গত ৫ ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটে। বিক্ষুব্ধ জনতা ধানমন্ডি ৩২ নম্বরে অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বাড়িটি ভেঙে ফেলে। এই ঘটনায় স্পষ্ট হয়ে ওঠে দেশের চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও সরকারবিরোধী ক্ষোভ। দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে চলমান রাজনৈতিক শাসনের বিরুদ্ধে জনগণের অসন্তোষ, দূর্নীতি, গুম, খুন ও অনিয়মের প্রতিবাদে এই গণবিক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে বলে মতামত দিয়েছেন বিশ্লেষকরা। তবে, এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগ ও শেখ পরিবারের অন্যান্য সদস্যদের বাড়িঘরেও হামলার ঘটনা ঘটে, যা পরিস্থিতিকে আরও জটিল করে তোলে।
পিনাকী ভট্টাচার্য ও ইলিয়াস হোসেনের প্রভাব
সাম্প্রতিক সময়ে সামাজিক মাধ্যমে সরকারবিরোধী প্রচারণার নেতৃত্ব দিচ্ছেন পিনাকী ভট্টাচার্য ও ইলিয়াস হোসেনের মতো ব্যক্তিরা। তাঁদের বক্তব্য ও তথ্যচিত্রের মাধ্যমে জনগণ একটি নির্দিষ্ট ভাবধারার দিকে প্রভাবিত হচ্ছে। অনেকেই মনে করছেন, তাঁরা যেন হ্যামিলনের বাশিওয়ালার মতো জনগণকে আন্দোলনের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন। তবে এই আন্দোলন কতটুকু স্বতঃস্ফূর্ত আর কতটুকু পরিকল্পিত, তা নিয়ে বিতর্ক রয়েছে।
সরকারের ভূমিকা ও প্রতিক্রিয়া
সরকার এই আন্দোলন দমনে কী ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে, তা নিয়েও নানা প্রশ্ন উঠছে। প্রশাসনকে নীরব দর্শকের ভূমিকায় দেখা যাচ্ছে বলে সমালোচনা হচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এখন পর্যন্ত আন্দোলন নিয়ন্ত্রণে কার্যকর কোনো ভূমিকা রাখতে পারেনি। বরং আন্দোলনের তীব্রতা ক্রমশ বাড়ছে, যা সরকারের জন্য নতুন সংকট তৈরি করতে পারে।
সেনাবাহিনীর সম্ভাব্য ভূমিকা ও শঙ্কা
এমন পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর ভূমিকা কী হতে পারে, তা নিয়েও নানা আলোচনা চলছে। যদি সরকার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে কি সামরিক হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা তৈরি হবে? ইতিহাস বলে, এ ধরনের গণবিক্ষোভ যদি দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামো ভেঙে পড়ার উপক্রম হয়, তখন সেনাবাহিনী সরাসরি বা পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখে। তবে এটি কতটা গণতান্ত্রিক বা রাষ্ট্রের জন্য কল্যাণকর হবে, সেটি নিয়েও বিতর্ক রয়েছে।
বাংলাদেশ কি অন্ধকারের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে?
দেশের বর্তমান রাজনৈতিক অস্থিরতা ও আন্দোলনের ধরণ দেখে অনেকেই আশঙ্কা করছেন, বাংলাদেশ কি জলপাই রঙের (সামরিক শাসনের) অন্ধকারে ডুবে যেতে চলেছে? ইতিহাস বলে, এমন রাজনৈতিক সংকট সৃষ্টি হলে গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার ভঙ্গুরতা বাড়ে এবং দীর্ঘমেয়াদে রাষ্ট্রের স্থিতিশীলতা নষ্ট হয়। তবে, সরকারের কার্যকর পদক্ষেপ এবং রাজনৈতিক দলগুলোর দূরদর্শিতাই ঠিক করবে, বাংলাদেশ কোন পথে এগোবে।
বর্তমান পরিস্থিতি ক্রমেই উত্তপ্ত হয়ে উঠছে। বিক্ষোভের মূল কারণগুলোকে স্বীকার না করে এবং বাস্তবসম্মত সমাধান না খুঁজে শুধু দমননীতির আশ্রয় নিলে সংকট আরও ঘনীভূত হতে পারে। এ অবস্থায়, রাজনৈতিক দলগুলোর দায়িত্বশীলতা এবং প্রশাসনের কার্যকর পদক্ষেপই নির্ধারণ করবে, বাংলাদেশ কি একটি গঠনমূলক পরিবর্তনের দিকে যাচ্ছে, নাকি আরও বড় সংকটের মুখোমুখি হতে চলেছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ দুপুর ১:৫৪