বাংলা ভাষার ইতিহাস
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
ঐতিহাসিক গোলাম হোমায়েন সলীম তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন আদম আ. এর দশম পুরুষ হযরত নূহ আ. এর সময় মহা প্লাবনে মুষ্টিমেয় কিছু মুসলিম রক্ষা পায়। তাদের দিয়ে পুনরায় দুনিয়াতে মানুষ্য বসতি শুরু হয়। এই মহা প্লাবনের পর নূহ আ: এর পুত্র হাম তার পিতার অনুমতি নিয়ে পৃথিবীর দক্ষিণে মানুষ্য বসতি স্থাপনের মনস্থ করেন। এ উদ্দেশ্য সফল করার জন্য সে পুত্রদের দিকে দিকে প্রেরণ করতে থাকে। তারা যে যেখানে বসতি স্থাপন করে তার নামানুসারে সে অঞ্চলের নামকরণ করা হয়। উল্লেখ্য যে হাম এর ছিল ছয় ছেলে, প্রথম ছেলের নাম হিন্দ। আর হিন্দ এর ছিল চার ছেলে বড় ছেলের নাম বং। বং ও তার সন্তানগণ এ অঞ্চলে বসতি শুরু করে। ফলে বং এর সাথে আল যুক্ত হয়ে এ অঞ্চলের নাম হয় বঙ্গাল। আল অর্থ বাঁধ। যাতে বন্যার পানি বাগানে বা আবাদি জমিতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য জমির চার দিকে আল দেয়া হত। প্রাচীন বাংলা প্রধানেরা পাহাড়ের পদ দেশে নিচু জমিতে দশ হাত উঁচু ও কুড়ি হাত চাওরা স্তুপ তৈরী করে তার উপর বাড়ি নির্মাণ ও চাষাবাদ করত। লোকেরা এগুলোকে বঙ্গাল বলত।
আবার কেউ কেউ বলেন গঙ্গঁ শব্দের রুপান্তর হল বং। এটা আর্য ভাষা উচ্চারণ রীতির প্রভাবে গঙ্গঁ হয়েছে বঙ্গঁ। অবশ্য সেনেটিক ভাষায় আল অর্থ আওলাদ, বংশধর। এ অর্থে বঙ্গঁ+আল=বঙ্গাঁল বঙ্গঁর সন্তানগণ। তারা এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছেন বলে এর নাম হয়েছে বঙ্গাল বা বাংলা।
ইতিহাস থেকে জানা যায় সর্ব প্রথম ১৮০১ ইং সালে গৌরিয় ব্রাহ্মণরা বাংলার সংস্কার শুরু করেন। প্রথমে শব্দ পরে লিপি তারপর বানান সংস্কার করা হয়। ১৮শতকে পর্তূগিজ ভাষা তাত্ত্বিক "হেলহেড এ গ্রামার অফ দ্যা ব্যাঙ্গলী ল্যাংগুয়েজ" নামক প্রথম বাংলা ব্যাকরণ রচনা করা হয়। তারপর রাজা রাম মোহন রায় গৌরিয় ব্যাকরণ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে আরো বাংলা ব্যাকরণ প্রকাশিত হতে থাকে।
পাল আমলে বাংলা নিষিদ্ধ করা হয় আর একে বিদ্রুপ করে পাখির ভাষা বলা হয়। আরো বলা হয় এই ভাষায় সাহিত্য চর্চা করলে নরকে যেতে হবে। এতকিছুর পর ও তৎকালীন হিন্দু, মুসলিম বাংলা সাহিত্যিকরা সাহিত্য চর্চা ও কাব্য রচনা চালিয়ে যান।
১৯২০ইং সালে ব্রিটিশ শাসন আমলে বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা করার দাবী উঠে। সর্বপ্রথম বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা ও উচ্চ শিক্ষার মাধ্যম করার দাবি জানান স্যার নওয়াব আলী চৌধুরী। তারপর রবি ঠাকুরের শান্তি নিকেতন আলোচনা সভায় এই দাবি তুলেন ড. মহাম্মদ শহিদুল্লাহ। এই দাবি জোরদার হয়ে উঠে ১৯৪৭ইং সালে। ১৯৪৭ইং সালে পাকিস্তান ট্রাষ্ট