somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ষড়যন্ত্রতত্ত্ব, ভারত, আমাদের জাতিমানস এবং বার্গেইনিং টুলস-৪ (শেষ)

২৬ শে ডিসেম্বর, ২০১০ সকাল ১১:৪২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ষড়যন্ত্রতত্ত্ব, ভারত, আমাদের জাতিমানস এবং বার্গেইনিং টুলস-১
ষড়যন্ত্রতত্ত্ব, ভারত, আমাদের জাতিমানস এবং বার্গেইনিং টুলস-২
ষড়যন্ত্রতত্ত্ব, ভারত, আমাদের জাতিমানস এবং বার্গেইনিং টুলস-৩

আত্মসমালোচনার স্থান ও প্রয়োজনীয়তা

এখন আমাদের প্রয়োজন আত্মসমালোচনা, আগে নিজের ঘর সামলানো। নিজেকে এমন খেলো করে দিলে কোন বার্গেনিং টুলস ছাড়া নিজের স্বার্থ কখনও রক্ষা করতে পারব না। আলোচনার টেবিলে কোন প্রেশার টুলস ছাড়া করুণা ভিক্ষায় কাজ হয় না। নিজের কাজটা না করে এমন অক্ষমের আহাজারি, ভিক্ষুকের করুণা নিজেদেরই হীন ও হাস্যকর করবে আমাদের। ভারতীয়রা ষড়যন্ত্র করছে, আমরা বসে আঙ্গুল চুষছি কেন, আমাদের ষড়যন্ত্র করতে মানা আছে? নাকি আমাদের ষড়যন্ত্র না করার ষড়যন্ত্রও ভারত করে রেখেছে! নিজের অধিকার ও স্বার্থ রক্ষায় আমরা যে কর্ম-পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন বা ষড়যন্ত্রই বলুন, করতে পারছি না, আমাদের সেই অক্ষমতা কেবলই লজ্জার।

বস্তুত, ষড়যন্ত্রতত্ত্ব সারা বিশ্বেই আছে। আমেরিকার ষড়যন্ত্রতত্ত্ব একটা ইন্ডাস্ট্রি, আমাদেরটা বিকার, বিপত্তির। তাদের ষড়যন্ত্রতত্ত্ব পকেট ভারির, প্রয়োগ অন্যের উপরে, আমাদেরটা সমূহ ক্ষতির, প্রয়োগ নিজেদের উপরে। ষড়যন্ত্রতত্ত্বটা কী জিনিস তা কলকাতার পত্রপত্রিকাগুলোয় চোখ বুলালে বোঝা যায়, তারা ষড়যন্ত্রতত্ত্ব দিয়ে আমাদের ব্যতিব্যস্ত রাখছে, বিভক্তি তৈরি করছে, আর আমাদের ষড়যন্ত্রতত্ত্ব ব্যতিব্যস্ত রাখছে, বিভক্তি তৈরি করছে আমাদেরই। তাদের ষড়যন্ত্রতত্ত্ব উপেক্ষা করতে শিখতে হবে আমাদের। ষড়যন্ত্রতত্ত্ব দিয়ে জীবনীশক্তি ক্ষয়ে ফেলে। আমরা নিজেরাই বড় ষড়যন্ত্রী, সারাক্ষণ নিজেদের সাথেই নিজেরা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত – এটাই আমাদের সকল অধঃপতন ও যত বিভক্তি-দলাদলির জন্য দায়ী। ষড়যন্ত্রের মানসিক বৈকল্য থেকে বেড়িয়ে এসে, সব লেভেলে নিজেদের যোগ্যতা, কমপিটেন্সি তৈরি করতে হবে - এতে ভারতের অনেক ষড়যন্ত্র অটোমেটিক্যালি ব্যর্থ হবে।

নিজের যোগ্যতা না থাকলে আপনাকে কেউ পুছবে না, আর যোগ্যতা থাকলে ছোট হলেও সবাই পুছে তার উদাহরণ ইসরাইল, কিউবা, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া। আর রাষ্ট্রের সীমানা ছোট হলেও আমরা ১৬ কোটির দেশ - জনসংখ্যায় বিশ্বের ৭ম। আমাদের না আছে অর্থনৈতিক, সামরিক সামর্থ, না আছে বার্গেইনিং টুলস, না আছে নেগসিয়েশন স্কিল বরং আছে স্বদেশে এক সর্বগ্রাসী কলহ, কোন্দল, পারস্পরিক ল্যাঙ মারামারি ও ষড়যন্ত্র - আমাদের বিরুদ্ধে এরপর ভারতের আর ষড়যন্ত্র করার প্রয়োজন কী, যা চায় তাতো সহজেই পেয়ে যাচ্ছে, অনেক সময় না চেয়েও পেয়ে যাচ্ছে।

