somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

পোস্টটি যিনি লিখেছেন

মাহবু১৫৪
জীবনে সহজেই কোন কিছু পাবার আশা করাটা বোকামী। অনেক ঘাত প্রতিঘাত পার হয়েই আসতে হয় কাংক্ষিত লক্ষে। এই পথ এত সোজা নয়। অনেক ভুল ভ্রান্তি আছে সেই পথ চলায়। হয়তো আরো অনেক কোথিন হবে সামনের পথ টুকু। তারপর ও হার মেনে নেয়ার পক্ষে আমি নই। জয়ী যে আমাকে হতেই হবে।

যখন তুমি এলে /:)/:)

১৯ শে নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১।
ফাঁকিবাজ ছাত্র হিসেবে আমার সুনাম ছিল। শুধু আমি কেন? আমার ব্যাচের বেশিরভাগ ছাত্ররই একই দশা ছিল। তাই হয়ত সবচেয়ে খারাপ ব্যাচ হিসেবে কলেজে সবাই আমাদের এক নামে চিনতো। ক্লাসে টিচার এসে রোল কল করার পরই ক্লাস থেকে আমার বের হয়ে যাওয়া ছিল সময়ের ব্যপার মাত্র। বেশ কয়েকদিন হাতেনাতে ধরাও খেয়েছিলাম কবির স্যারের হাতে। আর কি! পরে ক্লাসে সবার সামনে কান ধরিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে হয়েছিল।

ক্লাসে যে কয়েকজন মেয়ে ছিল তার মধ্যে অহনাকে বেশ ভাল লাগতো। এই ভাল লাগার পিছনে বেশ মজার একটা কাহিনী আছে। একবার ক্লাস ফাঁকি দিতে যেয়ে যথারীতি কবির স্যার এর হাতে ধরা খেলাম। সেদিন ক্লাসে কান ধরে দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে খুব ঘাড় ব্যাথা করছিল। তাই মাথা সোজা করে একটু এদিক ওদিক করছিলাম। হঠাৎ আমার এক জোড়া চোখ আটকে গিয়েছিল আর এক জোড়া চোখের ইশারায়। কতক্ষণ সেই জোড়া চোখ আমাকে দেখছিল তা জানি না তবে অদ্ভুত এক শিহরণ খেলে গিয়েছিল আমার মাঝে।

সেই জোড়া চোখের মহিমায় কিনা কে জানে! আমি এরপর থেকে ক্লাস ফাঁকি দেয়া ধীরে ধীরে কমিয়ে দিতে লাগলাম। এতে আমার ইমেজের যে বিশাল ক্ষতি হল সেটা আর না বললেও চলে। বন্ধুরা আমাকে বার বার বললেও ক্লাস ফাঁকি দিতাম না। আসলে দিতে ইচ্ছে করতো না। ক্লাসে কিংবা ক্লাসের বাহিরে আমার চোখ জোড়া বার বার কি জানি খুঁজে বেড়াতো। বার বার চেষ্টা করেও তা থামাতে পারতাম না। মনে হত কোন এক চোখের ইশারা একবার পেলে থেমে যাবে এমন ছটফটানি।

২।
অহনার সাথে ক্লাসে আমার চোখাচোখি বেশি হত। কথা খুব কম বলা হত ওর সাথে। আসলে আমি পারতাম না তার সামনে যেয়ে কথা বলতে। যতই গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস হোক না কেন, আমার দৃষ্টি আমি সরাতে পারতাম না অহনার দিক থেকে। আমার এই ব্যপারটি হয়ত ক্লাসের বেশিরভাগ বন্ধুরাই বুঝতে পেরেছিল। ওরা আমাকে দেখে মুচকি মুচকি হাসতো, কানাঘুষা করতো একে ওপরের সাথে। তবে আমাকে সরাসরি বলার সাহস পেত না কখনো। এমন ও হয়েছে পলকহীন চোখে অহনার দিকে তাকিয়ে আছি আর হঠাৎ সে আমার দিকে তাকালো। এ অবস্থায় আমি তখন না পারি দৃষ্টি ফেরাতে আবার না পারি তাকিয়ে থাকতে।

