somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইমন জুবায়ের ও আমার , যাপিত জীবনের জন্য এলিজি ।

১০ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৫৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




We were born into the world
One day
The sun in the late afternoon
Will beck on us to the window
By chance we shall spiritualize
An unusual sunset
- Boris Pasternak

অনেকদিন পর সেদিন সকালে ব্লগে ঢুকে দেখি ইমন জুবায়ের নেই ।
মুহূর্তেই মাথাটা ঘোলা হয়ে গেল , আর কিছু ভাবতে পারছিলাম না ।
আমি উদাসশুন্য হয়ে গেলাম । পাশে ছিল শুভ । ওর পিসি থেকে ব্লগে
ইন করেছিলাম ।
শুভ বলল - কি হয়েছে ?

আমি বললাম - ইমন জুবায়ের নেই !

তারপর থেকে ইমন জুবায়ের নিয়ে একের পর এক পোস্ট এল , আমি গোগ্রাসে পরে গেলাম । ইমন জুবায়ের এর ছবি দেখা সেই প্রথম ।

মাথায় বার বার একটা নাম ভাসছিল ।

ইমন জুবায়ের ! ইমন জুবায়ের !

শুভ বলল - ভাই দেখেন ইমন ভাই মরছে কতজনে কত পোস্ট দিচ্ছে ।
আমি মরলে কেউ খবর ও নিবেনা ।

আমি চমকালাম । কারণ একথা সত্যি । আমি মনে মনে বললাম -
কিন্তু তোমার মা কাঁদবে , হাউ মাউ করে । আর কেউ না কাঁদুক , মা কাঁদে।
জানে অর্থহীন , তবু কাঁদে । জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাঁদবে ।কিভাবে কেঁদে কেঁদে যাবে তুমি কল্পনাও করতে পারবে না !


আমি জানি । আমি এমনটা অনেক দেখেছি । দেখব ও ।

এই ত সেদিন কাদের মোল্লার ফাসি দেবার আগের দিন আমার প্রতিবেশী
জলিল ভাই এর বস্তাবন্দি লাশ নদীতে পাওয়া গেল । জমি নিয়ে প্রভাবশালী দের সাথে তার বিরোধ ছিল । ওরা জলিলকে বলল - ৩ দিনের মাথায় দেখে । দেখে নিয়েছে বটে !


জলিয়ের লাশ ঠিক এইভাবে পাওয়া গেছে - জিহবা নেই , কান নেই , হাত নেই , লিঙ্গ নেই , বুকের পাজর ভাঙ্গা । শরীরে ছ্যাকার দাগ আছে , হাঁটুর হাড্ডিটা ভাঙ্গা আছে । সবকিছু মিলে ফাইনালি এই জলিল ।

মর্গে লাশ সনাক্ত করতে হবে । কে যাবে ? পুলিশ বলল মাত্র একজন যান । সবাই যাওয়া ঠিক হবে না । সবাই বলল - হ্যা , সবার যাওয়া ঠিক হবে না ।

মা তখন পা বাড়াল । বউ দাঁড়িয়ে । প্রসব বেদনা সহ্য করা মা সেদিনও
অসীম ধৈর্যের পরিক্ষা দিলেন । নতুন করে চিনে নিলেন ছেলেকে।

আমার মা বললেন , জলিলের মা প্রতিদিন কাঁদে । আমার খুব খারাপ লাগে রে ।
আমি বললাম - হু ।

মা বললেন - তুই কোথাও একা একা যাবি না ।

আমি বলি - আচ্ছা ।
মা বললেন - দিনকাল খুব খারাপ । মানুষ আর মানুষ নেই ।
আমি বলি - হু ।

মা বললেন - গণ্ডগোল এর মধ্যে একদম থাকবি না ।
আমি বলি - আচ্ছা ।

মা বললেন - খুব চিন্তা করি তোর জন্য । মন টা কাপে । তুই ত আলাভোলা। হাটার সময় হুশ থাকে না তোর । দেখে শুনে চলিস ।

মা বললেন - তোকে আমি আল্লাহর হাতে ছেড়ে দিছি । আল্লাহই তোকে দেখবেন ।




আমি বলি - আচ্ছা । তুমি ভেবনা মা। আমি ঠিক আছি । আমি সাবধানে আছি ।

মনে মনে বললাম - সব কিছু থেকে আমি পালিয়ে আছি । কোন চিন্তে নেই । বোমা ফুটলে আগেই খবর পাই । আমি আর সেই রাস্তায় যাই না ।
আমি নিরাপদে আছি । এইত আমি ব্লগে ফেসবুকে তামাশা করি ।

