somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ডিটেকটিভ গল্প: ওয়াইম্যাক্স - পর্ব ৭

০৭ ই অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৪:০৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আগের পর্ব:
পর্ব ১, ২ (Click This Link)
পর্ব ৩, ৪ (Click This Link)
পর্ব ৫,৬(Click This Link)



কার্পেটে পড়ে থাকা রিমোট কন্ট্রোলারের ব্যাটারীর খাপ আর মেঝেতে পড়ে থাকা ব্যাটারীকে সংযোগ করে যেদিকে চলে যাওয়া যায় সেপথে ইঁদুরের আনাগোনা খেয়াল করে এতক্ষণ ধরে অজানা কারণে মনের ভেতর কুটকুট করতে থাকা 'রিমোট কন্ট্রোলারটির অবস্থান' সংক্রান্ত একটি সম্ভাব্য অনুমান হাসনাইন করতে পারে, যেটিকে সঠিক প্রমাণ করে সিংকের নীচেই পড়ে থাকতে দেখাও যায় রিমোট কন্ট্রোলারটিকে, যদিও ক্ষতবিক্ষত; প্লাস্টিকের বোতামগুলোর প্রত্যেকটির ওপর যথারীতি ইঁদুরকুলের সরু সরু ধারালো দাঁতের নানাবিধ আঁচড়ের স্পষ্ট সাক্ষ্যও সহজে মিলে যায়। তবে এই কেঁচো খুঁড়তে গিয়েই যে অত বড় একটা সাপ বের হয়ে আসবে সিংকের নিচ থেকে, তা হাসনাইন বা রাজু, দু'জনের কেউই কল্পনাও করতে পারেনি; আর হাজতকক্ষে বসে দূর্ভাগ্যের কষাঘাতে বিমূঢ় হয়ে যাওয়া তোজাম্মেল নামের লোকটির বেলায় সেরকম কোন কল্পনা যে আরো দুরূহ ছিলো সেটাও আর ভেঙে বলার দরকার নেই। তবে এখানে উল্লিখিত কেঁচো খুড়তে গিয়ে পেয়ে যাওয়া সাপটি কোনভাবেই ইঁদুরখেকো কোন জীবিত সাপ নয়, সেটা শুধুই একজোড়া জুতো, আরো ভেঙে বললে একজোড়া কালো বুট, মামলা আর তোজাম্মেলের জন্য যেটা এইমূহুর্তে প্রায় অমূল্য এক বস্তু।

সেই অমূল্য বস্তুর দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতেই হাসনাইন ভাইকে চা খেতে যেতে বলবে কি বলবেনা, এই নিয়ে রাজুর মনের ভেতর যতক্ষন খানিকটা ইতস্তঃত চলছিলো, ততক্ষণে হাসনাইনের হাতে ধরা তোজাম্মেলের সেই ট্রেডমার্ক বুটজোড়া থেকে লাফিয়ে লাফিয়ে অন্ততঃ পাঁচটি ইঁদুর বেরিয়ে নিচে নেমে যায়। টুপ করে মেঝেতে পড়েই হাওয়া হয়ে যাবার একটা অসাধারণ ক্ষমতা এদের। জুতোর সামনে পিছনে এমন কোন জায়গা নেই যেখানে ইঁদুরে কাটার দাগ দেখা যায়না; ওদিকে সেন্ট্রির নিয়ে আসা টর্চলাইটের কল্যানে বুটের ভেতরটা দেখে যা বোঝা যায়, তাতে নিশ্চিত করেই বলা যায় যে সুখের সংসার ইঁদুরেরা গড়ে আসছে অনেকদিন ধরেই। জোড়া কালোবুট হাতে ধরে রাখা অবস্থাতেই হাসনাইন রাজুকে বলে ক্যামেরা নিয়ে আসতে, আর সেন্ট্রীকে বলে জুতোজোড়াকে ভেতরের ইঁদুরকুলসহই জব্দ করার ব্যবস্থা করতে। ইঁদুরেরা মানুষের কথা বুঝতে পারে কিনা জানা যায়না, তবে হাসনাইনকে অবাক করে দিয়েই তার কথা শেষ হতে না হতেই কালোবুটজোড়ার মুখ থেকে বেরিয়ে এক পলকে কিচেনের মেঝেতে টুপ করে পড়ে কোথায় যেন অদৃশ্য হয়ে যায় ভেতরে আটকা পড়ে থাকা শেষ দুটো বাচ্চা ইঁদুর।

