ব্যাপারটা ঠিক ভ্রমন কাহিনীও না আবার রোজনামচাও না। সরি, আমি নিজেও ঠিক বুঝতে পারছি না কি বলা যায় একে। তাই সেই ঝামেলায় না গিয়ে সরাসরি মূল কথায় যাই।
কুমিল্লা এসেছি গত ১৫ অগাস্ট। জাতীয় শোক দিবস বলে রাস্তায় রাস্তায় ইফতার ও মিলাদ মাহফিল বলে গাড়ীকে বেশ বেগ পেতে হল আসতে। আসার কারন হল অফিস করা। ব্যাপারটা একটু জটিল। আমি মাত্র অনার্স ফাইনাল ইয়ারে পড়ি। আমার এখনি অফিসই বা কি অথবা অফিস থাকলেই এমন কি অফিস যে ইবি থেকে কুমিল্লা এসে অফিস করতে হবে?
ব্যাপারটা হচ্ছে এই যে, আমাকে খ্যাপ মারার মত অফিস করতে নিয়ে আসা হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠান টা অবশ্যই সফটওয়্যার কোম্পানি। আর তাদের ঢাকায় অফিস থাকলেও অফিসে থাকার মত ব্যবস্থা ছিলনা। কিন্তু আমি তো আর কয়েকদিনের জন্য বাসা ভাড়াও নিতে পারিনা। তাই কুমিল্লায় তাদের নতুন অফিস হয়েছে বলে এতেই চলে এলাম।
আমি যেহেতু এখনও প্রফেশনালি চাকরি করিনা তাই আমার দাম এখনও অনেক বেশি আছে। বেকার থাকলে ঝুলে থাকতে চাইতাম। কিন্তু যেহেতু বেকার নই বা বাড়িতে টাকা চাইলে না করেনা তাই আমি শুধু তাদেরকে এটাই বুঝিয়েছি যে, আমাকে তাদের দরকার কিন্তু আমার তাদের দরকার নাই। এতেই দামের ব্যাপারে কাজ হয়েছে।
আমার আগে থেকেই কুমিল্লা বা বিএনসিসি (বরিশাল, নোয়াখালি, চাঁদপুর, কুমিল্লা) এর মানুষদের ব্যাপারে ধারনা খুব একটা ভালো ছিলনা। কারন সবসময় দেখেছি এরা প্রচন্ড স্বজনপ্রীতির পরিচয় দেয়। সরি কুমিল্লা বাসি। স্বজনপ্রীতি ভালো। এটা সব জায়গায়ই আছে। তবে এদিকেরটা চোখে লাগে বেশি। আর একটা ব্যাপার আমার কাছে খারাপ লাগতো। সেটা হল ওরা আপনার উপকার করবে তখনই যখন দেখবে তাতে তার নিজের কোন ক্ষতি হচ্ছেনা। এটাও ভালো দিক কিন্তু আমার কাছে কেমন কেমন যেন মনে হয়। উপকার করতে গেলে নিজের অপকার একটু করতেই হবে। নইলে ওটা উপকার হল কিভাবে? অবশ্য এগুলো আমার একান্তই নিজস্ব চিন্তা চেতনা। সিরিয়াসলি নিবেন না।
দুই নাম্বার গুনের প্রমাণ পেয়েছি ঢাকায় থাকতেই। আমি ময়মনসিংহের ছেলে। পড়াশুনা কুষ্টিয়ায়। তাই ঢাকাও খুব একটা চিনি না। ঐ সাইনবোর্ড পড়ে চলা ফিরা করি আরকি ঢাকায় আসলে। সায়েদাবাদ জীবনে যাইনি। দরকার পড়েনি। বস জানালো সায়েদাবাদে গিয়ে এশিয়া লাইনের দুটা টিকেট কিনতে। আমি বললাম আপনি কিনেন। আমি চিনি না। উনি বললেন আমি যেখানে আছি সেখান থেকে সায়েদাবাদ উল্টা। তুমি কিনো। আমি রাস্তায় তোমার সাথে জয়েন করব। উনার বাড়ি কুমিল্লা। তো আমি লাব্বাইক পরিবহনের বাসে উঠলাম। কারন ওতে সায়েদাবাদ শব্দটা লিখা ছিলো। ওরা আমাকে সায়েদাবাদ নামিয়ে দিলো। হাসবেন না প্লিজ। আমি দেখলাম রাস্তা তিনটা। কিন্তু সায়েদাবাদ বাস টার্মিনাল কৈ? পিছনেরটায় তো এলাম, ওদিকে হবার সম্ভাবনা কম কারন আমি সাইন বোর্ড দেখতে দেখতে এসেছি। তো এখন রইলো ডানের রাস্তা আর সোজা রাস্তা। ডানপন্থী হিসেবে ডানের রাস্তা ধরলাম। আবার মোড়। আবার ডানপন্থী। গিয়ে দেখি আমি সায়েদাবাদ পানি শোধনাগারের কাছাকাছি। ব্যাক। মোড়ে