আমি কোন খেলায় নেই ,গ্যালারিতেও নেই ।আমি ভাল আছি । ভাল থাকা আমির ইমন জুবায়েরের কথা মনে পড়ে । আহ ! ইমন জুবায়েরের জীবন !
রাস্তার টোকাই - তার জীবন ও জীবন , ইমন জুবায়ের এর টাও জীবন ।
কত ফারাক ! এই শুভ ভেবে দেখ কত ফারাক ! ১৫০০ পোস্ট । জীবন
কিভাবে ইমন জুবায়ের কে তাড়িয়ে নিয়ে গেল । ইমন জুবায়ের
এমন এক সমুদ্রে পড়েছিলেন , তার কোন তলা নেই । জ্ঞানের ভেতর ভ্রম আছে ,
বিভ্রম , মায়া আছে , । ছল ও আছে । জানা মানে আরো জানা , খালি অতল , বিদিশার নিশার মত অন্ধকার । মানুষ প্রথমে এটা টের পায় না ।
কারণ জ্ঞান সুড়ঙ্গমুখে অপার আনন্দ ঝিলিমিলি করে ।পরমানন্দে
চলে অবগাহন । সে সাঁতরাতে থাকে , হাতড়াতে থাকে ।
হাতরিয়ে হাতরিয়ে যাও হে পথিক , হাহাহ । তুমি আর পথের দেখা পাবে নাকো । কিভাবে পাবে ?


মুসা নবী ( আং ) এক মজলিশে বললেন - আমি সবচেয়ে জ্ঞানী ।
আল্লাহ বরদাস্ত করলেন না । বললেন - হে মুসা ! তোমার চেয়েও জ্ঞানী আছে । তোমার ত ইলমে লাদুন্নি ( গোপন জ্ঞান ) নেই । তা আছে খোয়াজ
খিজিরের( আং ) কাছে । মুসা খিজিরের ( আং ) এর কাছে গেলেন । সে আরেক কথা ।


সমুদ্র হতে পাখি কেবল তার ঠোঁটের আজলা পর্যন্ত পানি নিতে পারে ।
আল্লাহ বলেন - হে মানুষ ! তোমার জ্ঞান ও এরুপ ।পাখির মত । এর বেশি তুমি নিতে পারবে না ।

তারপর ও এই জ্ঞানের দিকে আল্লাহ মানুষকে ঠেলে দেন । হযরত মুহাম্মদের ( সং ) প্রতি আল্লাহর প্রথম নাজিল কৃত আয়াত ই হল '' পড়'' ।

আর কিতাবের এখানে - ওখানে বার বার জ্ঞান অর্জনের তাগিদ । নবী বললেন - দরকার হলে সুদূর চীনে যেতে । ত মানুষ জ্ঞান নিতে থাকে । সে জ্ঞানের কি দাপট ।কোথাও অর্থনীতিকে নাকচ করে হিসেব বিজ্ঞান ,
কোথাও সমাজবিজ্জান কে ভেংচি কাটে নৃতত্ত্ব । পাখির ঠোঁটে আটা জ্ঞানে জ্ঞানে মানুষ গিট্টু লাগিয়ে ফেলে । মহান আল্লাহ সেই খেলা পরমানন্দে উপভোগ করেন । হাহাহহ , না বাপু এই খেলায় থাকতে আমি রাজি না। এ খাঁচা ভাঙব না । এই বোচকা টানতে আমি রাজি নই ।খেলব না খেলা - আড়ি , আড়ি ।







আমি তখন নিঃশ্বাস ফেলতে সাহিত্ত্যে চলে আসি । ওমা ! এখানেও দেখি খেলা । কবিগুরু নিজেই খেলছেন - '' আমি পরানের সাথে খেলিব আজিকে
মরণখেলা , নিশীথ বেলা । '' বাবারে ! রবীন্দ্রনাথের খেলার মূলধন কি ছিল ? -
সাহিত্যকর্ম ? ব্যক্তি রবিন্দ্রনাথ ? শান্তিনিকেতন ?
মূলধন যাই হোক রবিন্দ্রনাথ জিতে গেছেন । তার শেয়ার মূল্য উত্তরোত্তর
বৃদ্ধি পাচ্ছে । জীবিতকালে ঝাটা - জুতা খেলেও এখন তিনি বাঙ্গালির
কাছে নমঃ নম: ।

ইমন জূবায়ের ও জিতে গেছেন । ভদ্রলোক নির্মোহ ছিলেন , নির্লোভ ছিলেন , সর্বোপরি ঘোরে ছিলেন । ঘোরে থেকেই মরণ ঘরে চলে গেছেন ।

