পরিচালক হিসাবে ঋতি্বকের তুলনা ঋতি্বকই। তার পূর্ব ও নাই পর নাই। সিনেমার বাঙলা আঙ্গিক বলতে তিনিই একমাত্র। সত্যজিৎ বলছিলেন, ঋতি্বক এমন এক পরিচালক যার কাছে হলিউডের অস্তিত্বই যেন নাই। আসলেই তাই।
ঋতি্বক পাগলা, ঋতি্বক মাতাল, ঋতি্বক চমকে দেওয়া। তাকে অনুকরণ বা অনুসরণ করা সম্ভব হয়নি আমাদের মেকারদের পক্ষে। কারণ ঋতি্বকের থেকে ভাল ডিরেক্টর হয়তো আছে। কিন্তু ঋতি্বকের সাহস আর ঋতি্বকের বেদনা শুধু তারই।
যাই হোক ঋতি্বক ঘটকের অযান্ত্রিক আবার দেখলাম। যতবারই দেখি ততোবারই নতুন ভাবে ভাবতে হয়। সিনেমার প্রিন্টটা খুব জুতের নয়। প্রথমবার ভাল প্রিন্টে বড় পর্দায় দেখার ভাগ্য হয়েছিল। কিন্তু পরে খারাপ প্রিন্টেই আবার দেখতে হয়েছে। অযান্ত্রিক কী? যন্ত্রের মানবায়ন, মানুষের যন্ত্রায়ন? জগদ্দল কি পুরাতন ব্যাপার? জগদ্দল কি উপনিবেশ, সামন্ততন্ত্র, নাকি ঐতিহ্য? একটি ভাঙ্গা গাড়ির সঙ্গে মানুষের সম্পর্কে দৌড় কতদূর?
সুবোধ গোষের গল্প অবলম্বনে ঋতি্বক এই ছবিটি বানিয়েছিলেন 1958 সালে। গল্পটা আমি পড়েছি। গল্পকে কিভাবে সিনেমা করতে হয় তা এই সিনেমা থেকে শেখা দরকার। গল্পের কেন্দ্রে আছে এক ভাঙ্গা মোটর কার তার নাম জগদ্দল। জগদ্দলের চালক বিমল। বিমলের সঙ্গে তার বন্ধুত্ব। এই গাড়ির সঙ্গে তার সম্পর্ক। গাড়ির চালানোর নানা অভিজ্ঞতা, নানা ঘটনা আর জগদ্দলের ক্ষয় নিয়ে কাহিনী। শেষ পর্যন্ত জগদ্দলের মৃতু্য ঘটে। আসলেই সে এক করুণ ও মর্মান্তিক মৃতু্য।
আছে বেশ কয়েকটি উপকাহিনী। বিয়ে বাড়িতে যাওয়া মামা ভাগনে। পাড়ার দাদার সঙ্গে বাড়ি পালানো মেয়ে। তার সঙ্গে বিমলের রহস্যময় সম্পর্ক। আরও কতকিছু। শুরু থেকেই আদিবাসী উৎসবের ঢাক বাজতে থাকে। আর শেষ পর্যন্ত সেই ঢাক সরব হয়ে ওঠে। সিনেমার সাবকনশাস জুড়ে থাকে আদিবাসী উৎসবের ঢাক। এ হলো যন্ত্রের প্রতি মানুষের সেই ভালোবাসার কাহিনী যখন মানুষ যন্ত্রকে প্রকৃতির একটি অংশ হিসাবে গ্রহণ করেছিল। যন্ত্রের যন্ত্রত্ব যখন তাকে মানুষের ভালবাসা থেকে বঞ্চিত করতে পারেনি।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।



