somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

"লাল পাহাড়ির দেশে যা"- একটি কবিতার গান হয়ে ওঠা

২১ শে জুন, ২০১৩ রাত ১২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


"লাল পাহাড়ির দেশে যা" এই গানটি নিয়ে দেখলাম অনেক দ্বিমত। কেউ বলছে এইটা অর্নবের গান। কেউ বলছে ভূমি'র। আবার কেউ বলছে লোকগীতি। দ্বিধা ভাঙবার এবং সত্য কিছু তথ্য জানাবার উদ্যেশ্যে লিখলাম। একটি কবিতার গান হয়ে ওঠা এবং অজস্র গানপ্রেমী মানুষের মন জয় করার কিছু ঘটনা।

"একটি গাছ। নাম তার মহুয়া। ইংরেজীতে Madhuka Latifolia-যা বাংলা, বিহার, উড়িষ্যা বা মধ্যপ্রদেশের জঙ্গলে পর্যাপ্ত দেখেছি। ...... এই রকম একটি গাছ শ্রীরামপুর স্টেশনে ঠায় দাঁড়িয়ে আমি দেখছি। যেখানে শব্দের অসহ্য দামামা। লক্ষ লক্ষ মানুষের তাৎক্ষণিক দাপট নিয়ত। ট্রেনের হাঁসফাঁস। হকারের দাপাদাপি, দূষিত ধূলোর থাবা। অসহ্য দুপুর। টোপা টোপা মহুয়া ফুলের ভারে অলংকৃত দেখে মুহুর্তের মধ্যে আমার অরণ্যের কথা মনে হলো। অরণ্যবাসীদের কথা মনে পড়ে গেল। এটা কি Nucleation পর্যায় নয়?

এরপর আমার কেমন কষ্ট হতে লাগলো। যে শব্দটি আমাকে প্রথমেই আঘাত করলো, তার ইঙ্গিতে যেন এক চরম সত্যের স্পর্শগন্ধ রয়েছে বলে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করলো। শব্দটি 'বেমানান'। আমার মতই কিংবা সবাইকার মতই গাছটি যেন ঠিক জায়গায় নেই। আমরা যেন যে যার আপাত স্বস্থানে অত্যন্ত বেমানান। যার যেখানে থাকার কথা নয়, সে যেন ঠিক সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। যেন তার চেয়ে মৃত্যু অনেক শ্রেয় ছিল। এভাবেই দশটি ঘন্টা অতিবাহিত হয়েছে- ভাবনার মধ্যে বিস্তার ঘটে চলেছে- আমাকে যেন কিছুতেই ছাড়তে চাইছে না, আষ্টে পৃষ্ঠে বাধছে। .........জন্ম নিল কবিতা...

শ্রীরামপুর ইস্টিশনে মহুয়া গাছটা

হাই দ্যাখো গ' তুই ইখানে কেনে,লালপাহাড়ীর দেশে যা
রাঙা মাটির দেশে যা
হেথাকে তুকে মানাইছে নাই গ', ইক্কেবারেই মানাইছে নাই
অ-তুই লালপাহাড়ীর দেশে যা...
সিখান গেলে মাদল পাবি
মেইয়ে মরদের আদর পাবি
অ-তুই লালপাহাড়ীর দেশে যা
লারবি যদি ইক্কাই যেতে
লিস্‌ না কেনে তুয়ার সাথে
নইলে অ-তুই মরেই যা
ইক্কেবারেই মরেই যা
হাই দ্যাখো গ', তুই ইখানে কেনে, লালপাহাড়ির দেশে যা
রাঙা মাটির দেশে যা,
রাঙা মাটির থানে যা... ।"


