somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

৭ মার্চকে অস্বীকারের সুযোগ নাই

১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদে এত বিজ্ঞ ও প্রজ্ঞাবান মানুষ থাকা সত্ত্বেও মাঝে মাঝে তাদের সিদ্ধান্তগুলো অবিশ্বাস্যভাবে অপরিণত বলে মনে হয়। আওয়ামী লীগ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধ এবং শেখ মুজিবুর রহমানকে একচেটিয়াভাবে নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করেছে—এটা যেমন সত্য, তেমনই এটাও অস্বীকার করা যায় না যে স্বাধীনতা আন্দোলনে শেখ মুজিবের ভূমিকা ছিল অপরিহার্য। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার বেশ কিছু জাতীয় দিবস, যেগুলো মূলত শেখ হাসিনার পরিবারের বিভিন্ন ব্যক্তির সাথে সম্পর্কিত, সেগুলো বাদ দিলেও ৭ই মার্চকে বাদ দেয়া হবে ভুল সিদ্ধান্ত।

৭ই মার্চ বাংলাদেশের স্বাধীনতার ইতিহাসে এক অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ দিন। শেখ মুজিবুর রহমানের প্রশাসনিক ব্যর্থতা কিংবা তার খেয়ালখুশি মতো করে রাষ্ট্র পরিচালনার কৌশল নিয়ে যতই সমালোচনা থাকুক না কেন, দেশের জন্য তার অবদানকে পুরোপুরি উপেক্ষা করা সম্ভব নয়। প্রধানমন্ত্রী ও রাষ্ট্রপতি হিসেবে তার সময়ে তিনি বহু ক্ষেত্রে ব্যর্থ হয়েছিলেন, সেটা সত্য। বাকশাল প্রতিষ্ঠা, রক্ষী বাহিনীর অত্যাচার, আইনশৃঙ্খলার অবনতি এবং দুর্ভিক্ষের জন্য তিনি দায়ী ছিলেন। তার পারিবারিক কায়দায় নির্দেশনা দেওয়ার স্টাইল—'তুমি এটা করো, তুমি ওটা দেখো'—একটি দেশের প্রশাসনিক কাঠামোর জন্য মোটেও উপযুক্ত ছিল না। এর পরিণামে দেশ একাধিক সংকটে পড়েছিল, যা আজও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠার পথে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের বর্তমান রাজনৈতিক ও সাংবিধানিক জটিলতাগুলো অনেকাংশে সেই সময়ের ভুল সিদ্ধান্তের ফল।

এখন, উপদেষ্টারা যখন শেখ মুজিবকে এককভাবে জাতির পিতা হিসেবে মানতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন, তখন তারা কোনো বিকল্প সমাধানের প্রস্তাবও দিচ্ছেন না। পৃথিবীর অনেক দেশে যেমন একক ‘জাতির পিতা’ নেই, বরং একাধিক ‘ফাউন্ডিং ফাদারস’ আছে। আমেরিকার উদাহরণই ধরা যাক। আমাদের দেশেও একই ধরনের দৃষ্টিভঙ্গি গ্রহণ করা যেতে পারে। শেখ মুজিবের পাশাপাশি হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী, এ কে ফজলুল হক, মওলানা ভাসানী, এম. এ. জি. ওসমানী, জিয়াউর রহমান— এদেরও আমাদের জাতির প্রতিষ্ঠার ইতিহাসে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। বাংলাদেশ বলতে শুধু ১৯৭১ সাল নয়; আমাদের ইতিহাস ১৯৪৭ থেকে শুরু, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন এবং পরবর্তীতে ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধ পর্যন্ত বিস্তৃত। ১৯৪৭ না হলে আমাদের দেশ আলাদা হতো না, আর ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন ছাড়া আমাদের নিজস্ব ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠা করা যেত না, যার ধারাবাহিকতায় স্বাধীনতা সংগ্রাম ও স্বাধীনতা অর্জন ঘটে।এটাও মাথায় রাখা জরুরী যে ৭৫ পরবর্তী সময়ে জিয়াউর রহমান শক্তভাবে দেশের হাল না ধরলে আমাদের স্বাধীনতা রক্ষা করাটাও কঠিন হয়ে যেতো।

গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরীও বারবার বলেছেন যে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা কেবল একজন ব্যক্তির সাথে সীমাবদ্ধ রাখা উচিত নয়, বরং বহু নেতার সম্মিলিত অবদানকে স্বীকৃতি দেওয়া উচিত। যদি বর্তমান সরকার শেখ মুজিবকে জাতির পিতা হিসেবে মেনে না নেয়, তবে তাদের অবশ্যই স্পষ্ট করতে হবে কাদেরকে তারা এই তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে চায়। পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে চলমান এই বিতর্কের এখন সমাধান হওয়ার সময় এসেছে। নতুন করে বিতর্ক সৃষ্টি করার প্রয়োজন নেই। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গঠিত এই সরকার চাইলে রাজনৈতিক প্রভাব উপেক্ষা করে স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে ইতিহাস পুনর্লিখনের সুযোগ পেতে পারে। কিন্তু শুরুতেই বিতর্কের জন্ম দিয়ে সেই সুযোগ নষ্ট করা উচিত হবে না।
সর্বশেষ এডিট : ১৭ ই অক্টোবর, ২০২৪ সকাল ১১:৩২
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছি , অবৈধ দখলদার॥ আজকের প্রতিটি অন‍্যায়ের বিচার হবে একদিন।

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:১০



ধিক ‼️বর্তমান অবৈধভাবে দখলদার বর্তমান নরাধমদের। মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশে । বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষমা চাইতে হলো ! রাজাকার তাজুলের অবৈধ আদালতে। এর চাইতে অবমাননা আর কিছুই হোতে পারেনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আম্লিগকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধে আর কোন বাধা নেই

লিখেছেন সৈয়দ মশিউর রহমান, ০৪ ঠা ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ১২:২২


মঈন উদ্দিন ফখর উদ্দিনের ওয়ান-ইলেভেনে সরকারের ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে ভারতের সহায়তায় পাতানো নির্বাচনে হাসিনা ক্ষমতায় বসে। এরপরই পরিকল্পিত উপায়ে মাত্র দুই মাসের মধ্যে দেশপ্রেমিক সেনা অফিসারদের পর্যায়ক্রমে বিডিআরে পদায়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আওয়ামী লীগের পাশাপাশি জামায়াতে ইসলামীকেও নিষিদ্ধ করা যেতে পারে ।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১২:৪৫


বাংলাদেশে আসলে দুইটা পক্ষের লোকজনই মূলত রাজনীতিটা নিয়ন্ত্রণ করে। একটা হলো স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি এবং অন্যটি হলো স্বাধীনতার বিপক্ষ শক্তি। এর মাঝে আধা পক্ষ-বিপক্ষ শক্তি হিসেবে একটা রাজনৈতিক দল... ...বাকিটুকু পড়ুন

J K and Our liberation war১৯৭১

লিখেছেন ক্লোন রাফা, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৯



জ্যাঁ ক্যুয়ে ছিলেন একজন ফরাসি মানবতাবাদী যিনি ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তান ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইন্সের একটি বিমান হাইজ্যাক করেছিলেন। তিনি ৩ ডিসেম্বর, ১৯৭১ তারিখে প্যারিসের অরলি... ...বাকিটুকু পড়ুন

এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ

লিখেছেন এ আর ১৫, ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:৪০



এবার ইউনুসের ২১শে অগাষ্ঠ ২০০৪ এর গ্রেনেড হামলার তদন্ত করা উচিৎ


২০০৪ সালের ২১ শে অগাষ্ঠে গ্রেনেড হামলার কারন হিসাবে বলা হয়েছিল , হাসিনা নাকি ভ্যানেটি ব্যাগে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×