১.
"তোমাদের খাদ্য পরিবেশনের টেবিলগুলোকে উদ্ভিদ দিয়ে সাজিয়ে রাখ কেননা এটা বিসমিল্লামির রাহমানির রাহীম উচ্চারণ করতে থাকে এবং এতে শয়তান পালিয়ে যায় "
২.
"পাগড়ী পরা অবস্থায় একরাকাত নামাজ পাগড়ীবিহীন ১৫ রাকাত নামাজের সমান সওয়াব"
৩.
"আরবদের ভালবাস তিনটি কারণে : আমি মুহম্মদ (স) একজন আরব ,পবিত্র কুরআন নাযিল হয়েছে আরবিতে এবং জান্নাতের ভাষা হবে আরবী ।"
এ হাদীসটি মিথ্যা তার মানে কিন্তু এই নয় যে রাসূল (স) আরব নন ,কুরআনের ভাষা আরবি নয় কিংবা জান্নাতের ভাষা আরবি নয় ।আসলে এটা মিথ্যা এ কারণে যে কোন জাতি ,ভাষা ,গোত্র ,জাতীয়তা ইত্যাদির পরিচয় আমরা কাউকে ভালবাসতে পারি না ।ইসলাম অনুসারে আমরা ভালবাসব সেইসকল লোককেই যারা আল্লাহ নির্দেশ আর রাসূলের সুন্নাত মেনে চলে ।এক্ষেত্রে কৃষ্ণাঙ্গ -শ্বেতাঙ্গ, আরব-অনারব কোন ভেদাভেদ নেই ।বর্তমানে সৌদি আরবের সরকার ইসলামের ক্ষতি করছে ,তারা আমেরিকার পা চাটা গোলাম ।তাহলে শুধু আরব বলে তাদের ভালবাসব ?
এ প্রসঙ্গে উল্লেখ্য যে ,বদরের যুদ্ধে রাসূল (স) তাঁর নিজ গোত্র আরব কুরাইশদের বিরুদ্ধেই যুদ্ধ করেছিলেন ।উমর (রা) তাঁর আপন চাচা এবং আবু উবাইদা (রা) তাঁর পিতাকে নিজ হাতে হত্যা করেন কারণ তারা ছিল ইসলামের শত্রু ।কাজেই ভালবাসতে হলে দেখতে হবে কে ইসলামের শত্রু আর কে বন্ধু ,কোন জাতীয়তা নয় ।
৪.
আদম (আ) নিষিদ্ধ গন্ধম খাওয়ার পাপের প্রায়চ্শিত্ত করতে আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করলেন "হে আল্লাহ ! আমি তোমার নামের পাশে লিখা মুহম্মদ নামের উছিলায় তোমার নিকট ক্ষমা চাচ্ছি " আল্লাহ বললেন "ওহে আদম ! তুমি কিভাবে মুহম্মদকে চিন যাকে আমা এখনো সৃষ্টিই করি নি ? "আদম বললেন "আপনি যখন আমায় সৃষ্টি করলেন এবং শরীরে আত্মা প্রবেশ করালেন তখন আমি মাথা উঁচু করে দেখেছিলাম আপনার আরশের খুঁটিতে লেখা আছে লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ ।তখনই আমি বুঝেছিলাম আপনি এ নাম উল্লেখ করতেন না যদি তিনি আপনার সবচাইতে প্রিয় সৃষ্টি না হতেন " আল্লাহ আদমকে বললেন "তুমি ঠিক বলেছ ।তাঁর উছিলায় তুমি আমার কাছে ক্ষমা চাও এবং আমি তোমাকে ক্ষমা করে দিব"
মূলত এ হাদীসটি কুরআনের ২টা আয়াতকে সরাসরি কন্ট্রাডিক্ট করে ।
কুরআনে বলা আছে আল্লাহতায়ালা নিজে আদম ও হাওয়াকে শিখিয়েছিলেন কিভাবে ক্ষমা চাইতে হবে
-"অতপর আদম তার রবের কাছ থেকে কয়েকটি বাক্য শিখে নিয়ে তাওবা করল ।তার রব এই তাওবা কবুল করে নিলেন ।কারণ তিনি বড়ই ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহকারী" - সূরা বাক্বারাহ:৩৭
-"হে প্রভু ! আমরা নিজেদের উপর জুলুম করেছি ।এখন যদি তুমি আমাদের ক্ষমা না করো এবং আমাদেরকে রহম না করো তবে আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের শামিল হব" -সূরা আরাফ ,আয়াত ২৩
কোথাও বলা নাই যে আদম (আ) নিজে থেকে মুহম্মদ (স) এর উছিলা দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করেছিলেন ।
৫.