সিভিল সার্ভিস এর সেক্রেটারী গুডোএল বিষয় ভিত্তিক বিভাগ নির্ধারণ করার যে গেজেট প্রকাশ করেন তাতে উর্দূ, হিন্দি, তূর্কী, ল্যাটিন, সাংস্কৃতি ভাষা থাকলে ও বাদ পরে যায় বাংলা। এ গেজেট প্রকাশের পর সে সময়ের পত্রিকা ইত্তেহাদে এ বিষয়ে প্রতিবাদমূলক একটি কলাম লেখেন প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম। লেখাটি ঢাকায় পৌঁছলে বাংলা ভাষাভাষীদের মাঝে দারুণ সাড়া জাগায়। বাংলার সূর্য তরুণরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। শুরু হয় বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার জোরদার আন্দোলন। আন্দোলন চলতেই থাকে এই আন্দোলন ১৯৫২ সালে বাঁধ ভাঙাঁ জোয়ারে রূপ নেয়। শুরু হয় রক্তঝরা আন্দোলন রাজপথ কাঁপিয়ে তোলে বাংলার ছত্র জনতা। তাঁজা রক্ত ঝরিয়ে রাজপথে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন রফিক, শফিক, সালাম, জব্বার, বরকতসহ আরো অনেকে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলা পায় রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা। পৃথিবীর বুকে একমাত্র বাংলাই সেই গৌরবময় ভাষা যার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য রক্ত ঝরাতে হয়েছে। তাই তো বাংলা আমাদের অহংকার আমাদের গৌরব। এই ত্যাগের পিছনে যাদের কথা স্মরণ না করলেই নয় তারা হলেন অধ্যাপক আবুল কাশেম, আব্দুল মতিন, গাজিউল হক, অধ্যাপক আব্দুল গফুর, বিচারপতি আব্দুর রহমান চৌধুরী ও অধ্যাপক গোলাম আযম।
এরপর থেকে বাংলা ভাষার বিজয় ধ্বনি বাজতেই থাকে। উল্লেখ্য যে ১৯৯৯ইং সালে ইউনেস্কোর ৩০তম সাধারণ সম্মেলনে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" ঘোষণা করা হয়। বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্ব দরবারে আজ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বাংলা ভাষা। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৩০ কোটি মানুষ বাংলায় কথা বলে। জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ চলে এখন। বিভিন্ন দেশে এখন বাংলা ভাষায় পত্রিকা পুস্তক রচিত হয়। সৌদি আরবে বাংলাভাষা ৪র্থ স্থান দখল করে স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে। এসবই আমাদের বাংলার বিজয়। বাংলার এই বিজয় ধারা চিরকাল থাকবে বহমান।
ঐতিহাসিক গোলাম হোমায়েন সলীম তার গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন আদম আ. এর দশম পুরুষ হযরত নূহ আ. এর সময় মহা প্লাবনে মুষ্টিমেয় কিছু মুসলিম রক্ষা পায়। তাদের দিয়ে পুনরায় দুনিয়াতে মানুষ্য বসতি শুরু হয়। এই মহা প্লাবনের পর নূহ আ: এর পুত্র হাম তার পিতার অনুমতি নিয়ে পৃথিবীর দক্ষিণে মানুষ্য বসতি স্থাপনের মনস্থ করেন। এ উদ্দেশ্য সফল করার জন্য সে পুত্রদের দিকে দিকে প্রেরণ করতে থাকে। তারা যে