বিসমিল্লাহর রাহমানির রাহীম
পর্দা দ্বীন ইসলামের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। পর্দা নারী-পুরুষ উভয়ের জন্যই প্রয়োজন। ইসলামে পর্দার উপর গুরুত্ব দেয়া হয়েছে কিন্তু পর্দা কেন প্রয়োজন তা নিয়ে বিস্তারিত কিছু বলা হয় নাই এবং পর্দার সাথে ব্যক্তি স্বাধীনতার সংঘর্ষ রয়েছে বলে বেশ বিতর্কও রয়েছে। নিম্নে যুক্তির মাধ্যমে আমি পর্দার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করার একটি প্রয়াস করলাম।
অভিযোগঃ বোরখার মাধ্যমে নারীদের আবদ্ধ করে রাখা হয়, তাদের উপর বস্তা চাপিয়ে দেওয়া হয়।
ব্যাখ্যাঃ পর্দা বলতে বোরখা বোঝানো হয় না। পর্দা বলতে নারীদের জন্য এমন পোশাক নির্দেশ করা হয় যাতে করে নারীদের গোপন অংশ দেখা না যায়। হতে পারে এটি সালোয়ার-কামিজ, সারী বা বোরখা। তবে অবশ্যই নারীদের গোপন অঙ্গসমূহ বোঝা যাবে না পোশাকের উপর দিয়ে। সুতরাং পর্দার জন্য বোরখা কোন আবশ্যিক কিছু না। কেউ যদি বোরখা না পড়ে তবে সে পর্দানশীলা না এটি বলা যাবে না ঠিক যেমন আজকালকার কিছু বোরখা আলী আছেন যারা টাইট ফিটিং বোরখা পড়েন তাদের পর্দানশীলা বলা যাবে না।
এরপর আসা যাক পর্দা নারীদের ঘরের মধ্যে আবদ্ধ করে রাখে কিনা এপ্রসঙ্গে। আমি আগেও উল্লেখ করেছি নারীরা পুরুষের চেয়ে শারীরিকভাবে দূর্বল। এজন্য ইসলাম যে উপদেশ দেয় সেটা হলো পুরুষেরা বাহিরের কাজ করবে আর নারীরা ঘরের কাজ করবে। এতে করে উভয়ে উভয়ের উপর নির্ভরশীল থাকবে এবং তাদের মধ্যে একটি ভারসাম্যতা বিরাজ করবে। এভাবে ইসলামে নারীদের ও পুরুষদের কর্মক্ষেত্র আলাদা করে দেয় যাতে তাদের মধ্যে এক অসাধারণ বোঝাপড়ার সৃষ্টি হয়। তবে আজকাল অনেকে আবার মেয়েদের এই ঘরের কাজকে নিন্দনীয় বলে ও বলে এভাবে মেয়েদের আবদ্ধ করে রাখা হচ্ছে। তারা আসলে সকল কাজই প্রশংসার- এই কথাটিকে অপমান করছে। আসলে নারী জাতি বুঝতে পারছে না যে তাদের এই ঘরের শ্রমেরও কতো মূল্য আছে। আর এই না বুঝতে পারার কারনেই তারা নির্যাতিত হচ্ছে, অন্য কোন কারনে না। আমরা দেখেছি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রুমানা ম্যাডাম বাহিরে কাজ করার পরও নির্যাতিত হয়েছেন। এরকম অসংখ্য উদাহরন আছে। গৃহিনী হওয়া বা চাকরিজীবী হওয়ার উপর আবদ্ধ থাকা বা নাথাকা নির্ভর করে না। এটি নির্ভর করে যে নারী জাতির শিক্ষার উপর। তারা যদি বুঝতে পারত তাদের সংসার সামলানোর মূল্য কতো তবে তারা কখনোই নির্যাতনের শিকার হতো না।
আর তাছাড়া ইসলাম নারীদের ঘরে ও পুরুষদের বাহিরে কাজ করতে উপদেশ দেয়, আদেশ নয়। বিশেষ পরিস্থিতে এর পরিবর্তনও হতে পারে। নবী আইয়ুব (আ) যখন অসুস্থ ছিলেন উনার স্ত্রী তখন বাহিরে কাজ করেছেন। যখন যে দূর্বল থাকবে সে ঘরের কাজ করবে (যেহুতু এটি অপেক্ষাকৃত সহজ কিন্তু গুরুত্ব উভয়েরই সমান) আর অপেক্ষাকৃত সবল মানুষটি বাহিরের কাজ করবে এটিই প্রকৃতির নিয়ম। এছাড়াও যপর্দা করে বাহিরে কাজ করা যায়। এখন ঘরে বসেই অর্থ উপার্জনের ব্যবস্থা সম্ভব হয়েছে ইন্টারনেটের কল্যানে। মেয়েরা এটি ব্যবহার করে লাখ টাকা উপার্জন করতে পারে পর্দা পালন করেই। আর ইন্টারনেটে