১৭ ই ভাদ্র। আমাদের আরও একটি ভ্রমন; কিশোরগঞ্জের নিকলী, মিঠামইন, ইটনা ও অষ্টাগ্রামের হাওরের দিকে।
খুব সকাল সকাল যাত্রা আরাম্ভ করার কথা থাকলেও, তা হয়নি। আমরা যাত্রা শুরু করলাম সকাল ৮ টায়। আমি, সাইদুল ভাই, সঞ্জয় দাদা আর মুন্না সাহেব মিলে যাচ্ছি আজকের এই ট্যুরে।
সকাল থেকেই বৃষ্টি হচ্ছে। আমরা যাবো ৩০০ ফিট হয়ে গাউছিয়া; তারপর ঢাকা সিলেট মহাসড়ক দিয়ে নরসিংদী। রাস্তায় জ্যাম পড়েছিল; তার উপর হচ্ছিল বৃষ্টি। নরসিংদী'তে আমরা পৌছালাম সকাল সাড়ে ১০ টায়। ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করলাম সোনার বাংলা হোটেল আ্যান্ড রেস্টুরেন্ট'এ।
তারপর নরসিংদী থেকে আবার যাত্রা আরাম্ভ হল সরাসরি নিকলীর দিকে। বৃষ্টি একেবারেই থেমে গেছে। আমাদের ড্রাইভার সাহেবের নাম মামুন। আমরা এখন ভৈরব হয়ে নিকলী যাবো; গুগল ম্যাপ বলে দুরুত্ব ৪২৪৩ কিলোমিটার। আমরা এখন জড়াইতলা বাজারে। নিকলীর দুরত্ব আর বেশি দুরে নয়, মাত্র ৭৮ কিলোমিটার।
বেলা ১ টা বাজে, আমরা নিকলীতে পৌছালাম। আমরা অনেক দেরি করে ফেলেছি। মুন্না সাহেব সকাল বেলা ঘুম থেকে দেরি করে উঠেছিল।
আমরা একটি নৌকা বোর্ড ভাড়া করলাম; ইঞ্জিল চালিত। ভাড়া ঠিক হল সারাদিনের জন্য ১৭০০ টাকা। হাওরের বুক চিরে আমাদের কে নিয়ে যাচ্ছে মিঠামইন উপজেলায়। বিশাল জলরাশির বুকে বিচ্ছিন্ন ছোট ছোট গ্রাম। যেন একেকটা ছোট ছোট দ্বীপ। হাওরজুড়ে গলা ডুবিয়ে থাকা হিজল গাছের সারি বা পানির নিচ থেকে জেগে ওঠা করচের বন কিংবা শুশুকের লাফ-ঝাঁপ মুহূর্তেই আমাদের মন ভালো করে দিলো।
পানির সীমানা শেষ হতেই যেন বিস্তৃত আকাশ। তারই মাঝখানে কিছু ঘরবাড়ি। নৌকার চালকদেরই বসবাস এখানে। মাছ ধরার সঙ্গেও জড়িত এ অঞ্চল। এ হাওরের মাছ বিক্রি হয় প্রতিদিন শহরের বাজারে। শুকনো মৌসুমে হাওর পরিণত হয় উর্বর মাঠে। নানা ধরনের সবজি চাষ হয় তখন পুরো সময়জুড়ে। বেশিরভাগ গ্রামের মতোই শিক্ষার হার এখানেও কম। নৌকায় ঘুরতে ঘুরতে শোনা যায় গ্রামের শিশুদের মিষ্টি কণ্ঠে ভাটিয়ালি গান। জেলেদের নৌকা, শিশুদের সাঁতার কাটা আর হাওরের মাঝখানে ছোট-বড় গাছ প্রায় বিলীন হয়ে যাওয়া বাংলার গ্রামের সৌন্দর্য আমাদের চোখের সামনে ফুটিয়ে তুলেছে নিকলী হাওর।
আমরা মিঠামইন পৌছালাম। নৌকার ঘাট থেকে বাজারে যাবে; সেখানেই দুপুরের খাবার খাবো। মিঠামইনে খাওয়ার হোটেল অনেক কম। খুজে পেলাম কাচাঁ লংকা নামক একটা হোটেল। আমরা দুপুরের খাবারে খেলাম হাওরের চিংড়ি, বেয়াল, ট্যাংরা আর বাইম মাছ দিয়ে। স্বাদ অতুলনীয় আর মাছ গুলো ছিল ফ্রেশ/তাজা।
দুপুরে খাওয়ার পরে আমার স্থানীয় বাজার'টি একটু ঘুড়ে ফিরে দেখলাম। এখন আমরা একটি অটো চার্জার গাড়ি ভাড়া করে যাবে মিঠামইন আর অষ্টাগ্রাম রাস্তার মাঝামাঝিতে একটি বড় ব্রিজে। সময় দেবে আধা ঘন্টা; ভাড়া চুক্তি হল ৪০০ টাকা। এর ফাকে গাড়িটি আমাদেরকে মহামান্য রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ স্যারের বাড়ি ঘুড়ে দেখাবে।
আমরা রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ স্যারের বাড়ি ঘুড়ে দেখার পর রওনা দিলাম অষ্টাগ্রামের দিকে। অষ্টাগ্রাম আর মিঠামইনকে যুক্ত করেছে একটি ব্রিজ। এই বড় ব্রিজে কিছুক্ষন সময় কাটিয়ে আমরা ফিরে আসি নৌকার ঘাটে। সময় সাড়ে ৫ টা। আমাদের নৌকার মাঝি নিয়ে গেল ছাতিরচরে। ওখানে আছে পানির নিচে ডুবন্ত এক সবুজ গাছ আর কিছু কিছু যায়গায় বালু ভেসে উঠেছে।
আমরা বাড়ি ফিরছি। জ্যোৎস্না রাতে নিকলী হাওরের পানি গুলো চকচক করছে। এক কথায় জ্যোৎস্না স্নান নিয়ে মর্ত্যে থেকে আসা স্বর্গীয় অনুভূতি হচ্ছে আমাদের।
-ধন্যবাদ।