somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৩য় বিশ্বে পড়ালেখা করাটা আফিম খেয়ে নেশাগ্রস্থ হওয়ার মত ...

০৯ ই জুন, ২০১২ বিকাল ৫:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কোন কোন দার্শনিক বলেছেন "ধর্ম হল আফিম" । আমি মনে করি এই উক্তি তাদের ব্যর্থতার প্রতীক। কারন ধর্মের ভালবাসা থেকে সাধারন মানুষকে নিজের ভক্ত করতে গিয়ে তাদেরকে প্রচন্ড বেগ পেতে হয়েছিল। ধর্মের জোর থেকে তাদের জোর ম্রিয়মান হয়েছিল বিধায় এ খেদোক্তি।

কিন্তু আমি মনে করি ৩য় বিশ্বে পড়ালেখা করাটা আফিম খেয়ে নেশাগ্রস্থ হওয়ার মত। স্পেশালি বাংলাদেশ। আমি জ্ঞান অর্জনের জন্য পড়ালেখাকে বুঝাচ্ছিনা। অন্ধকার দুরীকরনের জন্য যে পড়ালেখা সে পড়ালেখাকে স্বাগত জানাই।

কিন্তু চাকরি পাওয়ার জন্য পড়ালেখা আফিম খেয়ে নেশাগ্রস্থ হওয়ার মত। আমাদের দেশের সিস্টেম আমাদেরকে এই আফিম খাওয়ায়ে নেশাগ্রস্থ করে রাখতে চায়। চাকরী নাই, কর্মখালি নাই,নতুন কর্মসংস্থান নাই। [sb]দেশের বিভিন্ন সময়ের গভঃমেন্টগুলো কর্মসংস্থান তৈরীতে নিজেদের ব্যর্থতা ঢাকার জন্য চাকরীর পড়ালেখা নামক আফিমের সৃষ্টি করেছে।


একজন শিক্ষার্থীকে এস.এস.সি , এইচএসসি পাশ করার পর কলেজে - বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে গিয়ে অনেক বেগ পেতে হয়। ভর্তি কোচিং আর টেনশন তাকে ছাড়েইনা। কলেজ ও বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার জন্য পাশ করাটায় তো বড় যোগ্যতা। কিন্তু সবাই তাহলে অনার্সে ভর্তি হতে পারবে না কেন? পাশ করাটাই তো উচ্চ শিক্ষার জন্য ছাড়পত্র। তাহলে আবার ভর্তি পরীক্ষা নির্যাতন কেন? রেজাল্ট অনুসারে ভর্তি করানো উচিত।

অনার্সে ভর্তি হওয়ার পর তীব্র সেশনজট, কোন্দল মারামারি, টেন্ডারবাজি আরও হরেক রকমের বৈরী পরিবেশে তাকে পাশ করে অবতীর্ন হতে হয় চাকরী পাওয়ার যুদ্ধে। চাকরী প্রার্থী আছে ১০ লাখ । পোস্ট খালি আছে ২০০। এদেশের ম্যানেজম্যান্ট কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে নি।

বেকারদের আত্বীয় স্বজন শুধু বেকারদের উপদেশ দেয় পড়ার জন্য।জব কোচিং কর। বিসিএস কোচিং কর। মাতাপিতার উপর চলে সন্তানদের মানুষ করার জন্য মেন্টাল টর্চার এবং প্রেসার। আচ্ছা !আমরা আম্মা আব্বাকে কি দিতে পারি? নতুন সংসার শুরু হলে দেখা দেয় ভাঙ্গনের সুর।

সবাই যদি মারাত্বক রকমের চাকরির প্রস্তুতি নেয় তবে সবাই কি চাকরি পাবে??? পাবেনা। চাকরীর জন্য এই পড়ালেখাটা হচ্ছে আফিম খাওয়ায়ে নেশাগ্রস্থ করে রাখার মত । বেকারকে সবাই বলে পড় পড় পড়। বেকারের অধিক পড়া , পছন্দের পাত্রীর বিয়ে হয়ে যাওয়া , টিউশনী জীবনের নিগ্রহ , ব্যাংকড্রাফট নির্যাতন, ঢাকায় পরীক্ষা দিতে আসার খরচ, বেকারজীবনের যাতনা তাকে কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে। এই বেকাররা একটি ফ্লাট বাসাও পায়না থাকার জন্য। মালিক পক্ষ বলে দেয় ব্যাচেলর ভাড়া দেবেনা। নুন্যতম পড়ার পরিবেশ থেকেও তারা বঞ্চিত।


