somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছেলেবেলার দিনগুলি - স্কুলে স্যারদের নিকনেম এবং কৈশোরের দুষ্টুমী

১৭ ই সেপ্টেম্বর, ২০০৬ রাত ১০:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

[গাঢ়](ব্যাক্তিগত পোস্ট)[/গাঢ়]

স্কুল বদলাতে বদলাতে আমার দ্রুত বন্ধুত্ব করার একটা সহজাত দক্ষতা গড়ে উঠেছিল। কলেজিয়েট স্কুলে নবম শ্রেনীতে ভর্তি পরীক্ষার পর একটা নতুন সেকশন করা হয়। E সেকশন নামের সে সেকশনটায় সবাই নতুন।

ক্লাস শুরুর প্রথম দিনেই পরিচয় হল, নাঈম, আবির, ফয়সাল এর সাথে। শুরুর দিন থেকেই জিগরী দোস্ত হয়ে গেলাম সবাই। ফয়সাল ছিল বেশ চুপচাপ টাইপের। অনেক পয়সা ওয়ালার পোলা ছিল, সেটা বোঝা যেত তার সিল্কি স্কুল ড্রেসের মসৃনতায়। আবিরের বাবা ছিল ব্যাঙ্ক কলোনী হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক। বাবা মায়ের একমাত্র ছেলে। কিন্তু খেলাধুলায় ভীষন ভাল ছিল যদিও। আবির আর ফয়সালের বাসা ছিল একই দিকে। আমার আর নাঈমের বাসা ছিল একই দিকে। আমি আর নাঈম একসাথে স্কুলে আসা যাওয়া করতাম। সেজন্য আমাদের মধ্যে সখ্যতাও গড়ে ওঠে অনেক বেশী।

স্কুলে ঢুকে আবিষ্কার করলাম এই স্কুলের পোলাপাইন পাজির পা ঝাড়া। অল্পদিনেই আয়ত্বে চলে আসল স্কুলের স্যারদের নিক নেম গুলো। আমাদের যিনি ক্লাশ টিচার ছিলেন, তিনি ছিলেন ভীষন শুকনা। সামনের কয়েকটি দাঁতও ছিল না। তাকে আমরা সবাই ডাকতাম বোতল বলে। নামের শানে নুযুল জানি না। তবে বোতল ডাকলে তার রিয়্যাকশন ছিল দেখার মত। একবার কে যেন দুপুরের টিফিন পিরিয়ডের পর বোতল বলে ডাক দিল। আর দেখে কে, বোতল ছুটে আসল ক্লাশে। এসেই তো চেঁচামেচি। 'এ্যাঁ আমাকে বোতলের মত লাগে? ডু আই লুক লাইক অ্যা বোতল? ...' ব্যাস পোলাপাইনতো আরো মজা পাইল। এরপর থেকে প্রতিদিন ডাকা শুরু করল তারে।

আরেক স্যার ছিল। বাংলায় মাস্টর্াস। ভাল কবিতা লেখতেন। আমাদের বাংলা ক্লাস নিতেন। পড়াতেনও ভাল। কিন্তু দেখতে ছিলেন ছোটখাট। গাল দুটো আপেলের মতো লাল। ব্যস তার নাম হয়ে গেল আপেল। তাকে এই নামে ডাকলেও ভীষন ক্ষেপতেন।

আমাদের ফিজিক্স পড়াতেন এক শিক্ষক। তার এক মেয়ে ছিল আমাদের বয়সী। আমার এক বন্ধু অয়ন সেই মেয়ের প্রেমে হাবুডুবু খেত। সেই স্যার ক্লাসে আসলেই শুরু হতো ফিচকামী।

আমাদের গোঁড়ার শিক্ষা দেন যে শিক্ষকরা তাদের কিভাবেই না আমরা হেয় করতাম। স্বল্প বেতনে, টিউশনীর টাকার উপর ভর করে টেনে টুনে সংসার চালাতেন সেই সব মানুষ গড়ার কারীগরেরা। আজ তাই তাদের সাথে দেখা হলে সম্মানে মাথা নুয়ে আসে আমার।

সেই সময়টায় ভীষন পাজি হয়েছিলাম আমরা। নিয়মিত স্কুল পালানো। এখানে সেখানে যাওয়া, লুকিয়ে বিড়ি সিগারেট টানা, বিভিন্ন বারে ঢু মারা, পতেঙ্গায় নিয়মিত সমুদ্র ভ্রমন এসব করে বেড়াতাম। কিভাবে যে ফুড়ুৎ করে শেষ হয়ে গেল স্কুলের দিনগুলি টেরই পাইনি।

বন্ধুদের সাথে বিচ্ছেদ ঘটল মেট্রিকের পর পর। কিন্তু এক বন্ধুর ঘটনা না লিখলেই নয়। যখন বুয়েটে পড়ি তখন আবিরের সাইনাসের অপারেশন হবার কথা। সেটা করতে গিয়ে কোন নার্ভ যেন কেটে ফেলে তারা আর চিরতরে হারিয়ে যায় বাবা মা একমাত্র সন্তান হাস্যোজ্জল আবির। আমরা ঘটনাটা শুনে এতোটাই শকড হয়েছিলাম যে কি করব বুঝে উঠতে পারেনি।

দুরে দুরে চলে যায় বন্ধুরা। যোজন যোজন দুরে...

(চলতে পারে)
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

যুক্তরাষ্ট্রে বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ ঠেকাতে পুলিশি নির্মমতা

লিখেছেন এমজেডএফ, ০২ রা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১১



সমগ্র যুক্তরাষ্ট্র জুড়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে বিক্ষোভের ঝড় বইছে। যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে ফিলিস্তিনের পক্ষে বিক্ষোভ কর্মসূচী অব্যাহত রয়েছে। একাধিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বিক্ষোভ দমনের প্রচেষ্টা চালালেও তেমন সফল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছাঁদ কুঠরির কাব্যঃ ০১

লিখেছেন রানার ব্লগ, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৫



নতুন নতুন শহরে এলে মনে হয় প্রতি টি ছেলেরি এক টা প্রেম করতে ইচ্ছে হয় । এর পেছনের কারন যা আমার মনে হয় তা হলো, বাড়িতে মা, বোনের আদরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হিটস্ট্রোক - লক্ষণ ও তাৎক্ষণিক করণীয়

লিখেছেন ঢাকার লোক, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:০৭

সাধারণত গরমে পরিশ্রম করার ফলে হিটস্ট্রোক হতে পারে। এতে দেহের তাপমাত্রা অতি দ্রুত বেড়ে ১০৪ ডিগ্রী ফারেনহাইট বা তারও বেশি হয়ে যেতে পারে।

হিটস্ট্রোক জরুরি চিকিৎসা প্রয়োজন। চিকিৎসা... ...বাকিটুকু পড়ুন

আল্লাহকে অবিশ্বাস করার সংগত কোন কারণ নাই

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১০:৪৩



সব কিছু এমনি এমনি হতে পারলে আল্লাহ এমনি এমনি হতে সমস্যা নাই। বীগ ব্যাং এ সব কিছু হতে পারলে আল্লাহও হতে পারেন। সব কিছুর প্রথম ঈশ্বর কণা হতে পারলে আল্লাহও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×