somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্প - ইলিশ

৩০ শে সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:২১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
( উৎসর্গ - গুণী ব্লগার সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই )



ইলিশের গন্ধে আজো ঘুরে যায় কত
ঝাঁঝালো বিক্ষোভ, অশ্রু , দুঃখ,পরাজয় ।- সৈয়দ শামসুল হক ।

গাছে তুলে দিয়ে মই কেড়ে নেয়া অথবা চাঁদি বরাবর ধুম করে লাঠির বাড়ি বসিয়ে দেয়া ছাড়া স্বপ্ন রমিজার কোনদিন কি করেছে !

শুক্রবারে শাহরুখ খান কে নিয়ে সাহেবের বাড়ি না গেলে , তার ছোট ছেলের প্লেট হতে ইলিশের টুকরার ছোট একটা অংশ মেঝেতে ফেলে না দিলে এবং শাহরুখ খান শিকারি চিতার মত তা খপ করে তুলে গপ করে মুখে না পুরলে , ইলিশ বলে কিছু থাকত না , স্বপ্নেও আসত না । মরার শুক্রবার ! তখনো ট্যাঁ ট্যাঁ করে কাঁদছে শাহরুখ খান , ওর চোখের পানি রুপালি ইলিশ হলে কলকাতার জামাই ষষ্ঠী অনুষ্ঠানের
পাতে ভালই বিকোত !


' বাপরে , কান্দিস না বাপ ! পরের মাসে টেহা পাইলেই আইন্না দিমু ।' মা রমিজা খাতুনের আশ্বাসে ফোঁপানি আরো বাড়ে , নাকের বাঁশি আরো ফোলে শাহরুখ খানের । কিসের দোহাই
দিয়ে আপাতত ইলিশ হতে রেহাই পাওয়া যাবে রমিজা খাতুনের এমন ফন্দি- ফিকিরের মাঝে শাহরুখ খানের পিতা হাসেম ওরফে গাঞ্জা হাসেইম্যার কাচা ঘুম ভাঙ্গে এবং পাকালাল চোখে সোজা শাহরুখ খানের দিকে তাকিয়ে জমিদারি হাক ছাড়ে , কি অইছে ? কান্দে ক্যান ?
কান্নার কারণ জানার পর প্রথমটায় হেসে উঠলেও এক জাদুমন্ত্র বলে হাসিটা তীব্র রাগে রুপান্তরিত হয়ে জীর্ণ গলার চিকনা রগকে ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে ফেলে '' থাবড়া দিয়া গাল ফাটায় লামু , হালায় ইলিশ মারায় ''
নামক বমশেল ছোট ঘরটায় বিস্ফোরণ ঘটায় ।বিস্ফোরণের সফলতায় শাহরুখের চোখে তৎক্ষণাৎ ফারাক্কা বাধের সৃষ্টি হয় এবং রমিজা খাতুনের মনে অনল প্রবাহের জন্ম হয় ।


''একটু না অয় পোলাটা আউস করছে ! ''- রমিজা ফোঁস করে বলে উঠে ।

আউস শব্দটার সাথে সাথে সায়েবের অগণন দেশি - বিদেশি মাছের হাজিরাওলা রসুইঘরের কথা মনে পড়ে রমিজার ।তার সাথে সাথে চলে আসে করিমার মা - " চুরি - চামারি করবানা কেলাম!! ।
কোনদিন ত বলল
না ''ওরে রমিজা !, তুই এই কয়ডা মাছ
রাখ , তোর পোলাডারে খাওয়াইস ! '' নিজে ত ঠিকই চুরি করস ! সায়েবের বউটাও খাণ্ডারনি ! দিলে দয়া নাই ।
'
- তবে সাহেব লোকটাকে বেজায় ভাল লাগে রমিজার । সাহেব , এত বড় ব্যবসায়ী আবার সামনে ইলেকশন ও করবে , রমিজাকে দেখলেই -

'কি রিনার মা! কেমন আছ ? সবাই কি ভাল ?' - কথাটা শুনতে খুব ভাল লাগে রমিজার । তার মনে একটা ছোট্ট আশা আছে । রিনার বিয়ার সময় সায়েব থেকে মোটা অঙ্কের টাকা চাইবে ।
রিনাকে রমিজা গারমেন্টে লাগিয়ে দিয়েছে , দেখতে দেখতে মেয়েটা
বিয়ার লায়েক হয়ে গেছে ।
সায়েবই বা দিবে না কেন ! সুযোগ পেলে বেডরুমে ডেকে পাঠিয়ে সায়েব যে রমিজার ব্লাউজের ভিতর হাত দেয় - রমিজা কি তা এমনি এমনি দেয় !

