somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ভালোবাসার টানে ছুটে চলা

২৩ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


নাহ্ আমি আর পারছি না। আমার নি:শ্বাস বন্ধ হয়ে আসছে। প্রবাস নামের বন্ধিশালায় আমার আর ভালো লাগছে না। মুক্ত আকাশে ডানা মেলে উড়তে খুব ইচ্ছে করছে। স্বাধীন দেশে নিজ মাতৃভুমির আলোকিত সূর্য দেখতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে বাংলার বাতাসের সাথে দোল খেতে। দীর্ঘ ছয়টি বছরেরও বেশি হয়ে গেল প্রিয় মাতৃভুমি দেখি না। দেখি আমার দেশের সূর্যাদয় কিংবা সূর্যা¯ত। দেখি না ঘাঁসের বুকে শিশির কনার মুক্তা ঝারানোর দৃশ্য। আজ কতদিন হল প্রিয়জনদের মুখগুলো অবলোকন করি না। আমাকে আর বেঁধেও রাখা যাবে না। আমাকে যেতেই হবে।
অবশেষে ৪ জানুয়ারী ২০১২ইং আমার জীবনের এক অনন্য দিন হয়ে ধরা দেয়। এই দিন আমি দীর্ঘ ছয় বছরেরও বেশি সময় পর প্রিয় মাতৃভুমি বাংলাদেশে ছুটে চলি। ৪ জানুয়ারী ২০১২ ইং সকালে ঘুম থেকে উঠেই অনূভব করলাম আমার মনে আনন্দের বন্যা বয়ে যাচ্ছে। আজকের দিনটি অন্য দশটি দিনের মত নয়। অনেক ব্যতিক্রম। ছুটিতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছি প্রায় এক সাপ্তাহ যাবত। কেনাকাটা শেষ সব আসবাব দুটি কার্টুনে বেঁধেছি। রুমের মেঝোতে কার্টুন দুটি গড়াগড়ি খাচ্ছে গায়ে লেখা রিয়াদ টু ঢাকা। আমি নিজেকে গুছিয়ে বসে আছি। বিকেলের জন্য অপেক্ষা করছি কারন রাতে আমার ফ্লাইট বিকেলে বের হব। কিন্তু সময় তো যায় ই না। ঘড়ির কাটা যেন চলেই না। মনে পড়ে গেল সেই গানটি..
স্টেশনের রেল গাড়ি টা
মাইপা চলে ঘড়ির কাটা
প্লাটর্ফমে বইসা গুণি কখন বাজে বারো টা.. .. ..
আমি রুমে বসে বসে ঘড়ির কাটা দেখছি কখন বিকেল হবে। অফিসের সবার সাথে দেখা করে বিদায় নিয়ে নিলাম। সকাল পেড়িয়ে দুপুর অবশেষে বিকেল হল। অফিস কলিগ রুহুল আমিন ভাই এলেন তার গাড়িতে চলে এয়ারপোর্ট যাবো। রুহুল আমিন ভাই খুব মিশুক লোক। যে কারো সাথে মুহুর্তে মিশে যাবে এবং এমন সম্পর্ক গড়ে তুলবে যেন তার অনেক দিনের পুরাতন বন্ধু। তিনি আমাদের কোম্পানীর সুপারভাইজার ছিলেন চাকুরির প্রমোশন হয়ে এখন তিনি কন্ট্রাক্ট ম্যানেজার। যাই হোক রুহুল আমিন ভাই গাড়ি নিয়ে আসলেন। সহকর্মী বন্ধুরা আমাকে বিদায় জানাতে অপেক্ষা করছিল। বন্ধুদের সাথে বুক মিলিয়ে বিদায় নিয়ে গাড়িতে উঠে বসলাম। রুহুল আমিন ভাই গাড়ি স্ট্যাট দিলেন। গাড়ি ছুটে চলল রিয়াদ কিং আব্দুল আজিজ বিমান বন্দর অভিমুখে। গড়ি তো চলছে না বরং মনে হচ্ছে আমি বাতাসের সাথে উড়ে বেড়াচ্ছি। মনটা আমার আনন্দে নাচছে। নাচতে তো হবেই কতদিন পর দেশে যাচ্ছি। গাড়ি চলছে তো চলছেই কখনো সোজা কখনো এঁকে বেঁকে, কখনো ব্রিজের উপর দিয়ে আবার কখনো ব্রিজের নিচ দিয়ে। ব্রিজের নিচ দিয়ে গাড়ি চলার কথা শুনে অভাক হলেন ? ভাবছেন পানিতে ডুবে গেল না গাড়ি ?? অভাক হওয়ার কিছুই নেই এদেশে শুকনোর উপর অসংখ্য ব্রিজ। যানযট এড়ানোর জন্য। আমাদের মহাখালী ও খিলগাঁয়ের দিকে তাকান এবার ক্লিয়ার ? এক পর্যায়ে গাড়ি বিমান বন্দরে এসে পৌছল। আমাকে নামিয়ে দিয়ে রুহুল আমিন ভাই গাড়ি নিয়ে চলে গেলেন।
