বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে এবং সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের ব্যবহার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা ১৭,০০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে, যা বর্তমান সরবরাহের তুলনায় অনেক বেশি। এই পরিস্থিতি বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ওপর এক বিশাল চাপ সৃষ্টি করতে পারে।
বিদ্যুৎ চাহিদা বৃদ্ধির কারণ
১. গরমের তীব্রতা: গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়, ফলে এয়ার কন্ডিশনার (AC), ফ্যান এবং অন্যান্য কুলিং ডিভাইসের ব্যবহার বেড়ে যায়।
২. সেচ মৌসুম: এই সময় কৃষকরা সেচের জন্য ব্যাপক পরিমাণে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, যা চাহিদাকে আরও তীব্র করে।
৩. শিল্প খাতে বিদ্যুতের ব্যবহার: শিল্প ও উৎপাদন খাত বিদ্যুতের একটি বড় গ্রাহক, যা গ্রীষ্মকালে আরও বেড়ে যায়।
৪. রমজান মাসের প্রভাব: আসন্ন রমজান মাসে রাতের বেলা বিদ্যুতের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে, যা বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।
সরবরাহ ঘাটতির কারণ
১. জ্বালানি সংকট: বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাস, তেল ও কয়লার সরবরাহে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
২. অর্থনৈতিক সংকট ও বকেয়া পরিশোধে দেরি: সরকার জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহকারীদের বকেয়া পরিশোধে দেরি করছে, ফলে সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটছে।
৩. পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব: বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নতুন অবকাঠামো নির্মাণে সময় এবং বিনিয়োগ প্রয়োজন, যা এখনো যথেষ্ট পরিমাণে হয়নি।
৪. নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনার অভাব: সঠিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনা করা না গেলে সংকট আরও প্রকট হতে পারে।
সম্ভাব্য সমাধান ও করণীয়
সাধারণ জনগণের জন্য:
বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা: এসি ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে না চালানো, প্রয়োজন ছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবহার না করা।
সোলার পাওয়ারের ব্যবহার বাড়ানো: বাসা-বাড়ি ও অফিসে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের দিকে নজর দেওয়া।
পিক আওয়ারে বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করা: সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ব্যবহার এড়িয়ে চলা।
সরকার ও নীতিনির্ধারকদের জন্য:
জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা: গ্যাস, কয়লা ও ডিজেলের সরবরাহ সচল রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
নতুন বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা: নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে আরও বিনিয়োগ করা।
ডিমান্ড ম্যানেজমেন্ট স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ: শিল্প, কৃষি ও আবাসিক খাতে বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী সুষম বিতরণ নিশ্চিত করা।
অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করা: অবৈধ সংযোগ ও লোডশেডিং হ্রাস করতে নজরদারি বৃদ্ধি করা।
বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত বর্তমানে একটি কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আসন্ন গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে, যা ব্যবস্থাপনার অভাব ও জ্বালানি সংকটের কারণে আরও সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। তবে, জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর গুরুত্ব দেওয়া এবং সঠিক নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই সংকট অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।
সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৬:৩৪

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