'কি যত্ন - আত্নি নেও না কেন ? ভাল মত না খেলে গাছের ফল শুকিয়ে যাবে যে ! - তারপর পকেট হতে ৫০০ টাকার কড়কড়ে নোট ! এমন ঘটনা অবশ্য মাঝে মাঝে ঘটে । এবার এমন হলে
সোজা ইলিশ ! রমিজা আরো ৫০০ টাকা এবার বাড়তি চাইবে ।

সুযোগ আসে না ফলে ভাবনারা ভাবনাতেই থাকে আর প্রতিরাতে
শাখরুখ খানের

মা ইলিশ আনবা না ? কবে আনবা ? এই প্রশ্ন টা রমিজার ক্লান্ত দেহে আগুন ধরিয়ে দেয় । ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও ক্লান্ত দেহে হারামজাদার গায়ে
থাপ্পড় মারা হয় না , উলটা রমিজা বলে , আনমু বাপ , টেহা পাইলেই আন্মু , ঘুমা অহন বলে রমিজা ঘুমের ভান করতে থাকে । তখন হাসেমের উপর বড্ড রাগ হয় ।
'' খাওয়ান - পিন্দানের খবর নাই পোলার নাম রাখছে শাহরুখ খান ! এর লেইগ্যাই ত উঁচা নজর !
বাদাইম্মা ব্যাটায় কাম করলেই অয় , উলটা তারে চালান লাগে ! ''
মাছের ব্যবসা করার জন্য এনজিও হতে ধার নেয়া টাকাটাও মাসখানেক এর মধ্যে উড়িয়ে দিল !
'' হারাদিন আছে
খালি গাঞ্জা টাইন্ন্যা বইয়া থাকন '' । কিস্তির টাকাটাও এখন রমিজার ঘাড়ে ।
আরেক জালান জালায় রমিজার বুইড়া শ্বশুর । প্রতি রাতে আছেই রমিজা পেশাব করুম ! মরেও না , মাসে কয়েকশ টাকা রমিজার বুড়ার পিছনে খরচ করতে হয় ,না করলেও হয় না , বুড়া মানুষ ! আবার যদি নাতি - নাতনিগো অভিশাপ
দিয়া যায় ! '' এই বেডারে কি আল্লাহ চউক্ষে দেহে না ,জুয়ান জুয়ান কত বেডা মরে ! ''
- প্রায়ই এভাবে মনে মনে গজগজায় রমিজা । এই কয়েকশ টাকা জমিয়ে ঠিকই ত বড় একটা ইলিশ আনতে পারে সে !

এদিকে একের পর দিন যেতে থাকে , মা মেয়ের কামানিতেও কোন কূলকিনারা হয় না ,
টাকা হাতে আসার আগেই খরচের খাই টা হাঁ করে থাকে ।ঘিঞ্জি বস্তি হলেও ঘর ভাড়া কম না , রিনার অসুখ - বিসুখ লেগেই থাকে ,
রিনার ছোটটা আলমগির , সেও বার মাস পায়ের ব্যারাইম্যা , প্রতিবন্ধি সে । তার পিছনে ও প্রতি মাসে ভাল টাকা যায় । এনজিওর কিস্তি দিতে হয়
তার উপর আছে হাসেমের বোঝা , ঘাড়ের উপর খাবে - ঘুমাবে গাঁজা টানবে আবার তাকে হাত খর্চা দেও !

এক রাতে তাই নিজ থেকেই রমিজা কথা তুলে -



- এই মাসে তুমি টেহা লইও না , ইলিশ আনি ।
- আমি কি বাতাস খায়া চলুম ?
- কেমুন মরদ তুমি ? বউয়ের কামানি খাও , শরম করে না তুমার ?
- তরে রাখছি এডাই ত বহুত , বেশি তাফালিং মারাইলে তালাক দিমু কয়া দিলাম ।
রমিজা নেতিয়ে যায় । ঠিকই ত ! মাথার উপর সাইনবোর্ড স্বামী আছে বলেই না শিয়াল - কুত্তা জালায় না । যাদের স্বামী নাই তাদের অবস্থা কি নিজের চোখেই দেখে রমিজা । মেয়ে মানুষ , হোক৪ ,হোক ৮৪
কারো রেহাই নাই । তাছাড়া বিয়ের সময় রমিজার নানিও বলছিল '' সোয়ামীর ঠ্যাং এর নিচে বেহেস্ত !