ফিরে আবার ভাবলাম ডানদিকটা কমপ্লিট করে পড়ে সোজা যাই। যাইহোক, শেষ পর্যন্ত ত্রিশ মিনিট হাটাহাটির পর আবিষ্কার করলাম যে আমি যদি ডানপন্থী না হয়ে সোজাপন্থী হতাম তবে বাস থেকে নেমেই দশ সেকেন্ডে টার্মিনালে পৌছতাম। যাক, অনেক খোঁজা-খোঁজি, ফোনের ব্যাটারি এবং ব্যালেন্স কমিয়ে আবিস্কার করলাম যে এশিয়া লাইনের সায়েদাবাদের কোন কাউন্টার নেই। সরাসরি গাড়িতে উঠে যেতে হয়। উঠলাম। আমার দরকার দুটো সিট। আমি আর বস। বসরে ফোন দিয়ে হেল্পারের সাথে কথা কইয়ে দিলাম। কারন তিনি যে যায়গা থেকে উঠবেন সেটা আমি চিনিনা। সাইট বসেছি, সুপারভাইজার বলল যে সিট দুটো নিতে চাইলে কনফার্ম করতে হবে যে সে যদি নাও উঠে তবুও দুই সিটের ভাড়া দিতে হবে। আমি বললাম কি আশ্চর্য, আমি তো বলেছি যে আমি দুটা সিট নিলাম। সে আমাকে দিয়ে ঐ বিষয় কনফার্ম করিয়ে নিয়ে তারপর বিদায় হল। কিছুক্ষন পর দেখলাম উনি চলন্ত গাড়ীতে ভাড়া আদায় করছে। আমার একটু ভয় ভয় করতে লাগলো। কারন পকেটে বেশি টাকা নেই। আমি যদি বলি যে টাকা নেই তবে তো উনি চুড়ান্ত করে ছাড়বে। আর ভাড়াও জানিনা। যাই হোক, দেখলাম যে হারে ভাড়া নিচ্ছে তাতে মোটামোটি কুলিয়ে যাচ্ছে। বাঁচলাম। ভাড়া চাইতে এলে দিয়ে দিলাম। ভাড়া নেবার পর উনি বললেন যে উনি নিজে দায়িত্ব নিয়ে বসকে তুলে নিবেন রাস্তা থেকে। এটা হচ্ছে নিজের ক্ষতি না করে অন্যের উপকার করা।
যাক, পৌছলাম কুমিল্লা ইফতারের আগে আগে। শুনি বস যে অফিস ভাড়া নিয়েছে তাতে এখনও সে কনফার্মেশন পায়নি। এসব আমলে না নিয়ে ইফতার করলাম।
অফিসে গিয়ে দেখি চার চলায় অফিস। আরেকটা অফিসের সাথে শেয়ার করে। অন্যরা বেশ গুছিয়ে নিয়েছে কিন্তু আমাদের কিছুই নেই। আমরা যে আসব তা উনারা জানেন না। যাই হোক, উনি এসে আমাদের কাছে ফ্লাটের চাবি দিয়ে বললেন আপাতত রাতে থাকেন সকালে আলোচনা। রাতে থাকতে গিয়ে মহা ঝামেলা। বালিশ কাঁথা কিছুই নেই। সারা ফ্লাট খুঁজে বের হল একটা তিন হাত লম্বা বাচ্চাদের কাঁথা আর একটা বাচ্চাদের কোলবালিশ। ওটাকেই যৌথ বালিশ এবং কাঁথাটাকে বালিশের ওয়াড় বানিয়ে ঘুমালাম। রাতে সেহেরি খেতে বাইরে যাব। কিন্তু নিচতলার গেটে দেখি তালা লাগানো। আমাদের কাছে ফ্লাটের চাবি আছে তবে গেটের চাবি নেই। আবার উঠে সবগুলো ফ্লাট চেক করলাম কোন ফ্লাটে আলো আছে কিনা। ৩য় তলায় আলো পেলাম। কলিংবেল টিপলাম। বললাম আমরা চারতলায় নতুন এসেছি আর আমাদের কাছে গেটের কোন চাবি নেই। আর রাতে সেহেরি খেতে যাব হোটেলে। উনারা উনাদের কাজের ছেলেকে পাঠিয়ে দিলেন গেট খুলে দিতে। ও গেট খুলে দিলো। আমরা বেড়িয়ে যেতে গেট লাগিয়ে দিচ্ছে দেখে ওকে জিজ্ঞেস করলাম যে ফিরে আসার সময় কি করব? ও ওদের কলিংবেল চিনিয়ে দিল। বলল যে কলিংবেল চাপলেই গেট খুলে দিবে। গেলাম, খেলাম, এলাম, বেল টিপলাম, ঘরে ঢুকলাম। আমি আবিস্কার করলাম যে সোফায়ও ঘুমানো যায়। দিলাম ঘুম।
অনেক বড় হয়ে গেছে। এখন আর লিখতে ইচ্ছে করছে না। পরে লিখবো সময় পেলে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