তোজাম্মেলের বুটজোড়া পুলিশের সায়েন্টিফিক ইনভেস্টিগেশন টিমের কাছে পাঠিয়ে দেয়া হয় সাথে সাথেই; তারা নিশ্চিত করে যে, ওগুলোতে অন্ততঃ বছরখানেক ধরেই ইঁদুরের নিরুপদ্রব বসবাস চলে আসছে, এবং জেরার সময় তোজাম্মেলের দাবীমতে গত বছর বৈশাখী মেলার পর থেকে যে সেটা তার আর পরা হয়নি এ তথ্যটাও খুব গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়ে। এখন এই ক্লুতে এসে তোজাম্মেলের অপরাধী হবার সম্ভাবনা অনেক কমে গেলেও তার আঙুলের ছাপের ব্যাপারটা নিয়ে অনিশ্চয়তাটা জিইয়েই থাকে। তাকে পুরোপুরি নিরপরাধ ঘোষনা দেয়া যায়না, এমনতো হতে পারে কারো থেকে ধার করে বুট পরে সে খুন করতে গিয়েছিলো, যদিও সেক্ষেত্রে ঐ বুট পরার এমন কি প্রয়োজনীয়তা বা গুরুত্ব ছিলো তা বিতর্কের বিষয় হিসেবে চলে আসতে পারে। তবে পুলিশের তদন্ত সবসময় যুক্তিতর্কের ওপর চলেনা, তাদের নিশ্চিত তথ্য চাই। সেজন্যই পরের তিনদিন ধরে তোজাম্মেলের ঘরে বেশ কয়েকবার তল্লাশী চলে তার ট্রেডমার্ক কালো রঙের সেই বুটের মতো আর কোন বুটজোড়া পাওয়া যায় কিনা সেটা দেখার জন্য, এবং নিশ্চিতভাবেই সেরকম আর কোন বুটজোড়া পুলিশ বের করতে পারেনি।

তাছাড়া তোজাম্মেলের অর্থনৈতিক অবস্থা সম্পর্কে শুধু হাসনাইন আর রাজু নয়, বরং পুরো পুলিশ টিমেরই যে ধারনা হয়েছে, তাতে এটা বোঝা যাচ্ছিলো যে শখ করে অমন দামী বিদেশী বুট আরেক জোড়া কেনার বা কিনিয়ে আনানোর কোনটিরই সামর্থ্য তোজাম্মেলের বেশ কয়েকবছর ধরেই ছিলোনা। তারপরও আরো বেশী নিশ্চিত হবার জন্য পুলিশের সায়েন্টিফিক ইনভেস্টিগেশন টিমের লোকজন এসে ওয়াজী লেনের তোজাম্মেলের ভাড়াবাড়ীর সিঁড়ি আর সামনের গলির পথ তন্ন তন্ন করে খুঁজেছে একইরকম বুটের ছাপ পাবার জন্য; যথারীতি সেখানেও তারা কিছুই পায়নি।

তোজাম্মেলকে মোটামুটি নিরপরাধ হিসেবে ধরে নেয় হাসনাইন আর রাজু, তবে শুধু ইঁদুরে কাটা বুটজোড়া আঙুলের ছাপকে ছাপিয়ে ততবেশী জোরালো প্রমাণে পরিণত হতে পারেনা। সেজন্য হাতের আঙুলের ছাপ মিলে যাওয়ার ব্যাপারটা সমস্যা হিসেবে থেকেই যাচ্ছিলো, সেটার কোন কিনারা বা ব্যাখ্যা করতে পারছিলোনা পুলিশের কেউই; সবার কথা বুট পাওয়া যাক বা না যাক, অন্ততঃ আঙুলের ছাপের ব্যাপারটা তো স্পষ্টই বলে দিচ্ছে খুনী হচ্ছে তোজাম্মেল।

এসব আলোচনা আর তর্কের প্রেক্ষিতেই তোজাম্মেলের মুখ থেকে কিছু বের করা যায় কিনা সেব্যাপারে শেষ চেষ্টা চালায় ডিবির অন্য অফিসাররা। তিনদিন ধরে মুখ খোলানোর যাবতীয় পদ্ধতি প্রয়োগ করে যায় তারা। বুটজোড়া আবিস্কার করে হাসনাইন নিশ্চয়ই কল্পনাও করেনি তোজাম্মেলের জন্য 'কেঁচো খুঁড়তে গিয়ে বের হয়ে আসা সাপ'ধরনের এই ত্রাতাবস্তুটি আসলেই সাপ হয়ে অবতীর্ণ হবে, আগামী তিনদিনের যাবতীয় নির্যাতনের কারণ হয়ে দাঁড়াবে! তবে নির্যাতন যতই করা হোক, কোনো লাভ হয়নি আদতে, কারণ, মারের চোটে গোটা কয়েকবার তোজাম্মেলকে "খুন করেছি" বলে স্বীকার করতে হলেও, তার পরপরই যখন কি জন্য খুন করেছে বা কিভাবে এবং কার নির্দেশে খুন করেছে বা খুন করে কত পেয়েছে এসব জিজ্ঞেস করা হয়েছে তখন বেচারার একেকবার একেক জবাব দিয়ে আপাততঃ সে সময়কার হাড়ভাঙা পিটুনির হাত থেকে রেহাই পাবার প্রচেষ্টার বাইরে কিছু করার ছিলোনা।

