২৯ ও ৩০ জানুয়ারি দু'দিনে বিরোধীদলের
পুর্বঘোষিত মিছিলে গুলি চালিয়ে ৫
জনকে হত্যা করা হয়েছে । 'হঠাত্ কেন
পাল্টাপাল্টি কর্মসূচী দিয়ে মাঠ গরম
করলো সরকার ? মিছিলে গুলি করে কেন
পাঁচটি প্রাণ কেড়ে নিলো হায়েনারুপী পুলিশ ?' এই প্রশ্নগুলো এখন দেশের মানুষের মনে বারংবার
আন্দোলিত হচ্ছে ।
সরকার কি ভেবেছে মিছিলে গুলি চালালেই
থেমে যাবে মানুষের মিছিল ! আসলেই কি তাই ?
বিশ্বাস হচ্ছিলো না । আজকের প্রধানমন্ত্রীও
তো স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন করেছেন । তার তো ভালোভাবেই জানার
কথা মিছিলে গুলি চালিয়ে গদি রাখতে পারেননি আইয়ুব
খান , ইয়াহিয়া খান , এরশাদ । এমনকি তার নিজের
বিগত সরকারও । শুধু বাংলাদেশ নয় , বিশ্বের
কোথাও মিছিলে গুলি চালিয়ে মানুষের
প্রতিবাদী কন্ঠ স্তব্ধ করা যায়নি । সাম্প্রতিক আলোচিত তিউনিসিয়া , মিশর এর জ্বলজ্যান্ত প্রমাণ
। এমনকি ২৯
তারিখে মিছিলে গুলি করে চারজনকে হত্যার পর ৩০
তারিখে দেশের বিভিন্ন স্থানে যেসব মিছিল
সমাবেশ হয়েছে , সেগুলোতে জনতার
বাঁধভাঙ্গা উপস্থিতিই প্রমাণ করেছে গুলির অসাড়তা । অবশ্য স্বৈরাচার ও ফ্যাসিবাদ
কখনো ইতিহাস মানে না । এবং সে কারনেই
ঘটে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি । কিন্তু এবারের এই হত্যাগুলো শুধু সরকারের
ফ্যাসিবাদী চরিত্রের কারণে নয় । তার সাথে যুক্ত
হয়েছে আরো একটি কার্যকারণ । ২৯ তারিখেই
দেশের স্বার্থসংশ্লিষ্ট
একটি বিষয়ে ভারতকে সুবিধা দিয়ে একটি চুক্তি করেছে সরকার
। রাজনৈতিক দলগুলো এবং জনগনের দৃষ্টিকে অন্যদিকে আটকে রাখার জন্যই এই
হঠকারিতা এবং গুলি করে মানুষ হত্যা । সংবাদমাধ্যমের খবর থেকে জানা যায় , সুন্দরবন
সংলগ্ন বাগেরহাটের রামপালে বহুল আলোচিত
কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনে বাংলাদেশ-
ভারত যৌথ উদ্যেগে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে ২৯
জানুয়ারি । বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড
(বিপিডিবি) এবং ভারতের ন্যাশনাল থর্মাল পাওয়ার কোম্পানি (এনটিপিসি) লিমিটেডের
মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয় ।
২০১০ সালের ১১ জানুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ
হাসিনা ভারত সফরকালে দু দেশের সরকার প্রধানের
উপস্থিতিতে এই কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
নির্মানের একটি এমইউ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বাংলাদেশের পিডিবি এবং ভারতের জাতীয় বিদ্যুৎ
সংস্থা ন্যাশনাল থর্মাল পাওয়ার লিমিটেড
(এনটিপিসি) যৌথভাবে বাগেরহাটের রামপালের
গৌরম্ভা এলাকায় ১৩২০ মেগাওয়াট সম্পন্ন এই
প্রকল্প বাস্তবায়নের চুক্তি করে। এটি ২০১৫ সালের
মধ্যে উৎপাদনে আসার কথা রয়েছে । ভারত সরকার যে অর্থ এখানে ব্যয় করবে তাতে ১৪
শতাংশ সুদ দিতে হবে ।
প্রতি মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনে খরচ হবে ১৫
কোটি টাকা ।
এতে বাংলাদেশের লাভের চেয়ে ক্ষতির
আশঙ্কা বেশি বলে বিশেষজ্ঞরা দাবি করেছেন । এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ১৭০ ডলার দরে প্রতি টন
কয়লা ভারত থেকে কিনতে হবে যা বিশ্ব বাজারের
স্বাভাবিক দামের চেয়ে অনেক বেশি ।
বাংলাদেশের বড়পুকুরিয়া কেন্দ্র থেকে উত্তোলিত
কয়লা মাত্র ৮৪ থেকে ৮৫ ডলারে বিক্রি হয় ।
এছাড়া বিশ্ব বাজারে বর্তমানে ১০০ ডলারে উৎকৃষ্টমানের কয়লা পাওয়া যায় ।
দেশে প্রায় তিনশ কোটি টন কয়লা মজুদ থাকার পরও
তা ব্যবহার
না করে কয়লা আমদানি কতটা যুক্তিসম্মত
সেটা নিয়ে ইতোমধ্যেই বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন
উঠেছে । তাছাড়া বড় পুকুরিয়া কয়লা বিদ্যুৎ
কেন্দ্রে প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম পড়ে প্রায়
চার টাকা । সেখানে নতুন এই কেন্দ্রে উৎপাদিত
প্রতি কিলোওয়াট বিদ্যুতের দাম পড়বে ১৪ থেকে ১৫
টাকা , জানিয়েছে পিডিবি ।
ইতোমধ্যে এই প্রকল্পের জন্য এক হাজার ৮০০ একর জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে । এ কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কালো ও সীসাযুক্ত
ধোঁয়া আকাশে ভেসে থাকার কারণে গোটা সুন্দরবনের
পরিবেশ ক্ষতিগ্রস্ত
হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন । সুন্দরবনের
পাশে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র না করার
দাবি জানিয়েছেন দেশের বিশিষ্ট পরিবেশবিদগন । তারা সুন্দরবনের পরিবেশ ও জীববৈচিত্রের রক্ষার
জন্য ঝঁকিপূর্ণ এলাকায় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র
স্থাপন না করে পরিবেশ জনিত প্রভাব এবং জনমত
যাচাই সাপেক্ষে অন্য কোনো স্থান নির্বাচনের
দাবি জানিয়েছেন । ভারতকে সুবিধা দিয়ে চুক্তি করার সময়
দেশে অস্থিরতা তৈরি করার সরকারের এই কৌশল
বেশ পুরনো । বিএসএফ এর নির্যাতন , আকাশপথ
পানিপথ সড়কপথে বিনা মাশুলে ট্রানজিটের
নামে করিডোর প্রদান , দেশকে পানিবিহীন
মরুভূমিতে পরিনত করার প্রক্রিয়া , জরিপের নামে ভূমি প্রদান । আর কী দিলে তবে শোধ
হবে বন্ধুত্বের ঋণ ? আর কত নতজানু হবে সরকার ?

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




