somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ব্লগের মডারেটররা কেন ব্লগের নিয়ন্ত্রণ চান?

১২ ই জানুয়ারি, ২০১২ রাত ৯:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

৩ জানুয়ারি আমি একটি পোস্ট দিয়েছিলাম সামথিং ইজ রটেন ইন দ্য স্টেট অব ডেনমার্ক... মুক্তমতের টুটি চেপে ধরার আয়োজন কতদূর? শিরোনামে। পোস্টে মন্তব্য করেছিলেন, জীবনানন্দের ছায়া। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, ব্লগ দিবসে বিভিন্ন ব্লগের মডারেটর ও ব্লগ বিশেষজ্ঞরা প্রথম আলোয় যে লেখাটি লিখেছিলেন তাতে 'কিভাবে ব্লগে মুক্তমতের কন্ঠরোধের' বিষয়টি এসেছে। সে প্রশ্নে আসা যাবে, তার আগে কিছু কথা বলে নেই।
সত্যিকার অর্থে ১৯ ডিসেম্বর ব্লগ দিবসের যে প্রতিপাদ্য ঠিক হয়েছিল তা আমার জন্য খুব কনফিউজিং ছিল। খেয়াল করুন, ব্লগ দিবসের প্রতিপাদ্য ঠিক হয়েছিল, 'গণজাগরণে সোশাল মিডিয়া ও সাইবার আইন'। আমরা সকলেই জানি, গণজাগরণে সোশাল মিডিয়ার ভূমিকা আছে। আরব দেশগুলোর আন্দোলনে সোশাল মিডিয়া কিভাবে কাজ করেছে তা আমাদের সকলের জানা। শুধু আরব দেশগুলোই নয়, অকুপাই ওয়ালস্ট্রিট মুভমেন্টে সোশাল মিডিয়ার ভূমিকার কথাও আমরা জানি। ভারতে আন্না হাজারের আন্দোলনেও সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলো বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশে সাম্প্রতিক তিতাস কেন্দ্রিক ঘটনাবলীতে স্পষ্ট সামাজিক মাধ্যম ও ব্লগগুলো কত শক্তিশালী ভূমিকা পালন করেছে। এসব উদাহরণ থেকে গণজাগরণে সোশাল মিডিয়া প্রতিপাদ্য হিসেবে দারুণ হতে পারতো। কিন্তু দেখা গেল এর সঙ্গে সাইবার আইন কথাটা জুড়ে বসেছে। কোথায় গণজাগরণ, কোথায় সাইবার আইন। পরস্পর বিরোধী দুটি জিনিশকে এক করার এমন খেয়াল ব্লগ দিবসের আয়োজকদের মাথায় কীভাবে এলো কে জানে। প্রশ্নের উত্তর খোঁজা জরুরি। বোকার মতো প্রশ্ন করি, আরব দেশগুলোতে সাইবার আইন শক্তিশালী বলেই কি সেখানে গণজাগরণ হতে পরেছে? আমাদের দেশে গণজাগরণের পথ খুলতে হলে কি সাইবার আইন জরুরি? নাকি, সাইবার আইন ছাড়া গণজাগরণ সম্ভব নয়? ১৩টি কমিউনিটি ব্লগ ও ব্লগ সদৃশ ওয়েবসাইটের কর্মকর্তারা মিলে এই প্রতিপাদ্য ঠিক করেছেন। ভাবতে অবাক লাগছে, এই দুটি জিনিশকে যে জোড়া দেওয়া সম্ভব সেটি তারা কীভাবে ভাবলেন?
আমার মতে, তারা বোকার মতো ভাবেননি। বরং একটা চালাকিই করেছেন। কৌশলে সরকারের ইচ্ছার প্রকাশ ঘটিয়েছেন ব্লগ দিবসের প্রতিপাদ্যে। এর সমর্থন মেলে প্রথম আলোতে প্রকাশিত লেখায়। সেখানে শুরুতে ব্লগ দিবসের মাহাত্ম্য বর্ণনা করা হয়েছে। পৃথিবীতে সামাজিক মাধ্যম কী করেছে তাও বলেছেন। সেই বর্ণনার সঙ্গে আমার খুব বেশি দ্বিমত নেই। কিন্তু এর পরেই বেশ মজা করেছেন লেখকরা।
তারা লিখেছেন, 'সাইবার পরিসরের অবাধ স্বাধীনতার সুযোগে ব্লগের অপব্যবহার এবং সাইবার অপরাধের পরিমাণও লক্ষণীয় হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।' বেশ গুরুত্বপূর্ণ লাইন। সাইবার পরিসরের অবাধ স্বাধীনতার সুযোগে ব্লগের অপব্যবহার বেড়েছে? এখানে স্পষ্ট যে লেখকরা 'ব্লগের অপব্যবহারে'র পেছনে ‌'সাইবার পরিসরের অবাধ স্বাধীনতা'কে দায়ী করছেন। তাহলে সমাধান কী? সাইবার পরিসর কমানো? স্বাধীনতা ছেঁটে ফেলা?