"এমন একজন মুসলমানও নেই যাকে জুম্মার দিনে ক্ষমা করে দেয়া না হয়"
৬. "যে ব্যক্তি হজ্জ্ব করার পূর্বে বিয়ে করল সে একটি বিরাট গুণাহের কাজ করল"
৭. "আমি জ্ঞানের শহর এবং আলী সেই শহরের দরজা "
এ হাদীসটা এসেছে শিয়াদের কাছ থেকে ।শিয়ারা হযরত আবু বকর(রা) ,উমর (রা)এবং উসমান (রা) কে কাফির মনে করে (নাউজুবিল্লাহ) এবং নবীর পরেই আলী রা কে স্থান দিতে এ মিথ্যা হাদীস বানিয়ে নিয়েছে ৮. "যে ব্যক্তি দাবা খেলে সে অভিশপ্ত"
এই ধারণাটা মূলত এসেছে এই হাদীস থেকে "আবু মুসা আল আশ'আরী হতে বর্ণীত রাসুল (স) বলেছেন -যে ব্যক্তি ব্যাকগেমন খেলল সে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে অমান্য করল" - আবু দাঊদ
এটা মাস কনফিউশন সৃষ্টি করেছে একারণে যে সহীহ মুসলিমের ৪/১২২২ হাদীসের ইংরেজি অনুবাদের ক্ষেত্রে একটা ভুল অনুবাদ করা হয় যে দাবা খেলা নিষিদ্ধ ।নবী (স) উক্ত হাদীসে 'নার্দ' শব্দটি ব্যবহার করেন যার অর্থ ব্যাকগেমন আর দাবা বুঝাতে চাইলে তিনি 'শাত্বরানজ' শব্দটি উল্লেখ করেন ।
যেসকল আলেমগণ দাবাকে বৈধতা দিয়েছেন তারা ৩টি নির্দেশনা দিয়েছেন যার মধ্যে থাকলে দাবা হালাল হবে ।যথা
i) নামাজের সময় যাতে বিলম্ব না হয়
ii) কোনরূপ বাজি বা জুয়া জড়িত না থাকে
iii) খেলোয়াড়দের মেজাজ হারানো কিংবা অশালীন কথা বলা চলবে না
মূলত এগুলো অন্যান্য সকল খেলার জন্যই প্রযোজ্য ।
৯. "অন্য কারো নামে শপথ করার চাইতে আল্লাহর নামে শপথ করে মিথ্যা বলাও শ্রেয়"
আল্লাহর নামে কখনই জেনেশুনে মিথ্যা শপথ করা যাবে না ।
ইমাম বুখারি (র) বলেন : একদা এক লোক রাসূল (স) এর নিকট এসে বললেন -বড় গুণাহ কোনটি ?
তিনি জবাব দিলেন : আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা
লোকটি বলল :এরপর কোনটি ?
নবী (স) বললেন -মিথ্যা শপথ
(রিয়াদুস সালিহীন)
আর কেউ যদি আল্লাহর নামে শপথ করে পরে তা রাখতে না পারে তবে তার কাফফারা হচ্ছে একজন গোলাম আযাদ করা অথবা দশজন মিসকীনকে খাওয়ানো অথবা একটানা তিনদিন রোজা রাখা (সুরা মায়িদা:৮৯ অনুসারে)
আর আল্লাহতায়ালা ব্যতীত যেকোন ব্যক্তির কিংবা বস্তুর নামে শপথ করা শিরকের শামিল ।যেমন : রাসূল (স) এর কসম ,মায়ের কসম ,বাবার কসম ,মায়ের দুধের কসম ,ভালোবাসার কসম ,বিদ্যার কসম ইত্যাদি সবই সুস্পষ্ট শিরক
১০. "স্বদেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ"
বিশুদ্ধ ছয়টি হাদীসগ্রন্থের কোথাও একথাটির উল্লেখ নেই ।এটা একটা বানোয়াট হাদীস ।জাতীয়তাবাদের বিষবাষ্প ছড়িয়ে দিতে এবং মুসলিম উম্মাহকে বিভক্ত করতে এ বানানো হাদীসটির জন্ম ।যখন কোন দেশে ইসলাম পালন অনেক কঠিন হয়ে যায় তখন হিযরত করা ফরজ ।আর তাই বিধর্মী কোন দেশের প্রতি মুমিনদের ভালবাসা থাকতে পারে না যদিও সে ঐ দেশের নাগরিক হয়ও।
১১. "বিদ্বানের কলমের কালি শহীদের রক্তের চাইতেও পবিত্র"
এটা সেই সময়কার কিছু কাপুরুষরা প্রচার করেছিল যারা জিহাদে যেতে ভয় পেত ।তাই তারা এটা প্রচার করতে থাকে যাতে তারা পালিয়ে থাকতে পারে ।এ জাল হাদীসটি ইসলামী দাওয়াত প্রচারকারীদের ইসলামের পথে সংগ্রামকারীর চাইতে বেশী সম্মান দেয় ।অথচ এ ব্যাপারে কুরআনে স্পষ্ট বলা আছে-