রমিজারে ! হাশেমের ডাকে হঠাৎ সম্বিত ফিরে রমিজার ।
- কাছে আহো ! বলে হাশেম রমিজাকে নিজের দিকে টেনে নেয় । বুকে চেপে ধরে রমিজার ব্লাউজের বোতাম খুলতে থাকে ।

- আইচ্ছা দেহি , টেহা না অয় কম লমু , ইলিশ ত অনেক দিন কেউ ই খাই না । তুই জমাইতে থাক । আন ইলিশ আন , মরার মাছ এইডার যে এত দাম !
- ইন্ডিয়ায় না গেলে হস্তাই থাকত ।
ঠিক ! রমিজার অপুষ্ট বুকের দিকে তাকিয়ে কথাটা খাঁটি সত্যি মনে হয় হাসেমের ।
বেবাক ইলিশ ইনডিয়া যায় , এর লাইগাই ইন্ডিয়ান নায়িকাগো সিনা এমুন জেল্লাই , তেলতেইল্লা , বুঝতে পেরে হাসেম মিয়ার প্রচণ্ড রাগ হয় , রাগটা আরও বেড়ে যায় যখন মনে হয় তার শ্বশুরবাড়িতে তাকে কখনো ইলিশ খাওয়ানো হয়নি , রুই মাছ , কাতাল মাছ খাইয়েছে বটে , কিন্তু ইলিশ ? না !


হাসেম তখন রমিজার স্তন হাত দিয়ে দুমড়ে - মুচড়ে দিতে থাকে । রমিজা তীব্র ব্যথায় গোঙ্গিয়ে উঠে এবং মৃদু কেঁদে দেয় ।
- এমুন করেন ক্যান ? - রমিজা ব্যথা সামলিয়ে জিজ্ঞেস করে ।
- চোপ ছিনাল মাগী ! আমারে তোর বাপে ইলিশ খাওয়াইনেই ক্যান ?আমি গরিব - গুরবা বইল্লা ?

ততদিনে শাহরুখ খানের আবদার কমে কমে নাই হয়ে গেছে ।সে ধরে
নিয়েছে তার মা আর ইলিশ আনবে না । কিন্তু সে জানে না রমিজার হাতের মুঠোয় একটু একটু করে ইলিশ স্পষ্ট হচ্ছে ।






'' আরেকটু সবুর কর বাপ ইলিশ আইতাছে "' ! - ঘুমন্ত ছেলেটার মুখের দিকে তাকিয়ে বড্ড মায়া হয় রমিজার । সোনা আমার ! জাদু আমার! অনেক দিন ধরেই শাহরুখ আর ইলিশ এর কথা বলে না , কতরকম করে
যে ইলিশের কথা বলত শেষ দিকে !
- আইচ্ছা মা , ইলিশ বিলে দরিয়ায় ( সাগর) থাকে ?
- হ বাজান !
- হেরপরে নদীত ঘুরতে আইয়া পড়ে ?
- হ বাপ !
- নদীত আহে কিল্লাইগা ?
- ডিম পারতে !
- কবিরায় কয় ডিমওলা মাছ বিলে বেশি মজা ?
- হ বাপ ।
- তুমি কি ডিমওলা মাছ আনবা মা ?
- হ বাপ , আনমু রে আনমু । রমিজা শাহরুখ কে বুকে জড়িয়ে ধরত ।