দেশের ম্যনেজমেন্ট পড়ালেখা নামক আফিম খাওয়ায়ে অনেক বেকারকে নেশাগ্রস্থ করে রেখেছে। অনেক পড়ে পরীক্ষায় টিকার পর মালিক পক্ষের মন্তব্য হচ্ছে আপনার অভিজ্ঞতা নেই। অভিজ্ঞতা থাকলেও ঘুষ লাগবে চাকরী পেতে। এ এক নিদারুন খেলা। সবার পরে লাগবে এমবিএ (মাস্টার অব বাথরুম ম্যানেজমেন্ট) ডিগ্রি। সবার মাঝে এখন হুড়োহুড়ি এমবিএ ডিগ্রি করার জন্য ।

বিসিএস নামক আরেক জগাখিচুড়ীর সম্মুখীন জাতির মেধাবী তরুনেরা। একবার প্রিলিমিনারীতে ঠিকলে হয়না । বারবার প্রিলিতে ঠিকে লিখিত পরীক্ষা দিতে হয়। ভাইভা! এটি আরেক শুভংকরের ফাকিঁ। ৫৫% চলে যাবে কোটাতে।দেশের সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে রোল এক করার জন্য কোটাপদ্ধতি চালু করা দরকার। মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও নাতিপতি দিগকে কোটাপ্রথার মাধ্যমে রোল- ১ ,২, ৩ করা হোক।

বিসিএস এর জন্য না পড়ে ভাল জবের জন্য পড়া অনেক ভাল। বিসিএস করে দুর্নীতি করতে হবে ভাল করে বেচে থাকার জন্য । সেলারী এত কম যে বেচে থাকা যাবেনা। আবার ভাইভাতে গিয়ে যে হবে এর কোন গ্যারান্টি নাই। আমার অফিসে একজন ৪ বার ভাইভা দিয়েছে আর একজন ৩ বার ভাইভা দিয়েছে। পুরো টাইমটা লস। এর থেকে আইএলটিএস দিয়ে বাইরে চলে যাওয়া অনেক ভালো। এখানে জীবনের কোন নিরাপত্তা নেই। বিসিএস হলেও লেজুরভিত্তি না করলে ওএসডি, সাসপেন্ড। হক কথা যেখানে বলা যাবেনা , যেখানে নিজের মেধা অনুযায়ী কাজ করা যাবেনা সেখানে গিয়ে আত্বা বিক্রি না করে বাইরে রাস্তায় মিছিল করে মরে যাওয়া অনেক ভাল।


এই বাংলাদেশে আমরা কাজ করতে ঘৃনা করি। কাজ করাটা আমরা স্টেটাস মেইন্টেন বিরোধী মনে করি। কাজের উদ্যোগ নেয়াটাকে আমরা ছোট করে দেখি। বিয়ের জন্য পাত্রী খুজতে গেলে দেখা হয় চাকরীতে কত টাকা পায়। কে কত ক্লাসিক চাকর সেটি দেখা হয়। মনুষত্ব্য দিয়ে নয় টাকা দিয়ে মানুষকে মূল্যয়ন করা হয়। তাই আমাদের সমাজে বনখেকো ওসমান গনি আর রেলখেকো অফিসার মন্ত্রীদের উদ্ভব হয়েছে।

আমরা পড়ালেখা করে নেশাগ্রস্থ হয়েছি। এই পড়ালেখা জ্ঞান অর্জনের জন্য নয় । মনের অন্ধকার বা চরিত্রের অন্ধকার দুরীকরনের জন্য নয়। টাকা কামানোর জন্য । সুন্দর একটা নারী পাওয়ার জন্য । অধিক বেতনের একজন স্বামী পাওয়ার জন্য।

পড়ুয়া সৎ ও শান্ত ছেলেটি পুলিশ হয়ে রুক্ষ ,বেয়াদব ও গুন্ডা প্রকৃতির হয়ে যায়। টাকা ঘুষ নেয়ার মত অমানবিক কাজটুকু করে নির্দ্ধিধায়। আমার পরিচিত অনেক পুলিশ অফিসার কোটিপতি হওয়ার পথে। আমাকে একজন এসআই বলল সে ৫ বছরে কোটিপতি হতে চায়। বিসিএস ক্যাডার , সরকারী চাকুরে, কোর্ট কাচারীর ছাপোষারা ,পোর্টের কর্মকর্তা-পিয়ন , সাংবাদিক , আইনজীবী , ডাক্তারদের মধ্যে অনেকে চরম অসৎ। এরা পড়ালেখা করেছে টাকা কামানোর জন্য । চরিত্রবান হওয়ার জন্য নয়। এরা আফিম খেয়ে নেশাগ্রস্থ হওয়ার মত পড়ালেখা করে নেশাগ্রস্থ ।