ব্যবহার করে এমন কেউ কখনোই বিশ্ব থেকে অবিচ্ছিন্ন থাকে না বা তাকে আবদ্ধ রাখা সম্ভব না। এছাড়াও কেউ যদি তার গোপনাঙ্গ নিবারণ করে যদি বাহিরে কাজ করতে চায় তবে সেই নারীকে কাজ করতে ইসলাম কোথাও নিরুতসাহিত করে না। আমরা গার্লস স্কুলে মহিলা শিক্ষকদের নিয়োগ চাই এতে করে এক দিক দিয়ে মেয়েরা যেমন যৌন হয়রানির হাত থেকে রক্ষা পাবে (পরিমল দ্রষ্টব্য) সেরকম মহিলা শিক্ষকদের পক্ষেও পর্দা করা সহজ হবে।
অতএব, উপরের আলোচনার পর এটি ভাবার কোন অবকাশই থাকে না যে পর্দা মেয়েদের আবদ্ধ রাখে না।
এরপর আসা যাক পর্দা কি মেয়েদের জন্য বোঝা নাকি এপ্রসঙ্গে। আমি আগেই বলে নিয়েছি যে, সালোয়ার-কামিজ, সারী পড়েও পর্দা করা সম্ভব। তবে কি সারী, সালোয়ার-কামিজ মেয়েদের জন্য বোঝা? নিশ্চই না। আর যদি এটি পড়াও বোঝা হয়ে যায় তাহলে আমাকে বলতেই হয়, জামা-কাপড় আসলেই অনেক ভারী জিনিস। আদিকালে আমরা যেমন কেবল পাতা দিয়ে আমাদের নিবারণ করেছিলাম সেরকম করলেই হয়, খালি খালি পোশাকের পিছনে এতো খরচেরই বা দরকার কি, জামা কাপড়ই পড়ার দরকার নাই… আর পর্দা মেয়েদের জন্য তো বোঝা নয়ই বরং ঢাল স্বরুপ। আমরা দেখছি পূর্বে অনেক হলিউডি-বলিউডি নায়িকা পর্দা করেছেন তথা বোরখা পড়েছেন নিজেদের রক্ষার জন্য। বিশ্বকাপের সময় ক্যাটরিনা কাইফ ত্রিদেশীয় বিগ শো-তে যখন আসেন তখন তিনি বোরখা পড়ে আসেন। এতো গেল খবরের কাগজে পড়া খবর। কয়েকদিন আগে বসুন্ধরা সিটির ৮ তলায় বি এফ সি-তে খাচ্ছি, দেখি এদেশীয় ২ সুপার মডেল বোরখা পড়ে আছেন। খাওয়ার জন্য তারা নিকাব খুলেছিলেন তখন আমার পাশে বসে থাকা ফ্রেন্ড তাদের চিনতে পারে। আমি অবশ্য তাদের চেহারা সেই প্রথম এবং শেষ দেখেছি তবে নাম অনেক শুনেছি। আমার ফ্রেন্ড তাদের অটোগ্রাফ নেয় এবং একটি নর্মাল কোশ্চেন জিজ্ঞেস করে, “আপনারা কি শ্যুটিং এর জন্য বোরখা পড়েছেন নাকি স্বেচ্ছায়?” তারা জবাব বলেন, জনগনের হাত থেকে সুরক্ষা পেতে মহান আল্লাহর দেয়া ঢাল পর্দা তত্যহা বোরখার আশ্রয় নিয়েছেন। তাহলে দেখুন, বোরখা কি মহিলাদের উপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে নাকি তারা স্বেচ্ছায় পড়ছে? যদি কোন উপকারই না থাকে তবে এসব মানবতাবাদী, দেশ-বিদেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিবর্গরা কেন পর্দা করছে? তাদের তো কেউ জোর করছে না বোরখা পড়তে, কোন মৌলবাদীও হুমকি দিচ্ছে না। তারপরও কেন তারা এমনটি করছে? নিশ্চই তারা সেখানে মহান আল্লাহর নিয়ামতে ভরপুর সুরক্ষা খুজে পেয়েছে এবং একারনেই বোরখা পড়ছে।
এই আর্টিকেলের একটি সম্ভাব্য রিপ্লাইঃ আপনাদের মতো ভোগবাদী, অসভ্য মানুষদের জন্যই তো ঐসব মডেলরা বোরখা পড়তে বাধ্য হচ্ছে। আপনাদের অসভ্য বিহেভ তাদের বাধ্য করছে। আপনাদের আচরণ ভালো হলে তাদের এমনটা করতে হতো না…