রমিজা বেগম ঠিক করে রেখেছে একটা পদ্মার ইলিশ কিনবে , ডিমওলা , একটু বড় দেখে , সবাই মিলে ভালমত খেতে পারে মত । একসময় সেই কাঙ্খিত দিন আসে । রমিজা বাজার হতে বড় একটা ডিমওলা ইলিশ কিনে ফেলে । রুপালি চিকচিকে দেহটার দিকে মুগ্ধ হয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকে রমিজা । আহ ইলিশ ! সাথে বাজার থেকে কাচকলা কিনে ।বাসায় নিয়ে আসে । আজ যেতে পারবে না এই কথা মোবাইল করে রমিজা সাহেবের বাসায় বলে দেয় । ঘরে এসে শাহরুখ কে না দেখে খুশি হয় রমিজা । সে ঠিক করে একদম রেঁধে তারপর শাহরুখ কে ডাক দিবে ।
পারে ইলিশ দেখলে শাহরুখের মুখটা যেমন হবে সেটা কল্পনা করে হেসে ফেলে রমিজা ।বাছা আমার ! তারপর আল্লাহর নাম নিয়ে রাঁধতে বসে যায় । রাঁধতে গিয়ে প্রথমে একটু ইতস্ততবোধ, ভয় ও দ্বিধা কাজ করে তার । সেই কবে ইলিশ রেধেছে ! ভাল করে কি রাঁধতে পারবে ?

এক মুহূর্তকাল মাত্র । তারপর সব দ্বিধাদ্বন্দ্বকে হটিয়ে দিয়ে পরম যত্নে ও মমতায় রাঁধতে বসে যায় রমিজা । রাঁধতে রাঁধতে তার ছোটবেলার কথা মনে পড়ে । আহা ! সে সময় কত ইলিশ খেয়েছে । কত রকম করে , কতভাবে ! কেউ ইলিশ রাঁধলে তার উঠান দিয়ে যাওয়ার সময় টের পাওয়া যেত ।
আহা ! এখন যে কি সব দিন এল !

শাহরুখ না বললে টের ও পাওয়া যেত না শাহরুখের জন্মের পর হতে এই ৮ বছর কোন ইলিশ খাওয়া হয়নি ।

কিছুক্ষণ পর ইলিশের মাতাল গন্ধে পুরো ঘর ভরে উঠে । চামচ দিয়ে একটু
সুরুয়া মুখে তুলে নিতেই আনন্দে চোখে পানি চলে আসে রমিজার ।
গন্ধটা সারা ঘর ঘুরাফিরা করে । ইলিশের রুপালি সুবাস নাকে যেতেই
অসুস্থ ঘুমন্ত শ্বশুর শোয়া হতে লাফ মেরে উঠে বসে পড়ে । এতদিন পরেও
এটা কিসের গন্ধ তা বুড়োকে বলে দিতে হয় না । আপনা আপনি ই তার মুখে হাসি ফোটে ।


- ইলিশ আনলা বউ ? বহুত দিন পর গন্ধ পাইলাম ।
অনেক দিন পর রমিজাও শ্বশুরের দিকে হাসিমুখে তাকায় ।
- হ বাবা ! আপনের নাতির লেইগা আনছি ।

মোহময় আকর্ষণে পাশের ঘরের সোহেলের মা ও রমিজার রান্না ঘরে
চলে আসে ।

ইলিশ রান্তাছ বইন ?কোন বাজার থেইকা কিনলা ?
রমিজাকে বললেও চোখটা ইলিশের দিকে সেথে থাকে মহিলার । নিজের ছেলে সোহেলের কথা মনে হয় ।
অনেকদিন হল ইলিশ ত দূরে থাক ভালমত মাছ খাওয়াই হয় না তাদের । ইলিশের চকচকে পিঠ দেখতে দেখতে চোখের কোণে পানি জমে যায় মহিলার ।
নিজের ছোটো ছেলে সোহেলের শুকনো মুখটা যেন ইলিশের টুকরায় দেখতে পায় ।
রমিজার মা এই চোখ চিনে । খারাপ লাগে রমিজার । অন্য মাছ হলে দেয়া যেত কিন্তু এটা ত ইলিশ ! কতদিন পর কত কষ্টে ইলিশ
এসেছে রমিজার ঘরে! শাহরুখের মুখটা ভেসে উঠতেই রমিজার দ্বিধাদ্বন্দ্ব কেটে যায় ।

