somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সহজিয়া দর্শন - ২: হাসি ফোটাওনা কেন মন

১৭ ই মে, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(আজকেরটা একটু বড়)

১.
একটা চুটকি দিয়ে শুরু করি

জাপানে বুড়োবুড়িদের হাসপাতালপ্রীতিটা খুব বাড়াবাড়ি মাত্রার। এদের গড় আয়ু যেমন বেশী স্বাস্থ্যসচেতনতাটাও তেমনি খুব বেশী। তবে বলা হয় বুড়োবুড়িরা নাকি যতটা স্বাস্থ্যসচেতনতার কারণে হাসপাতালে যায় তার চেয়েও বেশী যায় আড্ডা দেয়ার জন্য, কারণ সমবয়েসী অনেক বুড়োবুড়ির দেখা মেলে।

এভাবে প্রতি এলাকার সরকারী হাসপাতালে বুড়োবুড়িদের ছোট ছোট ফ্রেন্ড-সার্কল তৈরী হয়ে যায়। এরা সাধারণত সপ্তায় একটি বা দুটি নির্দিষ্ট দিনে হাসপাতালে যায়, আড্ডা মারে।

তো, কখনও সার্কলের কেউ যদি হাসপাতালে না আসে তখন গ্রুপের বাকীরা বলাবলি করে 'ও হয়ত আজ অসুস্থ, তাই আসতে পারেনি।'

২.
আমি তখন পি.এইচ.ডি সেকেন্ড ইয়ারে শেষ দিকে; মোটামুটি গাধা টাইপের পি.এইচ.ডি ছাত্রদের জন্য ২য় বছরের এই সময়টা যায় সবচেয়ে খারাপ। যতটা না কাজের প্রেসার, তারচেয়ে বেশী দুশ্চিন্তা, ডিগ্রী হবে তো!! এর মধ্যে জব হান্টিংয়ের দুশ্চিন্তাও জেঁকে বসে।

এমনি একদিন কাজে মন বসছেনা, ল্যাব থেকে বের হয়ে ডাউনটাউনের এক পার্কে গেলাম। এক প্যাকেট বাদাম হাতে নিয়ে উদাসমনে পার্কের বেঞ্চে বসে বাদাম চাবাই, পাখির কিচির মিচির শুনি, বাতাসের-গাছের পাতার মানঅভিমানের কঅপকথন শুনি।
হঠাৎ পিছনে তাকিয়ে দেখি, আমার বেঞ্চিরে অপজিটের বেঞ্চিতে দুই বুড়ো বসে বসে গল্প করছে। আমার কপালই এরকম, কখনও এমন হয়না যে এক সুন্দরী রূপসী উদাসমনে নীলাকাশ দেখছে। হয় বুড়ু, নইলে বুড়ি।

শুনতে না চাইলেও তাদের দুজনের সবকথাই আমার কানে আসছিল। দুজনেই থুরথুরে বুড়ো। দুজনেই কথা বলছে স্বাস্থ্য নিয়ে;
একজন বলছে দুমাস আগে থেকে চিরতার পানি খাওয়ার পর তার পেটে তেমন আর প্রবলেম হচ্ছেনা। আরেকজন বলছে, ইদানিং তিনি বুঝেছেন যে টমেটোর উপর কিছু নেই; রাতে দুটো গোটা টমেটো খেয়ে ফেললেই হলো, সারাদিন একটুও অবশ লাগেনা।
এভাবে আরও অনেক কিছু। সব মনেও নেই, তবে এটুকু মনে আছে দুজনেরই কথাবার্তা/চিন্তাধান্তা সবই এখন স্বাস্থ্যকে ফোকাস করে।

একটু পর একজন উঠে চলে গেলেন। আরেকজন একা বসে আছেন। আমি পিছন ফিরে তাকাতেই চোখাচোখি হলো। আমি বললাম, 'চমৎকার ওয়েদার, তাইনা।' বুড়ো সৌজন্যের হাসি হাসলেন। নানারম কথা শুরু হলো। কথাপ্রসঙ্গে জানলাম তিনি আমার ইউনিভার্সিটিরই প্রফেসর ছিলেন। কথাপ্রসঙ্গে আরও জানলাম অন্য যে বৃদ্ধের সাথে তিনি কথা বলছিলেন তিনি ছিলেন তার(প্রফেসরের) মেয়ের হাইস্কুলের গার্ডম্যান।