যেমন একবার পিটুনির চোটে বলেছিলো মিসেস খন্দকারকে খুন করার জন্য পেয়েছে দশ কোটি টাকা, যদিও সেই দশকোটি টাকা কি করেছে তার জবাবে তার 'মনে নাই' বলা ছাড়া আর কিছু করার ছিলোনা। আরেকবার সকালে বলেছে সাত লাখ পঁয়তাল্লিশহাজার চুরাশি টাকা নিয়েছে, এবং বিকেলেই সেই একই লোকের জেরায় বলছিলো যে মোট টাকা থেকে দশ লাখ সে নিজের ব্যাংকে রেখেছে (যদিও ব্যাংকের নাম সে সেমুহূর্তে কোনভাবেই মনে করতে পারছিলোনা), বাকী পাঁচলাখ তেত্রিশ হাজার উনত্রিশ টাকা দিয়ে দেনা শোধ করেছে। তার দেয়া এসব এলোমেলো আর অসংলগ্ন জবানবন্দীর সবকিছুই নির্ভর করছিলো ঠিক সে সময়ে চরম নির্যাতনের মুখে যেসব শব্দ সে স্মৃতি খুঁড়ে বের করতে পেরেছে সেসবের ওপর। সবমিলিয়ে মূলতঃ কোন ক্লুই সে দিতে পারছিলোনা পুরো খুনের পরিকল্পনার ব্যাপারে। প্রথমে এসবকে মস্করা হিসেবে ধরে নিয়ে পুলিশ পাটানোর মাত্রা বাড়িয়ে দিলেও, ধীরে ধীরে তারা বুঝতে পারে যে আসলে লোকটা কোন সংখ্যাই জানেনা, একেবার মার খেতে খেতে যখন আর পারেনা তখন একটা সংখ্যা বলে মার খাওয়ার হাত থেকে বাঁচে। এমনকি মারধোর আর জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে পুলিশ এটাও মোটামুটি ধারনা করতে পারে যে তোজাম্মেল আসলে নিহত মিসেসদ্বয়ের কাউকেই কখনও দেখেনি।

এদিকে খুনের মোটিভ বা উদ্দেশ্য বের করার জন্য পুলিশ খন্দকার সাহেব আর মোজাম্মেলের জবানবন্দী আবারও নেয়। সেই পুরোনো কথাই তারা বলেছেন, কে বা কারা খন্দকার সাহেবকে হুমকি দিয়ে আসছিলো কয়েকদিন ধরে, এবং সেজন্য তিনি পুলিশের ওপর ভরসা না করে গোয়েন্দা মোজাম্মেলকে কাজে লাগাতে চেয়েছিলেন; কিন্তু এরমধ্যেই খুনীরা তাঁর স্ত্রীকে হত্যা করে ফেলেছে! খন্দকার সাহেবের মতে তোজাম্মেলই খুনীচক্রের সন্ধান দিতে পারবে, এবং পুলিশ যে ঠিকমতো ইনভেস্টিগেশন করছেনা এ নিয়ে তিনি বারবার সংশয়ও প্রকাশ করেছেন।
খুনীরা যে নাম্বারগুলো থেকে খন্দকার সাহেবকে ফোন করেছিলো সে নাম্বারগুলোরও খোঁজ নিয়েছে পুলিশের সায়েন্টিফিক ইনভেস্টিগেশন টিম; দেশের প্রধান ছয়টি মোবাইল অপারেটরের সবার কাছে খোঁজ নিয়ে যেটা তাঁরা জানতে পেরেছেন তা হলো ঐ নম্বরগুলোর কোনটিরই বাস্তব কোন অস্তিত্ব নেই, সবগুলো কম্পিউটারের মাধ্যমে জেনেরেট করা নকল ফোন নাম্বার। খুনীরা সম্ভবতঃ ইন্টারনেটে আইপি ফোনের মাধ্যমে একাজটি করেছে, এমনটাই তাদের বক্তব্য। এই অত্যন্ত বুদ্ধিমান একটি কাজই যে খুনীকে উল্টো ধরিয়ে দিতে পারে, তা সে কস্মিনকালেও ভাবেনি, তবে এই হত্যারহস্যের শেষদিকে এসে আমরা দেখবো গোয়েন্দা হাসনাইন কিভাবে এই তথ্যটির সূত্র ধরে খুনী মোজাম্মেলের সাথে ঘটনার সম্পর্ক বের করে ফেলেছে।

