somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লন্ডন বৈঠক থেকে 2026 সালের নির্বাচন: বাংলাদেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ কোন দিকে ?

১০ ই জুন, ২০২৫ রাত ৮:৩৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


লন্ডন বৈঠক কি রাজনৈতিক সংকট নিরসন করবে? ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের আলোচনার পর বাংলাদেশের ২০২৬ সালের নির্বাচনের ভবিষ্যৎ কী?

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে আবারও উত্তেজনার পারদ চড়ছে। একদিকে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস এবং বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের মধ্যে লন্ডনে একটি বৈঠকের ঘোষণা এসেছে, অন্যদিকে আগামী জাতীয় নির্বাচন পিছিয়ে ২০২৬ সালের এপ্রিলে হওয়ার ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে। এই দুই ঘটনাকে কেন্দ্র করে জনমনে তৈরি হয়েছে নানা প্রশ্ন। তবে এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এর শেকড় লুকিয়ে আছে বাংলাদেশের অতীত রাজনীতি এবং ক্ষমতার পালাবদলের ইতিহাসে। সবার মনে একটাই প্রশ্ন—বাংলাদেশের রাজনীতি এখন কোন পথে হাঁটছে?

ড. ইউনূস ও তারেক রহমানের বৈঠকটি এমন এক সময়ে হতে যাচ্ছে, যখন দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ ঘোলাটে। এর গুরুত্ব বুঝতে হলে একটু পেছনে তাকাতে হবে।

• ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপট: ২০০৭-০৮ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রধান দুই দলের মধ্যে সংলাপের উদ্যোগ ব্যর্থ হয়েছিল, যার ফলশ্রুতিতে দেশে জরুরি অবস্থা দীর্ঘায়িত হয় এবং নির্বাচন দুই বছর পিছিয়ে যায়। সেই থেকে বড় দলগুলোর মধ্যে আস্থার সংকট কেবলই বেড়েছে। এবারের বৈঠকটি তাই এক দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা রাজনৈতিক অচলাবস্থা ভাঙার একটি বিরল সুযোগ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
• ড. ইউনূসের ভূমিকা: ড. ইউনূস অতীতেও সরাসরি রাজনীতিতে প্রবেশের চেষ্টা করেছিলেন, ২০০৭ সালে ‘নাগরিক শক্তি’ নামে দল গঠনের ঘোষণা দিয়ে। যদিও সেই উদ্যোগ সফল হয়নি, কিন্তু দেশের রাজনীতিতে তার আগ্রহের বিষয়টি স্পষ্ট। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে তার এই বৈঠককে নিছক সৌজন্য সাক্ষাৎ হিসেবে দেখার সুযোগ কম। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, তিনি বিএনপি এবং সরকারের মধ্যে আস্থা ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করবেন।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এই বৈঠককে রাজনীতির জন্য একটি ‘টার্নিং পয়েন্ট’ হিসেবে দেখছেন। তার মতে, এই আলোচনার মধ্য দিয়ে নতুন সুযোগ তৈরি হতে পারে, যা অতীতের ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে একটি সমাধানের পথ বের করবে।

দেশের বেশিরভাগ রাজনৈতিক দল চেয়েছিল আগামী ডিসেম্বর বা জানুয়ারির মধ্যেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। কিন্তু সেই দাবিকে পাশ কাটিয়ে নির্বাচন প্রায় এক বছরের বেশি সময় পিছিয়ে দেওয়ার ঘোষণায় নতুন করে অনাস্থা তৈরি হয়েছে।

