প্রত্যেক জাতির একটা নিজ ভাষা থাকে। ছোট বেলায় শিশুরা মায়ের কাছ থেকে যে ভাষা বা বুলি শিখে সেটি তার মাতৃভাষা। আমাদের মাতৃভাষা হচ্ছে বাংলা। অন্যান্য ভাষার তুলনায় এ ভাষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য্য অনেক বেশী। কারণ বাংলা ভাষা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। যে ভাষা রক্ষার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ। পাকিস্তানী স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী বাংলার মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ২১ শে মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভার ভাষণে ঘোষনা করেন‘‘ উর্দূই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’’। জিন্নাহের এ ভাষণ মেনে নিতে পারেনি বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা। তারা এর তীব্র প্রতিবাদ করে। ১৯৫২ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং ২১শে ফেব্রুয়ারী পূর্ব পাকিস্তানে হরতালের আহবান করে। হরতাল ব্যর্থ করতে সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ দ্বারা ভঙ্গ করে রাজপথে মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশ বেপরোয়া গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে রফিক,সালাম,বরকত,জববার সহ আরোও অনেক শহীদ হন। সেসব শহীদের স্মরণ করতে প্রতি বছর যথাযোগ্য মর্যাদায় ভাবগম্ভীর পরিবেশে সারা বিশ্বে ২১ শে ফেব্রুয়ারী বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়। আমরা ও কাক ডাকা ভোর থেকে প্রভাতফেরিতে গিয়ে ফুলের তোড়া দিয়ে শ্রদ্বাভরে স্মরণ করে গেয়ে থাকি--- আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো ২১শে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি কিন্তু শুধুই কি ২১শে ফেব্রুয়ারীর প্রভাতফেরীর মাধ্যমে সালাম,রফিক,বরকত,জববার তথা বাংলা ভাষাকে স্মরণ করার কাজ শেষ হবে? মাতৃভাষাকে বাংলা রাষ্ট্রভাষায় উন্নীত করা পৃথিবীর ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা ছিল । অথচ সেই ভাষার প্রতি আজ আমরা কতটুকু উদাসীন, কতটুকু শ্রদ্বাশীল? কেউ যদি প্রশ্ন করে আমাদের মাতৃভাষা কি? অবশ্যই বুক ফুলিয়ে,গর্ব করে বলব ‘‘বাংলা আমাদের মাতৃভাষা’’‘‘বাংলা আমাদের রাষ্ট্রভাষা’’। বিদেশী ভাষার প্রভাবে আমাদের মাতৃভাষা হুমকির মুখে আজ বিদেশী ভাষায় সয়লাব হয়ে গেছে পুরো বাংলা ভাষা। বাংলা ভাষার সাথে বিদেশী ভাষার মিশ্রণ,বাংলা বানানে ভুল,ভাষার অবাধ ব্যবহারে কলুষিত হয়ে যাচ্ছে আমাদের মাতৃভাষা। বাংলা ভাষা ব্যবহারে আমরা কতটা উদাসীন তা একটু পরখ করলেই দেখা যায়,মুদির দোকান থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনকি সরকারী প্রতিষ্ঠানেও ঝোলানো হয় ইংরেজী অক্ষরে লেখা বড় বড় সাইনবোর্ড। বিজ্ঞাপন বোর্ড,বিল বোর্ড তো আছেই। বাংলা লেখা সাইনবোর্ড খুঁজে পাওয়া কঠিন,দু একটি থাকলে ও লেখায় বানানে ভুলের সংখ্যা বেশী। এ ব্যাপারে ষ্পষ্ট প্রতীয়মান হয় আমরা আমাদের মাতৃভাষা ব্যবহারে কত উদাসীন। ইংরেজী সাইনবোর্ডের পাশাপাশি আমরা কি বাংলা সাইনবোর্ড লিখতে পারিনা? মাতৃভাষাকে অবহেলা,অসম্মান মাতৃভূমিকে অবহেলা ও অসম্মানের শামিল। মাতৃভাষার সঠিক ও বহুল ব্যবহারের মাধ্যমে মাতৃভাষার প্রতি মমত্ববোধ দেখানো আমাদের প্রত্যেকেরই উঁচিত।
মাতৃভাষা ব্যবহারে উদাসীনতা
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
