এখানে সবুজ মাঠ, রোদের হুটোপুটি;
এখানে মেঘের ছায়া, মিষ্টি খুনসুটি;
এখানে বৃষ্টি ঝরে, এলোমেলো হাওয়া;
এখানে মনমাঝি তোর বৈঠা নিয়ে বাওয়া;
এখানে শব্দেরা ছোঁয় অনুভব রঙীন,
সামহোয়্যারইন সামহোয়্যারইন সামহোয়্যারইন...
এখানে অনাবিল পথ, দেখি শব্দমিছিল;
এখানে মেললে চোখ আকাশটা নীল;
এখানে তর্ক খুব জমে হৃদয়ের ভীড়ে,
এখানে আবেগ ঘন হয় মানুষকে ঘিরে;
এখানে ভাঙছে বাঁধ, আওয়াজ প্রতিদিন;
সামহোয়্যারইন সামহোয়্যারইন সামহোয়্যারইন...
এক বছর আগে সদস্য হয়েছিলাম সামহোয়্যারইন ব্লগে। দেখতে দেখতে এতগুলো পাতা উল্টে গেল সময়ের খাতা থেকে। এই সুবৃহৎ পরিবারের সদস্য হয়ে যতটুকু সুখদুঃখের উত্তাপ অনুভব করতে পারা, তারই কিছু অক্ষম প্রকাশ উপরের লাইনগুলোতে। আসলে সব ভালো লাগা ভাষায় প্রকাশ করার ক্ষমতা আমার নেই।
এই কথনের সুযোগে সকল বন্ধুর কাছে ক্ষমা চেয়ে নেবো, কারণ মনে মনে আমি অত্যন্ত অপরাধবোধে ভুগি... এই সময়ের মধ্যে আমার পোস্ট করা যৎসামান্য লেখায় অনেকেই নিয়মিত এসেছেন, উৎসাহ দিয়েছেন। অথচ আমি তাঁদের শব্দ-বাগানে নিয়মিত যেতে পারিনি, হারিয়ে ফেলেছি অনেক অনেক সবুজ শব্দের সম্ভার। সময়ের অভাব আমায় কুরে কুরে খেয়েছে, বিষণ্ণ করেছে, ফোঁপরা করে দিয়েছে এখানকার বিস্তীর্ণ প্রাঙ্গনে বিচরণ করার ইচ্ছেগুলোকে। এই অনিচ্ছাকৃত অপরাধে আমি ক্ষমাপ্রার্থী।
এই ব্লগের খোঁজ পাওয়াটা ছিল এক অদ্ভুত সমাপতন। আমি যে সময়ে বড় হয়েছি, একই সাথে বিবর্তিত হয়েছিল কমপিউটার। প্রথম দিকে যে ব্যাপারটা খুবই ভাবাতো, তা হলো কমপিউটারে সব কাজ কেন বাংলায় করা যাবে না। তখন খুব কম বাংলা ওয়ার্ডপ্রসেসর এসেছিল বাজারে, আর তা সহজলভ্যও ছিলো না। কম বয়সের উষ্ণ তাগিদে সেই সময় একটা ছোটোখাটো বাংলা ওয়ার্ড প্রসেসরও বানিয়ে ফেলেছিলাম। নাম দিয়েছিলাম ‘লেখা’, বিটা ভার্শানেই যার সমাপ্তি! এমন কি ফন্টোগ্রাফার নামের একটা এপ্লিকেশান সফটওয়ার যোগাড় করে বাংলা ফন্টও বানিয়েছিলাম।
এই সব ছেলেমানুষী অনেক আগের কথা। তারপর বহুদিন চলে গেছে। এমন বেশ কিছু ইচ্ছে সময়োচিত শীতঘুমে ঢলে পড়লো। বছর খানেকের কিছু আগে একদিন হঠাৎ ‘অভ্র’র খোঁজ পেলাম ওয়েবে। ডাউনলোড এবং ইন্সটল করলাম। বেশ চমৎকৃত হলাম, ইউনিকোডের দৌলতে কতকিছুই না করা যাচ্ছে। গুগলে বাংলায় সার্চ আর বাংলা উইকি... দিব্য ব্যাপারস্যাপার। আর এই বাংলাভাষা নিয়ে কাজ করায় বাংলাদেশের বন্ধুদের অসীম অবদান ভীষণই ভালো লাগার, শ্রদ্ধার। সার্চ দিয়েছিলাম গুগলে ‘ভালোবাসার কবিতা’ দিয়ে। রেজাল্টের পাতায় একটা কবিতার অসম্ভব সুন্দর কিছু শব্দমালায় চোখ আটকে গেছিল। লেখিকার নাম সুলতানা শিরীন সাজি। ক্লিক করতেই পৌঁছে গেলাম সামহোয়ারে, প্রথমবার। গুগলে খুঁজে পাওয়া সাজির সেই কবিতার সূত্র ধরেই এই জগতে প্রবেশ। বাংলায় যে ব্লগ হয় এবং এমন একঝাঁক সবুজ মানুষের কলতানে সেই প্রাঙ্গন মুখরিত হয়ে থাকে... এটা আগে জানা ছিল না, যত দেখেছি ততই অবাক হয়েছি। অজস্র মননশীল চেতনার যোগফলে প্রাপ্ত এক দিগন্তজোড়া সবুজ মাঠ আর অদ্ভুত সব রোদের হুটোপুটি সেখানে... বাংলা নিয়ে বেঁচে থাকাটা সত্যিই এক দারুণ ব্যাপার!