ব্যাখ্যাঃ তর্কের স্বার্থে মেনে নেই আমরা ভোগবাদী, অশালীন। আর একটি সমাজ কখনো কেবল ভাল মানুষদের নিয়ে গঠিত হয় না। সমাজে থাকে চোর-ডাকাত, শিক্ষিত-অশিক্ষিত, ভোগবাদী-সভ্য। এসব সবকিছু নিয়েই একটি সমাজ। সমাজে যখন আমরা চলব তখন আমাদের সবার সাথে চলার মতো প্রস্তুতি নিয়েই চলতে হবে। মনে করেন আপনি একজন বড় গেরস্থ আর আমি চোর। আমরা সমাজে চিরকালেই ছিলাম, আছি এবং থাকব। দুনিয়ার সবচেয়ে ভাল শাসনামল যদি প্লে ব্যাক করে দেখা হয় তবু সেখানে চুরির ঘটনা পাওয়া যাবে। চোর ঠেকাতে গেরস্থকেই ব্যবস্থা নিতে হয়েছে, সাবধান হতে হয়েছে। গেরস্থ কিন্তু বলে না যে তোমরা আছ জন্য আমাকে এতো কষ্ট করতে হয়, সাবধান থাকতে হয়। চোর থাকবে এটা যেমন স্বাভাবিক ঠিক সেরকম গেরস্থ চোর ঠেকাবার ব্যবস্থা করবে এটাও স্বাভাবিক। অনুরুপভাবে বলা যায়, আমাদের মতো ভোগবাদী, অশালীনরা সমাজে থাকবে এটাও স্বাভাবিক আর আমাদের ঠেকাতে নারীরা তাদের রক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে এটাও স্বাভাবিক। আজ যদি কারো বাড়িতে চুরি হয় আর কালকে সে থানায় জ়ি ডি করতে যায় তখন পুলিশ তাকে জিজ্ঞেস করবে, “চোর কিভাবে বাসায় ঢুকেছে?” সে যদি উত্তর দেয় “আমি দেশের বাড়িতে গিয়েছিলাম দরজায় তালা না লাগিয়ে। এই সুযোগে চোর ঢুকে পড়েছে” তাহলে বিষয়টি হাস্যকর হবে বৈ কি। তারপরও ঐ পুলিশ কর্তব্যের স্বার্থে চোর ধরার চেষ্টা করবে কিন্তু চোরকে অবাধে চুরি করার সুযোগ দেয়ার জন্য ঐ ভিক্টিমেরও কিন্তু দোষ কম না। আমরা সমাজ থেকে যত যোর আছে সবাইকে পুনর্বাসন অথবা জেলে ঢুকাতে চাই কিন্তু যতক্ষন তা সম্ভব না হচ্ছে ততক্ষন আমাদের নিজেদেরই সচেতন হতে হবে, এর কোন বিকল্প নেই। আর দিনে একটিও চুরি হয় না এরকম সমাজ মানব সভ্যতায় আর আসবে না বললেই চলে। তবে এমন দিন হয়তো আসবে চুরি যাবে কিন্তু চোর ধরাও পড়বে। এখন অনুরুপভাবে কোন মেয়ে যদি নালিশ করে, আমাকে অমুক ছেলে উত্তক্ত করেছে আমি খুব যৌনাবেদনময়ী দেখাচ্ছিলাম তাই… এখন কি বিষয়টি খুব হাস্যক্র হবে না? মেয়ে আবেদনময়ী দেখাক কিংবা না দেখাক ইভ টিজিং কখনোই কাম্য নয় তবে এভাবে নিজেকে উজাড় করে দিয়ে ইভ টিজিং করতে আহবান জানানোর জন্য ঐ মেয়েটিরও কি দয় কম? নিশ্চই না। মেয়েটি কি জানে না যে সমাজে ভালো-খারাপ সবরকম লোকের বাস আর সব পরিস্থিতির জন্যই প্রস্তুত থাকা উচিত? কেউ যদি শালীন পোষাক পড়ে তবে খারাপ লোকেরাও কোন ক্ষতি করবে না আর ভাল লোকেদের তো করার প্রশ্নই আসে না। তবে কেউ যদি অশালীন পোশাক পড়ে তবে ভাল লোকেরা হয়তো কিছু করবে না কিন্তু খারাপ লোকেরা যে করবে না এর কোন নিশ্চয়তা নাই। তাই আমাদের উচিত আধুনিক হওয়া। আধুনিক অর্থ সবকিছুর জন্য প্রস্তুত থাকা। ১ সেকেন্ডে পরীক্ষার রেজাল্ট, ১ মিনিটে মেইল, ১ মিনিটের মধ্যে কারো সাথে কন্ট্যাক্ট এগুলো আধুনিকতার লক্ষন। অর্থাৎ, পরিস্থিতি যাই হউক না কেন আমি প্রস্তুত- এটাই আধুনিকতা। অতএব, শালীনতাই আধুনিকতা, অশালীনতা নয়। যাই হউক, এক দিন হয়তো আসবে কোন অপরাধীই পার পাবে না সেরকম ঐ ইভ টিজারও পার পাবে না, সে শাস্তি পাবে। কিন্তু এতে করে ঐ মেয়ের মনে যে দাগ পড়েছে তা মুছে যাবে? নিশ্চই না। তাই মেয়েদের “prevention is better than cure” থিওরিতে বিশ্বাসী হয়ে “কেউ কিছু করলে তো শাস্তি দেয়া যাবে”- আশা ত্যাগ করে শালীন ড্রেস পড়ে বের হতে হবে।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১২ সকাল ১১:৩০