- অহন যাও বইন ! গাও - গোসল দিমু ।

গোসল করে এসে রমিজা শাহরুখের জন্য অপেক্ষা করতে থাকে । আসতে দেরি দেখে আশেপাশের ছেলেপুলেদের কাছে শাহরুখের খবর নেয় । কিন্তু কেউ তার খবর বলতে পারে না ।
এর মধ্যে হাশেম ও ঘরে আসে এবং গন্ধে পেট মোচড় দেয় তার ।
রমিজা হেসে বলে , আজ সবাই মিল্লা খামু । পোলায় আহুক ।
রমিজা জানে না , শাহরুখ তখন মিছিলে আছে , বিল্লাল ভাই ডাকলেই সে ও তার মত কিছু ছেলে - পিলে মিছিলে যায় , মিছিল শেষে পাউরুটি পায় ।
শাহরুখ খান তখন মিছিলে , সবার সাথে তাল মিলিয়ে সেও বলছে ডাইরেক্ট একশন - আগুন জ্বালো গান - রোডের এ মাথা হতে অ মাথা , একশন শেষ হলে বিল্লাল ভাই পাউরুটি দেবে !

কিরে শাহরুইখ্যা , ও তুই ত আবার শাহরুখ - জেলি ছাড়া পাউরুটি ক্যামনে খাবি , জেলি ত নাইরে - জেলি কই পাই ! কই পাই ! সবাই হো হো করে হাসে । এভাবেই চলে - শাহরুখের কোন কথাই মাথায় ঢুকে না - সে বিল্লাল ভাইয়ের হাতের দিকে চেয়ে থাকে ।
পাউরুটি কি নরম ! কি নরম ! মিছিলের শেষ প্রান্তে যখন শাহরুখ পাউরুটির গন্ধ পায় - বিল্লালের হাতের গন্ধ পায় , - ধুম ধুম ধুম - বোমাগুলি ফুলের মত পাপড়ি ছড়িয়ে -হাউ - মাউ - কাউ - মানুষের গন্ধ পাউ ।ধোয়ায় কিছু দেখা যায় না , পরিস্কার হলে পরে সবাই দেখে
শাহরুখ শুয়ে আছে রোডের উপর ! বুকের উপরটা লাল !

তারপর কিছু লোকের কোলে করে শাহরুখকে বয়ে আনা ............. সামনে - পিছনে অনরবত চিৎকার - চেঁচামেচি ................ তারা রমিজার দিকে কেবলামুখি হয়ে এগুতে থাকে ......... শাহরুখ শাহরুখ....... বাতাসে ইসপাস- ফিসফাস ...... শাহরুখ কে দেখেই রমিজা দৌড়ে আসে .....
রমিজার '' শাহরুখ '' উচ্চারণে বাতাস ও মানুষগুলো কাপে এবং রমিজার মাথার খুলি ফাঁক এন্ড ফাক হতে থাকে , মগজে ঢুকে পড়ে রাশি রাশি বাতাস , সাথে পানি সাথে ইলিশ সাথে শাহরুখ
ঘ্যাচঘ্যাচ করে রমিজার মাথার করোটি কাটতে থাকে , চাটাই নিয়ে আসে কেউ একজন এবং ঘরের বাইরে উঠোনের মত ছোট্ট খোলা জায়গাটায় শাহরুখ কে শুইয়ে রাখা হয় । তখন শাহরুখ - ছোট্ট সুন্দর শরীরটা মাছের মত খোলা চোখে , রোদ লাগা ইলিশের পিঠের মত ঝলমল করতে থাকে । শাহরুখের মুখের কাছে এসে বসে রমিজা ।

তখন রমিজা শান্ত বিমূঢ স্থির কিন্তু বিশ্রী , দুপুর রোদে ভেজা খড়ের
মত খরখরে। শাহরুখ কে ঘিরে বাড়তে থাকে ভিড় , দাড়িয়ে থাকে অসংখ্য শিশু , তাদের অনেকে শাহরুখের খেলার সাথী অবশ্যই । এদিক - ওদিক ঘোরা অসংখ্য কিশোর - যুবক এবং হাড্ডিসার বৃদ্ধগুলো যাদের অবনত মস্তক কিন্তু দৃষ্টি স্থির , তারা চেয়ে থাকে ।