শুধু একজন মাত্র ব্যক্তি ঠিকই বুঝেছেন যে কাজটি গোয়েন্দা কাম হিটম্যান মোজাম্মেলের, তবে বিশেষ টেকনিকাল অসুবিধার কারণে তিনি টুঁ শব্দটিও করতে পারেননি। এই ভদ্রলোকটি হলেন জনাব ওয়ালী বক্স। কারণ, কিছুদিন আগে এই তিনিই মোজাম্মেলকে দিয়ে নিজ স্ত্রীকে খুন করিয়েছেন, এবং সেবারও সে একই সাজপোশাকে গিয়েছিলো রেডড্রাগনে; খুনের পদ্ধতি সম্পূর্ণ ভিন্ন হলেও দুক্ষেত্রেই দেখা যাচ্ছে যে মোজাম্মেল কোন না কোনভাবে তোজাম্মেলের হাতের ছাপকে একটি প্রমাণ হিসেবে রেখে আসছে ঘটনাস্থলে। আপাতঃ প্রেমিকার মৃত্যুতেও ওয়ালী বক্স এব্যাপারে মুখ খুলতে পারছেননা সঙ্গত কারণেই, মোজাম্মেল ফেঁসে গেলে সে শুধু মিসেস খন্দকাররের খুনী হিসেবে না, বরং তার নিজ স্ত্রীর মিসেস সিনথিয়া বক্সের খুনী হিসেবেও ফাঁসবে, এবং তখন খন্দকারের সাথে সাথে তাঁর নিজেরও যুগপৎ ফেঁসে যাবার সম্ভাবনা খুব বেশী। এমনকি মোজাম্মেলকে ধরিয়ে দেবার জন্য পরোক্ষভাবে পুলিশকে কোন তথ্য দিয়েও তিনি সাহায্য করতে পারছিলেননা, মূলতঃ একই কারণে। সেজন্য ইচ্ছায় হোক বা অনিচ্ছায় হোক, খন্দকার সাহেব আর মোজাম্মেলের ফাঁদা গল্পটিই প্রতিষ্ঠা পাক সেটা তাঁকে কামনা করতে হয়। তবে কয়েক সপ্তাহ আগে স্ত্রী হত্যার পরপরই চাঁদাবাজদের নিয়ে কোন গপ্প তিনি ফাঁদেননি, আপাতঃ বখে যাওয়া স্ত্রীর মৃত্যুতে নির্ভেজাল কষ্ট পাবার অভিনয় করেছিলেন মাত্র। সেজন্য মোজাম্মেল আর খন্দকার সাহেবের ফাঁদা চাঁদাবাজের গল্পের সাফল্য কামনা করলেও তাতে বাড়তি কোন মাত্রা তিনি যোগ করতে পারেননি এযাত্রায়। অর্থাৎ, চাঁদাবাজরা তাঁকেও ফোন করে হুমকি দিয়েছিলো এমন কোন দাবী করে খন্দকারের গল্পে আলাদা শক্তিবর্ধনের ব্যবস্থা তিনি করতে পারেননি। তারপরও খন্দকার আর মোজাম্মেলের গল্পকে সাপোর্ট দিতে গিয়ে খন্দকারের সাথে সাথে তিনিও তোজাম্মেলকেই মূল আসামী হিসেবে দাবী করে এসেছেন পুলিশের সামনে, এবং খন্দকারের সাথে গলা মিলিয়ে পুলিশ যে ঠিকমতো তদন্ত করছেনা এবিষয়ে একমত প্রকাশ করে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে সংশয়ও প্রকাশ করে গেছেন।

এ সবকিছু মিলেই মিসেস ওয়ালী আর মিসেস খন্দকারের হত্যারহস্য ধীরে ধীরে ভিন্ন একটি দিকে মোড় নিতে শুরু করে, নানান ঘোরপ্যাঁচে শেষমেষ শহরে এটি একটি ভুতুড়ে ঘটনা হিসেবে প্রচার পেতে শুরু করে। জামিন বা বেকসুর খালাসের বদলে শুধু বেদম মার কপালে জুটলেও তোজাম্মেল যে এই খুনের আসামী না এধরনের একটা সিদ্ধান্ত পুলিশের ভেতরের লোকদের সাথে সাথে শহরের সবাইও ধীরে ধীরে মেনে নেয়। আর সেখানে যেহেতু আঙুলের ছাপের রহস্যের সমাধান হয়না, তাই বেশীরভাগ লোকে ধরে নেয় যে ভুতুড়ে কোন সত্ত্বাই তোজাম্মেলের আঙুলের ছাপ দখল করেছে; আর সেখান থেকে ধারনা করা শুরু হয় যে আসলে কোন মানবসন্তান না, বরং ভৌতিক কোন সত্ত্বাই এ হত্যাকান্ডগুলো ঘটিয়েছে, এবং ভবিষ্যতে এরকম ঘটনা আরো ঘটতে পারে এমন আশংকায় শহরের অভিজাত পাড়ার লোকদের, বিশেষ করে মিসেসদের চলাফেরায় সতর্কতার মাত্রা অনেক বেড়ে যেতে থাকে।

