somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মেটামরফসিস অ্যাট বাঙলা কলেজ (২)

০৬ ই জুন, ২০০৭ দুপুর ২:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(আগের পর্বের পর...)

রেজাল্ট হবার কিছুদিন পরের ঘটনা। আমি তখন ঢাকায়। আব্বা, আম্মা আর ছোট ভাই তখনও চিটাগাংয়ে। মেট্রিক পরীক্ষার মার্কশীট এসেছে। স্কুল থেকে আব্বার সেটা তুলে নিয়ে আসবার কথা। সেদিন দুপুরে আব্বা ফোন করে জানালেন মার্কশীট আনতে গেলে তাকে স্কুলের যে লোক দায়িত্বে ছিলেন তিনি কথা শুনিয়েছেন। কি বলেছেন সেটা আর নাই টানি, কিন্তু আব্বা আমাকে দায়ী করে বললেন, ‘তোমার জন্য আজকে কথা শুনতে হল!’

বাঙলা কলেজে ভর্তি হবার পর সবার ভাব ভঙ্গী পাল্টে গেল আমার সাথে। যে যেমন পারে উপদেশ দিতো। আমার আম্মা এমনিতে খুব ঠান্ডা মানুষ। সেই আম্মাও একদিন আমাকে শুনিয়ে দিলেন যে আমাকে দিয়ে কিছু হবে না।

আজ যখন এত বছর পর সেগুলো নিয়ে ভাবছি তখন কতগুলো ব্যাপার আবিষ্কার করছি। তখন এই বাস্তবতার উপলব্ধি আমাকে ভাবতে বাধ্য করেছিল যে পৃথিবীতে আসলে সব কিছু অর্জন করে নিতে হয়। মেধা জিনিসটা চর্চার একটা জিনিস। আপনা আপনি খুব কমই সেটা আয়ত্বে আসে – তাকে আয়ত্বে আনতে হয়।

আরেকটা উপকার হয়েছিল আমার। ভাল স্কুল আর ভাল কলেজে বেশীর ভাগ ছেলে পড়াশুনা ছাড়া আর কিছু বোঝে না। স্কুলে একটাও ছেলে দেখিনি যে পড়াশোনার বাইরে কিছু করত। ওয়েল করত: যেমন স্কাউটিং বা বইপড়া এসব। কিন্তু একেবারে আউট-অফ-দ্যা-বক্স কিছু কেউ করত না। বাংলা কলেজে ঢুকে দেখলাম পড়ালেখায় সেখানে সবাই সাধারন মানের। কিন্তু তাদের অনেকেরই অনেক বিষয়ে পারদর্শীতা আছে। আমি এদের সাথে মিশে মিশে বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহী হয়ে উঠলাম।

প্রথম বন্ধু পাই প্রলয়কে। একটা বির্তক প্রতিযোগীতার বাছাই পর্বে দেখা প্রলয়ের সাথে। আমার বির্তক খুবই বাজে হয়েছিল। কিন্তু প্রলয়েরটা অসাধারন, অসাধারন ছিল। ছেলেটা গলা কাপিয়ে টুকরো কবিতা আবৃত্তি করে এমন একটা বির্তক দিল যে আমরা মুগ্ধ। তারপরের দিন দেখি ব্যাটা মাঠের ধারে বসে আছে। আমি গিয়ে কথা বললাম। সে থেকেই বন্ধুত্ব শুরু। পরে আমরা দুজন আবৃত্তি নিয়ে বহুদুর গিয়েছি। সেটা আরেকটু পরে আসবে।

প্রথম বর্ষের শুরুর দিকে ইন্টারমিডিয়েটের জন্য রেজিষ্ট্রেশন করতে হয়। রেজিষ্ট্রেশন করছি, দেখি আমার পাশের ছেলেটা আমার জন্মতারিখ দেখে দেখে বসাচ্ছে। মেজাজ গেল খারাপ হয়ে। বললাম, কি আশ্চর্য আমার জন্ম তারিখ তুমি লিখছ কেন? সেও মহা বিরক্ত হয়ে আমাকে বলে, তোমারটা আমি লিখব কেন? পরক্ষনে দুজনের জন্মদিন যে একই দিনে সেটা বুঝতে হো হো করে হেসে উঠলাম। পরিচয় হল জয়ের সাথে।

পরিচয়ের পরই টের পেলাম অতিরিক্ত কথা বলা এবং নিজেকে বিরাট বড় করে দেখা একটা চরিত্র হচ্ছে জয়। অনেকে তার দুটো স্বভাবের জন্য তেমন পছন্দ করে না। তবে যখন জানলাম এই ছেলে কিশোর পত্রিকায় লেখে তখন ভাবলাম নাহ এই ছেলের সাথে যোগাযোগ রাখতে হবে যদি লাইন ঘাট করে কিছু পাবলিশ করা যায়।

তখন অবশ্য আমি আর প্রলয় দুজনেই কবিতা লেখতাম। আর আমাদের কবিতার একমাত্র পাঠক ছিল জয়। জয় খুব আশ্বাস দিত খুব ভালো হচ্ছে। পরে জয়ের পরামর্শে একটা লিডিং নিউজ পেপারে (এখন নাম মনে পড়ছে না, সম্ভবত আজকের কাগজ হবে) যাই লেখা জমা দিতে। এ ব্যাপারে পরে আরো আসবে।

একদিন ঠিক করে লেখা জমা দিতে তিনজন মিলে চলে গেলাম মতিঝিল সেই পত্রিকা অফিসে। বাসে ঝুলে হাত পা ছুঁড়তে ছুঁড়তে আনন্দ করে গেলাম আমরা। তখন প্রলয় হাল্কা এমেচারিস সিগারেট ফুঁকত। আর আমি এক দুইটা খেয়েছি – কিন্তু এমেচারিস ও হয়ে উঠতে পারিনি। তো আমি পাকনামী করে সিগারেট কিনে ধরালাম। সঙ্গে সঙ্গে জয় আর প্রলয়ও।

এখন সেসব কথা ভাবলেই খুব অনুপ্রানিত বোধ করি। সদ্য কৈশোর পেরোনো তারুন্যের অনুভুতিটা জেগে ওঠে।

এভাবেই শুরু হয় আমার মেটামরফসিস।

(পরের পর্বে থাকবে আবৃত্তি সংগঠন নিয়ে কাজ কর্ম্ম আর আমার আরো পরিবর্তন)
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

একটি ছবি ব্লগ ও ছবির মতো সুন্দর চট্টগ্রাম।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ৮:৩৮


এটি উন্নত বিশ্বের কোন দেশ বা কোন বিদেশী মেয়ের ছবি নয় - ছবিতে চট্টগ্রামের কাপ্তাই সংলগ্ন রাঙামাটির পাহাড়ি প্রকৃতির একটি ছবি।

ব্লগার চাঁদগাজী আমাকে মাঝে মাঝে বলেন চট্টগ্রাম ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

×