যেখানে বসতি স্থাপন করে তার নামানুসারে সে অঞ্চলের নামকরণ করা হয়। উল্লেখ্য যে হাম এর ছিল ছয় ছেলে, প্রথম ছেলের নাম হিন্দ। আর হিন্দ এর ছিল চার ছেলে বড় ছেলের নাম বং। বং ও তার সন্তানগণ এ অঞ্চলে বসতি শুরু করে। ফলে বং এর সাথে আল যুক্ত হয়ে এ অঞ্চলের নাম হয় বঙ্গাল। আল অর্থ বাঁধ। যাতে বন্যার পানি বাগানে বা আবাদি জমিতে প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য জমির চার দিকে আল দেয়া হত। প্রাচীন বাংলা প্রধানেরা পাহাড়ের পদ দেশে নিচু জমিতে দশ হাত উঁচু ও কুড়ি হাত চাওরা স্তুপ তৈরী করে তার উপর বাড়ি নির্মাণ ও চাষাবাদ করত। লোকেরা এগুলোকে বঙ্গাল বলত।
আবার কেউ কেউ বলেন গঙ্গঁ শব্দের রুপান্তর হল বং। এটা আর্য ভাষা উচ্চারণ রীতির প্রভাবে গঙ্গঁ হয়েছে বঙ্গঁ। অবশ্য সেনেটিক ভাষায় আল অর্থ আওলাদ, বংশধর। এ অর্থে বঙ্গঁ+আল=বঙ্গাঁল বঙ্গঁর সন্তানগণ। তারা এ অঞ্চলে বসতি স্থাপন করেছেন বলে এর নাম হয়েছে বঙ্গাল বা বাংলা।
ইতিহাস থেকে জানা যায় সর্ব প্রথম ১৮০১ ইং সালে গৌরিয় ব্রাহ্মণরা বাংলার সংস্কার শুরু করেন। প্রথমে শব্দ পরে লিপি তারপর বানান সংস্কার করা হয়। ১৮শতকে পর্তূগিজ ভাষা তাত্ত্বিক "হেলহেড এ গ্রামার অফ দ্যা ব্যাঙ্গলী ল্যাংগুয়েজ" নামক প্রথম বাংলা ব্যাকরণ রচনা করা হয়। তারপর রাজা রাম মোহন রায় গৌরিয় ব্যাকরণ প্রকাশ করেন। পরবর্তীতে আস্তে আস্তে আরো বাংলা ব্যাকরণ প্রকাশিত হতে থাকে।
পাল আমলে বাংলা নিষিদ্ধ করা হয় আর একে বিদ্রুপ করে পাখির ভাষা বলা হয়। আরো বলা হয় এই ভাষায় সাহিত্য চর্চা করলে নরকে যেতে হবে। এতকিছুর পর ও তৎকালীন হিন্দু, মুসলিম বাংলা সাহিত্যিকরা সাহিত্য চর্চা ও কাব্য রচনা চালিয়ে যান।
১৯২০ইং সালে ব্রিটিশ শাসন আমলে বাংলাকে রাষ্ট্রীয় ভাষা করার দাবী উঠে। সর্বপ্রথম বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা ও উচ্চ শিক্ষার মাধ্যম করার দাবি জানান স্যার নওয়াব আলী চৌধুরী। তারপর রবি ঠাকুরের শান্তি নিকেতন আলোচনা সভায় এই দাবি তুলেন ড. মহাম্মদ শহিদুল্লাহ। এই দাবি জোরদার হয়ে উঠে ১৯৪৭ইং সালে। ১৯৪৭ইং সালে পাকিস্তান ট্রাষ্ট সিভিল সার্ভিস এর সেক্রেটারী গুডোএল বিষয় ভিত্তিক বিভাগ নির্ধারণ করার যে গেজেট প্রকাশ করেন তাতে উর্দূ, হিন্দি, তূর্কী, ল্যাটিন, সাংস্কৃতি ভাষা থাকলে ও বাদ পরে যায় বাংলা। এ গেজেট প্রকাশের পর সে সময়ের পত্রিকা ইত্তেহাদে এ বিষয়ে প্রতিবাদমূলক একটি কলাম লেখেন প্রিন্সিপাল আবুল কাশেম। লেখাটি ঢাকায় পৌঁছলে বাংলা ভাষাভাষীদের মাঝে দারুণ সাড়া জাগায়। বাংলার সূর্য তরুণরা ক্ষোভে ফেটে পড়ে। শুরু হয় বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা করার জোরদার আন্দোলন। আন্দোলন চলতেই থাকে এই আন্দোলন ১৯৫২ সালে বাঁধ ভাঙাঁ জোয়ারে রূপ নেয়। শুরু হয় রক্তঝরা আন্দোলন রাজপথ কাঁপিয়ে তোলে বাংলার ছত্র জনতা। তাঁজা রক্ত ঝরিয়ে রাজপথে শাহাদাতের অমীয় সুধা পান করেন রফিক, শফিক, সালাম, জব্বার, বরকতসহ আরো অনেকে। