একটি বিশাল হলরুমের মাঝে আপনি বসে আছেন, সামনে ধুমায়িত কফির কাপ আর হাতে উল্টে পাল্টে দেখছেন নতুন একটি বই। আপনার মত অনেকেই ঐ হলরুমে বই বাছাই করছেন কিংবা নিজেদের মধ্যে শলাপরামর্শ করছেন, ভাল একটি বই কেনার জন্য।
বই কেনার এই দৃশ্যটি পশ্চিমা বিশ্বে নতুন কিছু নয়।
কিন্তু দৃশ্যটি ১০০০ বছর আগের মুসলিম বিশ্বে ছিল খুবই স্বাভাবিক এবং সচরাচর চোখে পড়ার মত। বইয়ের দোকানের প্রচলন যদিও খৃষ্টপূর্ব ৩০০ বছরের আগের, কিন্তু বই প্রকাশনীর আধুনিক শিল্পটির বিকাশ অষ্টাদশ শতাব্দীর মধ্যভাগে, মুসলিম বিশ্বে। বড় মাত্রার প্রকাশনী এবং আধুনিক সরংজামের ব্যবহার শুরু হয় এই সময়টিতে। কাগজ শিল্পের অগ্রগতিও ঘটেছিল এই সময়।
এখনকার পশ্চিমা বিশ্ব যে মানের এবং যে ভলিওমের বইয়ের প্রকাশন ঘটে থাকে, ১০০০ বছরের মুসলিম বিশ্বেও সমমানের এবং সমান সংখ্যার বইয়ের প্রকাশন ঘটত।
ইবনে আল নাদিম যে বইয়ের ক্যাটালগটি বিক্রয় করেছিলেন, তাতে ৬০০০০ হাজারেরও বেশি বই ছিল। নানাবিধ বই ছিল তাতে, ধর্মীয় বই, দর্শন, সাহিত্য, রুপকথা, ভ্রমনকাহিনী, বিজ্ঞানের বই। ১২শত শতাব্দিতে মরক্কোর মারাকেশে যে বইয়ের সরনী গড়ে উঠেছিল, তার দুইপাশে ১০০টি বইয়ের দোকান এবং ৫০টি লাইব্রেরী ছিল।
একটি জনশ্রুতিতে আছে, মারাকেশ যখন ৮মাসের জন্য অবরুদ্ধ ছিল, তখন একজন সাহিত্যিপ্রেমি, ঘর থেকে বেরিয়েছিলেন ক্ষুদার্ত পরিবারের খাদ্য সংগ্রহের জন্য। কিন্তু ফিরেছিলেন বই হাতে নিয়ে।
উইকি - বুকসেলিং
পূর্বে খলিফা আব্বাসের এবং পশ্চিমে কর্ডোবা খিলাফতে উচ্চমানের শিক্ষাদীক্ষা এবং স্কলারশিপের বদৌলতে দামেস্ক, বাগদাদ এবং কর্ডোবায় বইয়ের দোকান, কপিয়িষ্ট এবং বুকডিলারদের বিকাশ ঘটে।
Encyclopædia Britannicaতে লিখা আছে:
স্কলার এবং ছাত্রেরা ঘন্টার পর ঘন্টা পার করে দিতেন বইয়ের দোকানে, বই যাচাই বাছাই কিংবা পড়ার মাধ্যমে। পছন্দের বইগুলো কিনে নিয়ে সমৃদ্ধ করতেন নিজস্ব লাইব্রেরিটিকে। বইয়ের ডিলারেরা নামকরা বইয়ের দোকানগুলোতে ঢু মারতেন, দূর্লভসব বইয়ের সন্ধানে, যা কিনা পরে আবার বিক্রি করা হত উচ্চমূল্যে। এভাবেই ইসলামিক বিশ্বে দ্রুত জ্ঞানের বিকাশ ঘটতে থাকে। আর এভাবেই দূর্লভ সব বইয়ে সমৃদ্ধ হতে থাকে আল গাজ্জাল র: এর ব্যক্তিগত বইয়ের লাইব্রেরীগুলো। সেইসব মনীষীদের বাড়িগুলোও পরিনত হয় জ্ঞান আহরনের মোক্ষম স্থানে।
মুসলমানদের ১০০১টি আবিস্কার - 1001 Inventions Muslim Hritage in Our World
মুসলমানদের ১০০১টি আবিস্কার - ফার্মেসী
সর্বশেষ এডিট : ০৭ ই এপ্রিল, ২০১৮ বিকাল ৩:০৯