উঁই পোকাতে খাওয়া একখানা চিঠি নতুবা ডায়েরী...
নামে কি আসে যায়,আমার মেয়ের পাঠ্য বই পরলাম আর মনে মনে হাসলাম...
আসলে নামে অনেক কিছুই আসে যায়।আমার সার্টিফিকেটের পিতার নামের জায়গাতে যার নাম লেখা তাকে কখনও চোখে দেখিনি
সারা জীবনে ১ মিনিট খুঁজে একটুকু সময়ও নষ্ট করতে চায় নি...
বুঝতেই পারছেন মানুষ যে ভাবে বড় হয় আমি সেভাবে বড় হয় নি...
আমার ছোট্ট মেয়েটা প্রতি রাতে তার মাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমাই।
কিন্তু দুর্ভাগ্য ই বোধহয় ছিল যে আমি কখনও আমার মায়ের সাথে ঘুমাতে পারিনি...
সেই ছোট্ট কাল থেকেই আমাদের ঘরের মাঝে একটা ছই দিয়েছোট্ট চিপাতে আমি থেকেছি।তখন কতো আর বয়স হবে আমার,৫ বছর নয়তো সাড়ে ৫ বছর...
বেশি কিছু মনে নেই,যতোদূর মনে পড়ে একটা নদীর তীরে ২০-২৫ টি ঝুপরি ঘরে আমরা কতোগুলো মানুষ থাকতাম।
আমার মা সারা রাত জেগে থাকত আর সার দিন ঘুমাতো,প্রায় প্রতি রাতে মায়ের চিত্কারে ঘুম ভাঙতো, ভাঙ্গা ফঁটো দিয়ে তাকিয়ে দেখতাম...
কখনও একজন নতুবা কয়েকজন লোক থাকতো আমার মায়ের সাথে
মা বিছানায় শুয়ে চিত্কার করতো,কখনও ধীরে আবার কখনও গগন বিদারী...আমি চোখ বন্ধ করে ভয়ে কানে হাত দিয়ে চেপে ধরে রাখতাম।
যতোটুকু মনে পরে এমন করেই দিন চলছিলো,হঠাত্ কি যে হইছিলো আমি ছোট মানুষ বুঝিনি....পরে শুনেছি
"মুক্তিযুদ্ধ ১৯৭১"
এই ছোট ঘর গুলোতে ব্যস্ততা বেড়ে গিয়েছিল,৬-৭ জন করে রাইফেল নিয়ে ঘরে ঢুকতো, প্রতিটি ঘরেই একই অবস্থা , না দিন না রাত...
আমি ঐ সময়ে একটি রাতও ঘুমাতে পারি নি আমাদের মায়েদের আর্তনাদে...
যখন কেউ থাকতো না চুপি চুপি ঘরে ঢুকতাম,আর দেখতাম মৃত মানুষের মতো আমাদের মায়েরা পড়ে আছে।চোখগুলো ভিতরে ঢুকানো ...বিছানায় লাল লাল ছোপ...একদিন সকালে উঠে দেখছিলাম যে আমার চেয়ে বছর খানেক বড় রহিমা নগ্ন রক্তাক্ত অব্স্থায় বিছানায় পড়ে আছে, সে দিন থেকে সব বদলাতে শুরু করে.....
একদিন সন্ধ্যায় মেলায় যাওয়ার নাম করে নাও এ তোলে পেয়ারা আপা...
আমার মতো আরও ১০-১৫ জন নাও এ ঘুমিয়ে পরেছিলো...
হঠাত্ গোলাগুলির আওয়াজে ঘুম ভাঙে আমার...দেখি দূরে কিসে যেন আগুন লেগেছে।
তারপর.....(উঁই পোকাতে খাওয়া).....
আজ বুঝেছি হানাদারদের নিয়ে আমার মা সহ সব মহিলারা আত্যাহুতি দিয়েছিল.....তারা হয়তো মুক্তিযোদ্ধার সনদ পায় নি তবে আমরা পেয়েছি জারজ সন্তানের সনদ.....
আমি বিয়ে করেছি আমার নাও এর এক হতভাগা সাথীকে ...
আজ মোটামুটি স্বচ্ছল আমি, তবুও আমার মুখ মাঝে মাঝে নজরুলের কবিতা আবৃত্তি করে...
"অসতী মাতার পুত্র সে যদি জারজ পুত্র হয়,
অসত্ পিতার সন্তানও তবে জারজ সুনিশ্চয়"...
আমি আমার বীরাঙ্গনা মাকে নিয়ে গর্বিত।
(কাল্পনিক গল্প)
ছবি- গুগল ।
(কপিড)
সর্বশেষ এডিট : ০২ রা ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৪:০৩

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