তখন প্রচণ্ড নীরবতা , কেটে যায় অসহ্য নিস্তব্ধতা হঠাৎ , শুরু হয় ইসফাস - ফিসফাস , হই - হই , রৈ - চৈ কেননা তখন সাবেক সাংসদ গিয়াসুদ্দিন সাহেবকে আসতে দেখা যায় , যিনি বিরোধীদলীয় নেতা অবশ্যই এবং তার পুণ্যহাত যার উপর - রমিজার সাহেব আসাদ চৌধুরী
তিনি ও অসংখ্য লোক গিয়াসুদ্দিন সাহেবের পিছন পিছন ছোট্ট শাহরুখের লাশের দিকে আগাতে থাকে । শাহরুখের কালঘুমে চোখ- বোজা আহ্লাদি লাগে লাগে চেহারার দিকে তাকিয়ে গিয়াসুদ্দিন সাহেবের রুমালখানি তার সুরমামাখা চোখে চলে আসা মাত্রই কিছু লোক শাহরুখ কে খাটিয়ায় তুলে বিচার চাইবে বলে শহর ভ্রমণে যায় ।

রমিজা দাঁড়িয়ে পড়ে , ওভাবেই থাকে শান্ত অব্যক্ত স্থির হয়ে এবং হাশেম মিয়া এমপি সাহেবকে সালাম দেয় । গিয়াসুদ্দিন সাহেব ,রমিজার সাহেব , নেতা কর্মী , টিভি - প্রিন্ট মিডিয়ার সাংবাদিক - ফটোগ্রাফার
- রিপোর্টার রমিজাকে ঘিরে দাড়ায় এবং উৎসুক আমজনতা তাদের ঘিরে দাড়ায় । কেবলমাত্র সাবেক এমপির সাথে আসা রিপোর্টার মহিউদ্দিন ইচ্ছে করেই আস্তে আস্তে পিছনে চলে যায় কেননা লোকগুলোর ফিসফাস তাকে জানতে হয় । তখন স্নায়ুগুলির খটখট শব্দের টাইপিং , এডিটিং এন্ড এভিরিথিং প্রসেসিং এর হুরুস্থুলে তার মাথাটা নাস্তানাবুদ !

তবুও শাহরুখ ইলিশ খাইতে পারেনাইক্কা - লোকজনের বলাবলিতে এমন টা শুনতে পেয়ে খাপে খাপ পারফেক্ট ম্যাচ হেডলাইন আবিষ্কৃত হওয়ার আনন্দে তার ক্লান্ত নিউরণগুলো ইউরেকা কয়া উঠে । তখনো সাবেক এমপি ও তার পেয়ারের ফটোগ্রাফার মোসাদ্দেক আলি বিরক্তিতে উত্তাল কারণ রমিজার চোখে অশ্রুর দেখা নেই মোসাদ্দেক আলি চোখ টিপ দিলে পকেট হতে ১০০০০ টাকা বের করে গিয়াসুদ্দিন রমিজার হাতে দেয় , সে হাত কইয়ের মত পিছল -ছাই নাই তাই হাশেম মিয়া টাকার বান্ডিল -টা নিয়ে লুঙ্গির খোপে গুজে রাখে ।তখনো রমিজা ফালতু - বেহায়া , কাঁদে না - সে বোঝে না ছেলের জন্য কাঁদতে হয় !

কান বেটি কান !
- মনে মনে রেগে মুসিবতে ফটোগ্রাফার মোসাদ্দেক আলি তখন কাঁচের মত খান খান যেহেতু নোনাপানির অভাবহেতু ক্যামেরা শ্মশান এবং তার ও গিয়াসুদ্দিন সাহেবের বিরক্ততা তখন প্লাসে প্লাসে পাবন । সহসা রমিজার পিছনে দাঁড়ানো আসাদ সাহেব ইশারা দিতেই গিয়াসুদ্দিন সাহেব রমিজাকে বুকে জড়িয়ে ধরেন , ডানহাতে তার মাথায় হাত বুলাতে থাকেন এবং গা ঘেঁসে দাঁড়ানো আসাদ সাহেব সবার চক্ষু অগোচরে অসামান্য দক্ষতায় পিছন হতে রমিজার স্তন টিপে দেন ।তীব্র ব্যথায় রমিজার মুখটা কুঁচকিয়ে সবার বহুল প্রত্যাশিত '' চোখে - পানি '' চলে আসে এবং পারফেক্ট ! ফ্লাশ জ্বলে উঠা মাত্র সচতুর আলি তার দীর্ঘদিনের চোরাবালি অভিজ্ঞতায় বুঝে যান জীবনের সেরা একটি ছবি আজ তিনি পেয়ে গেছেন ।তারপর সে গিয়াসুদ্দিনের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিয়ে কাজ শেষ হবার ইঙ্গিত দিলে গিয়াসুদ্দিন রমিজাকে ছেড়ে দেয় ।
তিনি চলে যাবার পর তার দলের একজন কর্মী হাসেমের লুঙ্গির গোঁজে হাত দিয়ে টাকার বান্ডিলটা হাতে নেয় এবং সেখান হতে একটি মাত্র নোট হাসেমের দিকে ছুড়ে মারে । হাশেম কেঁদে দেয় ।