Tweet
প্রত্যেক জাতির একটা নিজ ভাষা থাকে। ছোট বেলায় শিশুরা মায়ের কাছ থেকে যে ভাষা বা বুলি শিখে সেটি তার মাতৃভাষা। আমাদের মাতৃভাষা হচ্ছে বাংলা। অন্যান্য ভাষার তুলনায় এ ভাষার গুরুত্ব ও তাৎপর্য্য অনেক বেশী। কারণ বাংলা ভাষা রক্তের বিনিময়ে অর্জিত। যে ভাষা রক্ষার জন্য ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারী রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল ঢাকার রাজপথ। পাকিস্তানী স্বৈরাচারী শাসকগোষ্ঠী বাংলার মানুষের মুখের ভাষা কেড়ে নিতে চেয়েছিল। মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ ২১ শে মার্চ ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে এক জনসভার ভাষণে ঘোষনা করেন‘‘ উর্দূই হবে পাকিস্তানের একমাত্র রাষ্ট্রভাষা’’। জিন্নাহের এ ভাষণ মেনে নিতে পারেনি বাংলা মায়ের দামাল ছেলেরা। তারা এর তীব্র প্রতিবাদ করে। ১৯৫২ সালের ৪ঠা ফেব্রুয়ারী সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এবং ২১শে ফেব্রুয়ারী পূর্ব পাকিস্তানে হরতালের আহবান করে। হরতাল ব্যর্থ করতে সরকার ১৪৪ ধারা জারি করে। ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্ররা ১৪৪ দ্বারা ভঙ্গ করে রাজপথে মিছিল বের করে। মিছিলে পুলিশ বেপরোয়া গুলি চালায়। পুলিশের গুলিতে রফিক,সালাম,বরকত,জববার সহ আরোও অনেক শহীদ হন। সেসব শহীদের স্মরণ করতে প্রতি বছর যথাযোগ্য মর্যাদায় ভাবগম্ভীর পরিবেশে সারা বিশ্বে ২১ শে ফেব্রুয়ারী বা আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালিত হয়। আমরা ও কাক ডাকা ভোর থেকে প্রভাতফেরিতে গিয়ে ফুলের তোড়া দিয়ে শ্রদ্বাভরে স্মরণ করে গেয়ে থাকি--- আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো ২১শে ফেব্রুয়ারী আমি কি ভুলিতে পারি কিন্তু শুধুই কি ২১শে ফেব্রুয়ারীর প্রভাতফেরীর মাধ্যমে সালাম,রফিক,বরকত,জববার তথা বাংলা ভাষাকে স্মরণ করার কাজ শেষ হবে? মাতৃভাষাকে বাংলা রাষ্ট্রভাষায় উন্নীত করা পৃথিবীর ইতিহাসে এক নজিরবিহীন ঘটনা ছিল । অথচ সেই ভাষার প্রতি আজ আমরা কতটুকু উদাসীন, কতটুকু শ্রদ্বাশীল? কেউ যদি প্রশ্ন করে আমাদের মাতৃভাষা কি? অবশ্যই বুক ফুলিয়ে,গর্ব করে বলব ‘‘বাংলা আমাদের মাতৃভাষা’’‘‘বাংলা আমাদের রাষ্ট্রভাষা’’। বিদেশী ভাষার প্রভাবে আমাদের মাতৃভাষা হুমকির মুখে আজ বিদেশী ভাষায় সয়লাব হয়ে গেছে পুরো বাংলা ভাষা। বাংলা ভাষার সাথে বিদেশী ভাষার মিশ্রণ,বাংলা বানানে ভুল,ভাষার অবাধ ব্যবহারে কলুষিত হয়ে যাচ্ছে আমাদের মাতৃভাষা। বাংলা ভাষা ব্যবহারে আমরা কতটা উদাসীন তা একটু পরখ করলেই দেখা যায়,মুদির দোকান থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এমনকি সরকারী প্রতিষ্ঠানেও ঝোলানো হয় ইংরেজী অক্ষরে লেখা বড় বড় সাইনবোর্ড। বিজ্ঞাপন বোর্ড,বিল বোর্ড তো আছেই। বাংলা লেখা সাইনবোর্ড খুঁজে পাওয়া কঠিন,দু একটি থাকলে ও লেখায় বানানে ভুলের সংখ্যা বেশী। এ ব্যাপারে ষ্পষ্ট প্রতীয়মান হয় আমরা আমাদের মাতৃভাষা ব্যবহারে কত উদাসীন। ইংরেজী সাইনবোর্ডের পাশাপাশি আমরা কি বাংলা সাইনবোর্ড লিখতে পারিনা? মাতৃভাষাকে অবহেলা,অসম্মান মাতৃভূমিকে অবহেলা ও অসম্মানের শামিল। মাতৃভাষার সঠিক ও বহুল ব্যবহারের মাধ্যমে মাতৃভাষার প্রতি মমত্ববোধ দেখানো আমাদের প্রত্যেকেরই উঁচিত।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর
আলোচিত ব্লগ
=আকাশে তাকিয়ে ডাকি আল্লাহকে=