ঠিক এভাবেই 'লাল পাহাড়ীর দেশে যা' গানটির শুরুর কাহিনী বর্ননা করেন গানটির রচয়িতা কবি অরুন কুমার চক্রবর্তী। এই লেখাটি আমি নিয়েছি তাঁর প্রকাশিত একটি আর্টিকেল থেকে, 'লাল পাহাড়ীর দেশে যাঃ কবিতার জন্মবিজ্ঞান', যা ২০১০ সালে 'AUM'নামকে একটি ম্যাগাজিনে প্রকাশিত হয়।



একচল্লিশ বছর আগে ১৯৭২ সালে জন্ম নেয়া এই কবিতাটিতে সুরারোপ করেন সেই সময়ের এক উঠতি গায়ক বাঁকুড়ার বেলিয়াতোড়ের সুভাষ চক্রবর্তী ১৯৭৩-৭৪ সালের দিকে। সুভাষ চক্রবর্তী এই গানটি মঞ্চে মঞ্চে গান এবং প্রচন্ড জনপ্রিয়তা পায়। সেই সুবাদে ১৯৭৬ সালে তখনকার নাম করা সুরকার ভি বালসারার সঙ্গীতায়োজনে এই গানটি রেকর্ড বের হয়। এরপর বাউলরা এই গানটিকে তাঁদের নিজের করে নেয় ভালোবাসা দিয়ে। তখন পর্যন্ত এই গানটির নাম ছিল 'শ্রীরামপুর ইস্টিশনে মহুয়া গাছটা'। বাউলরা অরুন কুমার চক্রবর্তীকে গানটি বড় করার অনুরোধ জানালে তিনি 'লাল পাহাড়ির দেশে যা' নামে আবার লিখেন এবং নতুন করে সুর করেন।

লাল পাহাড়ির দেশে যা

হাই দ্যাখো গ' তুই ইখানে কেনে
অ তুই লালপাহাড়ীর দেশে যা
রাঙা মাটির দেশে যা
হেথাকে তুকে মানাইছে লাই রে
লাল পাহাড়ির দেশে যাবি
হাঁড়িয়া আর মাদল পাবি
হেথাকে তুকে মানাইছে লাই রে
নদীর ধারে শিমুল গাছ
নানা পাখির বাসা রে, নানান পাখির বাসা
কাল সকালে ফুইট্‌বে ফুল
মনে কতো আশা রে
মনে কতো আশা।
সেথাকে যাবি প্রাণ জুড়াবি
মাইয়া মরদের আদর পাবি
হেথাকে তুকে মানাইছে লাই রে
ইক্কেবারেই মানাইছে লাই রে
ভাদর আশ্বিন মাসে
ভাদু পূজার ঘটা রে, ভাদু পূজার ঘটা
তুই আমারে ভালোবেসে পালিয়ে গেলি
কেমন ব্যাপের ব্যাটা রে, কেমন বাপের বেটা
মরবি তো মরেই যা
ইক্কেবারেই মরে যা
হেথাকে তুকে মানাইছে লাই রে
ইক্কেবারেই মানাইছে লাই রে......

দারুণ অর্থবহ এবং অদ্ভুত সুন্দর এই গানটি গেয়েছেন অনেক গায়ক, ব্যান্ড, বাউল। অনেক লেখক ব্যবহার করেছেন তাঁদের উপন্যাসে। অনেক নাটকে, ছবিতে প্রকাশিত হয়েছে এই গান। এখানে তাঁর লেখা থেকে আরও কিছু অংশ জুড়ে দিলাম। "এখনকার ভূমি ব্যান্ড গানটা প্রায় চুরি করলো। টিভি-র অনুষ্ঠানে প্রচার হলো। অরুণের নাম বলে না দেখে ভূমির অনুষ্ঠানে, গ্রামে গঞ্জে, শহরে, কলেজের সোস্যালে প্রতিবাদ উঠলো। এখন ওরা মানতে বাধ্য হয়েছে। এভাবেই হাজারো ঘটনা ঘটে চলেছে দশক দশক ধরে- সে বড়ো মজার। ঝুপড়ি থেকে ফাইভস্টার লালপাহাড়ীর সুর ঊড়ছে।"

