থেকে মধ্যবিত্ত হতে পারে , কিন্তু নিজের অনেক না পাওয়া দিয়ে আমাদের সব কিছু দিয়েছেন।
সময় কতোটা দ্রুত চলে যায়, আজ বাবা তার ছোট চাকরিটা আর করেন না। কেন যেন খুব কষ্ট হল, জানি না।
ওয়ালেট হাতড়ে 500 টাকার 4 টে নোট বাবার দিকে বাড়িয়ে দিলাম। ঠিক তখনই রিয়া আমার হাত থেকে নোট গুলো নিয়ে নিল, আর সঙ্গে আমার ওয়ালেট ও।
ঘটনার আকার্ষিকতায় আমি পুরো স্তম্ভিত! আজ 6 মাস হল আমাদের বিয়ে হয়েছে। এই কয়দিনে ওকে খুব ভালো মনের মানুষ বলে মনে হয়েছিল। যে কিনা আমার পরিবারকে নিজের পরিবার হিসাবেই মেনে নিয়েছে। তাহলে কি আমি মানুষ চিনতে ভুল করলাম?
এর পরে যেটা ঘটলো, তার জন্য আমি একদমই প্রস্তুত ছিলাম না। ওয়ালেট এ যত টাকা ছিল তার থেকে 100 টাকার মতো রেখে পুরো টাকাটাই রিয়া বাবার হাতে তুলে দিল।
বাবাঃ 'আরে পাগলী, এতো টাকা দিয়ে আমি কি
করবো?'
রিয়া : 'বাইরে যাও, তোমার বন্ধুদের সাথে আড্ডা দাও। যা খেতে ইচ্ছে করে খাও।'
ওর কথা শুনে চোখে জল এসে গেল। চোখের জল আড়াল করতেই বেড়িয়ে পড়লাম তাড়াতাড়ি।
আপনজনের জন্য সময়মতো কিছু করতে না পারলে কিসের এত টাকা পয়সা!! কিসের প্রাচুর্য, আপন মানুষের ভালোবাসা ছাড়া বাকি সবই তো ক্ষণস্থায়ী।
রিয়া আমার হাতে ওয়ালেট টা দিয়ে বললো ' শোনো , বাবা আর মা কে আর কখনো যেন টাকা চেয়ে নিতে না হয়।'
পৃথিবীতে হয়তো অনেক স্ত্রীই তার স্বামীকে বাবা মার থেকে দূরে সরিয়ে নিতে চায়। আর রিয়ার মতো অনেক স্ত্রী ও আছে যারা শশুর শাশুড়ী কে নিজের বাবা মার মতোই ভালোবেসে আগলে রাখে।
জীবনে দ্বিতীয় বার গর্বে আমার বুকটা ভোরে উঠলো। পরম শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় রিয়ার হাতটা যখন ধরলাম, নিজেকে পৃথিবীর সব থেকে ধনী বলে মনে হলো।
লেখা :স্বপ্নের ফেরিওয়ালা