• সংস্কারের যুক্তি বনাম সময়:
সরকারের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, নির্বাচনী ব্যবস্থার সংস্কারের জন্য সময় প্রয়োজন। কিন্তু অনেক রাজনৈতিক দল মনে করে, প্রয়োজনীয় সংস্কারগুলো করতে কয়েক মাসের বেশি লাগার কথা নয়।
• জুলাই সনদের দাবি: জুলাই গণহত্যার বিচার এবং ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের রাজনৈতিক কাঠামো ঠিক করতে ‘জুলাই সনদ’ বাস্তবায়নের দাবি তুলেছে জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর মতো দলগুলো। তাদের দাবি, আগে সনদ কার্যকর হোক, তারপর নির্বাচন। এই দাবিও নির্বাচন পেছানোর একটি অন্যতম কারণ।
• বাস্তবতা ও ঝুঁকি: ঐতিহ্যগতভাবে বাংলাদেশে শীতকালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এসময় আবহাওয়া অনুকূল থাকে এবং মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ে। অন্যদিকে, এপ্রিলে ঝড়-বৃষ্টি, পরীক্ষা এবং রোজার কারণে নির্বাচনী পরিবেশ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হওয়ার ঝুঁকি থাকে। যদি এপ্রিলেও নির্বাচন না হয়, তবে দেশ একটি দীর্ঘ অনির্বাচিত শাসনের দিকে ধাবিত হতে পারে, যা দেশের অর্থনীতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য হুমকিস্বরূপ।

লন্ডন বৈঠকের ফলাফল বাংলাদেশের নিকট ভবিষ্যতের রাজনীতি নির্ধারণ করে দেবে। তিনটি সম্ভাব্য দৃশ্যকল্প তৈরি হতে পারে:

১. ইতিবাচক সমঝোতা: বৈঠকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আস্থা ফিরে এলে নির্বাচনের সময় এগিয়ে আনা এবং সবার জন্য সমান সুযোগ তৈরি করার মতো সিদ্ধান্ত আসতে পারে। এটি হবে দেশের জন্য সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত ফলাফল।
২. অচলাবস্থা ও সংঘাত: আলোচনা যদি ব্যর্থ হয়, তবে রাজনৈতিক সংকট আরও ঘনীভূত হবে। বিএনপি ও সমমনা দলগুলো কঠোর আন্দোলনে যেতে পারে, অন্যদিকে সরকারও দমন-পীড়নের পথে হাঁটতে পারে। এর ফলে দেশজুড়ে এক অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
৩. নেপথ্যের সমীকরণ: এমনও হতে পারে যে, পর্দার আড়ালে কোনো গোপন সমঝোতা হবে। যেমন, বিএনপি নির্বাচনে আসতে রাজি হবে, তবে তার বিনিময়ে তাদের কিছু দাবি-দাওয়া মেনে নেওয়া হবে, যা হয়তো প্রকাশ্যে আসবে না। এটি সাময়িকভাবে সংকট প্রশমিত করলেও দীর্ঘমেয়াদে নতুন বিতর্কের জন্ম দিতে পারে।

লন্ডন বৈঠক বাংলাদেশের রাজনীতিতে হয়তো নতুন একটি অধ্যায়ের সূচনা করবে, অথবা যোগ করবে অতীতের ব্যর্থ আলোচনাগুলোর তালিকায় আরেকটি অধ্যায়। সরকার ও বিএনপি উভয়কেই এখন বড় একটি সিদ্ধান্ত নিতে হবে: তারা কি দেশের স্থিতিশীলতার জন্য আপোসের পথ বেছে নেবে, নাকি নিজ নিজ অবস্থানে অনড় থাকবে? এই সিদ্ধান্তই নির্ধারণ করবে ২০২৬ সালে বাংলাদেশে কী ধরনের নির্বাচন দেখবে বিশ্ব—একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া, নাকি আরেকটি বিতর্কিত ভোট।
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জুন, ২০২৫ রাত ৮:৩৮
৯টি মন্তব্য ৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

লিখেছেন এস.এম. আজাদ রহমান, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:৪৪



বাংলাদেশের রাজনীতিতে নতুন ছায়াযুদ্ধ: R থেকে MIT—কুয়াশার ভেতর নতুন ক্ষমতার সমীকরণ

কেন বিএনপি–জামায়াত–তুরস্ক প্রসঙ্গ এখন এত তপ্ত?
বাংলাদেশের রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরে একটি পরিচিত ভয়–সংস্কৃতি কাজ করেছে—
“র”—ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা নিয়ে রাজনীতিতে গুজব,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×