এধরনের গুজব ছড়াতে শুরু করলে তার ডালপালা গজায় খুব দ্রুত, এসব বিষয়ে নানান ব্যাখ্যা হাজির করার লোকেরও অভাব হয়না। সেসবের জোরে এবং তোড়ে জানা যায় যে গত বছর সিনথিয়া বক্সের প্রায় অন্ধ শাশুড়ী তাদের ছয়তলা এ্যাপার্টমেন্টের বারান্দা থেকে নিচে পড়ে মারা যান, রোজার মাসে সেহরী খাবার পরপরের ঘটনা। বৃদ্ধার ঘরে এয়ারকন্ডিশনার না থাকায় তিনি গরমের কারণে বারান্দায় ঘুমোতেন। পুলিশের ধারনা, সেহরী খেয়ে বারান্দায় ফিরে এসে একবার খাটে উঠে বসে পান খাবার পর বৃদ্ধা ভুলে যান যে তিনি খাটের ওপর বসে আছেন। তখন অন্ধ বৃদ্ধা বারান্দার রেলিংকেই খাটের কিনারা মনে করে আবারও খাটে উঠতে যান, আর সাথে সাথেই ছ'তলা থেকে একেবারে শক্ত নিচের সিমেন্টের মেঝেতে পড়ে সাথে সাথেই মারা যান। তবে সমস্যা হলো বক্স সাহেবের প্রতিবেশীদের অনেকেই এই করুণ গল্পটিকে ঠিক এভাবে মেনে নেননি বা বিশ্বাস করেননি; তাঁরা ধারনা করেছেন যে ওয়ালী বক্স আর তার বউ ইচ্ছে করে বুড়ি মাটাকে মেরে ফেলেছে, অযথা এই অথর্ব বৃদ্ধার বোঝা টানা তাদের পক্ষে কুলোয়নি; তাছাড়া শাশুড়ীর সাথে সিনথিয়া বক্সের বাসায় ও বাইরে ভয়ানক দূর্ব্যবহারের কথা প্রতিবেশীদের মুখে মুখেই ঘুরত। তাদের অনেকেরই মতে আজ কয়েকমাস পর সে ঘটনার প্রতিশোধ নেয়া হয়েছে।

ওদিকে গত বছরের রোজার শেষ দিকে শপিংমলে একজন দু'পা-হারানো গড়িয়ে গড়িয়ে চলা বৃদ্ধ ভিক্ষুককে কষে লাথি মেরেছিলেন মিসেস আলমা খন্দকার, তাঁর হাঁটার পথ আঁকড়ে ভিক্ষা চাইবার জন্য। সে ঘটনা অবশ্য মার্কেটে অনেকেই প্রত্যক্ষ করেছিলেন। আজ মিসেস খন্দকারের আপাতঃ রহস্যময় ভৌতিক খুনের ঘটনা জানার পর সেদিনে মার্কেটের প্রত্যক্ষদর্শী অনেকের মুখেই নতুন করে শোনা যায় সেই গল্প, আরো সম্পাদিত আর পরিবর্ধিত রূপে। শোনা যায়, বৃদ্ধকে লাথি মেরে আলমা খন্দকার গটগট করে যখন গাড়ীর দিকে চলে যাচ্ছিলেন, তখন তাঁর সেই হেঁটে যাওয়া দেখতেই লোকে ব্যস্ত ছিলো মূলতঃ; মারকুটে নারী এদেশে এমনিতেই দূর্লভ্য। লোকে যখন মিসেস আলমাকে দেখতেই মগ্ন, তারই ফাঁকে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই সেই বৃদ্ধ ভিক্ষুক নাকি খোদ মার্কেট কমপ্লেক্স থেকেই উধাও হয়ে যায় এই গল্পটি এখন নতুন করে চাউর হয়ে গেছে, এবং এও বলা হচ্ছে যে এরপর থেকে সেই বৃদ্ধকে শহরের আর কোথাও দেখা যায়নি।

হত্যারহস্যের এহেন নানাবিধ ভৌতিক ব্যাখ্যা ছড়ানোর সাথে সাথে এভাবে মিসেস বক্স আর খন্দকারের এসব আমলনামারও চুলচেরা বিচার শুরু হয়ে যায় শহরে; তাঁদের মৃত্যুতে খুশী হওয়া উচিত না দুঃখিত হওয়া উচিত এনিয়ে শহরের লোকের মধ্যে বিভেদ দেখা দিলেও, যে ব্যাপারটায় মোটামুটি কোন বিভেদ থাকেনা সেটা হলো, সবাই নিশ্চিত হয়ে পড়ে যে রেডড্রাগনের খুনগুলো অলৌকিক ঘটনা না হয়েই যায়না। রেডড্রাগন বার আগে ছিলো হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্ট, দু'তিন পুরুষ আগ পর্যন্ত এর মালিকেরা ছিলো পীর-আউলিয়া, তাঁদের মহৎআত্মারাই ভদ্রমহিলাদের রেডড্রাগনে ডেকে এনে এমন নির্মম প্রতিশোধ নিয়েছেন এমন ব্যাখ্যাও বাজারে চলতে দেখা যায়। অলৌকিক ব্যাখ্যাটা কতটুকু বাজার পেয়েছে তার আরো একটা উদাহরণ দেয়া যাক। খোদ হাসনাইনের বস শাহাদাৎ সাহেবও এতে কাবু হয়ে পড়েন। আলমা খন্দকার হত্যাঘটনা ঘটার সপ্তা পেরুতে না পেরুতেই তিনি হাসনাইন আর রাজুকে ডেকে নিয়ে পরামর্শ দেন যে কেইসটি ছেড়ে দিতে। যখন কোনভাবেই ওদের রাজী করানো গেলোনা, তখন শাহাদাৎ সাহেব এই বলে হুঁশিয়ার করে দেন যে, এই কেসের পেছনে লেগে থাকার কারণে যদি হাসনাইন বা রাজুর ওপর ব্যাখ্যার অযোগ্য কোন ব্যক্তিগত সমস্যা এসে পড়ে, বা তাদের পুলিশ বিভাগের ওপর ব্যখ্যাতীত কোন সামষ্টিক দূর্যোগ নেমে আসে তাহলে তার দায় নিতে যেন তারা মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকে। বলাই বাহুল্য, পুলিশ বিভাগের অধিকাংশই শাহাদাৎ সাহেবের মতো ভাবনা থেকে কেইসটির ব্যাপারে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন।