একজন বাংলাদেশী ছাত্র পাশ করার পর তটস্থ থাকে উচ্চমাধ্যমিকে ভর্তি হওয়ার জন্য, অনার্সে ভর্তি হওয়ার জন্য , চাকরী পাওয়ার জন্য , ভাল চাকরী পাওয়ার জন্য । পড়ে আর পড়ে আর নেশাগ্রস্থ হয় টাকা কামানোর জন্য । মীর মোশারফ হোসেন আজ যদি বেচে থাকত তবে অর্থকে মহাপাতকী না বলে বলত অর্থই জীবনের সব। একসময়ে আমার ছিল লৌহমানবের মত একটি মন যেটি আপোষ করতে চাইতনা। আজ সেই মনও কেন যেন বলে উঠে

"যদি চাও সফলতা মেনে নাও এই সিষ্টেম,
ফেলে দাও স্রোতের মুখে,
আদর্শ বিবেকও প্রেম,
এই সমাজ মানবে তোমায় গাইবে তোমার ই জয়গান। "


শিক্ষক সমাজ অপাঙ্থেয়, করুনার পাত্র। মেধাবীরা শিক্ষক না হয়ে টাকার জন্য কেরানী হতে চায়। এই দেশের ধ্বংস অনিবার্য।
সর্বশেষ এডিট : ০৯ ই জুন, ২০১২ বিকাল ৫:২৪
৯টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্লগার মাঈনউদ্দিন মইনুলকে ১৩ বছর পুর্তি উপলক্ষে অভিনন্দন।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:০৭



সামুর সুসময়ের আদর্শ ব্লগারদের মাঝে মাঈনউদ্দিন মইনুল হচ্ছেন একজন খুবই আধুনিক মনের ব্লগার; তিনি এখনো ব্লগে আছেন, পড়েন, কমেন্ট করেন, কম লেখেন। গত সপ্তাহে উনার ব্লগিং;এর ১৩ বছর পুর্ণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিয়তির খেলায়: ইউনুস ও এনসিপিনামা

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:৫৪



২০১৪ সালে মুক্তি পাওয়া আমেরিকান চলচ্চিত্র 'আনব্রোকেন' একটি সত্যি ঘটনার ওপর নির্মিত। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে, আমেরিকান বোমারু বিমানের কিছু ক্রু একটি মিশন পরিচালনা করার সময় জাপানিজ যুদ্ধ বিমানের আঘাতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাষ্ট্রপতি হিসাবে ড. ইউনুসের বিকল্প বাংলাদেশে নেই !

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১১ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:৫৪


রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন চুপ্পু সাহেবের মন ভালো নেই। জুলাই আন্দোলনের পর থেকে তিনি রীতিমতো কোণঠাসা! শেখ হাসিনা ভারতে প্রস্থানের পূর্বে তাকে জানিয়ে যান নি। শেখ হাসিনা চুপ্পু সাহেবকে উনার দুরবস্থার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

জাতী এখন পুরোপুরিভাবে নেতৃত্বহীন ও বিশৃংখল।

লিখেছেন জেন একাত্তর, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৪:১৩



শেরে বাংলার নিজস্ব দল ছিলো, কৃষক প্রজা পার্টি; তিনি সেই দলের নেতা ছিলেন। একই সময়ে, তিনি পুরো বাংগালী জাতির নেতা ছিলেন, সব দলের মানুষ উনাকে সন্মান করতেন। মওলানাও জাতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

সাময়িক পোস্ট

লিখেছেন আরোগ্য, ১২ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৬:১৬



ওসমান হাদী অন্যতম জুলাই যোদ্ধা, ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র, স্পষ্টবাদী কণ্ঠ, প্রতিবাদী চেতনা লালনকারী, ঢাকা ৮ নং আসনের নির্বাচন প্রার্থী আজ জুমুআর নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হওয়ার পর গুলিবিদ্ধ হয়েছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×