আমি কি করলাম ? একখান অবিস্মরণীয় গাইড ও বের করলাম না !
তখন গাইডের পেছনে আমিও বলতে পারতাম - '' আমি এমন কি করিলাম যার জন্য এদেশের মানুষ আজীবন আমাকে স্মরণ করবে ? ""
হাহাহা । জীবনের ছাপ কোথাও রাখা হচ্ছে না । প্রবাহমান কালের
স্রোতে আমিও কচুরিপানার মত ভেসে যাব । আরো লাখ লাখ , কোটি কোটি
মানুষের মত । গেলে গেলাম । দুঃখ নেই । জীবন কালে নিজআত্মা
নিজ কব্জায় থাকলেই হল । what shall it profit a man if he gain the whole world and loss his own soul .

অমরকান্তি রোদ্দুর হতে চেয়েছে । আমিও চেয়েছিলাম একসময় । এখন ছায়া ও হতে চাইনা । খেলাঘরে তাই আমি যাচ্ছি না । দরকার নেই । যাব না । ইমন জুবারের শত ডাকলেও ।
ডান দিকের ছবিটা তাই দেখেও দেখব না । তার চেয়ে বরং চাঁদকে রুটি বানিয়ে ভাজি দিয়ে খেয়ে ফেলব । সূর্যকে বেলা বিস্কুট বানিয়ে চায়ের সাথে চুবিয়ে খাব । আমি আল মাহমুদের পাখির মত বন্য হব । সেটাই ভাল ।
তবু খেলব না , খেলব না । কেন খেলব ?when we are born , we cry that we are come, To this great stage of fools . KING LEAR. বোকাদের সাথে কে খেলে ?



হে ইমন জুবায়ের ! আপনি ভাল থাকুন । ওপারের জগতে
জানার যন্ত্রণা নেই , ছটফটানি নেই । আপনি শান্তিতে থাকুন ।

এদিকটায় আমিও ভাল থাকি ।
জেনে রাখুন আমি আপনাকে মনে রাখব ।

Any man's death diminishes me
Because I am involved in mankind.
- John Donne
















সর্বশেষ এডিট : ১০ ই জানুয়ারি, ২০১৪ রাত ১১:৫৪
৪৯টি মন্তব্য ৪৯টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছবির গল্প, গল্পের ছবি

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৩:১৫



সজিনা বিক্রি করছে ছোট্ট বিক্রেতা। এতো ছোট বিক্রেতা ও আমাদের ক্যামেরা দেখে যখন আশেপাশের মানুষ জমা হয়েছিল তখন বাচ্চাটি খুবই লজ্জায় পড়ে যায়। পরে আমরা তাকে আর বিরক্ত না করে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে লীগ আইডেন্টিটি ক্রাইসিসে জামাত

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ৯:৪৬


বাংলাদেশে রাজনৈতিক ছদ্মবেশের প্রথম কারিগর জামাত-শিবির। নিরাপত্তার অজুহাতে উনারা এটি করে থাকেন। আইনী কোন বাঁধা নেই এতে,তবে নৈতিক ব্যাপারটা তো অবশ্যই থাকে, রাজনৈতিক সংহিতার কারণেই এটি বেশি হয়ে থাকে। বাংলাদেশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঙ্গালির আরব হওয়ার প্রাণান্ত চেষ্টা!

লিখেছেন কাল্পনিক সত্ত্বা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:১০



কিছুদিন আগে এক হুজুরকে বলতে শুনলাম ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে নাকি তারা আমূল বদলে ফেলবেন। প্রধানমন্ত্রী হতে হলে সূরা ফাতেহার তরজমা করতে জানতে হবে,থানার ওসি হতে হলে জানতে হবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:৪৩

সেকালের পাঠকপ্রিয় রম্য গল্প "অদ্ভূত চা খোর" প্রসঙ্গে

চা বাগানের ছবি কৃতজ্ঞতা: http://www.peakpx.com এর প্রতি।

আমাদের সময় একাডেমিক পড়াশোনার একটা আলাদা বৈশিষ্ট্য ছিল। চয়নিকা বইয়ের গল্পগুলো বেশ আনন্দদায়ক ছিল। যেমন, চাষীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অবিশ্বাসের কি প্রমাণ আছে?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ২৬ শে এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১২:৩১



এক অবিশ্বাসী বলল, বিশ্বাসের প্রমাণ নাই, বিজ্ঞানের প্রমাণ আছে।কিন্তু অবিশ্বাসের প্রমাণ আছে কি? যদি অবিশ্বাসের প্রমাণ না থাকে তাহলে বিজ্ঞানের প্রমাণ থেকে অবিশ্বাসীর লাভ কি? এক স্যার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×