গুপ্তচরবৃক্তিতে চানক্য যিনি কৌঁটিল্য নামে পরিচিত তিনি অর্থশাস্ত্র নামে একটি বই লিখেছিলেন।ভারত আজো তাদের কুটনীতিক ও গুপ্তচরবৃত্তির ক্ষেত্রে চানক্যকে অনুসরণ করে থাকে। এখানে এই চানক্য ও তাঁর তত্ত্ব সম্পর্কে ১৯৯৫ সালে একটি দৈনিকে প্রকাশিত লেখকর একটি নিবন্ধ বর্ননা করা হলােঃ
ইতিহাসখ্যাত প্রতারক কুটনীতিক কৌটিল্য তার বিখ্যাত বই 'অর্থশাস্ত্রে ছয়টি তত্ত্ব উপস্থাপন করেছেন। তত্ত্ব গুলো হলােঃ
(১) অন্য রাষ্ট্রের সাথে চুক্তির মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে।
(২) অনবরত আঘাত করে শক্রুকে আহত করে রাখার নামই যুদ্ধই ।
(৩) উদাসীন থাকার নামই নিরপেক্ষতা।
(৪) সামরিক তৎপরতা চালনার মাধ্যমে রাষ্ট্রের সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে।
(৫) অন্যকে নিজের কাছে আশ্রয় ও নিরাপত্তা চাইতে বাধ্য করাই হচ্ছে মিত্রতা।
(৬) একজনের সাথে শান্তি ও অন্যজনের সাথে যুদ্ধের নামই হচ্ছে দ্বৈতনীতি।
এখন, পর্যালােচনা করলে দেখা যাবে, চানক্যের সময় হতে আজ পর্যন্ত প্রত্যেক ভারতীয় শাসক অত্যন্ত সার্থকভাবে উপরােত্ত সূত্রগুলাে অনুসরণ করে আসছেন,
বিশেষ করে ভারতীয় কংগ্রেসের নেতানেত্রীদের এ ব্যাপারে 'এ্যান এক্সপার্ট হেডমাস্টার' হিসেবে বিবেচনা করা চলে। এদের মাঝে জওহরলাল নেহেরু, ইন্দিরা গান্ধী,রাজীব গান্ধী ও নরসীমা রাওয়ের নাম উল্লেখ করা যায়
এবার দেখা যাক, ভারত কিভাবে চানক্যের ছয়টি সূত্র পুংখানপুংখভাবে অনুসরণ করে আসছে। প্রথম সূত্রে বলা হয়েছে অন্য রাষ্ট্রের সাথে চুক্তির মাধ্যমে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হবে এবং আধুনিক 'অহিংস ভারত' তার পার্শ্ববর্তী প্রতিটি রাষ্ট্রের সাথেই চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। সঙ্গত কারণেই (!) কুটনৈতিক ছলনার জন্য এসব কথিত চুক্তিকে আখ্যা দেয়া হয়েছে 'মৈত্রী' ও সহযােগিতা চুক্তি নামে। এক্ষেত্রে বিভিন্ন দেশের সাথে সম্পাদিত চুক্তি হতে উল্লেখযােগ্য অংশ এখানে তুলে ধরা যেতে পারে-
(১) সিকিমের সাথে একটি কথিত চুক্তি নিয়ে ২০ মার্চ ১৯৫০ সালে ভারতীয় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক প্রেসনােটে উল্লেখ করা হয়, "এখন থেকে সিকিমে একজন ভারতীয় কর্মকর্তা দেওয়ান হিসেবে রাজ্যের কার্যাদি পরিচালনা করবেন।"
(২) রাষ্ট্রীয়ভাবে পৃথিবীর একমাত্র হিন্দু রাষ্ট্র হয়েও নেপাল ভারতের সাথে তথাকথিত মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষরে বাধ্য হয় ১৯৫০ সালে। এ চুক্তি বলে তৃতীয় কোন দেশ থেকে নেপাল সমরাস্ত্র কিনতে পারবে না বলে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
এরপর ১৯৮৯ সালের জুলাই মাসে নেপাল চীন থেকে অল্প কিছু বিমান বিধ্বংসী অস্ত্র সংগ্রহের উদ্যাগ নিলে ভারত স্থলবেষ্টিত নেপালের ১৫টি ট্রানজিট রুটের সবকটি বন্ধ করে দেয়। ফলে বাধ্য হয়ে নেপাল মাথা নােয়ায় ভারতের প্রতি। একে কি চানক্যের পাঁচ নম্বর সূত্র 'অন্যকে নিজের কাছে আশ্রয় ও নিরাপত্তা চাইতে বাধ্য করাই হচ্ছে মিত্রতা' বলা যায় না?
(৩) ১৯৮৭ সালের ১ জুন তারিখে ভারতের তৎ্কালীন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধী শ্রীলংকার তামিলদের সাহায্যার্থে ভারতীয় বিমান দিয়ে রসদপত্র ফেলার নির্দেশ দেন 'অপারেশন পােমালি' নামের ঐ আগ্রাসী তৎপরতার পর রাজীব গান্ধী মন্তব্য করেন, "আমি কি মেসেজ দিতে চেয়েছি প্রেসিডেন্ট জয়বর্ধনে হয়তো তা বুঝতে পেরেছেন।এরপর ২৯ জুলাই '৮৭তে শ্রীলংকা ভারতের সাথে আনুষ্ঠানিক চুক্তি করতে বাধ্য হয়এবং IPKF বা Indian Peace Keeping Force শ্রীলংকার মাটিতে পা রাখে। এভাবেই ভারত আঞ্চলিক পুলিশী ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।এখানে আমরা চানক্যের প্রথম, পঞ্চম ও চতুর্থ সূত্রের প্রয়ােগ দেখতে পাই, যেখানে চতুর্থ সূত্র বলা হচ্ছে "সামরিক তৎ্পরতা চালনার মাধ্যমে রাষ্ট্রের ক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে তারও ইঙ্গিত পাওয়া যায়
(৪) '৭১ সালে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারকে গােপন সাত দফা চুক্তিতে বাধ্যহয়। কথিত আছে, ঐ চুক্তিতে স্বাক্ষর দেয়ার পর তৎ্কালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম অজ্ঞান হয়ে যান।
এরপর ১৯৭২ সালের মার্চ মাসে স্বাক্ষরিত হয় তথাকথিত পঁচিশ বছর মেয়াদী মৈত্রী চুক্তি, যাকে এদেশের জনগণ ঘৃণাভরে 'গোলামী চুক্তি' বলে আখ্যা দিয়েছে।এদিকে ১৯৭৪ সালের ১৬ মে স্বাক্ষরিত সীমান্ত চুক্তি লংঘন করে ভারত এখনাে বাংলাদেশের আঙ্গরপােতা, বেরুবাড়ি দখল করে রেখেছে।
অন্যদিকে ১৯৭৫-এর পট পরিবর্তনের পর সৃষ্টি করা হয় শান্তিবাহিনী, যার দ্বিতীয় ফ্রন্ট হিসেবে 'র তৈরি করে বঙ্ভূমি আন্দোলন।
এছাড়া মালদ্বীপে সৈন্য প্রেরণের ঘটনাকেও আমরা চার ও পাঁচ নম্বর সূুত্রের মিলিত প্রয়ােগ বলে উল্লেখ করতে পারি।
এ নিবন্ধে চানক্যের সূত্রে সম্পর্কে ধারণা দেয়ার পর আশাকরি বাংলাদেশের সাথে ভারতের আচরণ নিয়ে আর কোন বিশদ ব্যাখ্যার প্রয়ােজন নেই।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১১:১০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