রাতে সারাদেশ টিভি মারফত শাহরুখের কথা জেনে যায় এবং এটাও দেশবাসী জানতে পারে যে শাহরুখ ইলিশ না খেয়েই মারা গেছে । অনেকে এই ঘটনায় দারুণভাবে দুঃখিত হয় এবং আফসোসে চুকবুক করতে থাকে । বেসরকারি টিভি চ্যানেলগুলোয় বার বার শাহরুখের মরা ছবি ও গিয়াস সাহেবের কান্নারত রমিজাকে বুকে জড়িয়ে ধরার দৃশ্য প্রচারিত হয়। তা দেখে মোসাদ্দেক আলিকে তার কলিগরা পিঠ চাপড়ে দেয় । এছাড়াও এটা যে তার তোলা অন্যতম সেরা ছবি এবং মোসাদ্দেক আলি এ বছর যে কোন আন্তর্জাতিক পুরুস্কারে ভূষিত হতে যাচ্ছে এ ব্যাপারে সবাই নিঃসন্দেহ হয় ।


বিরোধী মতের পত্রিকার সম্পাদকেরা শাহরুখ খানের ছবি সমেত - '' ইলিশ খাওয়া হল না শাহরুখ খানের " শিরোনামটি লাল কালিতে বোল্ট করে ছাপাতে প্রেসকে বলে দেয় । অনলাইন সেলিব্রিটিরা রা
ইলিশ খেতে না পাওয়া শাহরুখের ছবিটা ব্লগে , ফেসবুক , টূইটারে আপলোড দেয় এবং তাদের ব্লগ , ফেসবুক ফ্রেন্ড ও ফোলোয়ার রা শাহরুখের ছবিটা তে ট্যাগ , লাইক , কমেন্ট ও শেয়ার করে অন্যান্য যাবতীয় মননশীল কাজে নিজেদের মনোনিবেশ করান । বিরোধীদলীয় নেতা গিয়াস সাহেবের ত্বরিত বুদ্ধিমত্তার প্রশংসা করেন এবং জালিম সরকারের মাসুম বাচ্চা কে মেরে ফেলার প্রতিবাদে হরতালের ঘোষণা দেয় ।সরকারী দল প্রেস বিফ্রিং এ এটা যে বিরোধী দলের যড়যন্ত্র এটা জাতিকে অবহিত করে এবং তাদের থেকে সতর্ক ও তাদের প্রতিহত করার আহবান জানায় । সবশেষে পরের দিন তারা প্রতিবাদ সমাবেশের ঘোষণা দেয় ।



ওদিকে রমিজা অনেকক্ষণ না কাঁদলেও শাহরুখ কে দাফন করতে নিয়ে যাবার সময় কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে এবং অজ্ঞান হয়ে যায় ।বাদ এশা শাহরুখ খান কে কবর দেয়ার পর হাসেম মিয়া ঘরে আসে ।অজ্ঞান রমিজাকে বেশ কয়েকবার ডাকার পর রমিজা না উঠায় হাসেম মিয়া ক্ষান্ত দেয় । কিছুক্ষণ পর রিনা সোহেলের মার দেয়া ভাত ও রমিজার রান্না করা ইলিশ বেড়ে
সবাইকে খেতে ডাকে । সোহেলের মা ভাত দেয়ায় রিনা সোহেলের মাকে
২ টুকরা ইলিশ দেয় । শোকে - তাপে - পরিশ্রমে এবং ডেকচিতে
ইলিশ দেখে সবার খিদে মুহূর্তে দাউ দাউ হয়ে যায় এবং সবাই মিলে
লুটেপুটে হাতে - চেটে খেতে থাকে । টুকরাগুলো হাপিশ হতে থাকে
এবং বিপদ দেখে শেষ পর্যন্ত এক টুকরা ইলিশ মাছ রিনা রমিজার জন্য
হাল্কা ঝোলসমেত সরিয়ে রাখে ।তারপর বেঘোরে সবাই ঘুমিয়ে পড়ে ।