জীবনে দুঃখ... আসলে নেমে
শান্তি গেলে থেমে;
আমি বারান্দায় দাঁড়িয়ে হই উর্ধ্বমুখী,
আল্লাহকে বলি সব খুলে, কমে যায় কষ্টের ঝুঁকি।
আমি আল্লাহকে বলি আকাশে চেয়ে,
জীবন নাজেহাল প্রভু দুনিয়ায় কিঞ্চিত কষ্ট পেয়ে;
দূর করে দাও সব... ...বাকিটুকু পড়ুন
"ছাত্র-জনতার বেপ্লবের" ১৮ মাস পরে, আপনার ভাবনাচিন্তা ঠিক আগের মতোই আছে?

২০২৪ সালের পহেলা জুলাই "ছাত্র-জনতার বেপ্লব শুরু হয়, "৩৬শে জুলাই" উহা বাংলাদেশে "নতুন বাংলাদেশ" আনে; তখন আপনি ইহাকে ব্যাখ্যা করেছেন, ইহার উপর পোষ্ট লিখেছেন, কমেন্ট করেছেন; আপনার... ...বাকিটুকু পড়ুন
আমাদের হাদিকে গুলি করা, আর আওয়ামী শুয়োরদের উল্লাস। আমাদের ভুল কোথায়?


৩০ জনের একটা হিটলিস্ট দেখলাম। সেখানে আমার ও আমার স্নেহের-পরিচিত অনেকের নাম আছে। খুব বিশ্বাস করেছি তা না, আবার খুব অবিশ্বাস করারও সুযোগ নাই। এটাই আমার প্রথম... ...বাকিটুকু পড়ুন
এ যুগের বুদ্ধিজীবীরা !

ডিসেম্বর মাসের চৌদ্দ তারিখ বাংলাদেশে বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়। পাকিস্তান মিলিটারী ও তাদের সহযোগীরা মিলে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে হত্যা করেন লেখক, ডাক্তার, চিকিৎসক সহ নানান পেশার বাংলাদেশপন্থী বুদ্ধিজীবীদের!... ...বাকিটুকু পড়ুন
টাঙ্গাইল শাড়িঃ অবশেষে মিললো ইউনস্কর স্বীকৃতি

চারিদিকে যে পরিমান দুঃসংবাদ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে এর মধ্যে নতুন এক গৌরবময় অধ্যায়ের সূচনা হলো বাংলাদেশের টাঙ্গাইলের তাতের শাড়ি এর জন্য, ইউনেস্কো এই প্রাচীন হ্যান্ডলুম বুননের শিল্পকে Intangible Cultural... ...বাকিটুকু পড়ুন

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।