আলোচনা হচ্ছে ব্লগ নিয়ে, ব্লগের মডারেটররা কথা বলছেন, কথার বিষয় ব্লগ। ধরে নিতে হয় সাইবার পরিসর বলতে তারা ব্লগগুলোকেই বোঝাচ্ছেন। আরও স্পষ্টভাবে বললে বাংলাব্লগগুলোর কথা বলছেন। বাংলা ব্লগ বলতে মুখ্যত আমি কমিউনিটি ব্লগগুলোকেই চিনি। সামহয়ার, সচলায়তন, আমারব্লগ, নাগরিক ব্লগ থেকে শুরু করে অনেক ব্লগ তৈরি হয়েছে। আমার মতে, বাংলা ব্লগগুলোর পরিবেশ দিনকে দিন উন্নত হচ্ছে। ব্লগের অপব্যবহার নয়, ভাল ব্যবহার বাড়ছে। একই সঙ্গে সাইবার অপরাধ কমছে। দুএকটি ব্যতিক্রম বাদ দিলে কমিউনিটি ব্লগগুলোতে অপরাধ ঘটার কোনো উপায় নেই। কমিউনিটির সদস্যরাই অপরাধ ঠেকাবার জন্য যথেষ্ট। তাহলে মডারেটররা অপরাধ বাড়ছে বলছেন কেন? তারা কি বলতে চাচ্ছেন কমিউনিটি ব্লগের বাইরে অপরাধ বাড়ছে? যদি তা-ই বলতে চান তাহলে সরাসরি সেকথা বলছেন না কেন?
অপরাধের ফিরিস্তি শুনুন :
'(১) অর্থনৈতিক: সংস্থা/ব্যক্তির অর্থনৈতিক তথ্য/অর্থ চুরি; (২) প্রযুক্তিগত: কোড, কপিরাইট ছিনতাই, হ্যাকিং ও প্রযুক্তিগত ভৌত ও অভৌত স্থাপনার ক্ষতিসাধন; এবং (৩) সামাজিক: হুমকি, যৌন নির্যাতন ও অবমাননা। সামাজিক অপরাধসমূহ সাধারণ ব্যবহারকারীদের সঙ্গে অহরহ সংঘটিত হচ্ছে। ওয়েবে মৃত্যুর হুমকি; যৌন হয়রানি এবং ছবি ও পরিচয় পর্নোগ্রাফিতে ব্যবহার, প্রোফাইল ও কপিরাইট হ্যাকিং, ব্লগারদের মানবীয় অনুভূতির সঙ্গে আর্থিক প্রতারণা, ই-মেইল অ্যাড্রেস স্প্যামারকে প্রদান, পাইরেসি, সংবিধানের অবমাননা, সাম্প্রদায়িক নিগ্রহ ইত্যাদি...' কমিউনিটি ব্লগগুলোতে এমন অপরাধের উদাহরণ আমি দিতে পারবো না। কেউ দিতে পারলে মডারেটরদের এ লেখা যুক্তি পেতে পারে। ব্লগে এমন অপরাধ ঘটছে কমিউনিটিগুলো কিছু বলছে না সেটি বিস্ময়কর ব্যাপার। আরও বিস্ময়কর ব্যাপার হলো, এসব অপরাধ না ঠেকিয়ে মডারেটররা প্রথম আলোতে লেখালেখি শুরু করেছেন। সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন। তাজ্জব। ব্লগের বিরুদ্ধে তারা যেসব অভিযোগ তুললেন সেগুলোর অধিকাংশই মিথ্যা। আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি। এই মিথ্যা অভিযোগ করে তারা এসব অপরাধ দমনের উদ্যোগ কামনা করেছেন। তাদের পরামর্শ হলো, "অপরাধ দমনের জন্য আইন প্রণেতাদের এ ক্ষেত্রে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একযোগে গবেষণা পরিচালনা করে প্রতিরোধব্যবস্থা তৈরি করতে হবে"। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম বিশেষজ্ঞ কারা? এই লেখার লেখকদের কেউ কেউ নন তো? ব্লগের বানোয়াট অপরাধের জন্য তাদের সহায়তা নিয়ে আইন করতে হবে? প্রতিরোধ ব্যবস্থা তৈরি করতে হবে?
আবারও মনে করিয়ে দেই, লিখছেন ব্লগের মডারেটররা, লেখার বিষয় ব্লগ দিবস। অন্যতম প্রতিপাদ্য গণজাগরণ। কোথায় তারা বলবেন, গণতন্ত্র শক্তিশালী করার জন্য ব্লগগুলো কোনো বাধা দেবেন না; তারা বলছেন ব্লগে অপরাধ হচ্ছে, আমাদের সঙ্গে আলোচনা করে প্রতিরোধ করুন। ব্লগ নিয়ন্ত্রণের আহবানই কি প্রকারান্তরে জানানো হলো না?
যারা ইন্টারনেটের অ আ ক খ জানেন তারা জানেন সাইবার অপরাধ কোথায় হয়। পর্ন সাইটগুলো বহাল তবিয়তে আছে। নানা সেমিপর্ন সাইটও চলছে। সেখানে অপরাধ হচ্ছে। ওয়ার্ডপ্রেস বা ব্লগস্পটে ব্লগখুলেও নানা পর্ন চালানো হচ্ছে। একই সঙ্গে একথাও সত্য, ওয়ার্ডপ্রেস ব্লগস্পটে সমৃদ্ধ ব্লগিংও হচ্ছে। কিন্তু মডারেটররা সেসবের কথা তো বললেন না। পর্ন সাইটের অপরাধের দায় কমিউনিটি ব্লগগুলোর ওপর চাপালেন।
এর চেয়ে লজ্জার আর কী হতে পারে?

