বাঙ্গালমুলুক থেকে কাঁচা আম এসেছে। কয়লার আগুনে আম পোড়ানো হচ্ছে। শরবত বানানো হবে। সৈন্ধব লবণ, আখের গুড়, আদার রস, কাঁচা মরিচের রস আলাদা আলাদা পাত্রে রাখা। আমের শরবতে এইসব লাগবে। দু’জন খাদ্যপরীক্ষক প্রতিটি উপাদান চেখে দেখছেন। তাঁদের শরীর ঠিক আছে। মুখে কষা ভাব হচ্ছে না, পানির তৃষ্ণাবোধও নেই। এর অর্থ উপাদানে বিষ অনুপস্থিত। সম্রাট বাবর নিশ্চিন্ত মনে খেতে পারবেন। গত বছর শীতের শুরুতে সম্রাট বাবরকে বিষ খাইয়ে মারার চেষ্টা করা হয়েছিল। এরপর থেকেই বাড়তি সতর্কতা।
সম্রাট তখত্ রওয়ানে (চলমান সিংহাসন) আধশোয়া হয়ে আছেন। তাঁর মাথায় রাজস্থানী বহুবর্ণ ছাতি। তাঁর দু’দিকে দু’জন বড় পাখায় হাওয়া দিচ্ছে। প্রধান উদ্দেশ্য মাছি তাড়ানো। এই অঞ্চলে মাছির বড়ই উৎপাত।
রুপার পাত্রে আমের শরবত নিয়ে খিদমতগার সম্রাটের সামনে নতজানু হয়ে আছে। সম্রাট পাত্র হাতে না নেওয়া পর্যন্ত খিদমতগার মাথা উচুঁ করবেনা। সম্রাট পাত্র হাতে নিচ্ছেন না। তাঁকে চিন্তিত মনে হচ্ছে। যদিও চিন্তিত হওয়ার মতো কারণ ঘটেনি। পানিপথের যুদ্ধে তাঁর প্রধান শত্রু ইব্রাহিম লোদী পরাজিত এবং নিহত হয়েছেন। ইব্রাহিম লোদীর মৃতদেহ তাঁকে দেখানো হয়েছে। তবে বিরক্ত হওয়া মতো কারণ ঘটেছে। তিনি তাঁর প্রথম পুত্র নাসিরুদ্দিন মুহম্মদ হুমায়ূন মীর্জার উপর বিরক্ত। এই ছেলে অলস এবং আরামপ্রিয়। সে ঘর-দরজা বন্ধ করে একা থাকতে পছন্দ করে। পিতাকে লেখা এক পত্রে সে লিখেছে- ‘আমার মানুষের সঙ্গ ভালো লাগে না। আমি একা থাকতেই বেশি স্বচ্ছন্দ্য বোধ করি।’ একাকিত্ব রাজপুরুষদের মানায় না। হুমায়ূনকে পাঠানো হয়েছে ইব্রাহিম লোদীর রাজধানী এবং কোষাগার দখল করতে। ইব্রাহিম লোদীর কোষাগার আগ্রা দুর্গে। এই কাজ শেষ করতে এত সময় লাগার কথা না। সে নিশ্চয় কোন ভজঘট করে ফেলেছে। দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিত থাকার মতো দায়িত্ববান হুমায়ূন মীর্জা না। সম্রাট নিজেই আগ্রার দিকে রওনা হয়েছেন। কাঁচা আমের শরবত খাওয়ার জন্য যাত্রাবিরতি।
সম্রাটের সেনাপতির একজন ফিরোজ সারঙ্গখানি বললেন বাদশাহ কি কোন কারণে অস্থির?
বাবর বললেন, আমি অস্থির, তবে অস্থিরতার কারণ জানি না।
গতরাতে দুঃস্বপ্ন দেখেছি। দুঃস্বপ্ন অস্থিরতার কারণ হতে পারে।
ফিরোজ সারাঙ্গখানি দুঃস্বপ্ন কী জানতে চাচ্ছেন। কিন্তু সম্রাটের দুঃস্বপ্ন জানতে চাওয়া যায় না। বড় ধরনের বেয়াদবি।
সম্রাট বললেন, দুঃস্বপ্ন কী জানতে চাও? শোন। আমি দেখলাম আমার তাঁবুতে একটা ভেড়া ঢুকে পড়েছে। ভেড়াটার একটা পা নেই, সে লাফিয়ে লাফিয়ে চলে। ভেড়াটা লাফ দিয়ে আমার কোলে এসে পড়ল এবং আমার পায়ে মুখ ঘষতে লাগল্ তখনই ঘুম ভাঙল।
স্বপ্নের ফলাফল অবশ্যই শুভ।
একটা পঙ্গু ভেড়া লাফ দিয়ে আমার কোলে এসে উঠল। এর ফলাফল শুভ কীভাবে হয়? হুজুর মীর আবুবকর-এর কাছ থেকে স্বপ্নের তফসির জানতে হবে।
কথা বলতে বলতেই বাবর তীক্ষ্ন চোখে তাকালেন। অনেক দূরে ধুলার ঝড়ের মতো উঠেছে। অশ্বারোহীর দল কি ছুটে আসছে? কোনো বিদ্রহী বাহিনী? হওয়ার তো কথা না। অশ্বারোহীর দল আগ্রার দিক থেকেই আসছে। এমন কি হতে পারে আগ্রর দুর্গে বন্দি গোয়ালিয়রের রাজা বিক্রামদিত্যর পরিবারকে উদ্ধার করতে সাহয্যকারী কেউ এসেছে?
বাবর ইশারা করলেন। মুহূর্তের মধ্যে যুদ্ধাবস্থার পরিস্থিতি তৈরি হলো। সিঙ্গ বাজানো হলো। বাদশাহের প্রিয় পিতজুচাক ঘোড়া নিয়ে একজন ছুটে এল। বাদশাহ তখত্ রওয়ান ছেড়ে ঘোড়ায় উঠলেন। দূরে ধুলা ঝড় ঘন হচ্ছে। সৈন্যসংখ্যা আন্দাজ করা যাচ্ছে না। মাঝে মাঝে রোদে ঘোড়ার আরোহীদের শিরস্ত্রাণ ঝলসে ঝলসে উঠছে।

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




