তাবলীগ জামাতের বিশ্ব ইজতেমা শুধু একটি ধর্মীয় সমাবেশ নয়, এটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। প্রতি বছর টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে অনুষ্ঠিত এই ইজতেমাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় ও জাতীয় অর্থনীতিতে এক ধরনের চাঞ্চল্য সৃষ্টি হয়।
স্থানীয় অর্থনীতিতে প্রভাব:
বিশ্ব ইজতেমা স্থানীয় অর্থনীতিতে নানাভাবে প্রভাব ফেলে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটি বিষয় হলো:
ব্যবসা-বাণিজ্যে উত্থান: ইজতেমার সময় কামারপাড়া, টঙ্গী, আব্দুল্লাপুর এলাকায় ব্যবসা-বাণিজ্য বৃদ্ধি পায়। স্থানীয় দোকান মালিকরা তাদের দোকানে নতুন পণ্য তোলে, যা তাদের অতিরিক্ত মূলধন জোগাতে সাহায্য করে।
ক্ষুদ্র ঋণ এবং নগদ প্রবাহ বৃদ্ধি: অনেক ব্যবসায়ী এই সময় বিভিন্ন কো-অপারেটিভ সোসাইটি বা এনজিও থেকে ক্ষুদ্র ঋণ গ্রহণ করে। এর ফলে এলাকায় প্রচুর পরিমাণে নগদ অর্থের প্রবাহ সৃষ্টি হয়।
অস্থায়ী দোকানের সৃষ্টি: ইজতেমা মাঠের আশেপাশে অস্থায়ী দোকান তৈরি হয়, যেখানে খাবার, শীতের কাপড় এবং অন্যান্য পণ্য বিক্রি হয়। এটি স্থানীয় অর্থনীতিতে একটি অস্থায়ী কর্মসংস্থান তৈরি করে।
বৃহত্তর অর্থনীতিতে প্রভাব:
বিশ্ব ইজতেমা শুধু স্থানীয় অর্থনীতিতেই নয়, বৃহত্তর অর্থনীতিতেও প্রভাব ফেলে।
পরিবহন খাত: ইজতেমায় আগত মুসল্লিদের পরিবহনের জন্য বাস, লঞ্চ, ট্রেন এবং এমনকি বিমানের ব্যবহার বৃদ্ধি পায়। এটি পরিবহন খাতকে লাভবান করে।
খাবার ও আবাসন: লাখ লাখ মুসল্লির খাবার ও আবাসনের ব্যবস্থা করতে হয়, যা খাদ্য এবং আবাসন শিল্পে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।
বৈদেশিক মুদ্রা: অনেক বিদেশী মুসল্লি ইজতেমায় আসেন, যা দেশের বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভে সাহায্য করে।
সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাব:
বিশ্ব ইজতেমার কিছু সামাজিক ও সাংস্কৃতিক প্রভাবও রয়েছে।
কর্মসংস্থান: ইজতেমাকে কেন্দ্র করে অনেক মানুষের জন্য অস্থায়ী কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
সাংস্কৃতিক বিনিময়: বিদেশী মুসল্লিদের আগমনে বিভিন্ন সংস্কৃতির মধ্যে একটি বিনিময় হয়, যা সামাজিক সম্প্রীতি বাড়াতে সাহায্য করে।
অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জ:
এত বড় একটি সমাবেশের আয়োজন করতে কিছু অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জও রয়েছে।
ব্যবস্থাপনা: এত বড় একটি সমাবেশের আয়োজন করতে প্রচুর অর্থ খরচ হয়, যা একটি চ্যালেঞ্জ।
নিরাপত্তা: মুসল্লিদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা একটি বড় দায়িত্ব, যার জন্য প্রচুর অর্থ খরচ হয়।
অর্থনৈতিক উপযোগিতা:
বিশ্ব ইজতেমার অর্থনৈতিক উপযোগিতা অনেক। এটি স্থানীয় অর্থনীতিকে চাঙা করে, কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে, এবং জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখে। তবে, এর ব্যবস্থাপনা এবং নিরাপত্তা সংক্রান্ত চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলা করতে পারলে এর উপযোগিতা আরও বাড়ানো সম্ভব।
আরও কিছু বিষয়:
ইজতেমার সময় বিভিন্ন ধরনের সামাজিক এবং ধর্মীয় কার্যক্রমও অনুষ্ঠিত হয়, যা স্থানীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি উৎসবের আমেজ তৈরি করে। ইজতেমাকে কেন্দ্র করে অনেক দাতব্য সংস্থাও কাজ করে, যা সমাজের দরিদ্র এবং অসহায় মানুষদের সাহায্য করে।
বিশ্ব ইজতেমা শুধু একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান নয়, এটি একটি বৃহৎ অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডের কেন্দ্রবিন্দু। এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক, যা আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।


