somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাকে ছেড়ে যাবি না তো পাগলি।

২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ক্লাস থেকে বের হয়ে একটু চিন্তায় পরলাম। পকেটে মাত্র একশ টাকা। সম্বল বলতে এটুকুই। কাল নীরার জন্মদিন। তিন বছর ধরে একসাথে আছি। মেয়েটাকে কখনোই কিছু দেয়া হয়নি। পৃথীবিতে কিছু কিছু মেয়ে আছে যারা অল্পতেই খুশী। নীরাও তাদের মধ্যে একজন। ও এমন একটা মেয়ে যার কাছে কিছুই লুকানো যায়না। আর তাই তিন বছরের মধ্যে ওর সামনে কখনো মন খারাপ করতে পারিনি। এমনিতেই ও অনেক বেশি কেয়ারিং। নীরার সাথে আমার পরিচয় ফার্মগেটে।
ইউ-সি-সি তে কোচিং করার সুবাদে। ক্যাডেট কলেজ থেকে বের হয়ে প্রথমেই নিজেকে গুছিয়ে নিতে কিছু সময় লাগে। জীবনের বড় একটা অংশ মেয়েদের কাছ থেকে দূরে থাকার ফলে মেয়েদের প্রতি তীব্র কৌতূহল ছিল। যদিও ছেলে হিসেবে আমি বেশ লাজুক প্রকৃতির। একবার কোচিংএর সামনে বসে ফুচকা খাওয়ার পর টাকা দিতে গেলে খেয়াল করলাম পকেটে মানিব্যাগ নেই। এক প্রকার অস্বস্তির মধ্যে পড়লাম।
ছোটবেলা থেকেই আত্মসম্মান বোধটা আমার প্রচন্ড। ফুচকাওয়ালাকে বললাম 'মামা, মানিব্যাগ ফেলে এসেছি। আমার কাছে টাকা নাই। এই ঘড়িটা রাখুন।' দোকানী বিজয়ীর হাসি দিল। স্টিভ জবস আইপড আবিস্কার করে যেমন হাসি দিয়েছিলেন অনেকটা সেরকম। জীবনের সেই চরম অপমানজনক অবস্থা থেকে নীরাই আমাকে রক্ষা করেছিল। সেই থেকে একসাথে আছি। জীবনের বাকীটা পথও এভাবেই থাকার ইচ্ছা। মনে মনে একটা হিসেব দাঁড় করালাম। কাল নীরার একুশতম জন্মদিন। শাহবাগ থেকে একুশটা সাদা গোলাপ কিনতে হবে। আর সাথে নীরার সবচেয়ে পছন্দের কৃষ্ণপক্ষ বইটা। সবমিলিয়ে দেড়শ টাকার মধ্যে হয়ে যাওয়ার কথা। বিকেলে অবশ্য হাতে কিছু টাকা আসবে। প্রথম আলোর সাহিত্য পাতায় গত সপ্তাহে আমার একটা লেখা ছাপা হয়েছিল। তার সম্মানী হিসেবে কিছু পাওয়ার কথা। আসলে ঢাকা শহরে অর্থের কষ্টটা কাউকে বুঝতে দেয়া যায়না। প্রিয় মানুষ গুলোকে তো না ই। আর নীরা যদি জানতে পারে আমার এ অবস্থা তা হলে নির্ঘাত খুন করে ফেলবে। হাতে এক হাজার টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বলবে 'ধুর গাধা, ফ্রেন্ডদের কাছে কিছু লুকোতে হয়?' গত তিনবছরে অনেকবার এমন হয়েছে। যদিও নীরা আমার শুধু বন্ধুই না, বন্ধুর চেয়ে কিছুটা ওপরে। কিছুটা বেশি।
আর প্রেয়সীর চেয়ে কিছুটা নিচে। তবে আমার ইচ্ছে কাল ওকে আমার ভালোবাসার কথা বলবো। আগে থেকেই প্লান করা। সকালে ও টিএসসি তে আসবে। সেখান থেকে দু জন ধানমন্ডী যাবো। বিকেলে আশুলিয়া। নীরার সাথে ঘোরার একটা আলাদা মজা আছে। সারাক্ষন পাগলামী করবে। কখনো চুল ধরে,কখনো শার্ট ধরে টান মারবে। আর সবসময় হাসির কথাবার্তা। দামী কোন রেস্তোরায় খেতে গেলে বলবে- '' ধুর বোকা,তুই কি অনেক টাকা আয় করিস? তার চেয়ে আয় বাদাম খাই। শোন বাদাম হলো ভালোবাসার ফল। দেখিসনা খোসার মধ্যে দু টো ফল। একটা তুই আর একটা আমি। আর আবরন হয়ে আছে ভালোবাসা কিংবা বন্ধুত্ব।'' বলেই জোড়ে হাসত। ঢাকা শহরের আকাশ বাতাস কাঁপানো সে হাসি দেখে মনে হত এই মেয়ের কোন দুঃখ নেই। থাকতে পারেনা। বিকেলে কাওরান বাজারে প্রথম আলোর অফিসে গেলাম। যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে অল্প কিছু টাকা বেশি পাওয়া গেলো। হলে ফেরার পথে একুশটা সাদা গোলাপ কিনলাম। ইচ্ছে ছিল লাল গোলাপ কিনবো। কিন্তু নীরা এখনো আমার বন্ধু। লাল গোলাপ দেয়ার সাহস হলোনা।
ফুল কেনার পর গেলাম লাইব্রেরীতে। অনেকখুঁজে কৃষ্ণপক্ষ বইটা কিনলাম। হাতে কিছু টাকা বেশি থাকায় একটা কবিতার বই ও কিনলাম। নীরার আবার সুনীল খুব পছন্দ। মাঝেমাঝে ক্লাসের ফাঁকে ও বলত -'' এই গাধা,তুই কি কিছুই লিখতে পারিসনা? দেখিস না সুনীল কি সুন্দর করে লিখেছে। এ হাত ছুঁয়েছে নীরার হাত। আমি কি এ হাতে কোন পাপ করতে পারি?'' ইস যদি কেউ আমার হাত ধরে এভাবে বলত।
আমার খুব ইচ্ছে হত নীরার হাত ধরে বলি 'আমি আর কখনো পাপ করবোনা নীরা, তোর হাত টা একটু ধরতে দিবি???