শুধু যে পুলিশের সদস্য বা শহরের লোকেরাই এরকম ভাবছিলো তা না; এ হত্যাঘটনা দুটো নিয়ে মিডিয়াতেও রীতিমতো আলোড়ন তৈরী হয়। টিভির টকশোতে আলোচকরা গমগমে কন্ঠে নিজ নিজ জীবনে ঘটা ব্যাখ্যাতীত ঘটনার বর্ণনা শুরু করেন। এমনকি জনপ্রিয় কথা সাহিত্যিক জামিউন আহমেদ সাপ্তাহিক কর্ণকুহরে তাঁর জনপ্রিয় সৃষ্টি তাসির আলীকে মূল চরিত্র করে "তাসির আলী - ব্যাখ্যার অতীত" সিরিজের একটি গা হিম করা জমজমাট পর্বও লিখে ফেলেন মিসেস খন্দকার আর মিসেস বক্স হত্যাকান্ডের এই রহস্যময় ঘটনা নিয়ে।

ওদিকে তোজাম্মেলের নিরপরাধিতার ব্যাপারেও পুরো পুলিশ বিভাগ মোটামুটি নিশ্চিত হয়ে পড়ে। সে যে খুনী না তার আরো কিছু প্রমাণ বের হয়, যেমন, তোজাম্মেলের ওভারকোটটির বাঁহাতের কব্জির কাছে প্রায় দু'ইঞ্চি পূরণ চার ইঞ্চি এলাকা জুড়ে আলাদা কাপড়ের টুকরায় প্রিন্ট করা আছে "ভ্যালেন্টিনো মরিনো", কোটের ব্র্যান্ডের নাম। কিন্তু সিসিটিভির ফুটেজে অনেক চেষ্টা করেও খুনীর কোটের হাতায় সেরকম কিছু বের করতে পারেনি, এমনকি এ ফুটেজ বিদেশের কয়েকটি ল্যাবে পাঠিয়েও পরীক্ষা করা হয়েছে, সবাই নেগেটিভ বলেছে। সব দেখেশুনে প্রথম শুনানীতেই আদালত তোজাম্মেলকে জামিন দিয়ে দেয়, এবং সাইন্টিফিক ইনভেস্টিগেশন ল্যাবের ইমেজ প্রসেসিংয়ের অধ্যাপক ডঃ আবু নাজিমের "প্রতি পঁচিশ লাখ জনে একজনের বেলায় ভুল ম্যাচ করতে পারে আমাদের ফিঙ্গারপ্রিন্ট অথেনটিকেশন মেশিন, যে হিসেবে বাংলাদেশে তোজাম্মেলের মতো একই রকম বা কাছাকাছি ফিঙ্গারপ্রিন্টওয়ালা লোক জনা পঞ্চাশের বেশী থাকতে পারেন" -- এহেন সাক্ষ্যের প্রেক্ষিতে পুলিশকে আবারও পুরো ইনভেস্টিগেশন ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দেয়। যথেষ্ট সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়া এরকম স্পর্শকাতর মামলা নিয়ে মাননীয় আদালত বেশী বাড়াবাড়ি না করারও পরামর্শ দেন পুলিশকে। ধারনা করা যায় যে ভৌতিক ব্যাখ্যাকে মাননীয় আদালতও একেবারে ফেলে দিতে বিব্রত বোধ করেছিলেন।

এভাবে ঘটনার মোটামুটি পনেরো দিনের মাথায় পুরো কেইসটি আবারও তার শুরুর অবস্থানে চলে আসে; অর্থাৎ কোন সাসপেক্ট নেই! দু'জন ভদ্রমহিলা খুন হয়েছেন, এবং পুলিশের বড় বড় কর্তা, আদালত থেকে শুরু করে দেশের জনপ্রিয় সাহিত্যিক -- সবাই ধরে নিয়েছেন যে এটি কোন সাধারণ খুনের ঘটনা নয়, বরং অলৌকিক কিছু হবার সম্ভাবনা বেশী। হাসনাইনরা এও জানতে পারে যে তার বস শাহাদাৎ সাহেবকে পুলিশের বড়কর্তারা পরামর্শ দিয়েছেন যে, নিজের অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা দিয়ে এরকম রহস্যময় সমস্যা সমাধান করা এফবিআই'র তালিকাভুক্ত ভদ্রমহিলা মিসেস বারবারা হুইটস্মিথকে যেন ঘটনাটি জানানো হয়। বিশ্বমানের ভুত বিশেষজ্ঞ মিঃ জুরি গেলান তার ব্লগে বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেন যে, রহস্যটির সমাধান তিনি শহরে এসে সশরীরে করে দিতে পারবেন, তবে সেটা সবার জন্য হিতকর হবে না উল্টো আরো ক্ষতি বয়ে আনবে -- সে নিশ্চয়তা তিনি দিতে পারবেননা।