একটি ট্রলি নিয়ে আমি কার্টুন দুটি তাতে রাখলাম এবং ব্রিফকেস রাখলাম তার উপর। এবার সিরিয়ালে দাড়ালাম। বিশাল সিরিয়াল। গেটের বাহিরেই শতাধিক লোক হবে। এত লোকের ভিড়ে, কখন গেট অতিক্রম করে ভিতরে ঢুকবো ভাবতে লাগলাম। খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম দুদিন আগের যাত্রী এখনো এখানে তাই এত ভিড় । বাংলাদেশ বিমান বলে কথা শিডিউল বিপর্যয় খুব স্বাভাবিক ব্যাপার। এত লোকের সিরিয়াল অতিক্রম করে ইমিগ্রেশনে পৌছা সম্ভব হবে না তা ভালো করেই আনদাজ করে ফেললাম। তাই বাধ্য হয়ে ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করে সিরিয়ালের আওতা মুক্ত হয়ে গেলাম। সরাসরি ইমিগ্রেশনের সামনে চলে গেলাম। বাকিরা লাইনে দাড়িয়ে রইল। কয়েকটি লাইনে দাড়িয়ে ইমেগ্রেশনের কাজ সমাপ্ত করলাম। এক পর্যায়ে বোডিং কার্ড হাতে পেলাম। বোডিং কার্ড পাওয়া মানে ফ্লাইট নিশ্চিত মিস হওয়ার কোন সম্ভাবনা নেই। দেশে ভাইয়া আপুরা সবাই আমার একটি ফোনের অপেক্ষায় আছে। বড় ভাইয়াকে ফোন করে বোডিং কার্ড পাওয়ার খবরটি জানিয়ে দিলাম। ভাইয়া বাকি সবাইকে জানিয়ে দিবে।
বোর্ডি কার্ড নিয়ে বাংলাদেশ বিমানের সব যাত্রীরা বিমানের জন্য অপেক্ষা করছি । অপেক্ষা পালা যেন শেষ হতে চায় না। সবার চেহারা হাঁসির ঝিলিক। চেহারা দেখেই বুঝা যাচ্ছে সবাই খুব আনন্দিত। এটা প্রিয়জনদের কাছে ছুটে যাওয়ার আনন্দ । অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে অবশেষে বিমান এলো। সবাই বিমানে উঠে নিজ নিজ আসন গ্রহন করলাম। কিছুক্ষণ পর বিমানে ঘোষনা এলো “ আমরা রিয়াদ কিং আব্দুল আজিজ আন্তজাতিক বিমান বন্দর থেকে ঢাকা হযরত শাহ জালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের উদ্দেশ্যে রওয়ানা করছি, কিছুক্ষণের মধ্যেই বিমান আকাশে উড্ডিন করবে সবাই বেল্ট বেধেঁ নিন” ঘোষনাটি খুব ভালো লাগছিল। এমন একটি ঘোষনা শুনার জন্য দীর্ঘ ছয় বছরেরও বেশি সময় ধরে অপেক্ষা করছি। ঘোষনাটি শোনার পর সবার চেহারায় আনন্দের আভা লক্ষ করা গেল। একটু পরে ঠিকই বিমান আকাশে উড্ডিন হল। বিমান ছুটে চলল প্রিয় বাংলাদেশ অভিমুখে। আনন্দের বন্যা বইতে শুরু করলো প্রত্যেক প্রবাসীর মনে। সবাই ছুটি চলছি প্রিয় দেশে ভালবাসার টানে।
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জুলাই, ২০১৩ রাত ৮:২৩
৫টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

লিখেছেন নতুন নকিব, ০৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না

ছবি কৃতজ্ঞতাঃ অন্তর্জাল।

ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন

লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:১৪



মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪১


প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৪


সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×