.
গত চৌদ্দই ফেব্রুয়ারীর কথা।
খুব সকালে নীরার ফোন। ঘুম জড়ানো কন্ঠে মোবাইল রিসিভ করে বললাম 'কি রে,তুই এত সকালে? ওপাশ থেকে নীরা শাসনের সুরে বললো 'আমি কলাভবনের সামনে। পাঁচ মিনিটের মধ্যে চলে আয়। আমি স্বভাবতই একটু ঢিলেঢালা। নীলা জানতো আমার আসতে আধঘন্টা লাগবে। তবুও অসহায় মেয়েটি আমার পথের দিকে তাকিয়ে থাকতো। কিছুক্ষন পর এসে দেখি নীরা দাঁড়িয়ে আছে। নীল শাড়ী পরা। নীরাকে দেখে মনে হল এক টুকরো আকাশ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মুগ্ধ চোখে নীরার দিকে তাকিয়ে বললাম 'তুই আসলেই অনেক সুন্দর' নীরা অভিমানের স্বরে বললো 'তুই আসলেই গাধা, এতো দিনে খেয়াল করলি?' শুধু আমার মনের ভেতর কোথাও বেজে উঠতো ...ভালোবাসি তোমাকে।
.
"সকাল থেকেই নীরার জন্যে অপেক্ষা। কখনো ও এত দেরী করেনা।
মনের মাঝে অজানা আশঙ্কা কাজ করছে। আজ আবার হরতাল। কখন কি হয় বলা যায়না। আজ অনুধাবন করলাম অপেক্ষার কষ্ট আসলেই অনেক। প্রতিবারই নীরাকে যা আমার জন্যে সহ্য করতে হয়। এসব ভাবতে ভাবতে সামনে আগালাম। গোলাগুলির শব্দ। নীরার মোবাইলে ফোন দিলাম। অনেক আওয়াজের মধ্যে অপরিচিত একটা কন্ঠ বলল 'একটা মেয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে,শাহবাগ মোড়ে আসেন। আমি অবাক বাকরুদ্ধ হয়ে উদভ্রান্তের মত ছুটলাম। ভীড় ঠেলে সামনে এগিয়ে দেখি নীরা। মাটিতে লুটিয়ে আছে।
ফিনকি দিয়ে পরা রক্তের অজস্র ধারায় সাদা শাড়ী খানা খয়েরী হয়ে গেছে।
তানভীরের ডাকে তন্দ্রা ভাঙলো। এই ওঠ বারোটা বাজে। নীরাকে উইশ করবিনা? হঠাৎ করেই নিজেকে আলাদা এক জগতে আবিস্কার করলাম। কি দুঃস্বপ্নটাই না দেখেছি। এক মুহুর্ত দেরী না করে নীরাকে ফোন দিলাম। এক রিং হতেই নীরা ফোন ধরল। 'কি ব্যাপার হাঁপাচ্ছিস ক্যানো?কি হয়েছে?????"
- 'নীরা আমি তোকে অনেক অনেক ভালোবাসি। আমাকে ছেড়ে যাবিনাতো?'
- 'কি পাগলের মত কথা বলছিস,কি হয়েছে বলবিতো?'
- 'শোন কাল তোর আসতে হবেনা। দেশের অবস্থা ভালো না। কাল হরতাল'
- তাতে কি?
মুখ থেকে মনের অজান্তেই বের হয়ে গেল
- 'আমি তোকে হারাতে চাইনা নীরা। আই লাভ ইউ'
- একথা বলতে এত দেড়ি করলি কেন। আমিও যে তোকে অনেক ভালোবাসি পাগল।
- আমাকে ছেড়ে কখনও যাবিনাতো পাগলি?
- না পাগল।
এরপর শুরু হলো নতুন এক সকাল। নতুন এক সম্পর্ক। নতুন করে পথ চলার আকাঙ্খা। নতুন কিছু স্বপ্ন দেখা। হাতে হাত রেখে অনন্তকালের জন্য পথ চলা। বেচেঁ থাকুক ওদের ভালোবাসা।

সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে নভেম্বর, ২০১৬ দুপুর ১২:২১
২টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×