বিস্মিত হয়ে ভাবি, কোটি বছর আগের জন্ম নেওয়া একরত্তি প্রোটিন-প্রাণ কি কখনও ভেবেছিল তার বিবর্তন এমন একটা জগতজোড়া কমিউনিটি তৈরি করে ফেলবে? যেখানে চিন্তা ভাবনার রাশি রাশি হাইপারলিঙ্কের মধ্যে দিয়ে এক বন্ধুতার সূত্রে গাঁথা হয়ে যাবে অজস্র মানুষ। যারা প্রত্যেকেই আলাদা আলাদা রঙে প্রতিনিয়ত চিত্রিত করে তুলছে এক আকাশজোড়া ক্যানভাস, কোনো আন্তর্জাতিক সীমারেখার তোয়াক্কা না করেই, ভেঙে ফেলছে সব বাঁধ! এই বাঁধ ভাঙার আওয়াজে এক অদ্ভুত ভালো লাগা ছেয়ে ফেলে আমার আকাশ।
এগিয়ে চলুক প্রযুক্তির এমন সব উজ্জ্বল প্রাপ্তি... এগিয়ে চলুক সৌরমন্ডলের বিস্ময়কর এই নীল গ্রহটি... এগিয়ে চলুক এই নীল গ্রহের পরম প্রিয় প্রাণী প্রজাতিটি, তার উদ্দাম উচ্ছল অদম্য ইচ্ছেগুলো নিয়ে, মহাবিশ্বের মতই ক্রমাগত প্রসারিত হয়ে চলুক তার মন এবং চিন্তাশীলতা...
ইচ্ছা ছিল উপরের লিরিকটা কম্পোজ করে একটা গান তৈরি করে দেবার। যে বন্ধুরা সাহায্য করার জন্য রয়েছেন, তাদের বলাই হলো না। এমন অনেক কিছুই ভাবি, হয় না। যেমন ভেবেছিলাম বাংলা গানের একটা ডেটাবেস তৈরি করার কথা, যেখানে সমস্ত বাংলা গানের সবরকম তথ্য থাকবে, নির্মানকাল থেকে শুরু করে গায়ক, গীতিকার, সঙ্গীতকার এবং বাদ্যযন্ত্রীরাও। এমন বেশ কিছু স্বপ্ন পুষে রাখি মনের মধ্যে... কিছুই হয়তো সত্যি হয়ে ওঠে না, কিন্তু এই সব স্বপ্নগুলো মনের মধ্যে লালন করে পথ চলাই আমার জীবন... আশা রাখি কোনো এক প্রজন্মে সেগুলো সাকার হয়ে উঠবে।
সুপ্রিয় সকল বন্ধুকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা, ভালোবাসা এবং শুভকামনা... খুব ভালো থাকবেন সব্বাই। এই মহাবিশ্ব জুড়ে বয়ে যাক অবিরাম আনন্দ-কণার স্রোত..... আগামী সময় হয়ে উঠুক আরো সুন্দর, আরো আলোকিত।