"শারীরিকভাবে অক্ষম ছাড়া যেসকল বিশ্বাসীরা ঘরে বসে থাকে তারা কখনই তাদের সমান নয় যার জান ও মাল দিয়ে ইসলামের পথে জিহাদ করে ।যারা ঘরে বসে থাকে তাদের তুলনায় তিনি মুজাহিদদের পদমর্যাদা বাড়িয়ে দিয়েছেন ।যদিও তিনি সকল বিশ্বাসীদেরকেই সুন্দর প্রতিদান দেবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন কিন্তু যারা ঘরে বসে থাকে তাদের তুলনায় জিহাদকারীদের আল্লাহতায়ালা অকল্পনীয় বেশী প্রতিদান দেন" -সুরা নিসা:৯৫
"তোমাদের উপর জিহাদ ফরয করা হয়েছে যদিও তোমরা তা অপছন্দ কর" - সূরা বাক্বারাহ:২১৬
১২. "জ্ঞান অর্জন করতে সুদূর চীনদেশে যাও"
এটা মূলত মনীষী উক্তি যা রাসুল (স)এর নামে চালিয়ে দেয়া হয়েছে ।
এটা পার্থিব জ্ঞানার্জনকে উত্সাহিত করার উদ্দেশ্যে ব্যবহৃত হয়ে থাকে ।এমনকি নিম্নক্লাশের ইসলাম শিক্ষা বইতেও এটা পাওয়া যায় ।বলা হয় যে এটা বলেছেন রাসূল (স) কিন্তু তা ডাহা মিথ্যা ।
সহীহ বুখারী শরীফে বর্ণীত হাদীস: যে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আমার নামে মিথ্যারোপ করে তার পরিণতি জাহান্নাম ।
১৩. "দোলনা হতে কবর পর্যন্ত জ্ঞান অন্বেষণ কর"
এটাও জ্ঞানার্জনকে উত্সাহিত করতে রাসূল (স) এর নামে চালিয়ে দেয়া আরেকটি জাল হাদীস ।এর কোন ভিত্তি নেই এবং সহীহ হাদীসগ্রন্থসমূহে এর কোন উল্লেখ নেই ।
LâPlace-Transformed Sweetdreamer Rasel Part II
আমার ভুল হতে পারে,এইখানে হাদিস গুলো জাল বলে জানি এবং মানি।কারন ইসলাম নিয়ে আমি পড়েছি এখনো পড়ছি ।ইসলাম নিয়া একটু গবেষনা করলেতা বুঝতে।দয়া করে গবেষণা না করে কথা বলবেন না ।
ফ্রি একটা গল্প দিলাম সাথে জোড়া লাগিয়ে ,
এক পণ্ডিত একদা একটা ছাগল বলির জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন ।পথিমধ্যে ৩জন লোক ছাগলটা খাবার আশায় প্ল্যান করল ।
কিছুদূর যেতেই ১জন বেরিয়ে এসে বলল- নমস্কার ! এ কুকুরটা নিয়ে কই যাচ্ছেন ?
পণ্ডিত তাকে ধমকে বললেন- বেয়াদপ ,আমার সাথেও মশকরা ?
এরপর আবার কিছুদূর যেতেই ২য় লোকটাও একি কথা বলল ।
পণ্ডিত তাকেও ধমকে উঠলেন একিভাবে ।সেইসাথে কিছুটা কনফিউজডও ।
এর কিছুদূর যেতে ৩য় লোকটা বেরিয়ে এল এবং বলল- কুকুর নিয়ে কই যান ?
তখন পণ্ডিতটি আর ধমকালেন না বরং ভাবলেন এতগুলো লোক নিশ্চয়ই মিথ্যা বলছে না বরং এটা আমারই ভুল । নিশ্চয়ই এটা কুকুর ।যাচাই না করেই তিনি ছাগলটা রেখে বাড়ির পথ ধরলেন ।
আসলে একটা মিথ্যা বলতে ও ছড়াতে ছড়াতে একসময় তা এমন হয়ে যায় যে সত্য হতে আলাদা করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে ।
আরো জানতে জেনে নিন কিছু বহুল প্রচলিত জাল হাদিস
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে ফেব্রুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৩২

অনুগ্রহ করে অপেক্ষা করুন। ছবি আটো ইন্সার্ট হবে।