বিভিন্ন শিল্পীর গাওয়া এই গানটি শুনে দেখতে পারেনঃ

কবির নিজের কন্ঠে আবৃত্তি

অর্নব

বাসুদেব দাস

ভূমি

পরশপাথর


এবং লিরিক্সেও কিছু তারতম্য রয়েছে। উপরে অরিজিনালটা দিয়েছি। এছাড়াও কয়েকটির শুধু লিংক দিলাম, যাতে পোস্ট অহেতুক বড় না হয়। প্রয়োজন মনে হলে ঘুরে আসবেন।

অর্নব

ভূমি

সন্দ্বীপ ব্যানার্জী একটি ডকুমেন্টারি বানান যেখানে তিনি এই গানটির মূল খুঁজে ফেরেন। শেষ পর্যন্ত তিনি খুঁজে পান রচয়িতা অরুন চক্রবর্তীকে। এই ডকুমেন্টারির জন্য তিনি জাতীয় পুরস্কার পান।

--------------------------------------------------------------------------

আমাদের সাথে যুক্ত হনঃ Bangla Song Lyics FB Page
আরো লিরিক্স পেতে ঘুরে আসুনঃ Bangla Song Lyics
২০টি মন্তব্য ১৬টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ধর্ম ও বিজ্ঞান

লিখেছেন এমএলজি, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ ভোর ৪:২৪

করোনার (COVID) শুরুর দিকে আমি দেশবাসীর কাছে উদাত্ত আহবান জানিয়ে একটা পোস্ট দিয়েছিলাম, যা শেয়ার হয়েছিল প্রায় ৩ হাজারবার। জীবন বাঁচাতে মরিয়া পাঠকবৃন্দ আশা করেছিলেন এ পোস্ট শেয়ারে কেউ একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

তালগোল

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৩৫


তু‌মি যাও চ‌লে
আ‌মি যাই গ‌লে
চ‌লে যায় ঋতু, শীত গ্রীষ্ম বর্ষা
রাত ফু‌রা‌লেই দি‌নের আ‌লোয় ফর্সা
ঘু‌রেঘু‌রে ফি‌রে‌তো আ‌সে, আ‌সে‌তো ফি‌রে
তু‌মি চ‌লে যাও, তু‌মি চ‌লে যাও, আমা‌কে ঘি‌রে
জড়ায়ে মোহ বাতা‌সে ম‌দির ঘ্রাণ,... ...বাকিটুকু পড়ুন

মা

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৩


মায়াবী রাতের চাঁদনী আলো
কিছুই যে আর লাগে না ভালো,
হারিয়ে গেছে মনের আলো
আধার ঘেরা এই মনটা কালো,
মা যেদিন তুই চলে গেলি , আমায় রেখে ওই অন্য পারে।

অন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

কপি করা পোস্ট নিজের নামে চালিয়েও অস্বীকার করলো ব্লগার গেছে দাদা।

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ২:১৮



একটা পোস্ট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বেশ আগে থেকেই ঘুরে বেড়াচ্ছে। পোস্টটিতে মদ্য পান নিয়ে কবি মির্জা গালিব, কবি আল্লামা ইকবাল, কবি আহমদ ফারাজ, কবি ওয়াসি এবং কবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভারতকে জানতে হবে কোথায় তার থামতে হবে

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৫ শে এপ্রিল, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:৪৫


ইন্ডিয়াকে স্বপ্ন দেখানো ব্যাক্তিটি একজন মুসলমান এবং উদার চিন্তার ব্যাক্তি তিনি হলেন এপিজে আবুল কালাম। সেই স্বপ্নের উপর ভর করে দেশটি এত বেপরোয়া হবে কেউ চিন্তা করেনি। উনি দেখিয়েছেন ভারত... ...বাকিটুকু পড়ুন

×