এখনো মনে আছে স্টাডি ট্যুরে গিয়েছিলাম কুমিল্লাতে। ক্লাসের সবাই গিয়েছিলাম আমরা। খুব মজা করেছিলাম সেদিন। একে তো গিয়েছিলাম কুমিল্লার প্রসিদ্ধ এলাকায় তার উপর আবার ছিল সেদিন ইকবাল স্যার এর জন্মদিন। স্যার আমাদের পুরো ট্যুরের খরচ বহন করেছিলেন। সেই আনন্দময় ভ্রমণেই বহুবার সুযোগ পেয়েছিলাম অহনার সাথে একবার কথা বলার। কিন্তু তার সামনে যেয়ে আমি কিছু বলতে পারতাম না। সব ভুলে যেতাম। একটা সংকোচ কাজ করতো নিজের মনের মাঝেই।

অহনা নিজেও হয়তো বুঝতে পারতো আমার এই অবস্থা। তাই হয়ত সে নিজেও আমার কাছে এসে কথা বলার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু সে আমার সামনে আসলেই আমি কোন কাজের ছুতোয় সে স্থান ত্যাগ করতাম। কিছুদূর যেয়ে যখন পিছন ফিরে তাকাতাম তখন দেখতাম সে আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

৩।
ইন্টারে আমার সাথেই পড়েছিল অহনা। সিট পরেছিল একই রুমে। তাও আবার আমার পিছনেই। ইন্টার পরীক্ষার শেষ দিন সব সাহস সঞ্চয় করে অহনার সাথে কথা বলেছিলাম। পরীক্ষা শেষে নিচে দাঁড়িয়েছিলাম অহনার সাথে কথা বলবো বলে। ও যখন নিচে নেমে আসলো তখন মনে হল সে আমাকেই খুঁজছে। আমি কাছে যেয়ে তার সাথে প্রায় ১০ মিনিটের মত কথা বলেছি। আমার বহু কাংক্ষিত ১০ মিনিট। মনে হচ্ছিল এই ১০ মিনিট যেন ১০ সেকেন্ডে শেষ হয়ে গিয়েছিল! তার কাছ থেকে জানতে চেয়েছিলাম এখন এই অবসর সময়ে কি করবে। ভেবেছিলাম সে উত্তর দিবে। কিন্তু একটা রহস্যময় হাসি দিয়ে সেদিনের মত সে বিদায় নিয়েছিল। আমি এই হাসির কারণ উদ্ধার করতে পারি নি। তবে যাওয়ার আগে আমাদের মোবাইল নম্বর আদান প্রদান করতে ভুল হয় নি।

ফোন নম্বর থাকলেও তাকে কখনো ফোন করা হয় নি। মাঝে মাঝে মেসেজ দিলে সে ব্যাক করতো অনেক দেরিতে। যা আমার কাছে কিছুটা বিরক্তিকর মনে হত। তাই হয়ত ফোন দিতাম না।
এরপর বিভিন্ন সরকারি ইউনিভার্সিটিতে ভর্তির জন্য দৌড়াদৌড়ির কারণে ইন্টারের সেই প্রথম ভাললাগা একেবারেই যেন এক জায়গায়ই থেমে ছিল।

৪।
১ বছর পর কোনো এক বিয়ে বাড়িতে
আমার বড় বোনের বান্ধবীর বিয়েতে দাওয়াত পেয়ে আসলাম। তেমন কাউকে চিনি না বলে বসে আছি কোণার কোন এক চেয়ারে। চারপাশে চোখ বোলাতে যেয়েই খেয়াল হল স্টেজে লাল পাড়ের শাড়ি পরা একটি মেয়ে কনের পাশে বসা আছে। আমার চোখ আটকে গেল মুহুর্তে এর জন্য। বেশ অবাক হলাম অহনাকে এভাবে দেখে। ভাবিনি তাকে এভাবে দেখবো। আমার সেই প্রথম ভাললাগা।

আস্তে আস্তে স্টেজের দিকে এগিয়ে যেতেই অহনা দেখতে পেলো আমাকে। হাসি মুখে এগিয়ে যেতেই
অহনাঃ আরে! কি খবর?
আমিঃ ভাল আছি। তোমার কি খবর?
অহনাঃ ভাল।
আমিঃ তা এতদিন কই ছিলে? একটা ফোনও তো করতে পারতা! তাও কর নি।
অহনাঃ আসলে .........।। আমার ............।
আমিঃ থাক। আর বলা লাগবে না।
অহনাঃ নাহ! আসলে.........।। আমি গত......।।
আমিঃ তোমাকে যে কত মিস করেছি তুমি চিন্তাও করতে পারবে না।

“এই অহু, শুনছো, এদিকে এসো। আম্মা ডাকছে”।

আমিঃ কে ডাকলো?
অহনাঃ (ব্যতিব্যস্থ হয়ে) আমার স্বামী!
আমিঃ কী!! তুমি বিয়ে করলা কবে?