সামহয়ারের আরিল ভাই একটি ব্যাখ্যা দিয়েছেন । আমার মনে হয়, সেটি দেরিতে হলেও ভাল ও গ্রহণযোগ্য। কিন্তু ব্লগ দিবস কার/কাদের প্ররোচনায় কলুষিত হলো তা বের করা জরুরি।
১২টি মন্তব্য ১২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

তুই পাগল তোর বাপে পাগল

লিখেছেন আজব লিংকন, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৪:৪১



রাতে অর্ধেক কাউয়া ক্যাচাল দেইখ্যা হুর বইল্যা— মোবাইল ফোনের পাওয়ার বাটনে একটা চাপ দিয়া, স্ক্রিন লক কইরা, বিছানার কর্নারে মোবাইলটারে ছুইড়া রাখলাম।

ল্যাপটপের লিড তুইল্যা সার্ভারে প্রবেশ। বৃহস্পতিবারের রাইত... ...বাকিটুকু পড়ুন

যত দোষ নন্দ ঘোষ...

লিখেছেন জুল ভার্ন, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ বিকাল ৫:০১

"যত দোষ নন্দ ঘোষ"....

বাংলায় প্রচলিত প্রবাদগুলোর মধ্যে অন্যতম ‘যত দোষ নন্দ ঘোষ’। যে যত দোষ করুক না কেন, সব নন্দ ঘোষের ঘাড়েই যায়! এ প্রবাদের সহজ অর্থ হচ্ছে, দুর্বল মানুষের... ...বাকিটুকু পড়ুন

দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি, আমাদের বাহাস আর লালনের গান

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৮:৪১


দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ে বেশ কিছুদিন ধরে হৈচৈ হচ্ছে, হৈচৈ হচ্ছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে। একটা পক্ষ আগের সরকারের সময়ে হৈচৈ করত কিন্তু বর্তমানে চুপ। আরেকটা পক্ষ আগে চুপ ছিল এখন সরব। তৃতীয়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ থাকে না কেউ থেকে যায়

লিখেছেন বরুণা, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ৯:০৩


চমকে গেলাম হঠাৎ দেখে
বহুদিনের পরে,
নীল জানালার বদ্ধ কপাট
উঠলো হঠাৎ নড়ে।

খুঁজিস না তুই আর খুঁজিনা
আমিও তোকে আজ,
আমরা দু'জন দুই মেরুতে
নিয়ে হাজার কাজ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

আরও একটি কবর খোঁড়া

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ১১ ই অক্টোবর, ২০২৪ রাত ১০:০৪

গোরস্থানে গিয়ে দেখি
আরও একটি কবর খোঁড়া
নতুন কেউ আজ মরেছে
এমন করে বাড়ছে শুধু
কবরবাসী, পৃথিবী ছেড়ে যাবে সবাই
মালাকুল মওত ব্যস্ত সদাই
কখন যে আসে ঘরে
মৃত্যুর যে নেই ক্যালেন্ডার
যে কোন বয়সে আসতে পারে
মৃত্যুর ডাক,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×