somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলাদেশে আসন্ন গ্রীষ্মে বিদ্যুৎ সংকট: কারণ, চ্যালেঞ্জ ও সমাধানের উপায়

১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৬:৩২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাংলাদেশে বিদ্যুতের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে, বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে এবং সেচ মৌসুমে বিদ্যুতের ব্যবহার সর্বোচ্চ পর্যায়ে পৌঁছায়। আগামী গ্রীষ্ম মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা ১৭,০০০ মেগাওয়াট পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে, যা বর্তমান সরবরাহের তুলনায় অনেক বেশি। এই পরিস্থিতি বিদ্যুৎ ব্যবস্থার ওপর এক বিশাল চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

বিদ্যুৎ চাহিদা বৃদ্ধির কারণ

১. গরমের তীব্রতা: গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পায়, ফলে এয়ার কন্ডিশনার (AC), ফ্যান এবং অন্যান্য কুলিং ডিভাইসের ব্যবহার বেড়ে যায়।
২. সেচ মৌসুম: এই সময় কৃষকরা সেচের জন্য ব্যাপক পরিমাণে বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন, যা চাহিদাকে আরও তীব্র করে।
৩. শিল্প খাতে বিদ্যুতের ব্যবহার: শিল্প ও উৎপাদন খাত বিদ্যুতের একটি বড় গ্রাহক, যা গ্রীষ্মকালে আরও বেড়ে যায়।
৪. রমজান মাসের প্রভাব: আসন্ন রমজান মাসে রাতের বেলা বিদ্যুতের ব্যবহার উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাবে, যা বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাকে আরও চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলতে পারে।

সরবরাহ ঘাটতির কারণ

১. জ্বালানি সংকট: বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় গ্যাস, তেল ও কয়লার সরবরাহে সমস্যা দেখা দিয়েছে।
২. অর্থনৈতিক সংকট ও বকেয়া পরিশোধে দেরি: সরকার জ্বালানি ও বিদ্যুৎ সরবরাহকারীদের বকেয়া পরিশোধে দেরি করছে, ফলে সরবরাহ ব্যবস্থায় বিঘ্ন ঘটছে।
৩. পর্যাপ্ত অবকাঠামোর অভাব: বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নতুন অবকাঠামো নির্মাণে সময় এবং বিনিয়োগ প্রয়োজন, যা এখনো যথেষ্ট পরিমাণে হয়নি।
৪. নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থাপনার অভাব: সঠিকভাবে বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যবস্থাপনা করা না গেলে সংকট আরও প্রকট হতে পারে।

সম্ভাব্য সমাধান ও করণীয়

সাধারণ জনগণের জন্য:

বিদ্যুৎ সাশ্রয় করা: এসি ২৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে না চালানো, প্রয়োজন ছাড়া বিদ্যুৎ ব্যবহার না করা।

সোলার পাওয়ারের ব্যবহার বাড়ানো: বাসা-বাড়ি ও অফিসে সৌর বিদ্যুৎ ব্যবহারের দিকে নজর দেওয়া।

পিক আওয়ারে বিদ্যুৎ ব্যবহার সীমিত করা: সন্ধ্যা ৬টা থেকে ১১টা পর্যন্ত অপ্রয়োজনীয় বিদ্যুৎ ব্যবহার এড়িয়ে চলা।

সরকার ও নীতিনির্ধারকদের জন্য:

জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করা: গ্যাস, কয়লা ও ডিজেলের সরবরাহ সচল রাখতে দ্রুত পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

নতুন বিদ্যুৎ প্রকল্প বাস্তবায়ন ত্বরান্বিত করা: নবায়নযোগ্য শক্তির দিকে আরও বিনিয়োগ করা।

ডিমান্ড ম্যানেজমেন্ট স্ট্র্যাটেজি গ্রহণ: শিল্প, কৃষি ও আবাসিক খাতে বিদ্যুতের চাহিদা অনুযায়ী সুষম বিতরণ নিশ্চিত করা।

অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করা: অবৈধ সংযোগ ও লোডশেডিং হ্রাস করতে নজরদারি বৃদ্ধি করা।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত বর্তমানে একটি কঠিন সময়ের মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। আসন্ন গ্রীষ্মে বিদ্যুতের চাহিদা ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাবে, যা ব্যবস্থাপনার অভাব ও জ্বালানি সংকটের কারণে আরও সংকটময় পরিস্থিতির সৃষ্টি করতে পারে। তবে, জনগণের সচেতনতা বৃদ্ধি, বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের অভ্যাস গড়ে তোলা, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ওপর গুরুত্ব দেওয়া এবং সঠিক নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই সংকট অনেকাংশে কমিয়ে আনা সম্ভব।

সর্বশেষ এডিট : ১৮ ই ফেব্রুয়ারি, ২০২৫ ভোর ৬:৩৪
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

এমন রাজনীতি কে কবে দেখেছে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সন্ধ্যা ৭:২০


জেনজিরা আওয়ামী লীগের ১৬ বছরের শাসনামল দেখেছে। মোটামুটি বীতশ্রদ্ধ তারা। হওয়াটাও স্বাভাবিক। এক দল আর কত? টানা ১৬ বছর এক জিনিস দেখতে কার ভালো লাগে? ভালো জিনিসও একসময় বিরক্ত... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযুদ্ধের কবিতাঃ আমি বীরাঙ্গনা বলছি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৮:১৫


এখনো রক্তের দাগ লেগে আছে আমার অত্যাচারিত সারা শরীরে।
এখনো চামড়া পোড়া কটু গন্ধের ক্ষতে মাছিরা বসে মাঝে মাঝে।

এখনো চামড়ার বেল্টের বিভৎস কারুকাজ খচিত দাগ
আমার তীব্র কষ্টের দিনগুলোর কথা... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রবাসীর মৃত্যু ও গ্রাম্য মানুষের বুদ্ধি!

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:৩০



একজন গ্রামের মানুষের মাথায় ১০০ জন সায়েন্টিস্ট, ৫০ জন ফিলোসফার, ১০ জন রাজনীতিবিদ এবং ৫ জন ব্লগারের সমপরিমাণ জ্ঞানবুদ্ধি থাকে, তীক্ষ্ণ বুদ্ধিসম্পন্ন এসব লোকজন বাংলাদেশের এক একটি সম্পদ।

বিস্তারিত:... ...বাকিটুকু পড়ুন

একজন নারী শিক্ষিকা কীভাবে কন্যা শিশুর সবচেয়ে অসহায় মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করতে পারেন?

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১১:২৩


বাংলাদেশে মাঝে মাঝে এমন সব মানুষ রূপী শয়তানের সন্ধান মেলে যাদের দেখে আসল শয়তানেরও নিজের উপর হতাশ হওয়ার কথা। এমন সব প্রজাতির মানুষ বাংলাদেশে বসবাস করেন যাদের মস্তিষ্ক খুলে দেখার... ...বাকিটুকু পড়ুন

=মানুষ মানুষকে কীভাবে এত অপদস্ত করে এই ব্লগে=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৭ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৪

আমি তো কারও সাতেও নাই পাঁচেও নাই। এত সময়ও নাই মানুষকে ঘাঁটার। ব্লগের ব্লগারদের সম্পর্কেও তেমন কিছু জানি না। তবে পোস্ট পড়ে কিছুটা আন্দাজ করা যায় -কে কী রকম। আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×