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে বাংলা পায় রাষ্ট্র ভাষার মর্যাদা। পৃথিবীর বুকে একমাত্র বাংলাই সেই গৌরবময় ভাষা যার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য রক্ত ঝরাতে হয়েছে। তাই তো বাংলা আমাদের অহংকার আমাদের গৌরব। এই ত্যাগের পিছনে যাদের কথা স্মরণ না করলেই নয় তারা হলেন অধ্যাপক আবুল কাশেম, আব্দুল মতিন, গাজিউল হক, অধ্যাপক আব্দুল গফুর, বিচারপতি আব্দুর রহমান চৌধুরী ও অধ্যাপক গোলাম আযম।
এরপর থেকে বাংলা ভাষার বিজয় ধ্বনি বাজতেই থাকে। উল্লেখ্য যে ১৯৯৯ইং সালে ইউনেস্কোর ৩০তম সাধারণ সম্মেলনে ২১শে ফেব্রুয়ারিকে "আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস" ঘোষণা করা হয়। বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে বিশ্ব দরবারে আজ মাথা তুলে দাঁড়িয়েছে বাংলা ভাষা। বর্তমানে পৃথিবীর প্রায় ৩০ কোটি মানুষ বাংলায় কথা বলে। জাতিসংঘের অধিবেশনে বাংলায় ভাষণ চলে এখন। বিভিন্ন দেশে এখন বাংলা ভাষায় পত্রিকা পুস্তক রচিত হয়। সৌদি আরবে বাংলাভাষা ৪র্থ স্থান দখল করে স্বগৌরবে দাঁড়িয়ে আছে। এসবই আমাদের বাংলার বিজয়। বাংলার এই বিজয় ধারা চিরকাল থাকবে বহমান।
১টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা
সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন
...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না
...এবং উচ্চতায় তুমি কখনই পর্বত প্রমাণ হতে পারবে না
ছোটবেলায় মুরব্বিদের মুখে শোনা গুরুত্বপূর্ণ অনেক ছড়া কবিতার মত নিচের এই লাইন দুইটাকে আজও অনেক প্রাসঙ্গিক বলে মনে হয়।... ...বাকিটুকু পড়ুন
লালনের বাংলাদেশ থেকে শফি হুজুরের বাংলাদেশ : কোথায় যাচ্ছি আমরা?
মেটাল গান আমার নিত্যসঙ্গী। সস্তা, ভ্যাপিড পপ মিউজিক কখনোই আমার কাপ অফ টি না। ক্রিয়েটর, ক্যানিবল কর্পস, ব্লাডবাথ, ডাইং ফিটাস, ভাইটাল রিমেইনস, ইনফ্যান্ট এনাইহিলেটর এর গানে তারা মৃত্যু, রাজনীতি,... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমেরিকার গ্র্যান্ড কেনিয়ন পৃথিবীর বুকে এক বিস্ময়
প্রচলিত কিংবদন্তি অনুসারে হাতে গাছের ডাল আর পরনে সাধা পোশাক পরিহিত এক মহিলার ভাটাকতে হুয়ে আতমা গ্র্যান্ড কেনিয়নের নীচে ঘুরে বেড়ায়। লোকমুখে প্রচলিত এই কেনিয়নের গভীরেই মহিলাটি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন
চুরি! চুরি! সুপারি চুরি। স্মৃতি থেকে(১০)
সে অনেকদিন আগের কথা, আমি তখন প্রাইমারি স্কুলে পড়ি। স্কুলে যাওয়ার সময় আব্বা ৩ টাকা দিতো। আসলে দিতো ৫ টাকা, আমরা ভাই বোন দুইজনে মিলে স্কুলে যেতাম। আপা আব্বার... ...বাকিটুকু পড়ুন