অরিয়ন ক্লাবের রেইনবো ক্যাফেতে বসে প্রায়ই খবরের কাগজে এসব পড়তে পড়তে মুচকি মুচকি হাসে মোজাম্মেল, যদিও ঘটনার বর্তমান মোড়ে সে পুরোপুরি খুশী না, তার ইচ্ছে ছিলো এঘটনার মাধ্যমে তোজাম্মেলকে চিরতরে শ্রীঘরে পাঠিয়ে দেবে অথবা জাহান্নামে। তারপরও দুদু'টো খুন করে বেঁচে যাওয়াটা বড় আনন্দের বিষয়, সেই আনন্দপ্রসূত হাসি খানিকটা হলেও অবসর মুহূর্তে সঙ্গী হয়ে যায় তার আপনা আপনিই। ক্যাফের কাউন্টারে দাঁড়ানো বিশ বছর বয়েসী ছেলে কামাল, সে ঠিক বুঝতে পারেনা এ লোকটি প্রতিদিন এত মজা করে কি পড়ে পেপারে! তবে এই আপাত পাগলাটে লোকটির আচরণ অনেক ইন্টারেস্টিং হলেও তার এই দূর্বোধ্য আচরণের কারণেই কামাল সবসময় তাঁকে প্রত্যক্ষ করেনা। মাঝেমাঝে তার চোখ চলে যায় আশপাশের হাই হিল পরা সুন্দরীদের দিকে। চাকরী বাঁচানোর জন্য সুন্দরীদের দিকে এরকম বারবার চোখ যাবার এ অভ্যাসটি বদলানো দরকার কিনা সেটা অবশ্য সে বুঝতে পারেনা, বা তা নিয়ে বিশেষ চিন্তিতও হয়না।

ওদিকে শহরের অভিজাত এলাকার দুটো শোবার ঘরেও ঘটনার এমন মোড় আপাতঃ স্বস্তির বাতাস বয়ে নিয়ে আসে। যদিও এদের একজন, অর্থাৎ ওয়ালী বক্স বয়সকালের পরকীয়া প্রেমিকার মৃত্যুতে খানিকটা হলেও আহতবোধ করছেন, তারপরও পুরো ঘটনার অন্য কোন মোড় তাঁর নিজের জীবনকেও যে ছিন্নভিন্ন করে ফেলতে পারে এ ভয়টুকু থেকে ঘটনার বর্তমান অবস্থা তাঁকে যথেষ্ট স্বস্তি এনে দেয়। ভৌতিক কোন কারণে স্ত্রীদের মৃত্যু এদের দুজনকেই আরো বেশী ধার্মিক করে তোলে; একদিকে যেমন ঘনঘন মায়ের কবরে যেতে দেখা যায় ওয়ালী বক্সকে, তেমনি পাড়ায় পাড়ায় ভিক্ষুকদের জেয়াফত দিতে দেখা যায় খন্দকার সাহেবকে। আর নিজনিজ স্ত্রীদের মৃত্যুকে তাঁরাই যখন অধিভৌতিক কিছু হিসেবে মেনে নিয়েছেন, তখন একইভাবে সেটাকে মেনে নিতে পুলিশ বিভাগ, জনগণ, টক-শোর লোকজন বা সাহিত্যিক -- কারো তেমন কষ্ট হয়না। এভাবে মাস দুয়েকের মাথায় সবাই মোটামুটি ভুলে যায় ঘটনাগুলো, সবাই অধিভৌতিক ব্যাখ্যা মেনে নিয়ে সুখে শান্তিতে বসবাস করতে শুরু করে।