আমার চক্ষু চড়কগাছ হলো।
আসার পথে ভাবলাম, একসময়ে দুজনের কতো পার্থক্য ছিল! আজ প্রাণের বন্দনায় দুজন একবিন্দুতে মিলিত হয়েছেন। বিশ বছর আগে কে কি করত তা নিয়ে তাদের মাথাব্যাথা নেই, এখন তারা এক।

ভাবলাম, আমরা সবাই কি অদ্ভুত এক গন্তব্যের দিকে যাচ্ছি। হাঁটতে হাঁটতে যখন এসব ছাইপাশ ভাবছিলাম হঠাৎ মনে হলো, 'ধুসশালা! ডিগ্রী না হলে কিইবা হবে? ভাল কোন চাকরী না পেলেই বা কি আর এমন হবে?' মন শরীর হালকা হয়ে গেল। ল্যাবের দিকে পথ চলা আমি হঠাৎ পথের দিক পাল্টে ফেললাম। সে এক অদ্ভুত মুক্তির অনুভূতি।

৩.
যে বুড়োর সাথে আমার কথা হয়েছিল, তার সাথে সেই একই পার্কে আরেকদিন দেখা হলো। অনেক কথা হলো সেদিন।
কথায় কথায় জানতে চাইলাম,
'আপনার কাছে জীবনের মূল্যায়ন কি?'
উনি দম নিয়ে আমাকে মিনিট দশের এক লেকচার দিলেন।
যেটার সারমর্ম হলো এরকম,

আমরা ভাল কিছু বা আনন্দদায়ক কিছু করলে খুশী হই, নিজের মুখে হাসি ফোটে, চারপাশের কিছু মানুষের মুখেও হাসি ফুটে। কাজটা যত ভাল বা আনন্দের হয়, হাসিটা তত দীর্ঘস্থায়ী হয়। তো একজন মানুষের মূল্যায়ন হলো, সে সারাজীবনে নিজে মোট কত সময় হাসল আর অন্যকে মোট কত সময় হাসাল তার যোগফল। এই যে আমাদের এত কিছু করার সামর্থ্য বা শক্তি, সব দিয়েই আমরা কাউর না কাউর মুখে হাসি ফুটিয়ে যেতে পারি। এর এককের নাম তিনি দিয়েছেন 'স্মাইল-আওয়ার'। একজন মানুষের জীবনের স্কোর যতবেশী 'স্মাইল-আওয়ার' হবে, সে এই জীবনকেই আবার ততবেশী ফিরে পেতে চাইবে।
একটা মানুষের জীবন তখনই সার্থক, যখন সে মৃত্যুর কাছাকাছি গিয়ে ভাববে আবার জন্মালে যেন এই জীবনটাকেই পাই।

আজও ভাবলাম।
স্রষ্টা আমাদের কত ক্ষমতা দিয়েছেন!
কাউকে অনেক বুদ্ধি দিয়েছেন জ্ঞানের স্পৃহা দিয়েছেন। কাউকে অনেক অর্থ দিয়েছেন। কাউকে অনেক শারীরিক শক্তি দিয়েছেন।

এসবকিছুই আমরা সেই হাসি ফোটানোতে ব্যবহার করতে পারি।
আবার এই ক্ষমতাগুলোর গরিমা দিয়ে অন্যের মনে অসম্ভব কষ্ট দিতে পারি।

এবং নিজেদের এই সুন্দর সুন্দর ক্ষমতাগুলোকে আমরা কোন কাজে ব্যাবহার করব তা ঠিক করার ক্ষমতাও আমাদের আছে।

সবাইকে শুভেচ্ছা।

৩৮টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে দেখা - ১৩ মে

লিখেছেন জোবাইর, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:০৩

১৩ মে ২০০৬


দমননীতির অদ্ভুত কৌশল
সরকার নির্বাচনকে সামনে রেখে বিরোধী দলের ওপর দমন নীতির আশ্রয় নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। দ্রুত বিচার আইন ও পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে দমন... ...বাকিটুকু পড়ুন

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

×