সমস্যা হচ্ছে বাংলাদেশের প্রায় সবকিছুতেই অতি রাজনীতিকরণ হয়, এবং মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানও এই প্রভাবের বাইরে নন। আমার মতে, জিয়া বাংলাদেশের ইতিহাসে শুধুমাত্র একটি রাজনৈতিক চরিত্র নন। কেবলমাত্র স্বাধীনতার ঘোষণাদানকারী কিংবা মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে নয়, আমি মেজর জিয়াকে নিয়ে আলোচনা করতে চাই ৭৫-পরবর্তী সময়ের তাঁর ভূমিকা নিয়ে।
জিয়া ৭৫ পরবর্তী সময়ে টালমাটাল একটা পরিস্থিতিতে দেশের হাল ধরেছিলেন। সেসময় বিদেশি অপশক্তি ও দেশের অভ্যন্তরে থাকা ষড়যন্ত্রকারীদের কারণে আমাদের স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়ে। জিয়াউর রহমান দৃঢ়ভাবে দেশকে নেতৃত্ব দেন এবং স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ণ রাখেন। একইসাথে রোহিঙ্গা সংকট, পাহাড়ে অস্থিতিশীলতা কিংবা সীমান্তে সংঘাতের মতো বিষয়গুলো তিনি দক্ষতার সঙ্গে সামাল দেন। তাছাড়া বৈশ্বিক পরিসরে তিনি বাংলাদেশকে উচ্চতর একটি পর্যায়ে নিয়ে যান এবং সার্কের মতো আঞ্চলিক জোট গঠনের উদ্যোগ নেন। আজ আমাদের বৈদেশিক আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস তৈরি পোশাক খাত এবং বিদেশে শ্রমশক্তি রপ্তানির সূচনা তাঁর সময়ে হয়। তবে এসবের বাইরে দেশের সবচেয়ে বড় যে উপকারটি তিনি করেন সেটা হচ্ছে বহুদলীয় গণতন্ত্র ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করা।
ব্যক্তি জীবনে জিয়া ছিলেন প্রচণ্ড সৎ ও আদর্শবান। স্বাধীনতাউত্তর বাংলাদেশে তিনি অল্প কয়েকজন নেতার একজন, যিনি নিজেকে জনগণের সঙ্গে গভীরভাবে সম্পৃক্ত করতে পেরেছিলেন। অল্প সময়ে কর্মমুখী উন্নয়নের মাধ্যমে তিনি দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। বড়দের মুখে শোনা যায়, তাঁর খাল কাটা কর্মসূচিতে তার কোদাল হাতে নেমে যাওয়া জনগণকে দেশপ্রেমে উদ্দীপ্ত করেছিল। এছাড়া বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় পদক চালু করে এবং বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীদের প্রমোট করে তিনি অনন্য উদাহরণ স্থাপন করেন। মাত্র সাড়ে চার বছর ক্ষমতায় থাকা একজন ব্যক্তি, যার কোনো রাজনৈতিক ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল না, এই স্বল্প সময়ে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন যা এখন বাংলাদেশের অন্যতম বৃহৎ রাজনৈতিক দল।
আজ ঐতিহাসিক ৭ নভেম্বর, জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। মেজর জেনারেল জিয়াউর রহমানের রাজনৈতিক জীবন এবং রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে আত্মপ্রকাশের সূচনা হয় এই দিনে।