এখানে শাহরুখ, কারিনার যোগ্য বিকল্প তৈরি করতে হবে, আত্মমর্যাদা কী জিনিস সেটা শিখতে, শেখাতে হবে। ভেবে দেখুন, আমরা ইন্ডিয়ান চ্যানেল না দেখলেই মেগাসিরিয়ালের কুফল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে, আমরা ডাইল না খেলেই তাদের ব্যবসা লাটে উঠবে। স্মাগলিঙের ব্যাপারটা যদি দেখেন, এর ৮০% বাংলাদেশি, ২০% ইন্ডিয়ান। তো? নিজের ঘর সামাল হলে স্মাগলিংও বন্ধ হবে, বিএসএফ-এর বাংলাদেশি খুনও কমবে। আমরা শিল্পোন্নত হলে, কৃষিতে স্বাবলম্বী হলে তাদের থেকে আমদানিকে বুড়ো আঙ্গুল দেখাতে পারব। হ্যাঁ, এসবই একেকটা প্রেশার টুলস হতে পারে! নিজের স্বার্থ সংরক্ষণে যুদ্ধে যাওয়ার দরকার নেই, নিজেদের ঐক্য, আত্মমর্যাদাবোধ, দক্ষতা এবং শক্ত গণতান্ত্রিক ও অর্থনৈতিক ভিত প্রয়োজন। দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে আমাদের অধিকারগুলো কী কী, আর সেসব কী উপায়ে অর্জন করতে হবে, এখন আমরাতো এসবই জানিনা। নেগসিয়েশন একটা একাডেমিক বিষয় বিদেশে, না হয় চুক্তির ফোকর দিয়ে সব আপাত অর্জন চলে যাবে। নিজের কাজটা সফলভাবে করলেই কেবল আত্মমর্যাদা নিয়ে ভারতের সাথে সন্মানজনক নেগশিয়েসনে যাওয়ার স্পর্ধা করতে পারব – আগে নয়। আত্মসমালোচনার ক্ষেত্রটা এখানেই।

এখানে আরেকটি বিষয় স্মর্তব্য যে,কেউ কেউ শুধুই হিন্দু ভারতীয় ষড়যন্ত্র দেখতে পায়, সেটাও আংশিক সত্য, অনেক অনেক বেশি সত্য হল, ব্যবসায়ীক ও বৈষয়িক স্বার্থের কারণটি। এখন গ্লোবালাইজেশনের যুগ, বিশ্বের নানান কিছু আমরা গ্রহণ করছি। গ্লোবাল ভিলেজে কেউ বেশি দেবে, কেউ গ্রহণ করবে বেশি – এটা অনেকটা আমদানি-রফতানি বাণিজ্যের মত, মার্কেটিঙের মত। ভারত থেকে তাই আমাদের গ্রহণের মাত্রাও বেশি হবে। এখানে সবকিছুই নেতিবাচক নয়, সবকিছুই ষড়যন্ত্র নয়, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ব্যবসাই আসল। সবকিছুতে যড়যন্ত্র খোঁজা একটি বাতিক, মানসিক পঙ্গুত্বের লক্ষণ। এখানে ভারতের ষড়যন্ত্র থেকে নিজেদের ষড়যন্ত্রে বলি আমরা অধিক। এর থেকে বাঁচার জন্য চাই আত্মসচেতনতা,আত্মশুদ্ধি ও আত্মউন্নয়ন। অন্যের দোষ ধরায় পন্ডশ্রম করলে কোন লাভ নাই, আছে আত্মসমালোচনার পথ হারানোর ক্ষতি, ষড়যন্ত্রের পচা শামুকে কেবলই পা কাটার বিপাক।

ন্যূনতম রাজনৈতিক ঐক্যমত্য – একমাত্র উপায়

আমি বাংলাদেশের কোন রাজনৈতিক দলের চিন্তাধারা, কার্যকলাপের সাথে এতটুকু যেতে পারি না। তারপরও জানি, রাজনৈতিক ইচ্ছা ও উদ্যোগ ছাড়া আমরা আত্মমর্যাদা নিয়ে, নিজের অধিকার প্রতিষ্ঠা করে ভারতের পাশে মাথা উঁচু করে দাড়াতে পারব না – এবং ন্যূনতম রাজনৈতিক ঐক্য ছাড়া এই ইচ্ছার বাস্তবায়ন সম্ভব না। আমার ভাইয়ের চেয়ে প্রতিবেশি বা বাইরের কেউ মূল্যবান হলে শেষ পর্যন্ত ভাইকেই শত্রু বানিয়ে ছাড়বে এবং স্বার্থ হাসিল শেষ হলে আমাকেও ছুঁড়ে ফেলে দেবে – এই চিরন্তন সত্যটা বুঝতে হবে। এখানে লিগ-দল সবাইকে এক হতে হবে, দেশপ্রেমের উদাহরণ তৈরি হতে হবে, দেশপ্রেমের চর্চা থাকতে হবে (করপোরেট দেশপ্রেম নয়)। ষড়যন্ত্র, ষড়যন্ত্র করে অক্ষমের আহাজারি করা। আমাদের প্রয়োজন রাজনৈতিক ঐক্য, সচেতনতা, কমপিটেন্সি তৈরি, বার্গেইনিং টুলস ও নেগসিয়েশন স্কিল অর্জন করা - এটাই ভারতের মোকাবেলা করার একমাত্র পথ।

পরিশেষে, আসুন মর্যাদাপূর্ণ দেশ গড়ি, এবং সেটা যোগ্যতা ও কমপিটেন্সি দিয়ে, ষড়যন্ত্র থিউরি দিয়ে নয়।
১টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×