প্যারিসের কবি শার্ল বোলদ্যেয়ার বলেছিল, তোমাকে নেশা করতেই হবে, হয়তোবা মেয়ে নয়তোবা মদ আর নয়তো বই। যে কোন কিছু ,কারন নেশাই তোমাকে বাচিয়ে রাখবে।
আমিও ক্রমাগত নতুন নেশা নিজেকে দিই। বেচে থাকার প্রশ্ন বলে কথা।
এই নেশা গুলো আবার আমাকে অন্য কেউ দিয়েছি। তাদের ঋন মরনের পর শোধ করা যাবে।প্রথম নেশা , সিনেমা। এই বস্তু আমাকে কে দেখতে শিখিয়েছিলো তা বের করতে হলে সুদুর অতিতে যেতে হবে। শৈশবে বাবার শাসন থেকে আমার মুক্তি মিলতো শুধু মামার বাড়ি গেলে। শেখানে ছিল ভি সি আর। উচু শো কেসের উপর চবিইস ইঞ্চি কালার টিভীকে মনে হতো প্যান্ডোরা বাক্স । খুল্লেই ঝাপি ঝাপি আনন্দ ,বিস্ময় । আমি শো কেসের ঠিক নিচে বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে টিভি দেখতাম । টার্মিনিটার টু দেখার পর আমার তিন রাত ঘুম হল না। সিনামার নেশা পেয়ে গেলো। এখনো আছে। আমার কাছে ১০০০ মাষ্টার পিচ মুভির একটা লিস্ট ছিলো । যে লিষ্টে বলা ছিল , মরার আগে এই মুভি গুলো দেখা উচিত। আমার ১০০০ মুভি দেখা শেষ । এই বার কি মরে যাবো ফ্রান্স!!
বই । আব্বাকে দেখতাম বই বগলে করে অফিসে যাই। সরকারী চাকুরীজিবী!! মা বলতো , তোমার পরিক্ষা নাকি! সারাক্ষন চোখের সামনে বই ঝুলিয়ে রাখো। আব্বা ঝুলে যাওয়া বই এর ফাক দিয়ে একবার মাকে দেখে আবার পড়া শুরু করতো। মাকে বলতাম আব্বা এতো বই পড়ে কেন! মা বলতো, বই এর মধ্যে তোর আরেকটা মা আছে যে আমার চেয়েও ভালো তাই তোর আব্বা তাকে সব সময় চোখের সামনে রাখে। আমি ক্লাস ফোর থেকে পাঠ্য বই এর বাইরের বই পড়া শুরু করি আর ক্লাস সিক্স থেকে বই চুরি করা শুরু করি। আমাদের এলাকার ব্রাক গনকেন্দ্র পাঠাগারের বই অর্ধেক আমি সাফা করেছি। সেই চুরির দিনের অভিযানের কথা ভাবতে গর্বে বুকটা দুই ইঞ্ছি ফুলে গেলো এখন।
আব্বা মারা গেছে অনেক আগে । রেখে গেছে সারি সারি বই এর স্তুপ। সেই স্তুপের মাঝখানে বসে বই গন্ধ শুকি , মাঝে মাঝে পায় আব্বার অস্তিত্বের সুবাস।
বাগান। এইটা আমার আনকোরা নেশা। নাম বলা যাবে না এমন একটা মেয়ে সুদুর থেকে আমার সাথে দেখা করতে এসেছিলো ।আমি যখন বাসা থেকে নিচে নামলাম তখন দেখলাম টিপ টিপ বৃষ্টি মধ্যে সেই মেয়ে হাতে একটা ফুলের টব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বললাম এইটা কি। সে বলল, ড্রাগন গাছ। আমি বললাম, ড্রাগন গাছ হলো কবে! এই গাছে কি ফুলের বদলে আগুন ধরে। সে গাছটাকে অতি যত্নে ধরে আমাকে বললো , গাছ নিয়া ঠাট্টা করো না , ভালো লাগে না। এই মেয়েটার সাথে ছিপ ছিপে বৃষ্টির মধ্যে ঘন্টা তিনেক ছিলাম সেই তিন ঘন্টাই বুঝলাম এই মেয়েটা হলো বৃক্ষমানবী । জগতে বৃক্ষ ছাড়া আর যাদেরকে তার ভালো লাগে তাদেরকেউ বৃক্ষ ভেবে ভালোবাসে। বৃক্ষ মানবী চলে গেলে। অগোচরে নেশা রেখে গেলো। একদিন সকালে রান্না ঘরে যেয়ে দেখি আলুর ভেতর শিকড় গজিয়েছে, আমি ভাবলাম শিকড় না গজিয়েছে নেশা। মাম এর বোতল কেটে তার ভেতর মাটি দি্যা আলু পুতে দিলাম । কিছুদিন পর রসুন পুতে দিলাম। নেশা গুলো তরতর করে মাটি ফুড়ে বেরিয়ে আসছে । সকালে যখন ঘুম থেকে উঠে বারান্দায় যাই এই গুলোকে গাছ মনে হয় না মনে হয় আমার বাচ্চা
বিয়া না করেই বাপ হয়ে গেলাম। কি আর করার!!
সর্বশেষ এডিট : ১০ ই ডিসেম্বর, ২০১৭ সন্ধ্যা ৬:০৩