মাঝরাতে ২ টার দিকে রমিজার ঘুম ভাঙ্গে । ঘুম ভাঙ্গার পরই তার পেটে খিদে চাগিয়ে উঠে এবং নিজের অজান্তেই রমিজা রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে যায় । সবাই তখন গভীর ঘুমে নাক ডাকছে । আলো জালিয়ে
ইলিশের ডেকচির দিকে রমিজা তাকায় । ঝোলের মাঝে দেখা যায় শাহরুখের মুখ , ঘৃণায় - বিরক্তিতে ডেকচিটা উলটে দিতে ইচ্ছে করে তার ।
ঠিক তখনি ইলিশ দাঁড়িয়ে যায় তার অসামান্য রাজকীয় মহিমা নিয়ে , প্রবল সুগন্ধ স্রোত তৈরি করে রমিজার নাকে ঢুকে সোজা পাকস্থলিতে চলে গিয়ে হাত বুলাতে থাকে এবং হলিউড - বলিউড নায়িকাদের ন্যায় আবেদন সৃষ্টি করে । রমিজা তা উপেক্ষা করতে পারে না , সাড়া দেয় , ডেকচিটা মাটিতে রাখে , প্লেট নেয় এবং সবশেষে দুর্দমনীয় সৌরভের
দিকে হাতটা বাড়ায় ।









সর্বশেষ এডিট : ২২ শে মে, ২০১৫ বিকাল ৫:৩৭
৪৩টি মন্তব্য ৩৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

দু'টো মানচিত্র এঁকে, দু'টো দেশের মাঝে বিঁধে আছে অনুভূতিগুলোর ব্যবচ্ছেদ

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ রাত ১২:৩৪


মিস ইউনিভার্স একটি আন্তর্জাতিক সুন্দরী প্রতিযোগিতার নাম। এই প্রতিযোগিতায় বিশ্বের বিভিন্ন দেশের সুন্দরীরা অংশগ্রহণ করলেও কখনোই সৌদি কোন নারী অংশ গ্রহন করেন নি। তবে এবার রেকর্ড ভঙ্গ করলেন সৌদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার প্রফেশনাল জীবনের ত্যাক্ত কথন :(

লিখেছেন সোহানী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সকাল ৯:৫৪



আমার প্রফেশনাল জীবন বরাবরেই ভয়াবহ চ্যালেন্জর ছিল। প্রায় প্রতিটা চাকরীতে আমি রীতিমত যুদ্ধ করে গেছি। আমার সেই প্রফেশনাল জীবন নিয়ে বেশ কিছু লিখাও লিখেছিলাম। অনেকদিন পর আবারো এমন কিছু নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমি হাসান মাহবুবের তাতিন নই।

লিখেছেন ৎৎৎঘূৎৎ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



ছোটবেলা পদার্থবিজ্ঞান বইয়ের ভেতরে করে রাত জেগে তিন গোয়েন্দা পড়তাম। মামনি ভাবতেন ছেলেটা আড়াইটা পর্যন্ত পড়ছে ইদানীং। এতো দিনে পড়ায় মনযোগ এসেছে তাহলে। যেদিন আমি তার থেকে টাকা নিয়ে একটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তিযোদ্ধাদের বিবিধ গ্রুপে বিভক্ত করার বেকুবী প্রয়াস ( মুমিন, কমিন, জমিন )

লিখেছেন সোনাগাজী, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ বিকাল ৫:৩০



যাঁরা মুক্তিযদ্ধ করেননি, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে লেখা তাঁদের পক্ষে মোটামুটি অসম্ভব কাজ। ১৯৭১ সালের মার্চে, কৃষকের যেই ছেলেটি কলেজ, ইউনিভার্সিতে পড়ছিলো, কিংবা চাষ নিয়ে ব্যস্ত ছিলো, সেই ছেলেটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সাংঘাতিক উস্কানি মুলক আচরন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ২৮ শে মার্চ, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৪



কি সাঙ্ঘাতিক উস্কানিমুলক আচরন আমাদের রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রীর । নাহ আমি তার এই আচরনে ক্ষুব্ধ । ...বাকিটুকু পড়ুন

×