শুধু শান্তি পায়না হাসনাইন, গোয়েন্দা হাসনাইন মাহমুদ। সেজন্য তার এ্যাসিস্ট্যান্ট হিসেবে রাজুকেও রাতের পর রাত জেগে তার সাথে নানারকম ঘাঁটাঘাঁটিতে কাটাতে হয়, যদিও মাঝেমাঝে রাজুর কাছে ভুতুড়ে ধরনের ব্যাখ্যাকেই বেশী গ্রহনযোগ্য বলে মনে হয়ে ওঠে। সে নিশ্চিত খুনী তোজাম্মেল না, তাই তোজাম্মেলের হাতের ছাপ মিলে যাওয়াটার আর কোন ব্যাখ্যা তার কাছে থাকেনা। তবে হাসনাইন কোনভাবেই ঘটনাকে ভুতুড়ে ভাবতে পারেনা মূলতঃ একটি কারণে, যেটা বাকী কারো চোখে না পড়লেও তার চোখ এড়াচ্ছেনা এ মুহূর্তে। এই একটি কারণই তার মনে বারবার সন্দেহ ঢুকিয়ে দিচ্ছে যে এ ঘটনা কোনভাবেই ভৌতিক না, এবং আরো পরিস্কার করে বললে, তার যে ধারনাটা আরো দৃঢ় হয় তা হলো, এঘটনা দুটো কাউকে দিয়েই ঘটানো, যেখানে পেছন থেকে নিহত ভদ্রমহিলাদ্বয়ের পতিদ্বয় নিশ্চিতভাবেই কলকাঠি নেড়েছেন। কারণ, যতদিন পুলিশের সম্ভাব্য আসামী হিসেবে তোজাম্মেল বন্দী ছিলো ততদিন খন্দকার আর বক্সের দুজনেই হারানো স্ত্রীদের শোকে তোজাম্মেলের যথাযথ বিচার দেখে নেয়ার ব্যাপারে সোচ্চার ছিলেন; অথচ যখন ঘটনাটির ব্যাখ্যা ভৌতিক দিকে মোড় নিলো তখন তোজাম্মেলের ব্যাপারে তাঁদের আর কোন অভিযোগ রইলোনা বা স্ত্রী হারানোর বিচার চাওয়ার ব্যাপারেও তাঁদের আর উৎসাহী হতে দেখা গেলোনা। সাধারণত এমন ক্ষেত্রে পুলিশের এহেন গাঁজাখুরী বিশ্বাসকে চ্যালেঞ্জ করে তাঁদের আরো সোচ্চার হবার কথা, বিশেষ করে খন্দকার সাহেবের তো আদালতে গিয়ে পুলিশের বদলে মোজাম্মেলকে নিয়োগের আবেদন করার কথা!

তবে হাসনাইনের এই সন্দেহও ঠিক সেভাবে তার নিজের কাছেই পানি পায়না মূলতঃ ঐ আঙুলের ছাপের কারণে। যেহেতু অধ্যাপক আবু নাজিমের সাক্ষ্য অনুসারে তোজাম্মেল খুনী নাও হতে পারে -- এব্যাপারে সে কনভিন্সড, তাই ঘটনাস্থলের আঙুলের ছাপ তার সন্দেহের তালিকার লোকদের, মানে মোজাম্মেল, খন্দকার আর বক্স-- এদের আঙুলের ছাপের সাথে মেলে কিনা সেটা পরীক্ষা করে দেখার সিদ্ধান্তও সে নিয়েছিলো। খন্দকার আর বক্সকেই সে সন্দেহ করেছে মূলতঃ, তাই সম্ভাব্য হিটম্যান হিসেবে প্রথমেই তার তালিকায় এসেছে খন্দকারের চিরন্তন সহচর আর ওয়ালীর সাথেও ইন-গুড-টার্মস ব্যক্তিত্ব গোয়েন্দা মোজাম্মেল। সে হিসেব থেকেই উপরের বসদের কাউকে না জানিয়েই পুলিশের সায়েন্টিফিক ইনভেস্টিগেশন টিমের পরিচিত বড়ভাই কাম বন্ধু জামশেদ ভাইকে দিয়ে সে এই তিনজনের আঙুলের ছাপের সাথে খুনীর আঙুলের ছাপ মিলিয়ে দেখেছে। যথারীতি মেলেনি! তাহলে খুনের স্থলে ছিলো কে?

আঙুলের ছাপ না মেলায় হতাশ হয় সে ঠিকই তারপরও মনের ভেতরের খচখচটাকে সে দূর করে দিতে পারছেনা। বারবার তার মনে হয়, কি একটা বিষয় যেন মনে পড়ছেনা, কি একটা যেন দেখার বাকী আছে!

এমন অবস্থাতেই ঘটনার প্রায় দু'মাস বিশদিন পর একরাতে যখন সে রাজুকে নিয়ে মামলার ফাইলগুলো ঘাঁটছিলো, তখন হঠাৎকরেই সেই মনে মনে খুঁজতে থাকা "অজানা অধরা কি যেন দেখার বাকী বস্তু"টি তার কাছে ধরা দেয় সন্তর্পণে, এবং ফাইলের স্তুপে পাওয়া সেই অধরা বস্তুটিও নিশ্চিতভাবেই একটুকরো কাগজই ছিলো। যেন হাতে চাঁদ পায় সে, অনেকক্ষণ ধরে কাগজটির দিকে তাকিয়ে থাকে হাসনাইন, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পড়ে, তারপর মিটিমিটি হেসে রাজুকে বলে, "কমরেড রাজু, চলো চা খেয়ে আসি।"
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই অক্টোবর, ২০০৯ বিকাল ৪:০৯
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মিশন: কাঁসার থালা–বাটি

লিখেছেন কলিমুদ্দি দফাদার, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ৯:২৭

বড় ভাই–ভাবীর ম্যারেজ ডে। কিছু একটা উপহার দেওয়া দরকার। কিন্তু সমস্যা হলো—ভাই আমার পোশাক–আশাক বা লাইফস্টাইল নিয়ে খুবই উদাসীন। এসব কিনে দেওয়া মানে পুরো টাকা জ্বলে ঠালা! আগের দেওয়া অনেক... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×