অহনাঃ প্রায় ৪ মাস হল। তোমার সাথে কথা বা দেখা করার কোন সুযোগ পাই নি। খুব ব্যস্থাতায় কেটেছে এই কয়েকটা মাস।

আমি নির্বাক তাকিয়ে ছিলাম অহনার দিকে। কোন কথা বলার কিংবা শোনার ইচ্ছে বা শক্তি কোনটাই ছিল না।

আমার সাথে কথা বলে বিদায় নিয়ে কখন যে অহনা আমার দৃষ্টি সীমার বাহিরে চলে গেল তা খেয়াল করি নি। শুধু অনুভব করেছি মনের গহীনে লুকিয়ে থাকা ফুলের অংকুরেই বিনষ্ট হওয়া।
সর্বশেষ এডিট : ২১ শে নভেম্বর, ২০১১ দুপুর ১২:০৩
১৬টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

Grameen Phone স্পষ্ট ভাবেই ভারত প্রেমী হয়ে উঠেছে

লিখেছেন অপলক , ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ দুপুর ২:৪৯



গত কয়েক মাসে GP বহু বাংলাদেশী অভিজ্ঞ কর্মীদের ছাটায় করেছে। GP র মেইন ব্রাঞ্চে প্রায় ১১৮০জন কর্মচারী আছেন যার ভেতরে ৭১৯ জন ভারতীয়। বলা যায়, GP এখন পুরোদস্তুর ভারতীয়।

কারনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

কম্বলটা যেনো উষ্ণ হায়

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ১৮ ই ডিসেম্বর, ২০২৫ বিকাল ৩:৫৭


এখন কবিতার সময় কঠিন মুহূর্ত-
এতো কবিতা এসে ছুঁয়ে যায় যায় ভাব
তবু কবির অনুরাগ বড়- কঠিন চোখ;
কলম খাতাতে আলিঙ্গন শোকাহত-
জল শূন্য উঠন বরাবর স্মৃতির রাস্তায়
বাঁধ ভেঙ্গে হেসে ওঠে, আলোকিত সূর্য;
অথচ শীতের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইউনুস সাহেবকে আরো পা্ঁচ বছর ক্ষমতায় দেখতে চাই।

লিখেছেন সৈয়দ কুতুব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ রাত ১:৪৪


আইনশৃংখলা পরিস্থিতির অবনতি পুরো ১৫ মাস ধরেই ছিলো। মব করে মানুষ হত্যা, গুলি করে হত্যা, পিটিয়ে মারা, লুট হওয়া অস্ত্র উদ্ধার করতে না পারা, পুলিশকে দূর্বল করে রাখা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

লিখেছেন নতুন নকিব, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ৯:০৬

হাদির যাত্রা কবরে, খুনি হাসছে ভারতে...

শহীদ ওসমান বিন হাদি, ছবি অন্তর্জাল থেকে নেওয়া।

হ্যাঁ, সত্যিই, হাদির চিরবিদায় নিয়ে চলে যাওয়ার এই মুহূর্তটিতেই তার খুনি কিন্তু হেসে যাচ্ছে ভারতে। ক্রমাগত হাসি।... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?

লিখেছেন এ আর ১৫, ১৯ শে ডিসেম্বর, ২০২৫ সকাল ১০:০৩

হাদিকে মারল কারা এবং ক্রোধের আক্রশের শিকার কারা ?


হাদিকে মারল জামাত/শিবির, খুনি নাকি ছাত্রলীগের লুংগির নীচে থাকা শিবির ক্যাডার, ডাকাতি করছিল ছেড়ে আনলো জামাতি আইনজীবি , কয়েকদিন হাদির সাথে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×